কৃষি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
১০৬ নং লাইন: ১০৬ নং লাইন:


২০১৯ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে, গ্লোবাল এভারগ্রিনিং অ্যালায়েন্স অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি এবং সংরক্ষণমূলক চাষাবাদকে উন্নীত করার জন্য একটি উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন আলাদা করা (কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন)। জোটটির লক্ষ্য হল ৫.৭৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গাছের আচ্ছাদন পুনরুদ্ধার করা, ৬.৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সুস্থ গাছ-ঘাসের ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকাতে কার্বন আটক করা। ২০৫০ সালের মধ্যে এই পুনরুদ্ধারকৃত ভূমিতে প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন টন কার্বন আটকে ফেলার কথা। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপ হলো "গ্র্যান্ড আফ্রিকান সাভানা গ্রিন আপ" প্রকল্প। ২০১৯ সালে, লক্ষ লক্ষ পরিবার ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করেছে এবং সাহেল অঞ্চলে খামারগুলোতে গাছের গড় আচ্ছাদন ১৬% এ পৌঁছেছে।
২০১৯ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে, গ্লোবাল এভারগ্রিনিং অ্যালায়েন্স অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি এবং সংরক্ষণমূলক চাষাবাদকে উন্নীত করার জন্য একটি উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন আলাদা করা (কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন)। জোটটির লক্ষ্য হল ৫.৭৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গাছের আচ্ছাদন পুনরুদ্ধার করা, ৬.৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সুস্থ গাছ-ঘাসের ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকাতে কার্বন আটক করা। ২০৫০ সালের মধ্যে এই পুনরুদ্ধারকৃত ভূমিতে প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন টন কার্বন আটকে ফেলার কথা। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপ হলো "গ্র্যান্ড আফ্রিকান সাভানা গ্রিন আপ" প্রকল্প। ২০১৯ সালে, লক্ষ লক্ষ পরিবার ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করেছে এবং সাহেল অঞ্চলে খামারগুলোতে গাছের গড় আচ্ছাদন ১৬% এ পৌঁছেছে।

====== জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি ======
[[চিত্র:Climate_Smart_Village_Mango_Field_in_Myanmar.jpg|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Climate_Smart_Village_Mango_Field_in_Myanmar.jpg|alt=|থাম্ব|মায়ানমারের একজন স্থানীয় কৃষক জলবায়ু-স্মার্ট গ্রামের অংশ হিসেবে একটি আমের বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।]]
জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি (CSA) হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি সমন্বিত পদ্ধতি যাতে কৃষিপদ্ধতি, গবাদিপশু, এবং ফসলকে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে, কৃষি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস করে যথাসম্ভব জলবায়ু পরিবর্তন রোধেরও চেষ্টা করা হয়। এই কৌশল বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।<ref>{{cite web|title=Climate-Smart Agriculture|url=https://www.worldbank.org/en/topic/climate-smart-agriculture|accessdate=2019-07-26|website=[[World Bank]]}}</ref>জলবায়ু স্মার্ট কৃষিতে কেবল কার্বন শোষণকারী কৃষি ব্যবস্থাা বা টেকসই কৃষি নয়, কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হয়।

জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির (CSA) তিনটি স্তম্ভ রয়েছে:

* কৃষিতে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি।
* জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলা।
* কৃষি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস করা বা সম্পূর্ণ নিরসন করা।

