সাহরা করিমি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাহরা করিমি
২০১৯ সালে সাহরা করিমি
জন্ম (1981-04-20) ২০ এপ্রিল ১৯৮১ (বয়স ৪৩)[১]
জাতীয়তাআফগানি, স্লোভাক
শিক্ষাএকাডেমি অব পারফর্মিং আর্টস, ব্রাটিস্লাভা হতে স্নাতক, স্নাতকোত্তরপিএইচডি
পরিচিতির কারণ
  • আফগান ফিল্ম-এর প্রথম নারী মহাপরিচালক (২০১৯)
  • "হাভা, মারিয়ম, আয়েশা" চলচ্চিত্রের পরিচালক (২০১৯)
উচ্চতা১৭০ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ৭ ইঞ্চি)

সাহরা করিমি ( পশতু: صحرا كريمي; জন্মঃ ২০ এপ্রিল, ১৯৮১)[২] একজন আফগান ও স্লোভাক চলচ্চিত্র পরিচালক ও চলচ্চিত্র শিল্প সংগঠক। আফগানিস্তানের সরকারী আফগান চলচ্চিত্র সংস্থা (আফগান ফিল্ম)-এর প্রথম নারী মহাপরিচালক।[৩][৪] তিনি আফগানিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা যিনি চলচ্চিত্রনির্মাণ বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন।[৩][৫][৬][৭] তিনি নারীদের নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রখ্যাত।

প্রারম্ভিক ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

সাহরা করিমি জন্ম ও বেড়ে ওঠা তেহরানে,[৮][৯][১০][১১] তিনি তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন স্লোভাকিয়ায়[১২] ১২ বছর স্লোভাকিয়ায় থাকাকালীন তিনি ব্রাতিস্লাভায় একাডেমি অব মিউজিক অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস-এ স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষদ থেকে সিনেমা (কাহিনিচিত্র পরিচালনা ও চিত্রনাট্য) বিষয়ে পিএইচডি সনদ অর্জন করেন।[১৩] যা, এ বিষয়ে একজন আফগান নারীর প্রথম ও একমাত্র অর্জন।[৭] একাডেমিতে থাকাকালীন তিনি লাইট ব্রিজ শিরোনামের একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র বিভাগে স্লোভাকিয়ার সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার 'সান ইন এ নেট' পুরস্কার জিতে যান।[১]

আফগানিস্তানে বসবাস[সম্পাদনা]

২০১২ সালে আফগানিস্তানে আসেন এবং ২০২১ সালে কাবুল পতনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানে বাস করেছেন।[৭][১৩]

আফগান ফিল্মের মহাপরিচালক[সম্পাদনা]

আফগানিস্তানে ফিরে এসে, তিনি স্বাধীন আফগান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাহায্য ও তাদের কাজ প্রচারের জন্য কপিলা মাল্টিমিডিয়া হাউস চালু করেছিলেন।[১৪] ২০১৯ সালে তিনি সরকারী মালিকানাধীন আফগান চলচ্চিত্র সংস্থার প্রথম মহিলা মহাপরিচালক হন। তিনিই একমাত্র মহিলা যিনি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, এবং অন্য চারজনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, যাদের সবাই পুরুষ ছিলেন। এটা ছিল ১৯৬৮ সালে স্থাপিত আফগান চলচ্চিত্র সংস্থার ইতিহাসে মহাপরিচালক ও সভাপতির পদে প্রথম নারী নিয়োগের ঘটনা।[১৫]

চলচ্চিত্র আন্দোলন[সম্পাদনা]

সাহরা করিমি কাবুল শহরের একসময়ের বিখ্যাত সিনেমা পার্ক প্রেক্ষাগৃহ ভেঙে ফেলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রধান সংগঠক ছিলেন। তিনি, আফগান সাংস্কৃতিক কর্মী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা ১৯৫০ সালে স্থাপিত এই প্রেক্ষাগৃহটি ধ্বংসের বিপক্ষে ছিলেন, সিনেমা পার্কের ভবনটি বিপর্যস্ত ছিল, যা কাবুল শহরের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জন্য "বিপর্যয়কর" বলে অভিহিত হতো।[১৬][১৭] ২০২০ সালের নভেম্বরে সিনেমা পার্ক গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ভাঙ্গনের সময় করিমি বাঁধা দিয়েছিলেন, তাকে জোর করে সিনেমা পার্কের সামনে থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। ভাঙার সময় তার কান্নার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছিল।[১৮]

২০২১-বর্তমান[সম্পাদনা]

২০২১ সালের আগস্টে, তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর, তিনি উল্লেখ করেছিলেন: "আমি কিছু টাকা তুলতে ব্যাংকে গিয়েছিলাম; তারা ব্যাংক বন্ধ এবং সবাইকে ব্যাংক থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটি ঘটেছে", তিনি আরো মন্তব্য করেন,"তারা(তালেবানরা) আমাদের হত্যা করতে আসছে"। [১৯] পরে, তিনিসহ ১১ জন ব্যক্তিকে কাবুল থেকে সাথে ইউক্রেনের কিয়েভে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তারপরে তিনি লিখেছিলেন: "আমার প্রিয় বন্ধুরা চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি এবং নিরাপদ আছি"।[২০][২১] ২০২২ সালে তিনি রোমের স্কুল অব সিনেমায় অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন।[২২]


