সমুদ্রের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
৮১ নং লাইন: ৮১ নং লাইন:


তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, এবং চাপ - এই তিনটিই পানির ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। ভূপৃষ্ঠের পানি প্রায়শই গভীর পানির তুলনায় উষ্ণ থাকায় কম ঘন হয়, ফলে স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি হয়। আটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) -এর কার্যকারিতায় এই স্তরবিন্যাস মারাত্মক ভূমিকা রাখে। AMOC এর বৈশ্বিক আবহাওয়া এবং জলবায়ুর গভীর প্রভাব রয়েছে। স্তরবিন্যাস এজন্যও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পুষ্টির উপাদানকে নিম্নস্তর থেকে উপরিভাগে বয়ে নিয়ে আসতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মহাসাগরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, সমুদ্রের উপরিস্থিত স্তর থেকে অক্সিজেনকে গভীর পানিতে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।
তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, এবং চাপ - এই তিনটিই পানির ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। ভূপৃষ্ঠের পানি প্রায়শই গভীর পানির তুলনায় উষ্ণ থাকায় কম ঘন হয়, ফলে স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি হয়। আটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) -এর কার্যকারিতায় এই স্তরবিন্যাস মারাত্মক ভূমিকা রাখে। AMOC এর বৈশ্বিক আবহাওয়া এবং জলবায়ুর গভীর প্রভাব রয়েছে। স্তরবিন্যাস এজন্যও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পুষ্টির উপাদানকে নিম্নস্তর থেকে উপরিভাগে বয়ে নিয়ে আসতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মহাসাগরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, সমুদ্রের উপরিস্থিত স্তর থেকে অক্সিজেনকে গভীর পানিতে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।

=== নিম্ন অক্সিজেন মাত্রা ===
[[File:Global_areas_of_hypoxia.jpg|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Global_areas_of_hypoxia.jpg|থাম্ব|মানচিত্রে উন্মুক্ত সমুদ্র এবং উপকূলীয় জলরাশিতে কম এবং ক্রমহ্রাসমান অক্সিজেন মাত্রার এলাকাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে লাল বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই এলাকাগুলোতে মানুষের কারণে সৃষ্ট পুষ্টি উপাদানের কারণে অক্সিজেনের মাত্রা ২mg/L থেকেও কম হয়ে গেছে। এছাড়াও সমুদ্রের ৩০০ মিটার গভীরতায় বিস্তৃত অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চলগুলো (oxygen minimum zone) নীল রঙের ছায়া দিয়ে দেখানো হয়েছে।<ref name=":8">{{cite journal|last2=Levin|first2=Lisa A.|date=5 January 2018|title=Declining oxygen in the global ocean and coastal waters|pages=eaam7240|doi=10.1126/science.aam7240|pmid=29301986|doi-access=free|last1=Breitburg|first1=Denise|last3=Oschlies|first3=Andreas|last4=Grégoire|first4=Marilaure|last5=Chavez|first5=Francisco P.|last6=Conley|first6=Daniel J.|last7=Garçon|first7=Véronique|last8=Gilbert|first8=Denis|last9=Gutiérrez|first9=Dimitri|last10=Isensee|first10=Kirsten|last11=Jacinto|first11=Gil S.|last12=Limburg|first12=Karin E.|last13=Montes|first13=Ivonne|last14=Naqvi|first14=S. W. A.|last15=Pitcher|first15=Grant C.|last16=Rabalais|first16=Nancy N.|last17=Roman|first17=Michael R.|last18=Rose|first18=Kenneth A.|last19=Seibel|first19=Brad A.|last20=Telszewski|first20=Maciej|last21=Yasuhara|first21=Moriaki|last22=Zhang|first22=Jing|journal=Science|volume=359|issue=6371|bibcode=2018Sci...359M7240B|s2cid=206657115}}</ref>]]
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের অক্সিজেন মাত্রায় প্রভাব পড়ছে, বিশেষত উপকূলীয় এলাকা এবং উন্মুক্ত সমুদ্রে।

উন্মুক্ত সমুদ্রের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। এদেরকে অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চল (oxygen minimum zone) বলা হয়। ধীরগতির সমুদ্র সঞ্চালনের কারণে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন থেকে এই অঞ্চলগুলো বিচ্ছিন্ন থাকে। একইসাথে, উপরের স্তর থেকে নেমে আসা জৈব পদার্থ ভেঙে যাওয়ার সময় অক্সিজেন খরচ হয়। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পানির ঘনত্ব কমে, সঞ্চালনের গতি মন্থর হয়, এবং অক্সিজেন ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ এই কম অক্সিজেন যুক্ত অঞ্চলের পরিধি বাড়ছে।

গত ৫০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৬০-এর দশক থেকে সামগ্রিকভাবে সমুদ্রের অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় ২% কমে গেছে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত, সমুদ্র সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরে কম অক্সিজেন যুক্ত অঞ্চলের প্রাধান্য বেশি লক্ষ্য করা যায়। কম অক্সিজেন প্রায় সব ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অক্সিজেনের মাত্রা খুবই কম হয়ে গেলে সেসব এলাকায় জীববৈচিত্র্য অনেকটাই কমে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এই অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চলগুলোর পরিধি আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যা এইসব এলাকার সামুদ্রিক জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি।

নদী থেকে ক্রমবর্ধমান পুষ্টি উপাদান উপকূলে এসে জমা হয়, যার ফলে জৈব পদার্থ উৎপাদন ও তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। কিছু কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে এর ফলে অক্সিজেনের চরম ঘাটতির সৃষ্টি হয়, যে অঞ্চলগুলোকে 'মৃত অঞ্চল' (dead zone) হিসেবে অভিহিত করা হয়। পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরে তাপমাত্রার তারতম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই 'মৃত অঞ্চলগুলো' সম্প্রসারিত হচ্ছে।