ফসলের ওপর ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাড়ন্ত তাপমাত্রা এবং তাপের চাপ মোকাবেলা করতে, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি তাপ-সহিষ্ণু ফসলের জাত, মাটিতে আবরণ (Mulching), পানি ব্যবস্থাপনা, শেড হাউস, সীমানা বৃক্ষরোপণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস,<ref>{{Cite journal|last2=Chatterjee|first2=Soumendu|date=2022-01-20|title=Responses of soil organic carbon to conservation practices including climate-smart agriculture in tropical and subtropical regions: A meta-analysis|url=https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0048969721055054|pages=150428|doi=10.1016/j.scitotenv.2021.150428|issn=0048-9697|pmid=34818818|last1=Das|first1=Sharmistha|last3=Rajbanshi|first3=Joy|journal=Science of the Total Environment|volume=805|bibcode=2022ScTEn.805o0428D|s2cid=240584637}}</ref> এবং গবাদি পশুর জন্য উপযুক্ত বসবাসের স্থান ও পর্যাপ্ত জায়গা নিশ্চিত করার কথা বলে।<ref>{{Cite web|last=Deutsche Gesellschaft fur Internationale Zusammenarbeit (GIZ)|title=What is Climate Smart Agriculture?|url=https://www.giz.de/en/downloads/ICCAS_What%20is%20Climate%20Smart%20Agriculture_FS_EN_2018.pdf|access-date=2022-06-04}}</ref> জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করে ফসল উৎপাদন অটল রাখার চেষ্টা করে।<ref>{{Cite journal|last2=Gujre|first2=Nihal|date=2022-11-01|title=Role of existing and emerging technologies in advancing climate-smart agriculture through modeling: A review|url=https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1574954122002552|pages=101805|doi=10.1016/j.ecoinf.2022.101805|issn=1574-9541|last1=Gupta|first1=Debaditya|last3=Singha|first3=Siddhartha|last4=Mitra|first4=Sudip|journal=Ecological Informatics|volume=71|s2cid=252148026}}</ref><ref>{{Cite book|title=Climate Smart Agriculture Building Resilience to Climate Change|last2=McCarthy|first2=Nancy|year=2018|publisher=[[Springer Publishing|Springer]]|pages=13|language=English|isbn=978-3-319-61193-8|last1=Lipper|first1=Leslie|last3=Zilberman|first3=David|last4=Asfaw|first4=Solomon|last5=Branca|first5=Giacomo|location=Cham, Switzerland}}</ref>

সরকারি মূল নীতি, বাজায়, এবং পরিকল্পনা কাঠামোয় জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি নীতিমালা কার্যকর হতে হলে তা যথাসম্ভব বিস্তৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখতে সক্ষম হতে হবে। এছাড়াও তা অবশ্যই দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল, পদক্ষেপ, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সাথে সমন্বিত হবে।<ref>{{Cite web|last=|first=|date=|title=Climate-Smart Agriculture Policies and planning|url=http://www.fao.org/climate-smart-agriculture/policies-planning/en/|url-status=live|archive-url=https://web.archive.org/web/20160331063041/http://www.fao.org:80/climate-smart-agriculture/policies-planning/en/|archive-date=2016-03-31|access-date=|website=}}</ref>


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==

১৪:৩৯, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কৃষি, বনায়ন এবং ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্র থেকে বিশ্বব্যাপী ১৩% থেকে ২১% গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। কৃষিকাজ সরাসরি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সেইসাথে, বনভূমির মতো অকৃষি জমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তরের মাধ্যমেও প্রভাব ফেলে। কৃষিকাজ থেকে মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের অর্ধেকেরও বেশি অংশ আসে নাইট্রাস অক্সাইড এবং মিথেন থেকে। পশুপালন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের একটি প্রধান উৎস।

বিশ্বব্যাপী মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের এক-চতুর্থাংশের জন্য খাদ্য ও কৃষিকাজ দায়ী।[১]

ভূমি ব্যবহার ও জীবাশ্ম জ্বালানির বড় ভোক্তা হওয়ার পাশাপাশি, কৃষিকাজ ধান চাষ এবং গবাদি পশু পালনের মতো কার্যাবলির মাধ্যমে সরাসরি এই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণে অবদান রাখে। বিগত ২৫০ বছরে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির তিনটি প্রধান কারণ হল জীবাশ্ম জ্বালানি, ভূমি ব্যবহার ও কৃষিকাজ।

