আরাবাড়ি প্রকল্প

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আরাবারি বনাঞ্চল

আরাবাড়ি প্রকল্প একটি যৌথবন বাবস্থা বা কমিউনিটি ফরেস্ট প্রকল্প। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি এলাকায় রানিগঞ্জ-মেদিনীপুর জাতীয় সড়কের ধারে অবস্থিত বনাঞ্চল আরাবাড়ি অরণ্যে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পের প্রধান পৃষ্ঠ পোষক ছিলেন, যৌথ বন ব্যবস্থাপনার জনক তথা অজিত কুমার ব্যানার্জি[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

৭০ এর দশকে মেদিনীপুরের ডিএফও হয়ে আসেন অজিত কুমার ব্যানার্জি, এসে দেখেন আরাবাড়ি বনাঞ্চলের অস্তিত্ব প্রায় নেই, এলাকার বাসিন্দারা জ্বালানি, ঘর তৈরির জন্য গাছ কেটে সাফ করে দিয়েছেন, সাথে গাছ চুরি তো ছিলই। গ্রামের রাস্তায় হেঁটে অজিত কুমার ব্যানার্জি ও সাথে সহকর্মী পদস্থ বনাধিকারিক সুবিমল রায়কে নিয়ে জঙ্গলের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গ্রামে গ্রামে মানুষের সাথে কথা বলেন। গাছ রক্ষা করলে সেই গাছ বিক্রির পরে লাভের টাকার চার ভাগের এক ভাগ গ্রামবাসীরাই পাবেন। গ্রামের মহিলাদেরও বোঝাতে পেরেছিলেন জঙ্গলের গুরুত্ব। রাজি হলেন গ্রামবাসীরা। শুরু হয় বন সৃজন।

প্রকল্প[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালে শুরু হয়েছিল জঙ্গল বাঁচানোর, জঙ্গল তৈরির লড়াই। কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক বন সৃজন প্রকল্পের অধীনে বনাঞ্চল তৈরির কাজ শুরু হয়। গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে বনাঞ্চল রক্ষার জন্য তৈরি হয় আড়াবাড়ি সামাজিক বন সুরক্ষা কমিটি। বনাঞ্চল লাগোয়া ১১টি গ্রামের ৬১৮টি পরিবারকে যোগ করা হয় কমিটিতে, গ্রামগুলো হল, আড়াবাড়ি লাগোয়া গ্রাম গুলির নাম: চাঁদমুড়া, সাতশোল, মাঝিগড়, সাকরই, সাফাডিহা, গুতিয়ামারা, সখিশোল, গুঁচিশোল, উরামি, জোড়া কেউদি ও মহিষডুবি। কমিটির মাধ্যমে কাজ পাই গ্রামবাসীরা। ভূমিহীন কৃষক, বন মজুরেরা কাজ পেতে থাকে নিয়মিত। গ্রামবাসীরা প্রতিশ্রুতি দেই নতুন লাগানো গাছ রক্ষার। পরিবর্তে তাঁরা পেলেন জঙ্গলের কিছু সম্পদের ওপরে অধিকার। জ্বালানির জোগান, পশুচারণের জায়গা। এছাড়া বনভূমিতে বাবুই ঘাস, পাট, বাঁশ লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। যাতে বাবুই দড়ি, বাঁশের ঝুড়ি-সহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে কিছু আয় হয় এই জনপদের বাসিন্দাদের। সঙ্গে মাশরুমও[১]

১৯৮৭ সালে প্রকল্পের সফলতা আসে। জঙ্গলের একটি অংশের কাঠ বিক্রি করে লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ সমান ভাবে বণ্টন করা হয় গ্রামবাসীদের মধ্যে। বন দফতরের এক তথ্য অনুযায়ী, প্রথমবার গ্রামবাসীরা মাথাপিছু ৭০০ টাকা পেয়েছিলেন।

সফলতা[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালে ১২৭২ হেক্টর বনাঞ্চল নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, বর্তমানে আয়তন ৭৬০২ হেক্টর। আরাবাড়ি মডেল প্রয়োগ করা হল হরিয়ানায় এবং সফল হয়। আরাবাড়ির সাফল্যে ভারত সরকার ১৯৯০ সালে নির্দেশিকা তৈরি করে যৌথ বন ব্যবস্থাপনা (জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট) শুরু করে। এখন আরাবাড়িতে একটি গবেষণা কেন্দ্রও তৈরি করা হয়েছে।[১]

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের বন সুরক্ষা কমিটি আন্তর্জাতিক পল গেটি পুরস্কার পায়।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মডেলের নাম আরাবাড়ি"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৮ 
  2. "Prize catch"www.downtoearth.org.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৮