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

১৩:১৮, ১ মার্চ ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং মহাসাগরের উপর এর প্রভাব। আঞ্চলিক প্রভাবগুলো ইটালিক্সে প্রদর্শিত হয়েছে।[১]
এই নাসা অ্যানিমেশনটি পৃথিবীর মহাসাগরীয় প্রক্রিয়াগুলিকে পৃথিবীর পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ব্যবস্থাগুলির মধ্যে চালিকা শক্তি হিসাবে উপস্থাপন করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এর অন্যতম প্রধান প্রভাব হলো সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে বারবার সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া, সমুদ্র অম্লীকরণ, সামুদ্রিক বরফ হ্রাস, সমুদ্রস্তর বিভাজনের বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস - এগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের ওপর পড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব। 'আটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন' (AMOC) সহ সামুদ্রিক স্রোতের ব্যাপক পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।[২] জলবায়ু পরিবর্তনের এই পরিণতিগুলো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে।[৩] মানুষের তৈরি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণই জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাস গ্রিনহাউজ গ্যাসের কয়েকটি উদাহরণ। জলবায়ু ব্যবস্থার অতিরিক্ত তাপের বেশিরভাগটাই সমুদ্র শোষণ করে নেওয়ায় সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৪] এছাড়া, বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের একটি বড় অংশ সমুদ্র গ্রহণ করে। যার ফলে সমুদ্রের পানির pH মাত্রা কমে যাচ্ছে।[৫] বিজ্ঞানীদের হিসেব মতে, মানুষের সৃষ্ট মোট কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের প্রায় ২৫% সমুদ্র শোষণ করে নেয়।[৬]

মহাসাগরের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যকে মহাসাগরের তাপমাত্রার স্তরবিন্যাস বলা হয়। বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে এটি বৃদ্ধি পায়।[৭]:৪৭১ সমুদ্রের স্তরগুলির মিশ্রণ হ্রাস পাওয়াতে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি উষ্ণ পানি স্থির হয়ে যায়। এটি গভীর থেকে ঠান্ডা পানির প্রবাহকেও কমিয়ে দেয়। মিশ্রণ কমে যাওয়ার ফলে মহাসাগর তাপ শোষণ করতে পারে না। ফলে ভবিষ্যতের উষ্ণায়নের একটি বড় অংশ বায়ুমণ্ডল এবং ভূমিতে স্থানান্তরিত হয়। এর একটি ফলাফল হলো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য ঝড়ের জন্য উপলব্ধ শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। আরেকটি ফলাফল হলো মহাসাগরের উপরের স্তরে মাছের পুষ্টির পরিমাণ হ্রাস। এই পরিবর্তনগুলি মহাসাগরের কার্বন সংরক্ষণের ক্ষমতাও হ্রাস করে।[৮] একই সাথে, লবণাক্ততার বৈসাদৃশ্যও বাড়ছে। নোনা এলাকাগুলি আরও নোনা হয়ে উঠছে এবং অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত এলাকাগুলি আরও কম নোনা হচ্ছে।[৯]

উষ্ণ পানি ঠান্ডা পানির তুলনায় কম অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। এর ফলে, মহাসাগর থেকে অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। বর্ধিত তাপীয় স্তরবিন্যাস পৃষ্ঠের পানি থেকে গভীর পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। এটি পানির অক্সিজেনের পরিমাণ আরও কমিয়ে দেয়।[১০] মহাসাগর ইতিমধ্যে তার পুরো পানিস্তম্ভে অক্সিজেন হারিয়েছে। অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চল বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হচ্ছে।[১১]:৪৭১

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতর জলের তাপমাত্রা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। এই পরিবর্তনগুলি সামুদ্রিক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারে[১২] বা কিছু প্রজাতির জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যার ফলে প্রজাতির বন্টন সম্পূর্ণভাবে বদলে যেতে পারে।[১৩] এর ফলে উপকূলীয় মৎস্যচাষ ও পর্যটনশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিভিন্ন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র যেমন প্রবাল প্রাচীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনই প্রবাল প্রাচীরকে সাদা করে ফেলতে (কোরাল ব্লিচিং) পারে যা এইসব ভঙ্গুর প্রাচীরের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়াও, সমুদ্রের অম্লীকরণ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি সমুদ্রের উৎপাদনশীলতা ও প্রজাতির বন্টনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে, বৈশ্বিক মৎস্যচাষ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয় এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হতে থাকে। উষ্ণতার কারণে সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়া মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। মেরু ভালুকের মতো অনেক মেরু প্রাণীর অস্তিত্ব আজ চরম বিপদের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই নানামুখী প্রতিক্রিয়া জলবায়ু ব্যবস্থা এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর অভাবনীয় চাপ সৃষ্টি করছে।[১৪]

গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট পরিবর্তন

মানুষের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আটকে থাকা অতিরিক্ত তাপের অধিকাংশই সমুদ্র শোষণ করে নেয়, যা সমুদ্রের গভীর স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে।[১৫]
বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশে শক্তি (তাপ) বৃদ্ধি (২০০৭ সালের তথ্য)

বর্তমানে (২০২০ সালের হিসেবে), বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) মাত্রা ৪১০ পিপিএম এরও বেশি। শিল্প-বিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় এটি প্রায় ৫০% বেশি। গত ৫.৫ কোটি বছরের ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডে এই মাত্রার বৃদ্ধি এবং এর দ্রুততা অভূতপূর্ব। মানুষের কার্যকলাপের ফলেই এই অতিরিক্ত CO2 তৈরি হচ্ছে, এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত। এর প্রধান কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বিভিন্ন শিল্পকারখানার নির্গমন, এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন। কমপক্ষে ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিক থেকেই বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে এই বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে যে, সমুদ্র মানুষ-সৃষ্ট CO2 এর একটি প্রধান শোষক হিসেবে কাজ করে। বেশ কিছু প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে, মোটামুটি এক-চতুর্থাংশ মানুষ-সৃষ্ট CO2 নির্গমন সমুদ্র শোষণ করে নেয়।


২০১৯ সালের পর থেকে পর্যবেক্ষিত পরিবর্তন এবং প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:

১৯৭০ সালের পর থেকে পৃথিবীর মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু ব্যবস্থায় সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের ৯০% এরও বেশি এই মহাসাগরগুলি শোষণ করে নিয়েছে। বিগত কয়েক দশকে সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে; এই হার ১৯৯৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ (marine heatwaves) হলো এমন ঘটনা যখন কোনো নির্দিষ্ট সামুদ্রিক অঞ্চলের তাপমাত্রা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এই তাপপ্রবাহের ঘটনা ১৯৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দ্বিগুণ হয়েছে, এবং এর তীব্রতাও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এই তাপপ্রবাহ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রের পানি অধিক অম্লীয় হয়ে উঠছে (ocean acidification)। এই অম্লতা বৃদ্ধি প্রবালপ্রাচীর সহ অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি করে। এছাড়াও, সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে যা সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