খামারের প্রাণীদের পরিপাকতন্ত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: মনোগ্যাস্ট্রিক এবং রোমিন্যান্ট। গরুর মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য রোমিন্যান্ট গবাদি পশু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণে শীর্ষস্থানীয়। শূকর এবং হাঁস-মুরগি জাতীয় মনোগ্যাস্ট্রিক প্রাণী পালন থেকে নির্গমণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। এসব প্রাণীর খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের সক্ষমতা বেশি এবং মিথেনও কম উৎপাদন করে।

নাইট্রোজেন সারের উৎপাদন এবং ব্যবহারকালে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয় তা মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের প্রায় ৫%। নিঃসরণ কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল কম সার ব্যবহার করা এবং সারের ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমণ এড়াতে ফসল কাটার পর মাটিতে থাকা শিকড় ও অবশিষ্টাংশের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের প্রভাব কমানো এবং উৎপাদন আরও কমাতে কৃষিক্ষেত্রে অনেক কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতির মধ্যে আছে জলবায়ু-সম্মত কৃষিকাজ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং আরও কার্যকরী পশুপালন ব্যবস্থাপনা। সারের কার্যকর ব্যবহার, সৌরশক্তির মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসে নির্ভরতা বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, গবাদি পশুর খাবার, পানি দেওয়ার পরিমাণ, সময় এবং স্থানে বৈচিত্র্য আনা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। আর, প্রাণীজ খাবারের উৎপাদন ও ব্যবহার কমানোও এর অংশ। কৃষিক্ষেত্র থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমাতে এবং অধিকতর টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বেশ কিছু নীতি কার্যকর হতে পারে।

কৃষি কাজ থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন

কৃষিকাজের মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হয়।

কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন

জমি চাষ করা, ফসল লাগানো এবং পণ্য পরিবহনের মত কৃষি কাজের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন ঘটে। কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড বিশ্বব্যাপী মোট গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ১১%। জমিতে চাষ কম করা, ফাঁকা জায়গা কমানো, ফসল কাটার পর অবশিষ্ট অংশ মাটিতে ফেরত দেওয়া এবং আবরণী ফসল (cover crops) বেশি করে ব্যবহার করার মতো কৃষি পদ্ধতিগুলি কার্বন নির্গমন কমাতে পারে।

মিথেন নির্গমন

২০১৯ সালে কৃষিকাজ থেকে মিথেন নির্গমন। মিথেন (CHa) নির্গমন কার্বন ডাই অক্সাইডের সমতুল্য টন (CO2e) এককে পরিমাপ করা হয়।[২]

পশুপালন থেকে উৎপন্ন মিথেন নির্গমন বিশ্বের কৃষিঘটিত গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রধানতম উৎস। মোট মানবসৃষ্ট গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ১৪.৫% এর জন্য দায়ী পশুপালন। একটি গরু বছরে প্রায় ১০০ কেজি মিথেন নির্গমন করে। যদিও কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় মিথেনের বায়ুমণ্ডলে অবস্থানকাল অনেক কম, তবুও তা তাপ শোষণ করার ক্ষেত্রে ২৮ গুণ বেশি সক্ষম। পশুপালন কেবল ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গমনেই অবদান রাখে না, এর জন্য প্রচুর জমিরও প্রয়োজন হয় এবং অত্যধিক চারণভূমির ব্যবহার মাটির গুণমান কমিয়ে দেয় এবং প্রজাতির বৈচিত্র্য হ্রাস করে। মিথেন নির্গমন কমানোর কয়েকটি উপায়ের মধ্যে রয়েছে মাংস কম খেয়ে উদ্ভিদভিত্তিক খাবার বেশি করা, পশুদের আরও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, সার ব্যবস্থাপনা এবং কম্পোস্টিং।

