প্লাস্টিক দূষণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Anjon mallick (আলোচনা | অবদান)
নতুন পৃষ্ঠা: thumb|300px|right|Plastic waste at Coco Beach in India. '''প্লাস্টিক দূষন''' হল পরিবে...
(কোনও পার্থক্য নেই)

২০:৩৪, ২৬ মে ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

Plastic waste at Coco Beach in India.

প্লাস্টিক দূষন হল পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক পদার্থের আহরণ যা পরবর্তীতে সম্পূর্ণ প্রাণিকুলের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে ৷[১] নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বানিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পন্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না ৷ এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয় ৷ মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ ৷ প্লাস্টিক এমনই এক পদার্থ যা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে ৷ [২][৩] তাই প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে ৷ সাধারনত উদ্ভিদকুল, জলজ প্রাণি, দ্বিপ অঞ্চলের প্রাণিরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ৷ প্লাস্টিক বর্জ্য ঐসকল প্রাণির বাসস্থাল, খাদ্য সংগ্রহের স্থান, উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহনের পথে বাধার সৃষ্টি করে ৷[৪] শুধুমাত্র উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণি নয় মানুষ প্লাস্টিক দূষণের কারণে পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৷ থাইরয়েড হরমোন বা হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাস্টিক দূষণ পরোক্ষভাবে দায়ী ৷ শুধুমাত্র আমেরিকাতে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পন্য ব্যবহৃত হয় ৷ এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ পুনঃচক্রায়ন হয়ে থাকে ৷ অন্য ৩.৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আকারে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় ৷ [৫]বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক পন্যের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে ৷ বাংলাদেশেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে ৷

প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রকারভেদ:

তিন ধরণের প্লাস্টিক সাধারনত প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী ৷(আকারের ভিত্তিতে) ১৷ মাইক্রো ২৷ ম্যাক্রো ৩৷মেগা/মেসো [৬]

মাইক্রো বর্জ্য

যে সকল প্লাস্টিক বর্জ্যের আকার ২ µm থেকে ৫ mm এর মধ্যে, সে সকল প্লাস্টিক বর্জ্যকে মাইক্রোবর্জ্য বলা হয় ৷ মেসো ও ম্যাক্রো বর্জ্যকে ভাঙন ও পেষণের মাধ্যমে মাইক্রো বর্জ্যে পরিণত করা যায় ৷[৪] মাইক্রো বর্জ্য সাধারণত নারডল নামে পরিচিত ৷ এগুলো দ্বারা নতুন প্লাস্টিক পণ্য তৈরী করা হয়ে থাকে ৷ এগুলো আকার ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে পরিবেশে খুব দ্রুত মিশে যেতে পারে ৷ মাইক্রো বর্জ্যের ক্ষুদ্র আকারের কারণে "ফিল্টার ফিডিং জীব" এগুলো গ্রহন করে ৷ ২০০৪ সালে, আমেরিকার "ইউনিভার্সিটি অব প্লেমাউথ" এর রিচার্ড থমসন এক গবেষনার মাধ্যমে জানান , " ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্কটিকা ইত্যাদি অঞ্চলের সাগরের পানিতে প্রচুর পরিমানে মাইক্রো বর্জ্য পাওয়া যায় ৷[৩] থমসন ও তার সঙ্গীরা ঐঅঞ্চলের পানিতে গৃহস্থালি ও বানিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ভাঙ্গা অংশ খুজে পেয়েছেন যা মানুষের চুলের থেকেও ক্ষুদ্র ৷[৩] থমসন বলেন, এইসব পানিতে ৩,০০,০০০ প্লাস্টিক কণা/ কি.মি পরিমাণে মাইক্রো প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায় ৷ এগুলো সমুদ্রের পানিকে মারাত্মক দূষিত করেছে ৷

ম্যাক্রো বর্জ্য

ম্যাক্রো বর্জ্যের আকার সাধারনত ২০ mm এর চেয়ে বড় ৷ এদের মধ্যে প্লাস্টিক/পলিথিন ব্যাগ অন্যতম ৷ [৪] সমুদ্রের পানিতে এগুলো পাওয়া যায় যা সামুদ্রিক জীবের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে ৷

পরিবেশের উপর প্রভাব

প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপত্তির স্থান থেকে বিভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন আকারে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে ৷ সমুদ্র স্রোত, বাতাসের অসম গতি, ভৌগলিক বৈচিত্রতার কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ৷ ক্যারিবিয়ান সমুদ্র অঞ্চলে গেলে তা ভালভাবে উপলব্ধি করা যায় ৷ ঐসব অঞ্চলে সাধারণত মাইক্রো ও ম্যাক্রো আকারের প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায় ৷ যেহেতু প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ , তাই সৃষ্টির পর পুনঃচক্রায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটি পরিবেশে অবস্থান করে ৷ এটি নিয়মিত প্রাণির খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ছে (মাইক্রো কণাসমূহ) ,যা প্রাণির জন্য খুবই বিপদজনক ৷ বিভিন্ন উপায়ে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের ভারসম্যকে নষ্ট করছে ৷