১৯৬০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা ঘিরে দক্ষিণ মহাসাগর থেকে শুরু করে প্রতিটি মহাসাগরে তাপমাত্রা পরিবর্তনের চিত্র।[১৬]

মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯২% শোষণ করে নেয়ার কারণে, সমুদ্রের তাপমাত্রার চেয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প-বিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় ভূমি ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা দেখানো নাসার তথ্য সম্বলিত একটি চার্ট।[১৭][১৮]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহাসাগরের তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং এই বৃদ্ধির হার দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। মহাসাগরগুলোর অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার পরিমাপ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২২ সালে সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের রেকর্ডটি ছিল ২০২১ সালে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যহীনতারই এটি একটি অনিবার্য পরিণতি। শিল্প-বিপ্লবের আগের সময়কাল এবং ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৬৮ থেকে ১.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

সাউদার্ন ওশান বা দক্ষিণ মহাসাগর অঞ্চলেই এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ দশকের মধ্যে অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের দক্ষিণ মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বৈশ্বিক হারের প্রায় দ্বিগুণ।

মহাসাগরের গভীরতার সাথে এই উষ্ণতার হার পরিবর্তিত হয়। উপরের স্তরগুলোতে (৭০০ মিটারের উপরে) উষ্ণতা দ্রুততম হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক হাজার মিটার গভীরতায়, গত শতাব্দীতে (১৯৮১ থেকে ২০১৯) উষ্ণতার হার ছিল প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মহাসাগরের গভীরতর অঞ্চলে (২০০০ মিটার গভীরতা) এই উষ্ণতার হার প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অ্যান্টার্কটিক মহাসাগরের ক্ষেত্রে, সর্বোচ্চ উষ্ণতার (০.৩ °সে প্রতি শতাব্দীতে) স্থানটি হলো ৪৫০০ মিটার গভীরতা।

মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মহাসাগরের তাপমাত্রার তারতম্য হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি এবং মেরু অঞ্চলে তা কম থাকে। মহাসাগরের মোট তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তনই মহাসাগরগুলো উষ্ণ হওয়ার সবচেয়ে ভালো তথ্য প্রদান করে। ১৯৬৯-১৯৯৩ সালের তুলনায় ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা বেড়েছে।

মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা হলো মহাসাগর কর্তৃক শোষিত ও সঞ্চিত তাপশক্তি। এই ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন স্থানে ও গভীরতায় মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা মাপা প্রয়োজন। একটি মহাসাগরীয় অববাহিকা বা সম্পূর্ণ মহাসাগরের ওপর তাপের ক্ষেত্রিক ঘনত্ব সমাকলনের মাধ্যমে মোট তাপধারণ ক্ষমতা বের করা যায়। এই তাপধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে মানুষের সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। ১৯৭১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বাড়তি ৯০% এরও বেশি তাপশক্তি শোষণ করেছে মহাসাগরসমূহ। ২০২০ সালের মধ্যে, মোটামুটি এক-তৃতীয়াংশ যোগ হওয়া শক্তি ৭০০ মিটারেরও বেশি গভীরতায় প্রবেশ করেছে।

২০২৩ সালে, বিশ্বের মহাসাগরগুলি আবারও ঐতিহাসিক রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতর ছিল, যা আগের বছর ২০২২-এর রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিশ্বের পাঁচটি সর্বোচ্চ মহাসাগরীয় তাপ পর্যবেক্ষণ হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগর- এই সব অঞ্চলে বিশ্বব্যাপী পরিমাপের ষাট বছরেরও বেশি সময়ের রেকর্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা পড়েছে। মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

মহাসাগরের পানি সৌরশক্তি বেশ দক্ষতার সাথে শোষণ করে। বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলির তুলনায় এদের তাপধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই সমগ্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তুলনায় মহাসাগরের ওপরের অংশের অল্প কয়েক মিটারেই বেশি তাপশক্তি ধারণ করে। ১৯৬০ সালের আগে থেকেই গবেষণা জাহাজ এবং স্টেশনগুলি সারা বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও অধিক গভীরতার তাপমাত্রা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করেছে। ২০০০ সাল থেকে, প্রায় ৪০০০ এরও বেশি আর্গো রোবোটিক ফ্লোট সমুদ্রের তাপমাত্রার অস্বাভাবিকতা বা তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তন পরিমাপ করছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে পর্যবেক্ষণের উন্নতির সাথে সাথে, উপরের অংশের মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা ত্বরান্বিত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০০৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শীর্ষ ২০০০ মিটার গভীরতায় তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তনের হার ছিল +০.৫৮ ± ০.০৮ ওয়াট/বর্গমিটার (বা ৯.৩ জেটাজুলের বার্ষিক গড় শক্তি বৃদ্ধি)।

মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তনের গ্রহের সামুদ্রিক এবং স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে; উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র এবং সম্প্রদায়গুলিতে এর বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। প্রত্যক্ষ প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য, সমুদ্রের বরফ, পানিচক্রের তীব্রতার পরিবর্তন এবং সামুদ্রিক জীবনের অভিবাসন ও বিলুপ্তি।

মহাসাগরের অম্লীকরণ

মহাসাগরের অম্লীকরণ: গড় সমুদ্রের পানির pH। আলোহা স্টেশন থেকে pH এর সরাসরি মাপের উপর ভিত্তি করে গড় সমুদ্রের পানির pH দেখানো হয়।[১৯]
শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে পিএইচ-এর পরিবর্তন। RCP2.6 হলো "কম CO2 নির্গমন" এর দৃশ্যকল্প। RCP8.5 হলো "উচ্চ CO2 নির্গমন" এর দৃশ্যকল্প।[২০]