পশুপালনের পর চিরায়ত ধান চাষ হলো কৃষিতে মিথেন নির্গমনের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। এর তাৎক্ষণিক উষ্ণায়নে কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে বিমান চলাচলের সমান প্রভাব রয়েছে। কর্ন, গম এবং দুধের মতো কৃষিজাত পণ্যের উচ্চ চাহিদার কারণে কৃষি নীতিগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা সীমিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) এর বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগ, Feed the Future প্রকল্পটি খাদ্যের অপচয় ও বর্জ্য নিরসনের বিষয়ে কাজ করছে। খাদ্যের অপচয় এবং বর্জ্য মোকাবেলা করে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রশমনও অর্জন করা সম্ভব। ১২টি দেশের ২০টি মূল্য শৃঙ্খলে (value chain) শুধুমাত্র দুগ্ধ খাতে মনোনিবেশ করে খাদ্য অপচয় এবং বর্জ্য ৪-১০% কমানো যেতে পারে। এই সংখ্যাগুলি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং জনগণের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত রেখেও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে পারে।

নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন

বিশ্বব্যাপী নাইট্রাস অক্সাইড বাজেট।

সংশ্লেষিত ও জৈব সারের বর্ধিত ব্যবহার থেকে নাইট্রাস অক্সাইড নিঃসৃত হয়। সার ফসলের উৎপাদন বাড়ায় এবং দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কৃষি থেকে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ৬%। ১৯৮০ সালের পর থেকে এটি ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ৬% একটি ক্ষুদ্র অবদান বলে মনে হতে পারে, নাইট্রাস অক্সাইড কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় প্রতি কেজি তাপ শোষণ করার ক্ষেত্রে ৩০০ গুণ বেশি কার্যকরী এবং এর বায়ুমণ্ডলে অবস্থানকাল প্রায় ১২০ বছর। ফোঁটা সেঁচ প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ, অতিরিক্ত সার প্রয়োগ এড়ানোর জন্য মাটির পুষ্টি পর্যবেক্ষণ করা এবং সার প্রয়োগের পরিবর্তে আবরণী ফসল (cover crops) ব্যবহার করার মতো ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলি নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বিশ্বব্যাপী মিথেন বাজেট।

কার্যকলাপের ধরন অনুযায়ী নির্গমন

ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন

ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলিতে ভূমি ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটেছে। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য মোট নির্গমনের পরিমাণ আয়তক্ষেত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।[৩]
বিশ্বব্যাপী কৃষি খামার থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন (কার্যক্রম অনুযায়ী)

ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তনের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষিকাজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এর প্রধান চারটি উপায় নিম্নরূপ:

  • বন উজাড়ের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন: বনভূমি কেটে ফেলে কৃষিজমি তৈরি করার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।
  • ধান চাষ থেকে মিথেন নির্গমন: জমিতে পানি জমিয়ে রাখা ধানচাষের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই পদ্ধতি বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
  • গবাদি পশুর পরিপাকতন্ত্র থেকে মিথেন নির্গমন: গরু, ছাগল ইত্যাদি প্রাণীর পরিপাক প্রক্রিয়া থেকেও মিথেন গ্যাস নির্গত হয়।
  • সার প্রয়োগ থেকে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন: কৃষিতে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমনের একটি প্রধান উৎস হল রাসায়নিক সারের ব্যবহার।

উপরের কৃষি-সম্পর্কিত কার্যকলাপ থেকে মোট মিথেন নির্গমনের ৫৪%, প্রায় ৮০% নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন, এবং ভূমি ব্যবহারের সাথে জড়িত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় সম্পূর্ণটাই সংঘটিত হয়।

১৭৫০ সাল থেকে ভূ-আচ্ছাদনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, কারণ মানুষ বনভূমি উজাড় করে ফেলেছে। কৃষিক্ষেত্র এবং চারণভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য যখন বনভূমি পরিষ্কার করা হয়, তখন ওই এলাকার ভূপৃষ্ঠ থেকে সূর্যালোক প্রতিফলনের মাত্রা (albedo) বেড়ে যায়। এর ফলে স্থানীয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাস - উভয়ই ঘটতে পারে। বন উজাড় বা অপসারণ কার্বন পুনঃশোষণ প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে, যার ফলে প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস, কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, বনভূমি সাফ করার জন্য গাছ কেটে পুড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতির কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুবাহিত কণা নির্গত হয়। ভূমি পরিষ্কারের কারণে মাটির কার্বন ধারণ ক্ষমতা ধ্বংস হতে পারে।