মাটিতে প্লাস্টিক দূষণ

ক্লোরিনযুক্ত প্লাস্টিক পরিবেশে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা ভূগর্ভস্থ পানি ও ভূপৃষ্ঠীয় পানির সাথে মিশে যায় ৷ অতঃপর ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্টীয় পানির গ্রহনের সাথে সাথে তা আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে ৷ এভাবেই পানি গ্রহনের সাথে সাথে প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি ৷ [৭]মাটিতে বিভিন্ন ধরণের অনুজীব বাস করে যা প্লাস্টিক অণুর ভাঙনে সাহায্য করে ৷ এইসকল অণুজীবের মধ্য "সিউডোমোনাস( Pseudomonas)" , "নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া (nylon-eating bacteria)" , " ফ্লাভো ব্যাকটেরিয়া ( Flavobacteria) অন্যতম ৷ এইসকল ব্যাকটেরিয়া "নাইলোনেজ" এনজাইম ক্ষরণের মাধ্যমে নাইলন অণুকে ভেঙ্গে ফেলে ৷ জীবাণুবিয়োজ্য প্লাস্টিক ভাঙনের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় ৷ মিথেন এক প্রকার গ্রীণহাউজ গ্যাস ৷ এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী ৷[৮]

সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক দূষণ

২০১২ সালে, গবেষনার মাধ্যেমে জানানো হয় যে, সমগ্র বিশ্বের সমুদ্রে আনুমানিক ১৬৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আছে ৷ [৯] "নারডল" নামক এক প্রকার প্লাস্টিক যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ৷ এটি এমনই এক শিল্পজাত প্লাস্টিক যা প্লাস্টিক পন্য বা কার্গো শীপ তৈরীতে ব্যবহৃত হয় ৷ [১০] প্রচুর পরিমাণে নারডল সমুদ্রের পানিতে পতিত হয় ৷ বছর বছর এই প্লাস্টিক পদার্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে ৷ এর ফলে প্লাস্টিক থেকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর রাষায়নিক পদার্থ যেমন: বায়োস ফেনল, পলিস্টিরিন ইত্যাদি পরিস্রুত হয় ৷ [৯] [১১] এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, সমুদ্রের পানি ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে ৷ [১২]

প্রাণিকূলের উপর প্রভাব

Sea turtle entangled in a ghost net
প্লাস্টিক দূষণ প্রাণিকুলের খাদ্যচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে ৷ [১৩][১৪] এটি  সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণির উপর বেশি বিরুপ ফেলে ৷  " Introduction to Marine Biology" বই অনুসারে প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক প্রাণির জন্য "একক সর্বাধিক হুমকি" র মত ৷ [১৫] বেশকিছু  সামুদ্রিক প্রজাতি,  যেমন: সামুদ্রিক কচ্ছপের পাকস্থলীতে বিজ্ঞানিরা প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য পেয়েছেন ৷ যখনই এমনটা ঘটে,  তখন ঐসব প্রাণি ক্ষুধায় ভোগে কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য তাদের পরিপাকতন্ত্রকে বন্ধ করে দেয় ৷ এতে প্রাণির মৃত্যুও ঘটে ৷ অনেকক্ষেত্রে,  সামুদ্রিক প্রাণি প্লাস্টিক পন্য যেমন জাল দ্বারা বিজড়িত হয় ৷ যার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মৃত্যুও ঘটে থাকে ৷

তথ্যসূত্রঃ

  1. "Plastic pollution"। Encyclopaedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৩ 
  2. Hester, Ronald E.; Harrison, R. M. (editors) (2011). Marine Pollution and Human Health. Royal Society of Chemistry. pp. 84-85. ISBN 184973240X
  3. Lytle, Claire Le Guern। "Plastic Pollution"Coastal Care। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  4. Hammer, J; Kraak, MH; Parsons, JR (২০১২)। "Plastics in the marine environment: the dark side of a modern gift"। Reviews of environmental contamination and toxicology220: 1–44। ডিওআই:10.1007/978-1-4614-3414-6_1 
  5. Turning rubbish into money – environmental innovation leads the way
  6. Driedger, Alexander G.J.; Dürr, Hans H.; Mitchell, Kristen; Van Cappellen, Philippe (মার্চ ২০১৫)। "Plastic debris in the Laurentian Great Lakes: A review"। Journal of Great Lakes Research41 (1): 9–19। ডিওআই:10.1016/j.jglr.2014.12.020 
  7. Aggarwal,Poonam; (et al.) Interactive Environmental Education Book VIII. Pitambar Publishing. p. 86. ISBN 8120913736
  8. Biello, David (জুন ৫, ২০১১)। "Are Biodegradeable Plastics Doing More Harm Than Good?"। Scientific American। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৩ 
  9. Knight 2012, p. 12.
  10. Knight 2012, p. 11.
  11. Knight 2012, p. 13.
  12. Eriksen, Marcus (ডিসেম্বর ১০, ২০১৪)। "Plastic Pollution in the World's Oceans: More than 5 Trillion Plastic Pieces Weighing over 250,000 Tons Afloat at Sea"। PLOS ONE9: e111913। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0111913 
  13. Daniel D. Chiras (2004). Environmental Science: Creating a Sustainable Future. Jones & Bartlett Learning. pp. 517-518. ISBN 0763735698
  14. Knight 2012, p. 5.
  15. Karleskint, George; (et al.) (2009).Introduction to Marine Biology. Cengage Learning. p. 536. ISBN 0495561975