ইভলিন স্টোকস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ডেম ইভলিন মেরি স্টোকস (৫ ডিসেম্বর ১৯৩৬-১৫ আগস্ট ২০০৫) নিউজিল্যান্ডের ওয়াইকাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের ওয়াইতানগি ট্রাইব্যুনালের সদস্য ছিলেন। জীবনজুড়ে তিনি নারী ও মাওরির প্রান্তীয় শ্রেণির মানুষদের নিয়ে কাজ করেছেন। নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক ভূগোল ও মাওরিদের ভূমি সমস্যা নিয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৩৬ সালের ৫ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের টাওরাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টাওরাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টাওরাঙ্গা কলেজে লেখাপড়া করেন। তিনি মাওরিদের সাংস্কৃতিক কাপা হাকা গ্রুপে যোগ দেওয়া প্রথম নন-মাওরি। তিনি ক্যান্টারবারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভূগোলে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ক্রাইস্টচার্চ ডিগ্রি কলেজ থেকে শিক্ষকতার উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং তে কুইতি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাঁকে ফুলব্রাইট মেধাবৃত্তি ও স্মিথ-মুন্ড বৃত্তি দেয়। ১৯৬৩ সালে তিনি সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডোনাল্ড মেইনিগ এর অধীনে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[১] যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তিনি " লং পোই সুইংগিং" নামক মাওরি নৃত্য টেলিভিশনে পরিবেশন করেন।

১৯৬৪ সালে তিনি ব্রায়ান স্টোকসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে।আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই সন্তান জন্ম নেয়। পরবর্তীতে ব্রায়ান ও ইভলিনের বিবাহবিচ্ছেদ হলেও ইভলিন বৈবাহিকসূত্রে প্রাপ্ত স্টোকস উপাধি ব্যবহার করতে থাকেন।

তিনি অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিযুক্ত হন। তিনি তাদের ওয়াইকাতো শাখায় অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৪ সালে ওয়াইকাতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি শিক্ষা কার্যক্রমে মাওরিদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উপর জোর দেন।[২] তিনি ৪১ বছর ধরে অনুষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩] ১৯৬৯ সালে তিনি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও ১৯৭৫ সালে রিডার নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালে ওয়াইকাতো বিশ্ববিদ্যালয় দুই ভাগে বিভক্ত হয়। একটি হলো প্রাকৃতিক ভূগোল এবং অপরটি মানব ভূগোল। ইভলিন মানব ভূগোল বিভাগে রয়ে যান। তিনি ভূগোল বিভাগে কুইয়া( মাওরি ভাষায় বিজ্ঞ নারী) নামে পরিচিত ছিলেন।

৬৮ বছর বয়সে ২০০৫ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

স্টোকস নিউজিল্যান্ড জার্নাল অব জিওগ্রাফির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। পূর্বে ১০ বছর ধরে তিনি নিউজিল্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি রেকর্ড সম্পাদনা করেছেন। নিউজিল্যান্ডের টাওরাঙ্গা এলাকা ও মাওরিদের ইতিহাস নিয়ে তাঁর একাডেমিক প্রকাশনা রয়েছে। তিনি টাওরাঙ্গা এলাকার লিখিত সাহিত্যকর্মের সংকলন "তে রাওপাতু ও টাওরাঙ্গা মোয়ানা"প্রকাশ করেন। টাওরাঙ্গা এলাকার বসতি স্থাপনের রীতি তাঁর স্নাতকোত্তর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল। তিনি ১৯৮০ সালে টাওরাঙ্গা এলাকার ইতিহাসের উপর গ্রন্থ রচনা করেন। এজন্য তিনি জে এম শেরাড পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর ৩০টি গবেষণাপত্র মাওরিদের সম্পদ ব্যবহারের কৌশলের উপর আলোকপাত করে।

মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ভূগোলের পাঠ্যসূচি পরিমার্জনেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। নিউজিল্যান্ড জার্নাল অব জিওগ্রাফি ও নিউজিল্যান্ড জিওগ্রাফারে তিনি এ সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড ভূগোল পাঠ্যসূচি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।

হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার সময় শুধু নারী হওয়ার কারণে তাঁকে ১০০ ইউরো বেতন কম দেওয়া হতো। এই বেতনবৈষম্য তাঁকে নারীবাদী করে গড়ে তুলে। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে তিনি সহকর্মী অ্যান মাগির সঙ্গে তিনি ওয়াইকাতো বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার ও নারীবাদ অধ্যয়ন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৭ সালে স্টোকস তাঁর চার সহকর্মীর সঙ্গে নারীবাদী ভূগোল বিষয়ে নিউজিল্যান্ড জিওগ্রাফার জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।[৪]

ওয়াইকাতো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানচিত্রের সংগ্রহশালা গড়ে তোলার কাজেও তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৪ সালে তিনি মাইকেল শেলবিকে সঙ্গে নিয়ে নিউজিল্যান্ড জিওগ্রাফার সোসাইটির মানচিত্রগুলো ওয়াইকাতো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করেন। তিনি বিদেশ থেকে কেনা মানচিত্রগুলোও গ্রন্থাগারে স্থানান্তর করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]