পশুসম্পদ

গবাদি পশু থেকে মিথেন নির্গত হয় এমন পশুপালন খামার।
গরু ও ভেড়ার মাংসের যেকোনো কৃষিজাত পণ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নির্গমন তীব্রতা রয়েছে।
নিয়ামানা পশুবাজার

পশুপালন এবং পশুসম্পদ-সম্পর্কিত কার্যক্রম যেমন বন উজাড় এবং জ্বালানী নিবিড় কৃষি পদ্ধতি, মানুষের তৈরি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১৮% এরও বেশি জন্য দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ৯%
  • বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনের ৩৫-৪০% (প্রধানত অন্ত্রের গাঁজন্য ও সারের কারণে)
  • বিশ্বব্যাপী নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমনের ৬৪% (প্রধানত সার ব্যবহারের কারণে)

পশু পালন কার্যক্রম জমির উপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে, কারণ শস্য যেমন ভুট্টা এবং আলফাফা এইসব প্রাণীদের খাওয়ানোর জন্য চাষ করা হয়।

২০১০ সালে, অন্ত্রের গাঁজন্য সারা বিশ্বের সকল কৃষি কাজের জন্য মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৪৩% জন্য দায়ী ছিল। গরু-ছাগল জাতীয় প্রানীর মাংসের উৎপাদন বেশি কার্বন সমমানের পদচিহ্ন রাখে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন লাইফসাইকেল মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে। ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি ক্ষুদ্র প্রাণী প্রায় ৪৭৫ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমমানের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে অবদান রাখে, যা বিশ্ব কৃষি খাতের নির্গমনের প্রায় ৬.৫%। বিভিন্ন সামুদ্রিক শৈবাল প্রজাতির ব্যবহারের উপর গবেষণা চলছে, বিশেষ করে অ্যাসপ্যারাগপসিস আর্মাটা, যা গবাদি পশুদের মিথেন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।

বিশ্বব্যাপী, পশুপালনের কাজে সমস্ত কৃষিজমির ৭০%, বা পৃথিবীর উপরিতলের ৩০% জায়গা ব্যবহৃত হয়। মাটির ভবিষ্যত উর্বরতার ক্ষেত্রে প্রাণী চরানোর পদ্ধতিও গুরুত্ব রাখে। গবাদিপশুর চারণভূমি বারবার একই রাখলে তা মাটিকে কঠিন এবং অস্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। পশু খামারের সম্প্রসারণ দেশীয় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে প্রভাবিত করে এবং তাদের সংখ্যা হ্রাস করে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো আরেকটি কার্যকরী উপায়। ২০২২ সালে জরিপ করা ইউরোপীয়দের অর্ধেকেরও বেশি (৫১%) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যের পরিমাণ কমানোর পক্ষে সমর্থন করেছেন - ৪০% আমেরিকান এবং ৭৩% চীনা উত্তরদাতারাও একই মত পোষণ করেছেন।

স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউট পরামর্শ দিয়েছে যে পশুসম্পদ ভর্তুকিগুলিকে ধীরে ধীরে তুলে নেয়া উচিত।

সার উৎপাদন

নাইট্রোজেন সারের উৎপাদন ও ব্যবহারের সময় যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়, তা মোট বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৫% বলে অনুমান করা হয়। এর এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় উৎপাদনের সময় এবং বাকি দুই-তৃতীয়াংশ সার ব্যবহারের সময়। উर्वরকের কারণে নির্গমন হ্রাস করার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল সারের পরিমাণ কম ব্যবহার করা।

ডঃ আন্দ্রে ক্যাবরেরা সেরেনহোর মতে, "আমরা সারের ব্যবহারে অবিশ্বাস্য রকমের অদক্ষ। আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সার ব্যবহার করছি।" মাটির ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন সারকে নাইট্রাস অক্সাইডে রূপান্তরিত করতে পারে, যা একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সারের কারণে মানুষের দ্বারা প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিয়ন টন নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমনের হিসাব পাওয়া গেছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।

