মোল্লা নাজির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মোল্লা নাজির যিনি মৌলভি নাজির ওয়াজির নামেও পরিচিত, ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের ওয়ানা এলাকার কাছে ড্রোন হামলায় নিহত হন। মোল্লা নাজির অন্যান্য তালেবান নেতার তুলনায় কিছুটা নরম থাকায় নিজ গোষ্ঠীর লোকজনের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের আফগান সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় যে ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারই ফলস্বরূপ তিনি নিহত হন।[১]

তালেবান নেতা[সম্পাদনা]

মোল্লা নাজিরের মৃত্যু পাকিস্তানি তালেবানের জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত। একই সঙ্গে পাকিস্তানি সরকারের সঙ্গে তাদের শান্তিচুক্তিও একটা বড় ধরনের ধাক্কা। আফগান ও পাকিস্তানি তালেবানের অসময়ে আশীর্বাদস্বরূপ ছিলেন মোল্লা নাজির। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের ওয়ানা এলাকায় তালেবান জঙ্গিদের জন্য নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তালেবান নেতা হিসেবে মোল্লা নাজিরের উত্থান ২০০৪ সালে। ওই সময় ড্রোন হামলায় নেক মোহাম্মদ নিহত হওয়ার পর ওয়াজির উপজাতির মধ্যে নেতৃত্বের টানাপোড়েন শুরু হয়। দেখা দেয় প্রচণ্ড বিরোধ। তখন শীর্ষ তালেবান নেতা মোল্লা ওমর তাকে স্থানীয় নেতা নিয়োগ করেন। নেতা হওয়ার পর মোল্লা নাজির দক্ষতার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অবসান ঘটান।[১]

উজবেক বিদ্রোহ দমন[সম্পাদনা]

২০০৭ সালে পাকিস্তানের ভেতর বহিরাগত উজবেক জঙ্গিরা বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তানের জঙ্গিরা পাকিস্তানিদের হত্যা করতে থাকে। স্থানীয় ওয়াজির উপজাতির দুই শতাধিক বর্ষীয়ান নেতাকে তারা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সে বছর উজবেক জঙ্গিদের দমনে লড়াই শুরু করে মোল্লা নাজিরের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা। তাদের সহায়তা করেন ওয়ানা এলাকার পাকিস্তানি সেনারা। উজবেক জঙ্গিদের বিতাড়িত করার কারণে মোল্লা নাজির পাকিস্তান সরকারের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।[১]

পশ্চিমাদের সাথে যুদ্ধ[সম্পাদনা]

ইরাকযুদ্ধের পর আফগানিস্তানে সেনাসংখ্যা বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তত দিনে মোল্লা নাজির বেশ মজবুত অবস্থানে পৌঁছান। আফগানিস্তানে গিয়ে পশ্চিমা সেনাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তালেবান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন তিনি। ২০০৯ ও ২০১০ সালে তার নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত শত শত পাঞ্জাবি তালেবান জঙ্গি আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের জের ধরেই পশ্চিমা জোট আফগানিস্তানে সমস্যায় পরে।[১]

মার্কিন ড্রোন হামলা[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উত্তর পশ্চিমে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন ড্রোন বিমান হামলায় মোল্লা নাজিরসহ ১৩ জন নিহত হয়েছে। ভোর তিনটার দিকে মোবারক শাহি গ্রামে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ড্রোন থেকে পরপর তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এতে তালেবান কমান্ডার মোল্লা নাজিরসহ তিনজন নিহত হয়। হামলার পর বিধ্বস্ত গাড়িটি থেকে স্থানীয় লোকজন তাদের মৃতদেহ সরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এরপর আবারো একই স্থানে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এতে আরও ১০জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে অপর একজন হচ্ছে মোল্লা নাজিরের সহকারী রাতা খান। তবে এ হামলার বিষয়ে অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়,মোল্লা নাজিরসহ তার অপর সহকারীরা সেদিন একটি বাড়িতে মার্কিন ড্রোন থেকে পরপর চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন।[১][২][৩]

প্রভাব[সম্পাদনা]

মোল্লা নাজিরের মৃত্যুর ঘটনা ওয়াজিরিস্তানের পরিস্থিতিকে টালমাটাল করে তুলতে পারে। মোল্লা নাজিরের মৃত্যুতে ওই এলাকার নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দেবে। এ ছাড়া অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও নিজ নিজ প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হবে। এর মধ্যে রয়েছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে টিটিপি। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ওয়ানা এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াজির গোষ্ঠীর ওপর বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে দলটি। গত নভেম্বরে তাদেরই এক আত্মঘাতী হামলায় আহত হয়েছিলেন মোল্লা নাজির।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মোল্লা নাজির হত্যায় নতুন আলোড়ন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১১-০১-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  2. পাকিস্তানে তালেবান কমান্ডার মোল্লা নাজির নিহত ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে,বিবিসি, সিনহুয়া, এপি, দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  3. তালেবান নেতা মোল্লা নাজির ড্রোন হামলায় নিহত[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],দৈনিক নয়া দিগন্ত। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১১-০১-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।