মহাসাগরের অম্লীকরণ হলো পৃথিবীর মহাসাগরের পিএইচ-এর ক্রমাগত হ্রাস। ১৯৫০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, সাগরের উপরিতলের পিএইচ গড়ে প্রায় ৮.১৫ থেকে ৮.০৫-এ নেমে এসেছে। মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড হল মহাসাগরের অম্লীকরণের প্রধান কারণ। বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) স্তর ৪১০ পিপিএম ছাড়িয়ে গেছে (২০২০ সালে)। বায়ুমণ্ডল থেকে সৃষ্ট CO2 সাগরে শোষিত হয়। এই রাসায়নিক বিক্রিয়া কার্বনিক অ্যাসিড (H2CO3) উৎপন্ন করে যা একটি বাইকার্বনেট আয়ন (HCO−3) এবং একটি হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুক্ত হাইড্রোজেন আয়নের (H+) উপস্থিতি সমুদ্রের পিএইচ কমিয়ে দেয়, অম্লতা বৃদ্ধি করে (এর মানে এই নয় যে সমুদ্রের জল এখনই অম্লীয়; এটি এখনও ক্ষারীয়, pH এর মান ৮ এর চেয়ে বেশি। তবে এর অম্লতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।)। সামুদ্রিক ক্যালসিফাইং জীব, যেমন মলাস্ক এবং প্রবাল, বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কারণ এরা শেল এবং কঙ্কাল তৈরি করতে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের উপর নির্ভর করে।

পৃথিবীর মহাসাগরগুলিতে পিএইচ-এ ০.১ পরিবর্তন হলে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব ২৬% বৃদ্ধি পায় (pH স্কেল লগারিদমিক, তাই pH ইউনিটে একটি পরিবর্তন হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের দশগুণ পরিবর্তনের সমতুল্য)। সমুদ্র-পৃষ্ঠের pH এবং কার্বনেট স্যাচুরেশন অবস্থা সমুদ্রের গভীরতা এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। শীতল এবং উচ্চ অক্ষাংশের জল আরও বেশি CO2 শোষণ করতে সক্ষম। এর ফলে অম্লতা বৃদ্ধি পেতে পারে, pH কমে যেতে পারে এবং এই এলাকার কার্বনেট স্যাচুরেশন লেভেল কমতে পারে। অন্যান্য যেসব কারণ বায়ুমণ্ডল-সাগরের CO2 বিনিময়কে প্রভাবিত করে, এবং এর ফলে স্থানীয়ভাবে মহাসাগরের অম্লীকরণে ভূমিকা রাখে, সেগুলো হল: মহাসাগরীয় স্রোত এবং আপওয়েলিং জোন, বড় মহাদেশীয় নদীর নৈকট্য, সামুদ্রিক বরফের আচ্ছাদন, এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও কৃষিকাজ থেকে সৃষ্ট নাইট্রোজেন এবং সালফারের সাথে বায়ুমণ্ডলীয় বিনিময়।

মহাসাগরের পিএইচ হ্রাসের ফলে সামুদ্রিক জীবের জন্য একাধিক ক্ষতিকারক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিফিকেশন হ্রাস, বিপাকীয় হার হ্রাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, এবং প্রজননের মতো মৌলিক কার্যকলাপের জন্য শক্তি হ্রাস। মহাসাগরের অম্লীকরণের প্রভাব তাই সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করছে যা মানবতার একটি বড় অংশের জন্য খাদ্য, জীবিকা এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র সেবা প্রদান করে। প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রবাল প্রাচীর দ্বারা প্রদত্ত মাছ ধরা, পর্যটন এবং উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। অতএব, মহাসাগরের অম্লীকরণ মহাসাগরের সাথে যুক্ত খাদ্য শৃঙ্খলকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১৪ ("জলের নিচে জীবন")-এর একটি লক্ষ্য রয়েছে "মহাসাগর অম্লীকরণের প্রভাব হ্রাস ও মোকাবেলা করা"। কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করা (অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের ব্যবস্থা) একমাত্র সমাধান যা মহাসাগরের অম্লীকরণের মূল কারণকে সমাধান করে। যেসব প্রশমন ব্যবস্থা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করতে পারে তা মহাসাগরের অম্লীকরণকে বিপরীত করতে পারে। আরও নির্দিষ্ট মহাসাগর-ভিত্তিক প্রশমন পদ্ধতিগুলি (যেমন মহাসাগরের ক্ষারত্ব বৃদ্ধি, বর্ধিত আবহাওয়া) মহাসাগরের অম্লীকরণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই কৌশলগুলি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, তবে সাধারণত প্রযুক্তিগতভাবে এগুলো এখনও প্রস্তুত নয় এবং এদের সাথে অনেক ঝুঁকিও রয়েছে।

মহাসাগরের অম্লীকরণ পৃথিবীর ইতিহাসে আগেও ঘটেছে। এর ফলে মহাসাগরের যে বাস্তুতান্ত্রিক ধ্বস নেমেছিল, তা বৈশ্বিক কার্বন চক্র এবং জলবায়ুতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।

পরিবেশের উপর প্রভাব

সমুদ্রপৃষ্ঠের উর্ধ্বগতি

১৮৮০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ ২৫০ মিলিমিটার (৯.৮ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পেয়েছে,[২১] যার ফলে অন্যান্য ধরণের বন্যা (জোয়ারের সময়ে বন্যা, ঝড়ের ঢেউ) ঘটার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

আগামী দশকগুলিতে এবং তার পরেও অনেক উপকূলীয় শহর উপকূলীয় বন্যার সম্মুখীন হবে। স্থানীয় ভূমিধস, যা প্রাকৃতিক কিন্তু মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে, উপকূলীয় বন্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। উপকূলীয় বন্যা ২০৫০ সালের মধ্যে কয়েকশ মিলিয়ন লোককে হুমকির সম্মুখীন করবে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।