চাল উৎপাদন

বিজ্ঞানীরা ধান থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস পরিমাপ করছেন।

২০২২ সালে, ধান চাষ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৫.৭ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইডের সমতুল্য (CO2eq), যা মোট নির্গমনের ১.২%। কৃষি খাতের মধ্যে, চাল উৎপাদনের কারণে প্রায় অর্ধেক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। কৃষিজমিতে উৎপন্ন মিথেনের প্রায় ৩০% এবং নাইট্রাস অক্সাইডের প্রায় ১১% -এর জন্য দায়ী চাষাবাদ। দীর্ঘমেয়াদী প্লাবিত চালক্ষেত্র থেকে মিথেন নির্গত হয়, কারণ এটি মাটিকে বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেন শোষণ করতে বাধা দেয়, ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের অ্যানেরোবিক ফারমেন্টেশন (এক ধরনের গাঁজন) ঘটে। নতুন জাতের চাল রোপণ, ক্রমাগত জলাবদ্ধ না রাখা, এবং খড় অপসারণের মাধ্যমে নির্গমন সীমিত করা যেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি

২০১৯ সালের হিসাবে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের কারণে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের তিন-চতুর্থাংশ সরাসরি উৎপাদিত হয়, যখন এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি হয় যা এই খাতগুলোর কার্যক্রমকে সমর্থন করে।
refer to caption and image description
১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে, কৃষি ক্ষেত্র থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন (অঞ্চল অনুযায়ী)

২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কৃষি, বনজ সম্পদ ব্যবহার এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১৩% থেকে ২১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট কৃষি-সংক্রান্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের অর্ধেকেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে নাইট্রাস অক্সাইড এবং মিথেন।

২০২০ সালে অনুমান করা হয়েছিল যে সমগ্র খাদ্য ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৩৭% এ অবদান রাখে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটি ৩০-৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী অনুমান

২০১০ সালে কৃষি, বনজ সম্পদ ব্যবহার এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলে বার্ষিক বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ২০-২৫% বৃদ্ধি পাওয়ার অনুমান করা হয়েছিল।

প্রশমন

উন্নত দেশে

উন্নত দেশগুলোর সরকারি নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্রকে প্রায়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি খাতকে ইইউ নির্গমন বাণিজ্য প্রকল্প থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যেটি ইইউ-এর মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৪০% আওতাভুক্ত।

উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন নিরসন ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে:

  • আরও স্থিতিস্থাপক ফসলের জাতের প্রজনন, এবং ফসলের প্রজাতির বৈচিত্র্যকরণ।
  • উন্নত কৃষি বনাঞ্চল প্রজাতির ব্যবহার।
  • বৃষ্টিপাতের সংগ্রহ ও ধারণ, এবং উন্নত সেচ পদ্ধতির ব্যবহার।
  • বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কৃষি বনাঞ্চল প্রসার।
  • উদীয়মান পানি সংগ্রহের কৌশলের ব্যবহার (যেমন সমোচ্চরেখা খনন)।

নিউজিল্যান্ডের গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর সময় কৃষি উৎপাদনকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের দিকে পরিবর্তন করলে কৃষি খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় ১% খরচ হবে। উল্লেখ্য, এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আনুমানিক সঞ্চয়ের তুলনায় অনেক কম।

