মোহাম্মদ হাফিজ (বীর প্রতীক)
মোহাম্মদ হাফিজ | |
---|---|
জন্ম | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ |
মৃত্যু | ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
- একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন মোহাম্মদ হাফিজ।
মোহাম্মদ হাফিজ (জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ - মৃত্যু: ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
মোহাম্মদ হাফিজের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মুন্সি রহমতউল্লাহ এবং মায়ের নাম আসাদুন্নেছা বেগম। তার স্ত্রীর নাম আম্বিয়া খাতুন। তার এক ও ছেলে চার মেয়ে।[২]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন মোহাম্মদ হাফিজ । ১৯৭১ সালে রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তিনি তখন আলফা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসে তারা ছিলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন জেড ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]
১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর সিলেট জেলার অন্তর্গত গোয়াইনঘাট এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। এই প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করার জন্য নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ২৩ অক্টোবর রাতে সেখানে সমবেত হয়। নদীর পূর্বপাড়ে আক্রমণের দায়িত্ব ছিল আলফা কোম্পানির। এই দলে ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। নেতৃত্বে ছিলেন মঞ্জুর আহমেদ (বীর প্রতীক)। হাফিজ একটি প্লাটুনের নেতৃত্ব দেন। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদ হাফিজ নিঃশব্দে পৌঁছে যান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করল। মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা হকচকিত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও মোহাম্মদ হাফিজ সংকটে মনোবল হারালেন না। সহযোদ্ধাদের দ্রুত সংগঠিত করলেন এবং তার সাহসী প্রচেষ্টায় সহযোদ্ধাদের মনোবল বেড়ে গেল। তারা বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকলেন। সেদিন লেংগুরা গ্রামের দক্ষিণে ব্রিজহেড তৈরির মাধ্যমে সুরমা নদী অতিক্রম করে সেখানে পৌঁছান মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায় এবং তারা ভোররাতে তাদের আকস্মিক আক্রমণ করে। এ সময় মোহাম্মদ হাফিজ সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। দুপুরের পর হেলিকপ্টারযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নতুন দল এসে শক্তি বৃদ্ধি করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফায়ার পাওয়ার ছিল অত্যন্ত বেশি। চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে মোহাম্মদ হাফিজ তার দল নিয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলে। গোটা এলাকা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। কোনো কোনো স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ২২ জন শহীদ ও ৩০ জন আহত হন।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৭-০২-২০১২"। ২০১৯-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১৯।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩২২। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৩১১। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা[সম্পাদনা]
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।