অব্যক্ত জ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একজন শিক্ষানবিশ তার শিক্ষকের কাছ থেকে অনুকরণ ও চর্চার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে কোনও কারিগরি কাজ সম্পাদনের অব্যক্ত জ্ঞান অর্জন করে।

অব্যক্ত জ্ঞান বলতে সেই জ্ঞানকে বোঝায় যা অভিব্যক্ত করা বা বের করে আনা দুরূহ এবং এ কারণে লিখে বা ভাষায় রূপদান করে এটিকে অন্যদের কাছে জ্ঞাপন করা কঠিন। এটি রৌপ, সংকেতায়িত বা ব্যক্ত জ্ঞানের বিপরীত একটি ধারণা। অব্যক্ত জ্ঞানের মধ্যে ব্যক্তিগত প্রজ্ঞা বা বিচক্ষণতা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অন্তর্দৃষ্টিস্বজ্ঞার মতো ব্যাপারগুলি অন্তর্ভুক্ত।[১] একে অনুক্ত জ্ঞান, অনভিব্যক্ত জ্ঞান বা পরোক্ষ জ্ঞান নামেও ডাকা হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ হিমালয় পর্বতমালা যে দক্ষিণ এশিয়াতে অবস্থিত, এটি এক ধরনের ব্যক্ত জ্ঞান, যেটিকে লিখে রাখা যায়, সম্প্রচার করা যায় ও প্রাপকের কাছে সেটি বোধগম্য হয়। এর বিপরীতে কোনও ভাষায় কথা বলা, বাইসাইকেল চালানো, ময়দার তাল মথা, কোনও সঙ্গীতযন্ত্রবাদন বা কোনও জটিল সরঞ্জাম নকশা ও ব্যবহার করার সামর্থ্য অর্জন করতে হলে এমন সব জ্ঞানের প্রয়োজন হতে পারে, যেগুলি সবসময় ব্যক্ত বা প্রত্যক্ষ না-ও হতে পারে। এমনকি বিশেষজ্ঞ চর্চাকারীরাও এগুলি ব্যাখ্যায় সফল না হতে পারে এবং এগুলিকে অপর কোনও ব্যক্তির কাছে জ্ঞাপন করা দুরূহ এমনকি অসম্ভব হতে পারে।

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

অব্যক্ত জ্ঞান কথাটি দিয়ে ব্যক্তিদের অধিকারে থাকা এমন সব দক্ষতা, ধারণা ও অভিজ্ঞতাকে বোঝায়, যেগুলি নিয়মাবদ্ধ করা হয়নি এবং যেগুলিকে সহজভাবে অভিব্যক্ত করা দুরূহ।[২] যেসব ব্যক্তি অব্যক্ত জ্ঞানের অধিকারী হন, তারা প্রায়শই তাদের অধিকৃত জ্ঞানের ব্যাপারে সচেতন নন এবং এগুলি কী করে অপরের কাছে মূল্যবান হতে পারে, সে সম্পর্কে অবগত নন। অব্যক্ত জ্ঞানের কার্যকর হস্তান্তরের জন্য নিবিড় ও ব্যাপক ব্যক্তিগত যোগাযোগ, নিয়মিত আন্তঃক্রিয়া ও আস্থার প্রয়োজন হয়।[৩] এ ধরনের জ্ঞান কোনও নির্দিষ্ট প্রতিবেশে বা পরিস্থিতিতে চর্চার মাধ্যমে প্রকাশ পায় ও সামাজিক জালিকাব্যবস্থার মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়।[৪] যখন অব্যক্ত জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি কোনও সামাজিক জালকব্যবস্থা বা চর্চাকারী সম্প্রদায়ে যোগদান করেন, তখন এই ধরনের জ্ঞান অংশত "করায়ত্ত" করা সম্ভব হয়।[৩]

দৈনন্দিন কাজকর্মভিত্তিক অব্যক্ত জ্ঞানের কিছু উদাহরণ হল সাইকেল চালানো, পিয়ানো বাজানো, মোটরগাড়ি চালনা, পেরেকে হাতুড়ি মারা,[৫] কোনও জটিল ভগ্নচিত্র জোড়া লাগানোর খেলায় (জিগস' পাজল) সফল হওয়া, কোনও জটিল পরিসংখ্যানিক সমীকরণ ব্যাখ্যা করতে পারা, ইত্যাদি।[২]

জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে অব্যক্ত জ্ঞানের ধারণাটি দিয়ে এমন কোনও জ্ঞানকে বোঝায়, যেটিকে সম্পূর্ণরূপে সংকলিত ও গ্রথিত করা সম্ভব নয়। একজন ব্যক্তি ভাষা ছাড়াই অব্যক্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারে। যেমন শিক্ষানবিশেরা তাদের ওস্তাদ বা শিক্ষকের সাথে কাজ করতে করতে কেবল ভাষার মাধ্যমেই নয়, বরং পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতা শিখতে পারে।

অব্যক্ত জ্ঞান অর্জনের চাবিকাঠি হল অভিজ্ঞতা। এক ধরনের অংশিদারি অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে ব্যক্তিদের মধ্যে একে অপরের চিন্তা প্রক্রিয়াগুলি ভাগাভাগি করে নেওয়া অত্যন্ত দুরূহ।[৬]


আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Tacit and Explicit Knowledge | Key Concepts in Information and Knowledge Management"www.tlu.ee। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৫ 
  2. Chugh, Ritesh (২০১৫)। "Do Australian Universities Encourage Tacit Knowledge Transfer?"। Proceedings of the 7th International Joint Conference on Knowledge Discovery, Knowledge Engineering and Knowledge Management। পৃষ্ঠা 128–135। আইএসবিএন 978-989-758-158-8ডিওআই:10.5220/0005585901280135 
  3. Goffin, K.; Koners, U. (২০১১)। "Tacit Knowledge, Lessons Learnt, and New Product Development"। Journal of Product Innovation Management28 (2): 300–318। ডিওআই:10.1111/j.1540-5885.2010.00798.x 
  4. Schmidt, Frank L.; Hunter, John E. (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩)। "Tacit Knowledge, Practical Intelligence, General Mental Ability, and Job Knowledge"। Current Directions in Psychological Science2 (1): 8–9। এসটুসিআইডি 145203923ডিওআই:10.1111/1467-8721.ep10770456 
  5. Engel, P. J. H. (২০০৮)। "Tacit knowledge and Visual Expertise in Medical Diagnostic Reasoning: Implications for medical education"। Medical Teacher30 (7): e184–e188। ডিওআই:10.1080/01421590802144260অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 18777417 
  6. Lam, Alice (মে ২০০০)। "Tacit Knowledge, Organizational Learning and Societal Institutions: An Integrated Framework"। Organization Studies21 (3): 487–513। এসটুসিআইডি 146466393ডিওআই:10.1177/0170840600213001 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]