১৯০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, গড় বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠ ১৫-২৫ সেমি (৬-১০ ইঞ্চি), গড়ে ১-২ মিমি (০.০৩৯-০.০৭৯ ইঞ্চি) প্রতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হার ২০২১-২০২২ দশকে প্রতি বছর ৪.৬২ মিমি (০.১৮২ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনই এর মূল কারণ। ১৯৯৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, জলের তাপীয় প্রসারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের ৪২% অংশীদার ছিল। নাতিশীতোষ্ণ হিমবাহগুলি গলে যাওয়ার জন্য ২১% কারণ ছিল, যখন গ্রিনল্যান্ডে মেরু হিমবাহগুলি ১৫% এবং অ্যান্টার্কটিকায় ৮% এর জন্য দায়ী। পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতিও শ্লথ হয়ে যায় এবং তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধির গতি ২০৫০ সাল পর্যন্ত, ইতিমধ্যেই যে উষ্ণায়ন ঘটেছে তার প্রতিক্রিয়ায় ত্বরান্বিত হতে থাকবে। এরপর কি হবে তা নির্ভর করে মানুষের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ওপর। নির্গমনে যদি গভীরভাবে ছেদ পড়ে তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি ২০৫০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে ধীরগতির হতে পারে। এটি বর্তমানের তুলনায় ২১০০ সাল নাগাদ ৩০ সেন্টিমিটারের (১ ফুট) সামান্য বেশি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। উচ্চ নির্গমনের ক্ষেত্রে এর গতি আরও বাড়তে পারে। তখনকার সময়ে এটি ১ মিটারের (৩১⁄২ ফুট) বেশি এমনকি ২ মিটার (৬১⁄২ ফুট) পর্যন্ত ওঠা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে, সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি আগামী ২০০০ বছরে ২–৩ মিটার (৭-১০ ফুট) হবে যদি উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২.৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট) সীমিত থাকে। উষ্ণায়ন যদি ৫°C (৯.০°F) এ পৌঁছায় তবে সমুদ্রের উচ্চতা হবে ১৯–২২ মিটার (৬২–৭২ ফুট)।

সমুদ্রপৃষ্ঠের এই উর্ধ্বগতি পৃথিবীর প্রতিটি উপকূলীয় এবং দ্বীপ জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে। এটি বন্যা, উচ্চতর ঝড়ের ঢেউ, জোয়ার এবং সুনামির মাধ্যমে হতে পারে। এর অনেক নক-অন প্রভাব আছে। এগুলি ম্যানগ্রোভের মতো উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। সেচের জলের লবণাক্ততার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। বন্দরের ক্ষয়ক্ষতি সমুদ্র ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটায়। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রক্ষিপ্ত উত্থান বর্তমানে কয়েক কোটি লোকের বসবাসকারী স্থানগুলিকে বার্ষিক বন্যার ঝুঁকিতে ফেলবে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনে তীব্রভাবে হ্রাস পাবার ব্যবস্থা না নিলে, শতাব্দীর পরবর্তী দশকগুলিতে এই সংখ্যা কয়েকশ মিলিয়নে উন্নীত হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের সরাসরি উর্ধ্বগতির সংস্পর্শে না আসা এলাকাগুলো ব্যাপক আকারের অভিবাসন এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়তে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। তবে, বিভিন্ন স্থানীয় কারণ যেমন জোয়ারের পরিসর বা ভূমি নিমজ্জন এর প্রভাবের তীব্রতা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চল, খাত এবং দেশসমূহের ভিন্ন প্রতিরোধ ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা প্রভাবের মাত্রা নির্ধারণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, বিশেষ করে পূর্ব উপকূল বরাবর, বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ইতিমধ্যেই বেশি। শতাব্দীর শেষ নাগাদ এটি বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের ব্যাপকতম ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে ১২টিই এশিয়ায়। এই আটটি দেশ - বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম - বৈশ্বিকভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান এবং ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্ব জনসংখ্যার ৭০%। স্বল্পমেয়াদে মানব জনগোষ্ঠীর উপর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে নিচু ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান এই শতাব্দীর শেষের দিকে এদের অনেককে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলবে।

সমাজ তিনটি উপায়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পরিচালিত পশ্চাদপসরণ, উপকূলীয় পরিবর্তনে আবাসন, বা সমুদ্র প্রাচীরের মতো কঠোর-নির্মাণ অনুশীলনের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হল কঠিন পন্থা। এছাড়া বালিয়াড়ি পুনর্বাসন এবং সৈকত পুষ্টির মতো নরম পদ্ধতিও রয়েছে। কখনও কখনও এই অভিযোজন কৌশলগুলি একসাথে চলে। অন্য সময় বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কোনো এলাকার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সেক্ষেত্রে পরিচালিত পশ্চাদপসরণ ব্যবস্থা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি আফ্রিকার জন্য একটি বিশেষ সমস্যা। কারণ সেখানে নিম্নভূমি উপকূলীয় এলাকার জনসংখ্যা আগামী ৪০ বছরের মধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ বৃদ্ধি পেতে পারে। ধনী রাষ্ট্রগুলির মতো সমুদ্রপৃষ্ঠের উর্ধ্বগতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পন্থাগুলি বাস্তবায়নে গরিব দেশগুলিও সংগ্রাম করতে পারে। কিছু স্থানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা দ্বারা আরও মিশ্রিত হতে পারে। একটি উদাহরণ হল ডুবে যাওয়া শহরে ভূমিধস। উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাকে ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সরে যাওয়ার মাধ্যমে মানিয়ে নেয়। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বাধাগুলি এটিকে অসম্ভব করে তুলতে পারে।

পরিবর্তনশীল সমুদ্রস্রোত

সমুদ্র উপকূলে ঢেউ

সমুদ্রস্রোত বিভিন্ন অক্ষাংশের সূর্যালোক ও বায়ুর তাপমাত্রার তারতম্য, সাথে লবণাক্ত ও মিঠা পানির ভিন্ন ঘনত্ব, এবং প্রবাহমান বায়ুর দ্বারা সৃষ্টি হয়। বিষুব রেখার কাছে উষ্ণ বাতাস উপরে উঠে যায় এবং মেরু অঞ্চলের দিকে যাওয়ার সময় ঠাণ্ডা হতে থাকে। এই ঠাণ্ডা বায়ু মেরুর কাছে নেমে যায়, কিন্তু বিষুব রেখার দিকে যাওয়ার সাথে সাথে আবার উষ্ণ হয়। এই প্রক্রিয়ায় বড় আকারের বায়ু প্রবাহের ধরণ তৈরি হয় যাকে হ্যাডলি কোষ বলা হয়। এই ধরণের কোষ প্রতিটি গোলার্ধে একটি মধ্য-অক্ষাংশীয় কোষও পরিচালনা করে। এসব বায়ু প্রবাহের ধরণগুলো ভূপৃষ্ঠের স্রোতকে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে নিয়ে যায় যেখানে বাতাস শীতল থাকে। এতে পানি ঠাণ্ডা হয়ে নিচের অক্ষাংশের পানির তুলনায় অনেক ঘন হয়ে যায় এবং সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। উত্তর আটলান্টিকে একে নর্থ আটলান্টিক ডিপ ওয়াটার (NADW) এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিক বটম ওয়াটার (AABW) বলে।

