আনিয়া সেটি আন্ডারসন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আনিয়া সেটি আন্ডারসন
জন্ম (1965-09-25) ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ (বয়স ৫৮)
হার্শলম, ডেনমার্ক
জাতীয়তাদানিশ
মাতৃশিক্ষায়তনকোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণমহাজাগতিক ধূলিকণা, নীহারিকা ও গ্রহের উৎপত্তি বিষয়ক গবেষণা।
পুরস্কারডেসকার্টস পুরস্কার
ম্যাথিল্ডা পুরস্কার
অ্যালান ম্যাকিনটোস পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, অধ্যাপনা।
প্রতিষ্ঠানসমূহকোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়
নীলস্‌ বোর ইনস্টিটিউট

আনিয়া সেটি আন্ডারসন (জন্মঃ ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫) ডেনমার্ক-এর হার্শলমের একজন জ্যোতির্বিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

জীবনী[সম্পাদনা]

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার স্কুল থেকে বিখ্যাত দানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী উফি গ্রে জর্জেনসেনের[১] কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তখন থেকেই আনিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানে উৎসাহ জাগে। তিনি কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক, ১৯৯৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল মহাজাগতিক ধুলিকনা এবং নক্ষত্রসমূহ। তার ডক্টরেট পরবর্তী গবেষণায় যারা অর্থ সাহায্য করেছিল তাদের মধ্যে কার্লসবার্গ প্রতিষ্ঠান অন্যতম। প্রথমদিকে উপ্পাসলা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং নভোবিজ্ঞান বিভাগে তিনি তার গবেষণার কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান শাখার মানমন্দিরে তিনি তার গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ করেন। এর পরে তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসাহায্য পান এবং বিজ্ঞান অনুষদ থেকে উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষণ অনুশীলনে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।[২] বর্তমানে তিনি তার ছোটবেলার জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রেরনা দানকারী উফি গ্রে জর্জেনসেনের সঙ্গেই কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় রত আছেন। [১] তার তিন সন্তান আছে যাদের নাম জুলি, সিসিলি এবং জ্যাকব।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তার গবেষণার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল মহাজাগতিক ধূলিকনা; জটিল আণবিক গঠন, গ্রহ এবং নক্ষত্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ও তাদের উৎপত্তিতে এই মহাজাগতিক ধূলিকণার অবদান। [৩] তিনি বর্তমানে কোপেনহেগেনে অবস্থিত নীলস্‌ বোর ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালনা সমিতির সদস্য। এই প্রতিষ্ঠানেরই অন্তর্গত মহাবিশ্বতত্ত্ব কেন্দ্রে (ডা‌র্ক কসমোলজি সেন্টার) তিনি গবেষণায় লিপ্ত আছেন। পদার্থবিদ্যায় তার কার্যক্ষেত্র সম্পর্কীয় বহু গবেষণাপত্র তিনি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি বহু বই রচনা করেছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম সেরা প্রভাষক হিসাবে পরিচিত। আনিয়া সেটি আন্ডারসনের গবেষণা শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই বরং রসায়ন, ভুতত্ত্ব এবং জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার আছে। উল্কাপিণ্ড থেকে পাওয়া প্রাক-সৌরমণ্ডলীয় ধুলিকনা ছিল তার প্রথম গবেষণার বিষয়বস্তু। ২০০৩ সালে সুসান হোফনারের সাথে তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে বিশেষ এ বি জি শ্রেনির নক্ষত্রের ভর হ্রাস পাওয়ার পরিমান নির্ধারণের জন্য ধুলিকনার আণবিক গঠনের বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুর ধুলিকনার গতিপ্রকৃতি ও প্রভাব বোঝার জন্য হোফনারের সঙ্গে তিনি তার গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। মহাজাগতিক ধুলিকনাসমূহ যখন কোন নক্ষত্র থেকে বিছিন্ন হয়ে মহাবিশ্বে বিচরন করতে শুরু করে তখন তার আলোকীয় ধর্মের কিরূপ পরিবর্তন ঘটে এই বিষয়ে গবেষণা করার জন্য তিনি উপ্পাসলার গবেষকদের সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন। [৪] গ্রহের গঠনে মহাজাগতিক ধূলিকণার অবদান বিষয়ে গবেষণা করার সাথে সাথে তিনি অ্যামিনো অ্যাসিড ও শর্করা জাতীয় উপাদানের মাধ্যমে কীভাবে পৃথিবীতে প্রানের উৎপত্তি হয়েছে এই বিষয়েও গবেষণা করেছিলেন। [৩] তার কাজ করার পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত স্বতন্ত্র এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। একবার তার সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, তার বেশিরভাগ সময় ব্যতীত হয় গবেষণাগারে, যেখানে তিনি উল্কাপিণ্ডের রাসায়নিক গঠন পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত থাকেন যার সাহায্যে সৌরজগৎ উৎপত্তির রহস্যে আলোকপাত করা সম্ভব। [৫]

তিনি একজন লেখক হিসাবেও সুপরিচিত, সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সম্প্রচার করার জন্য ডেন পিটার ক্লাউসেনের সাথে বহু বই রচনা করেছেন। [৬] তিনি মনে করেন যে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক গবেষণা সম্পরকে ওয়াকিবহাল রাখা অত্যন্ত জরুরী।[৫] তিনি শিশু ও অল্পবয়স্কদের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক বই রচনা করেছেন। তিনি বিজ্ঞানের গবেষণায় গুরত্বপূর্ণ পদে মহিলাদের নিয়োগ ও সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে সচেতনতার প্রচার করেছেন। ২০০৭ সালে তার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন যে, মহিলা হিসাবে শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পিছপা হবেননা। [৭] মহাজাগতিক ধুলিকনা, কৃষ্ণ বস্তু (ডার্ক ম্যাটার) এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার গবেষণা নিয়ে একটি শিক্ষামূলক ভিডিও প্রকাশ করেছেন। [৮][৯] তার নামে একটি গ্রহের নামকরন হয়েছে ৮৮২০-আন্ডারসন।[১০]