উন্নয়নশীল দেশসমূহে কৃষির পরিবেশগত প্রভাব

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, কৃষি হল মোট বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি অংশের জন্য দায়ী। যেহেতু বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অংশ প্রায় ৪%, এই পরিসংখ্যানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে কৃষি কাজে উচ্চ মাত্রার গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। উদ্ভাবনী কৃষি পদ্ধতি ও প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং তাতে মানিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এই দেশগুলিতে কৃষি উৎপাদনশীলতা কম; দারিদ্র্য, অসহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা উঁচু মাত্রায় বিরাজমান; এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব বিশেষভাবে কঠোর হবে বলে আশঙ্কা করা হয়। কৃষির প্রয়োজনীয় নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং এর ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কৃষি ব্যবস্থায় পরিবর্তন সম্ভব হবে। এই প্রেক্ষাপটে, নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যাপক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সরকারি বা এনজিও-সমর্থিত প্রকল্পসমূহ কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় আরও সক্ষম হতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সেচের অবকাঠামো নির্মাণ করা যেতে পারে, যা অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের মধ্যেও কৃষকদের নির্ভরযোগ্য জলের উৎস সরবরাহ করবে। বর্ষাকালে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও শুষ্ক মৌসুমে কাজে লাগানো যেতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়।

কিছু প্রোগ্রাম, যেমন Asociación de Cooperación para el Desarrollo Rural de Occidente (C.D.R.O.), যেটি একটি গুয়াতেমালার প্রকল্প ও ২০১৭ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে চলতো, তা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কৃষকদের সাহায্য করার জন্য কৃষি বনায়ন (agroforestry) এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উপর জোর দেয়। C.D.R.O. কৃষকদের নতুন ও অভিযোজনক্ষম ফসল রোপণ করার জন্য সম্পদ সরবরাহ করেছে, যাতে তাদের প্রচলিত ভুট্টাকে তাপমাত্রার তারতম্য ও তুষারপাত থেকে রক্ষা করা যায়। এই সংস্থা বৈরী আবহাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে পূর্বাভাস পেতে একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও বসিয়েছে এবং তুষারপাত, অত্যধিক গরম, আর্দ্রতা বা খরার সময়কাল সম্পর্কে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে টেক্সট বার্তা পাঠাতো। সেচ, জল সংগ্রহ, কৃষি বনায়ন ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে মনোনিবেশকারী প্রকল্পগুলি মধ্য আমেরিকার বাসিন্দাদের জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে।

কৃষি মডেলসমূহের মূল্যায়ন ও জলবায়ু প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার সক্ষমতার আন্তঃতুলনা করার জন্য কৃষি মডেল আন্তঃতুলনা ও উন্নয়ন প্রকল্প (AgMIP) ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায়, AgMIP আঞ্চলিক গবেষণা দলসমূহ (RRT) জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কৃষি-প্রভাবগুলোকে (জৈবভৌতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবসহ) আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সমন্বিত মূল্যায়ন পরিচালনা করছে। অন্যান্য AgMIP উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্লোবাল গ্রিডেড মডেলিং, তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তি (IT) টুল তৈরি, ফসলের কীটপতঙ্গ এবং রোগের সিমুলেশন, স্থান-ভিত্তিক ফসল-জলবায়ু সংবেদনশীলতা অধ্যয়ন, এবং তথ্য একীভূতকরণ ও স্কেলিং।

২০১৯ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে, গ্লোবাল এভারগ্রিনিং অ্যালায়েন্স অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি এবং সংরক্ষণমূলক চাষাবাদকে উন্নীত করার জন্য একটি উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন আলাদা করা (কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন)। জোটটির লক্ষ্য হল ৫.৭৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গাছের আচ্ছাদন পুনরুদ্ধার করা, ৬.৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সুস্থ গাছ-ঘাসের ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং ৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকাতে কার্বন আটক করা। ২০৫০ সালের মধ্যে এই পুনরুদ্ধারকৃত ভূমিতে প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন টন কার্বন আটকে ফেলার কথা। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপ হলো "গ্র্যান্ড আফ্রিকান সাভানা গ্রিন আপ" প্রকল্প। ২০১৯ সালে, লক্ষ লক্ষ পরিবার ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করেছে এবং সাহেল অঞ্চলে খামারগুলোতে গাছের গড় আচ্ছাদন ১৬% এ পৌঁছেছে।

জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি
মায়ানমারের একজন স্থানীয় কৃষক জলবায়ু-স্মার্ট গ্রামের অংশ হিসেবে একটি আমের বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি (CSA) হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি সমন্বিত পদ্ধতি যাতে কৃষিপদ্ধতি, গবাদিপশু, এবং ফসলকে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে, কৃষি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস করে যথাসম্ভব জলবায়ু পরিবর্তন রোধেরও চেষ্টা করা হয়। এই কৌশল বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।[৪]জলবায়ু স্মার্ট কৃষিতে কেবল কার্বন শোষণকারী কৃষি ব্যবস্থাা বা টেকসই কৃষি নয়, কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হয়।

জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির (CSA) তিনটি স্তম্ভ রয়েছে:

  • কৃষিতে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলা।
  • কৃষি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস করা বা সম্পূর্ণ নিরসন করা।

ফসলের ওপর ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাড়ন্ত তাপমাত্রা এবং তাপের চাপ মোকাবেলা করতে, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি তাপ-সহিষ্ণু ফসলের জাত, মাটিতে আবরণ (Mulching), পানি ব্যবস্থাপনা, শেড হাউস, সীমানা বৃক্ষরোপণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস,[৫] এবং গবাদি পশুর জন্য উপযুক্ত বসবাসের স্থান ও পর্যাপ্ত জায়গা নিশ্চিত করার কথা বলে।[৬] জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করে ফসল উৎপাদন অটল রাখার চেষ্টা করে।[৭][৮]

সরকারি মূল নীতি, বাজায়, এবং পরিকল্পনা কাঠামোয় জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি নীতিমালা কার্যকর হতে হলে তা যথাসম্ভব বিস্তৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখতে সক্ষম হতে হবে। এছাড়াও তা অবশ্যই দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল, পদক্ষেপ, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সাথে সমন্বিত হবে।[৯]

তথ্যসূত্র

  1. "Food production is responsible for one-quarter of the world's greenhouse gas emissions"Our World in Data। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২০ 
  2. Ritchie, Hannah; Roser, Max; Rosado, Pablo (২০২০-০৫-১১)। "CO₂ and Greenhouse Gas Emissions"Our World in Data 
  3. Fig. SPM.2c from Working Group III (৪ এপ্রিল ২০২২)। Climate Change 2022 / Mitigation of Climate Change / Summary for Policymakers (পিডিএফ)। Intergovernmental Panel on Climate Change। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 978-92-9169-160-9। ২২ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা – IPCC.ch-এর মাধ্যমে।  GDP data is for 2019.
  4. "Climate-Smart Agriculture"World Bank। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৬ 
  5. Das, Sharmistha; Chatterjee, Soumendu; Rajbanshi, Joy (২০২২-০১-২০)। "Responses of soil organic carbon to conservation practices including climate-smart agriculture in tropical and subtropical regions: A meta-analysis"Science of the Total Environment805: 150428। আইএসএসএন 0048-9697এসটুসিআইডি 240584637 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1016/j.scitotenv.2021.150428পিএমআইডি 34818818 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বিবকোড:2022ScTEn.805o0428D 
  6. Deutsche Gesellschaft fur Internationale Zusammenarbeit (GIZ)। "What is Climate Smart Agriculture?" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৪ 
  7. Gupta, Debaditya; Gujre, Nihal; Singha, Siddhartha; Mitra, Sudip (২০২২-১১-০১)। "Role of existing and emerging technologies in advancing climate-smart agriculture through modeling: A review"Ecological Informatics71: 101805। আইএসএসএন 1574-9541এসটুসিআইডি 252148026 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1016/j.ecoinf.2022.101805 
  8. Lipper, Leslie; McCarthy, Nancy; Zilberman, David; Asfaw, Solomon; Branca, Giacomo (২০১৮)। Climate Smart Agriculture Building Resilience to Climate Change (English ভাষায়)। Cham, Switzerland: Springer। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন 978-3-319-61193-8 
  9. "Climate-Smart Agriculture Policies and planning"। ২০১৬-০৩-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।