এই ডুবন্ত প্রক্রিয়া, নিম্ন অক্ষাংশে পানির উত্থান, এবং ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর বায়ুর চাপের ফলে সমুদ্রস্রোতগুলো সারা সমুদ্রে পানি পরিচালনা করে। কিন্তু যখন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি আসে, তখন পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে গভীর পানি তৈরির এলাকাগুলোতে। সমুদ্র উষ্ণ হওয়া এবং হিমবাহ ও মেরু বরফের টুপি গলার সাথে সাথে, যেসব উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলে গভীর পানি তৈরি হয় সেখানে অনেক বেশি মিঠা পানি যুক্ত হয়। এতে করে ভূপৃষ্ঠের পানির ঘনত্ব কমে যায় ফলে পানি আগের চেয়ে ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়।

আধুনিক পর্যবেক্ষণ এবং জীবাশ্ম থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, শিল্প-পূর্ব যুগ থেকে অ্যাটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) দুর্বল হয়ে থাকতে পারে। (AMOC বৈশ্বিক থার্মোহ্যালাইন সঞ্চালনের একটি অংশ)। কিন্তু তথ্যে এত অনিশ্চয়তা আছে যে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। ২০২১ সালে মূল্যায়নকৃত জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত পূর্বাভাসগুলো থেকে জানা যায় যে ২১তম শতাব্দীতে AMOC খুব সম্ভবত দুর্বল হয়ে যাবে। এত বড় মাত্রার দুর্বলতা বৈশ্বিক জলবায়ুতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলটি বেশ ঝুঁকিতে থাকবে।

মহাসাগরের স্রোতগুলোতে যেকোন পরিবর্তন সমুদ্রের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে (যা পানির তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়) এবং মহাসাগরীয় উৎপাদনশীলতাকেও প্রভাবিত করে কারণ স্রোতগুলো পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে (দেখুন: ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং মোট প্রাথমিক উৎপাদনের ওপর প্রভাব)। যেহেতু AMOC গভীর সমুদ্র সঞ্চালন খুব ধীর (পুরো সমুদ্রে চক্রাকারে পানি প্রবাহিত করতে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার বছর লাগে), জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এতে ধীরে ধীরে দেখা যাবে।

সমুদ্র স্তরবিন্যাস বৃদ্ধি

উপকূলীয় উত্থিত-প্রবাহ অঞ্চলে হাইপোক্সিয়া (অক্সিজেন স্বল্পতা) ও সমুদ্রের অম্লীকরণ বৃদ্ধির কারণসমূহ: নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে বায়ুপ্রবাহ গভীর সমুদ্রের নিম্ন-অক্সিজেনযুক্ত, উচ্চ পুষ্টি ও উচ্চ দ্রবীভূত অজৈব কার্বন (DIC) সমৃদ্ধ পানিকে অক্সিজেন সর্বনিম্ন অঞ্চলের উপর থেকে উপকূলে উত্থিত করে। উৎপাদনশীল মহীসোপান বরাবর পানির প্রবাহে অক্সিজেন হ্রাস (DO) ও কার্বন বৃদ্ধির (DIC) তীব্রতা, উৎপাদনশীলতা এবং সমুদ্র তলদেশে পানি অবস্থানের সময়কাল দ্বারা নির্ধারিত হয়।[২২][২৩]

সমুদ্র স্তরবিন্যাসের পরিবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি উৎপাদনশীলতা ও অক্সিজেনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। ঘনত্বের ভিত্তিতে পানির স্তরগুলিতে বিভক্ত হওয়াকে স্তরবিন্যাস বলা হয়। সকল মহাসাগরীয় অববাহিকাতেই স্তরবিন্যাস ঘটে। স্তরবিন্যাস পানির উল্লম্ব মিশ্রণকে সীমিত করে, সমুদ্রের উপরিভাগ এবং অভ্যন্তরভাগের মধ্যে তাপ, কার্বন, অক্সিজেন ও কণার বিনিময় হ্রাস করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে লবণাক্ততার পরিবর্তনের কারণে ১৯৭০ সাল থেকে সমুদ্রের উপরিভাগে স্তরবিন্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের পানির বাষ্পীভবনের কারণে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়, যা লবণাক্ততা এবং ঘনত্বের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এদিকে, বরফ গলে যাওয়ার ফলে উচ্চ অক্ষাংশে লবণাক্ততা হ্রাস পেতে পারে।

তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, এবং চাপ - এই তিনটিই পানির ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। ভূপৃষ্ঠের পানি প্রায়শই গভীর পানির তুলনায় উষ্ণ থাকায় কম ঘন হয়, ফলে স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি হয়। আটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) -এর কার্যকারিতায় এই স্তরবিন্যাস মারাত্মক ভূমিকা রাখে। AMOC এর বৈশ্বিক আবহাওয়া এবং জলবায়ুর গভীর প্রভাব রয়েছে। স্তরবিন্যাস এজন্যও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পুষ্টির উপাদানকে নিম্নস্তর থেকে উপরিভাগে বয়ে নিয়ে আসতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মহাসাগরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, সমুদ্রের উপরিস্থিত স্তর থেকে অক্সিজেনকে গভীর পানিতে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।

নিম্ন অক্সিজেন মাত্রা

মানচিত্রে উন্মুক্ত সমুদ্র এবং উপকূলীয় জলরাশিতে কম এবং ক্রমহ্রাসমান অক্সিজেন মাত্রার এলাকাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে লাল বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই এলাকাগুলোতে মানুষের কারণে সৃষ্ট পুষ্টি উপাদানের কারণে অক্সিজেনের মাত্রা ২mg/L থেকেও কম হয়ে গেছে। এছাড়াও সমুদ্রের ৩০০ মিটার গভীরতায় বিস্তৃত অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চলগুলো (oxygen minimum zone) নীল রঙের ছায়া দিয়ে দেখানো হয়েছে।[২৪]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের অক্সিজেন মাত্রায় প্রভাব পড়ছে, বিশেষত উপকূলীয় এলাকা এবং উন্মুক্ত সমুদ্রে।