বর্তমানে তিনি ডেনমার্কের বিশিষ্ট মহিলা পদার্থ‌বিদ হিসাবে পরিচিত।[১১] এবং নর্ডিক ইন্সিটিউট সহ আরও সম্মানীয় প্রতিস্থানের সঙ্গে যুক্ত। [১২]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • ১৯৯৭ সালে দানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থার থেকে বছরের সেরা লেখিকা হিসাবে সম্মান। [১৩]
  • ১৯৯৯ সালে স্থানীয় টিভি চ্যানেলে তিনি একটি জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন। [১৪]
  • ২০০০ সালে নিলস্‌ বোর ইন্সিটিউট থেকে ম্যাকিন্তোস পুরস্কার।[১৫]
  • ২০০৩ সালে তার কাজের জন্য দানিশ মন্ত্রালয় থেকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন। [১৬]
  • ২০০৪ সালে সাধারন মানুষের কাছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রচারের জন্য দানিশ মন্ত্রালয় থেকে পুরস্কার। [১৭]
  • ২০০৫ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ডেস্কার্ট পুরস্কার।[১৮]
  • ২০০৬ সালে ক্রিস্টিন মেয়ার পুরস্কার[১৯], দানিশ রেডিও চ্যানেল থেকে পুরস্কার।[২০] এবং তার গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য আউস্ট্যান্ডিং ইয়ং পারসন পুরস্কার পান। [২১]
  • ২০০৭ সালে দানিশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদস্যপদে নির্বাচন [২২]
  • ২০০৮ সালে তার স্নাতকোত্তর ও পি এইচ ডি গবেষণার জন্য পুরস্কার।[২৩]
  • ২০০৯ সালে মাতিল্ডা পুরস্কার [২৪] এবং স্বেণ্ড বার্গেস ফান্ড ফর্মিডলিংস পুরস্কার প্রাপ্ত। [২৫]
  • ২০১১ সালে সাধারন মানুষের নিকট তার কাজের প্রচার ও জনপ্রিয়তার জন্য তিনি বিশেষ প্রচার পুরস্কার পান।[২৬]
  • ২০১৬ সালে রৌপ্য পদক অর্জন।[২৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Uffe Grĺe Jřrgensen"। Astro.ku.dk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  2. "Anja C. Andersen employment"। ২০১৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  3. "Anja C. Andersen receives researchers' own award – Niels Bohr Institute - University of Copenhagen"। Nbi.ku.dk। ২০০৮-১১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  4. "Anja C. Andersen's research"dark.dark-cosmology.dk। ২০০৭-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  5. "Anja C. Andersen named Faculty of Science Communicator of the Year – University of Copenhagen"। ২০১২-০১-০৩। ২০১৪-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  6. "The Astrophotography of Peter Clausen"। Glimpses of Heaven। ২০১৩-০৯-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  7. "Kvindernes stjernekriger"। ২০১৩-০২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  8. Interview with Anja Cetti Andersen - Author, Professor, and Researcher - Copenhagen University ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ডিসেম্বর ১১, ২০১৩ তারিখে
  9. TV Europa (২০১০-০৮-২৪)। "My interview with Anja Cetti Andersen - Dark Cosmology Center at Copenhagen University"CNN iReport (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৬ 
  10. "JPL Small-Body Database Browser"। Ssd.jpl.nasa.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  11. "Organizations which Anja C. Andersen is a member of"। Dark.dark-cosmology.dk। ২০০৭-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  12. "Research Committees"। Nordita। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  13. "Anja C. Andersen's awards and honors"dark.dark-cosmology.dk। ২০১০-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৬ 
  14. "Press corner" 
  15. "Women's Blue Book: Anja Cetti Andersen"। ২০১৪-০২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৯ 
  16. "Teaching Middle Prize 2003"। ২০১৮-০৯-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৬ 
  17. lny। "Forskningskommunikationsprisen — Uddannelses- og Forskningsministeriet"fivu.dk (ডেনীয় ভাষায়)। 
  18. "2005 EU Descartes Prize for Science Communication Laureates" (পিডিএফ)ec.europa.eu। ২০০৫-০২-১২। 
  19. "Dansk Kvindebiografisk Leksikon - Kirstine Meyer"। ১৯৪১-০৯-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  20. "Forfattere, litteraturpriser mv."www.litteraturpriser.dk 
  21. "JCI Danmark"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  22. "International Council of Academies of Engineering and Technological Sciences, Inc. (CAETS) - Danish Academy of Technical Sciences (ATV)"। CAETS। ১৯৭০-০১-০১। ২০১৩-০৩-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  23. "Anja Cetti Andersen received in 2008 DMs research award in science"। ২০১৪-০৮-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  24. "Andersen, Anja Cetti - Kvindernes Blåbog"। ২০১৪-০২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  25. "Anja Andersen hædres for sublim formidling – Niels Bohr Institutet - Københavns Universitet"। ২০০৯-০৫-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  26. "Stjerneformidler Anja C. Andersen får Fakultetets formidlingspris – Niels Bohr Institutet - Københavns Universitet"। ২০১২-০১-০৩। ২০২১-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  27. "Anja C. Andersen awarded the H.C. Ørsted Medal"। ২০১৬-১০-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-২৪