চলচ্চিত্রনির্মাণ[সম্পাদনা]

সাহরা করিমির প্রথম পেশাদার কাজ ছিল সার্চিং ফর ড্রিম নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র যা ২০০৬ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে আফগান উইমেন বিহাইন্ড দ্য হুইল, এটি ১৩শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার ও স্লোভাকিয়ার একাডেমি পুরস্কারসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান চলচ্চিত্র উৎসব হতে প্রায় ২০টি পুরস্কার জিতেছে।[২৩][২৪] ২০১৯ সালে তিনি হাভা, মরিয়ম, আয়েশা চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যা ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম প্রদর্শন হয়েছিল এবং একটি অরিজোন্টি/ হরাইজন প্রাইজ (সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার) এর জন্য মনোনীত হয়েছিল।[২৫]

কর্মসমূহ[সম্পাদনা]

সাহরা করিমির বেশিরভাগ চলচ্চিত্র আফগানিস্তানের মহিলাদের নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত,[১৪] তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলি-

  • হাভা, মরিয়ম, আয়েশা (২০১৯)[৪]
  • পার্লিকা (২০১৬) [২৩]
  • 'আফগান উইমেন বিহাইন্ড দ্য হুইল' (অনু. চাকার পিছনে আফগান মহিলা) (২০০৯)[২৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Sahraa Karimi"Bratislava International Film Festival (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. "SAHRAA KARIMI CV" (পিডিএফ)alefjo.com। ২০১১-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১ 
  3. Atakpal, Haseba (১৯ মে ২০১৯)। "Sahraa Karimi To Lead Afghan Film As First Female Chairperson"TOLOnews। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  4. Vourlias, Christopher (৩০ আগস্ট ২০১৯)। "Filmmaker Sahraa Karimi Defies Odds With Kabul-Set Drama 'Hava, Maryam, Ayesha'"Variety (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  5. Hamid, Tamim (১৯ মে ২০১৯)। "Angelina Jolie Describes Sahraa Karimi's Appointment As Historic"TOLOnews (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  6. Mehmood, Arshad (২১ মে ২০১৯)। "Exclusive: Afghanistan Appoints Woman to Head State-run Film Company"The Media Line। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  7. Welle, Deutsche। "Escape from Kabul: Afghan director Sahraa Karimi recounts her experience"Frontline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪ 
  8. "Core of Iran Noruz in family: Afghan filmmaker Sahraa Karimi"Tehran Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  9. "گفت‌وگو با صحرا کریمی، فیلم‌ساز افغان:وقتی کنار آقای بیضایی قرار گرفته بودم از شدت هیجان اشک می‌ریختم | پایگاه خبری تحلیلی سینما سینما"cinemacinema.ir। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  10. "صحرا کریمی رییس 'افغان فیلم' شد"www.afghanpaper.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  11. "Jolie congratulates Karimi for her historic appointment as the director of Afghan Film"The Frontier Post (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ মে ২০১৯। ১৯ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  12. Rezapoor, Manijeh (২৪ মার্চ ২০১৯)। "Core of Iran Noruz in family: Afghan filmmaker Sahraa Karimi"Tehran Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  13. "Sahraa Karimi"Asia Peace Film Festival (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  14. "Sahraa Karimi: "The taste of freedom is a powerful antidote to oppression""International Federation for Human Rights (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  15. Salahuddin, Sayed (১৬ মে ২০১৯)। "Afghan film body gets its first female boss"Arab News। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  16. https://www.khaama.com/sahraa-karimi-sorry-for-demolition-of-cinema-park-unable-to-change-govt-decision-34534/
  17. https://www.bbc.co.uk/news/av/world-asia-55084944
  18. https://www.thenationalnews.com/arts-culture/art/cinema-park-filmmakers-mourn-as-70-year-old-afghan-cinema-is-demolished-1.1119856
  19. "Afghan filmmaker Sahraa Karimi's video of running around Kabul goes viral: 'They are coming to kill us'"Independent। ১৭ আগস্ট ২০২১। 
  20. "Afghan Filmmaker Sahraa Karimi Says She Has Been Evacuated From Kabul"Deadline। ১৭ আগস্ট ২০২১। 
  21. "Afghan film director recounts escape from Kabul"Reuters। ১৮ আগস্ট ২০২১। 
  22. "Interview with Sahraa Karimi, Film Director and Scriptwriter"GlobalCampus of Human Rights - GCHR (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৬-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৯ 
  23. "Parlika"Bratislava International Film Festival (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  24. Chatak, Hasan Mansoor (১১ জানুয়ারি ২০১৪)। "Sahraa Karimi: Woman's storytelling technique varies greatly from that of a man's"Dhaka Tribune। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  25. Frater, Patrick (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "Venice: Angelina Jolie Gives Shout-Out to Afghan Film 'Hava, Maryam, Ayesha'"Variety (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]