উন্মুক্ত সমুদ্রের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। এদেরকে অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চল (oxygen minimum zone) বলা হয়। ধীরগতির সমুদ্র সঞ্চালনের কারণে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন থেকে এই অঞ্চলগুলো বিচ্ছিন্ন থাকে। একইসাথে, উপরের স্তর থেকে নেমে আসা জৈব পদার্থ ভেঙে যাওয়ার সময় অক্সিজেন খরচ হয়। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পানির ঘনত্ব কমে, সঞ্চালনের গতি মন্থর হয়, এবং অক্সিজেন ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ এই কম অক্সিজেন যুক্ত অঞ্চলের পরিধি বাড়ছে।

গত ৫০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৬০-এর দশক থেকে সামগ্রিকভাবে সমুদ্রের অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় ২% কমে গেছে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত, সমুদ্র সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরে কম অক্সিজেন যুক্ত অঞ্চলের প্রাধান্য বেশি লক্ষ্য করা যায়। কম অক্সিজেন প্রায় সব ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অক্সিজেনের মাত্রা খুবই কম হয়ে গেলে সেসব এলাকায় জীববৈচিত্র্য অনেকটাই কমে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এই অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চলগুলোর পরিধি আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যা এইসব এলাকার সামুদ্রিক জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি।

নদী থেকে ক্রমবর্ধমান পুষ্টি উপাদান উপকূলে এসে জমা হয়, যার ফলে জৈব পদার্থ উৎপাদন ও তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। কিছু কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে এর ফলে অক্সিজেনের চরম ঘাটতির সৃষ্টি হয়, যে অঞ্চলগুলোকে 'মৃত অঞ্চল' (dead zone) হিসেবে অভিহিত করা হয়। পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরে তাপমাত্রার তারতম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই 'মৃত অঞ্চলগুলো' সম্প্রসারিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্র

