২০০২ কলকাতা আমেরিকান কালচারাল সেন্টার জঙ্গি হানা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২০০২ কলকাতা আমেরিকান কালচারাল সেন্টার জঙ্গি হানা
ভারতের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
স্থানকলকাতা, কলকাতা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
তারিখ২২ জানুয়ারি ২০০২
নিহত
আহত২০

২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে একটি ইসলামি জঙ্গি হানায় চার জন পুলিশ কনস্টেবল ও একজন বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিহত হন এবং ২০ জন লোক আহত হন। কলকাতার আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে একটি গ্রন্থাগার, আমেরিকান দূতাবাসের জনসংযোগ কার্যালয়, একটি মুদ্রণ বিভাগ ও একটি সাংস্কৃতিক শাখা অবস্থিত।[১]

ভারতীয় সময় সকাল ৬টা ১৫ মিনিট নাগাদ দুই জঙ্গি শাল মুড়ি দিয়ে মোটরসাইকেল চেপে আমেরিকান সেন্টার ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। তারা চেকপয়েন্টে না থেমে একটি একে-৪৭ বন্দুক থেকে পুলিশ কর্মীদের দিকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশেরাও পালটা গুলি চালায়।[২] মৃত চার পুলিশ কর্মী কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল। অপর এক মৃত নিরাপত্তা কর্মী বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা গ্রুপ ফোরের কর্মী।[২] জঙ্গি হানায় মৃত কনস্টেবলরা হলেন পীযূষ সরকার, উজ্জ্বল বর্মণ, সুরেশ হেমব্রম ও অনুপ মণ্ডল। এঁরা কলকাতা শসস্ত্র পুলিশ বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটেলিয়নের কর্মী ছিলেন।[৩]

দুটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে। হরকত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি (হুজি) সদস্য ফারহান মালিক[৪] হামলার দায় নিয়ে বলেন, এই হামলা “আমেরিকার অশুভ সাম্রাজ্যের” বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। অন্যদিকে আসিফ রাজা কম্যান্ডো নামে আরেক ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যও এই হামলার দায় স্বীকার করেন।[২] কলকাতার বিশিষ্ট জুতো ব্যবসায়ী পার্থপ্রতিম রায়বর্মণের অপহরণ মামলাতেও ফারহান মালিক পুলিশের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত ছিলেন।[১][৫]

এই জঙ্গি হানার চারদিন পর সালিম ও জাহিদ নামে দুই জন জঙ্গি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের হাজারিবাগে দিল্লি পুলিশের একটি দলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। এই দুই জঙ্গির মৃত্যুকালীন জবানবন্দী থেকে পুলিশ জানতে পারে, আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গি হানার সঙ্গে আফতাব আনসারি জড়িত।[৬]

২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারি দুবাই থেকে এই জঙ্গি হানার প্রধান অভিযুক্ত আফতাব আনসারি ওরফে ফারহান মালিক গ্রেফতার হন।[৫] ২০০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে ভারতে নিয়ে আসা হয়। আনসারি পাকিস্তানি ভ্রমণ নথি নিয়ে ঘুরছিলেন। তার পাসপোর্ট নম্বর ছিল জে ৮৭২১৪২। এটি ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোর থেকে ইস্যু করা হয়েছিল। এই পাসপোর্টে তার নাম ছিল শাফিক মোহাম্মদ রানা।[৭]

২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিশেষ সি.বি.আই আদালত আফতার আনসারি ও অন্য ছয় জঙ্গিকে এই হানার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে।[৮] ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১ নং ধারা অনুসারে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অপরাধে আফতাব আনসারি ও জামিলুদ্দিন নাসিরের মৃত্যুদণ্ড হয়।[৬] অন্য ছয় দোষীর নাম হল রেহান আলম, মাশারাত হোসেন, আদিল হাসান, হসরত আলম ও শাকির আখতার।[৮]

২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট আফতাব আনসারি ও আমিলুদ্দিন নাসিরের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে। তৎসহ অন্য তিন অভিযুক্তের ফাঁসির বদলে সাত বছরের কারাদণ্ড জারি করা হয়।[৯]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Bedi, Rahul (২০০২-০১-২৩)। "Gunmen kill five in attack on American offices"। Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  2. "SOUTH ASIA | Gunmen attack US centre in Calcutta"। BBC News। ২০০২-০১-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  3. "The Tribune, Chandigarh, India - Main News"। Tribuneindia.com। ২০০২-০১-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  4. "Dubai-based mafia don claims responsibility - The Times of India"। Timesofindia.indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  5. "India to seek Ansari's extradition from UAE"। rediff.com। ২০০২-০১-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  6. New Delhi, May 25,DHNS:। "SC suspends death sentence of Aftab Ansari"। Deccanherald.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  7. "The Tribune, Chandigarh, India - Main News"। Tribuneindia.com। ২০০২-০২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  8. "Front Page : Aftab Ansari, 6 others sentenced to death"। The Hindu। ২০০৫-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ 
  9. "Calcutta High Court upholds Aftab Ansari's death sentence"। NDTV.com। ২০১০-০২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]