  1. Käse, Laura; Geuer, Jana K. (২০১৮)। "Phytoplankton Responses to Marine Climate Change – an Introduction"। YOUMARES 8 – Oceans Across Boundaries: Learning from each other। পৃষ্ঠা 55–71। আইএসবিএন 978-3-319-93283-5এসটুসিআইডি 134263396ডিওআই:10.1007/978-3-319-93284-2_5 
  2. "Summary for Policymakers"। The Ocean and Cryosphere in a Changing Climate (পিডিএফ)। ২০১৯। পৃষ্ঠা 3–36। আইএসবিএন 978-1-00-915796-4ডিওআই:10.1017/9781009157964.001। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৬ 
  3. Worm, Boris; Barbier, Edward B.; Beaumont, Nicola; Duffy, J. Emmett; Folke, Carl; Halpern, Benjamin S.; Jackson, Jeremy B. C.; Lotze, Heike K.; Micheli, Fiorenza; Palumbi, Stephen R.; Sala, Enric; Selkoe, Kimberley A.; Stachowicz, John J.; Watson, Reg (২০০৬)। "Impacts of Biodiversity Loss on Ocean Ecosystem Services"। Science314 (5800): 787–790। ডিওআই:10.1126/science.1132294 
  4. Cheng, Lijing; Abraham, John; Hausfather, Zeke; Trenberth, Kevin E. (১১ জানুয়ারি ২০১৯)। "How fast are the oceans warming?"। Science363 (6423): 128–129। এসটুসিআইডি 57825894ডিওআই:10.1126/science.aav7619পিএমআইডি 30630919বিবকোড:2019Sci...363..128C 
  5. Doney, Scott C.; Busch, D. Shallin; Cooley, Sarah R.; Kroeker, Kristy J. (২০২০-১০-১৭)। "The Impacts of Ocean Acidification on Marine Ecosystems and Reliant Human Communities"। Annual Review of Environment and Resources (ইংরেজি ভাষায়)। 45 (1): 83–112। ডিওআই:10.1146/annurev-environ-012320-083019অবাধে প্রবেশযোগ্য  Text was copied from this source, which is available under a Creative Commons Attribution 4.0 International License ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-১০-১৬ তারিখে
  6. Doney, Scott C.; Busch, D. Shallin; Cooley, Sarah R.; Kroeker, Kristy J. (২০২০-১০-১৭)। "The Impacts of Ocean Acidification on Marine Ecosystems and Reliant Human Communities"। Annual Review of Environment and Resources (ইংরেজি ভাষায়)। 45 (1): 83–112। ডিওআই:10.1146/annurev-environ-012320-083019অবাধে প্রবেশযোগ্য  Text was copied from this source, which is available under a Creative Commons Attribution 4.0 International License ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-১০-১৬ তারিখে
  7. Bindoff, N.L., W.W.L. Cheung, J.G. Kairo, J. Arístegui, V.A. Guinder, R. Hallberg, N. Hilmi, N. Jiao, M.S. Karim, L. Levin, S. O'Donoghue, S.R. Purca Cuicapusa, B. Rinkevich, T. Suga, A. Tagliabue, and P. Williamson, 2019: Chapter 5: Changing Ocean, Marine Ecosystems, and Dependent Communities ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-১২-২০ তারিখে. In: IPCC Special Report on the Ocean and Cryosphere in a Changing Climate ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২১-০৭-১২ তারিখে [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, V. Masson-Delmotte, P. Zhai, M. Tignor, E. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Nicolai, A. Okem, J. Petzold, B. Rama, N.M. Weyer (eds.)]. In press.
  8. Freedman, Andrew (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "Mixing of the planet's ocean waters is slowing down, speeding up global warming, study finds"The Washington Post। ১৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২০ 
  9. Cheng, Lijing; Trenberth, Kevin E.; Gruber, Nicolas; Abraham, John P.; Fasullo, John T.; Li, Guancheng; Mann, Michael E.; Zhao, Xuanming; Zhu, Jiang (২০২০)। "Improved Estimates of Changes in Upper Ocean Salinity and the Hydrological Cycle"। Journal of Climate33 (23): 10357–10381। ডিওআই:10.1175/jcli-d-20-0366.1অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2020JCli...3310357C 
  10. Chester, R.; Jickells, Tim (২০১২)। "Chapter 9: Nutrients oxygen organic carbon and the carbon cycle in seawater"। Marine geochemistry (3rd সংস্করণ)। Chichester, West Sussex, UK: Wiley/Blackwell। পৃষ্ঠা 182–183। আইএসবিএন 978-1-118-34909-0ওসিএলসি 781078031। ২০২২-০২-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২০ 
  11. Bindoff, N.L., W.W.L. Cheung, J.G. Kairo, J. Arístegui, V.A. Guinder, R. Hallberg, N. Hilmi, N. Jiao, M.S. Karim, L. Levin, S. O'Donoghue, S.R. Purca Cuicapusa, B. Rinkevich, T. Suga, A. Tagliabue, and P. Williamson, 2019: Chapter 5: Changing Ocean, Marine Ecosystems, and Dependent Communities ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-১২-২০ তারিখে. In: IPCC Special Report on the Ocean and Cryosphere in a Changing Climate ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২১-০৭-১২ তারিখে [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, V. Masson-Delmotte, P. Zhai, M. Tignor, E. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Nicolai, A. Okem, J. Petzold, B. Rama, N.M. Weyer (eds.)]. In press.
  12. Briand F., সম্পাদক (২০১৩)। "Marine Extinctions: Patterns and Processes - an overview."CIESM Workshop Monographs (ইংরেজি ভাষায়)। 45: 5–19। 
  13. "Summary for Policymakers"। The Ocean and Cryosphere in a Changing Climate (পিডিএফ)। ২০১৯। পৃষ্ঠা 3–36। আইএসবিএন 978-1-00-915796-4ডিওআই:10.1017/9781009157964.001। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৬ 
  14. "Summary for Policymakers"। The Ocean and Cryosphere in a Changing Climate (পিডিএফ)। ২০১৯। পৃষ্ঠা 3–36। আইএসবিএন 978-1-00-915796-4ডিওআই:10.1017/9781009157964.001। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৬ 
  15. Top 700 meters: Lindsey, Rebecca; Dahlman, Luann (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। "Climate Change: Ocean Heat Content"climate.gov। National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA)। ২৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Top 2000 meters: "Ocean Warming / Latest Measurement: December 2022 / 345 (± 2) zettajoules since 1955"NASA.gov। National Aeronautics and Space Administration। ২০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  16. Cheng, Lijing; Abraham, John; Zhu, Jiang; Trenberth, Kevin E.; Fasullo, John; Boyer, Tim; Locarnini, Ricardo; Zhang, Bin; Yu, Fujiang; Wan, Liying; Chen, Xingrong (ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "Record-Setting Ocean Warmth Continued in 2019"। Advances in Atmospheric Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। 37 (2): 137–142। এসটুসিআইডি 210157933ডিওআই:10.1007/s00376-020-9283-7অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2020AdAtS..37..137C 
  17. "The Oceans Are Heating Up Faster Than Expected"। scientific american। ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২০ 
  18. "Global Annual Mean Surface Air Temperature Change"। NASA। ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  19. Ritchie, Roser, Mispy, Ortiz-Ospina. "SDG 14 - Measuring progress towards the Sustainable Development Goals ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২২-০১-২২ তারিখে." SDG-Tracker.org, website (2018).
  20. Gattuso, J.-P.; Magnan, A.; Billé, R.; Cheung, W. W. L.; Howes, E. L.; Joos, F.; Allemand, D.; Bopp, L.; Cooley, S. R.; Eakin, C. M.; Hoegh-Guldberg, O.; Kelly, R. P.; Pörtner, H.-O.; Rogers, A. D.; Baxter, J. M.; Laffoley, D.; Osborn, D.; Rankovic, A.; Rochette, J.; Sumaila, U. R.; Treyer, S.; Turley, C. (৩ জুলাই ২০১৫)। "Contrasting futures for ocean and society from different anthropogenic CO 2 emissions scenarios" (পিডিএফ)Science349 (6243): aac4722। এসটুসিআইডি 206639157ডিওআই:10.1126/science.aac4722পিএমআইডি 26138982। ৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২২ 
  21. "Climate Change Indicators: Sea Level / Figure 1. Absolute Sea Level Change"EPA.gov। U.S. Environmental Protection Agency (EPA)। জুলাই ২০২২। ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Data sources: CSIRO, 2017. NOAA, 2022. 
  22. Chan, Francis; Barth, John; Kroeker, Kristy; Lubchenco, Jane; Menge, Bruce (১ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "The Dynamics and Impact of Ocean Acidification and Hypoxia: Insights from Sustained Investigations in the Northern California Current Large Marine Ecosystem"। Oceanography32 (3): 62–71। এসটুসিআইডি 202922296ডিওআই:10.5670/oceanog.2019.312অবাধে প্রবেশযোগ্য  Material was copied from this source, which is available under a Creative Commons Attribution 4.0 International License ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-১০-১৬ তারিখে.
  23. Gewin, Virginia (আগস্ট ২০১০)। "Oceanography: Dead in the water"। Nature466 (7308): 812–814। এসটুসিআইডি 4358903ডিওআই:10.1038/466812aঅবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 20703282 
  24. Breitburg, Denise; Levin, Lisa A.; Oschlies, Andreas; Grégoire, Marilaure; Chavez, Francisco P.; Conley, Daniel J.; Garçon, Véronique; Gilbert, Denis; Gutiérrez, Dimitri; Isensee, Kirsten; Jacinto, Gil S.; Limburg, Karin E.; Montes, Ivonne; Naqvi, S. W. A.; Pitcher, Grant C.; Rabalais, Nancy N.; Roman, Michael R.; Rose, Kenneth A.; Seibel, Brad A.; Telszewski, Maciej; Yasuhara, Moriaki; Zhang, Jing (৫ জানুয়ারি ২০১৮)। "Declining oxygen in the global ocean and coastal waters"। Science359 (6371): eaam7240। এসটুসিআইডি 206657115ডিওআই:10.1126/science.aam7240অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 29301986বিবকোড:2018Sci...359M7240B