ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের লোগো
ঠিকানা
মানচিত্র
শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়ক

কালীবাড়ি


,
৫১০০

তথ্য
বিদ্যালয়ের ধরনসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৫৭
অবস্থাসক্রিয়
বিদ্যালয় বোর্ডমাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর
বিদ্যালয় জেলাঠাকুরগাঁও
সেশনজানুয়ারি-ডিসেম্বর
বিদ্যালয় কোড৮২৫৭
ইআইআইএন১২৯০৮২ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রধান শিক্ষকসাহানা খান
অনুষদ
শিক্ষকমণ্ডলী৫২
লিঙ্গবালিকা
শিক্ষার্থী সংখ্যা২০১১
শ্রেণী৩য়-১০ম
শিক্ষা ব্যবস্থাজাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড
ভাষাবাংলা
আয়তন৫ একর
ক্যাম্পাসের ধরনঅনাবাসিক/আবাসিক
EIIN১২৯০৮২
টেলিফোন০৫৬১-৫৩৪৭৪
ওয়েবসাইটtgghs.edu.bd
সর্বশেষ হালনাগাদ: ১১ অক্টোবর ২০২২

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঠাকুরগাঁও জেলা সদরে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৫৭ সালে এই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হলেও ১৯৬৮ সালে জাতীয়করণ করা হয়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

স্কুলের দরজা

বিদ্যালটি ঠাকুরগাঁও সদরের ট্রাফিক আইল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ঠাকুরগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে এই প্রতিষ্ঠানটি কাগজে কলমে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৫৭ সালে। বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছিল টাঙ্গন নদীর রামদাঁড়া খালের পূর্ব প্রান্তে কয়েকশ গজ দূরে যেখানে বর্তমান রিভারভিউ স্কুল সেখানে। লাল রংয়ের একটা তিন রঙের আধাপাকা বাড়িতে স্থাপিত হল স্কুলটি সেটা ছিল অফিস আর ক্লাশ নেয়া হত কাঠের বেড়া দেয়া একটা লম্বা টিনের চালা ঘরে। স্কুল তো হল এবার সমস্যা হল শিক্ষক-শিক্ষিকা। আগেই বলেছি সে সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষিতের সংখ্যা ছিল কম। বিদ্যালয়টির প্রথম প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব নেন জনাব মোহাম্মদ মুসা। তিনি ছিলেন আবগারী ও শুল্ক বিভাগ থেকে অবসর নেয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত লোক। সহকারি প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব আব্বাস আলী সরকার। তখন শিক্ষিত লোক কম থাকলেও চাকরির পদ ছিল বেশি। সে সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ে চাকরি মিলত চিনি কল, ওয়াপদা ও স্কুলে। কাজেই যাদের স্কুলে নিয়োগ দেয়া হত তাদের এই শর্তে নিয়োগ দেয়া হত যে তারা অন্য চাকরিতে যেতে পারবে না। প্রথম প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ মুসা অল্প কাল পরে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর যারা প্রধান শিক্ষক ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিল মহকুমা প্রশাসকদের মিসেস। ফলে স্কুলে তাদের স্থায়ীত্ব হত অল্প কাল। তাই বলা যায় স্কুল চালাতেন সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব আব্বাস আলী সরকার আর তার সঙ্গী ছিল সহকারী শিক্ষক জনাব আব্দুল হক। স্কুলের উন্নয়নে এ দু’জনের অবদান খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ এছাড়াও ছিলেন তৎকালীন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা জনাব সৈয়দা জাহানারা, জনাব ঊষা গুহ ঠাকুরতা, জনাব ঊষা দাস, জনাব মিরা রায়, জনাব সিদ্দিকা খাতুন, জনাব জোবেদা বেগম, জনাব শরিফা সাত্তার, জনাব অঞ্জলী বোস, জনাব পপি, জনাব মার্গারেট, জনাব খগেনবাবু, জনাব জ্যোতিষবাবু, জনাব নকিবুর রহমান, জানব নাসিরুদ্দিন সাহেব, জনাব আব্দুস সোবহান সহ আরো অনেকে।

ছাত্রী সংখ্যা দিন দিন বাড়তে লাগল। ছোট্ট স্কুল ঘরে আর জায়গা হয় না। প্রয়োজন হল স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। মির্জা রুহুল আমিন তার নিজ হাতে গড়া স্কুলটিকে যে কি ভালবাসতেন তার প্রমাণ মেলে স্কুলের ভালমন্দের সাথে তার সম্পৃক্ততায়। তিনি ছিলেন স্কুলের অভিভাবক। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৬৪ সালে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয় স্কুলের বর্তমান অবস্থানে। মোট জায়গার পরিমাণ চার একর।

স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা বাড়তে লাগল। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিক্ষার মান ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভালো হতে লাগল। ষাটের দশকের সেরা ছাত্রী ছিল গুল আফরোজ হিরু (১৯৬৪ সালে মানবিক বিভাগ থেকে ৫ম স্থান অধিকারী), আলেমা করিম ও সাইদা খাতুন শেফালী (অন্য দু’জনার স্থান জানা যায়নি)। এই তিন মেধাবী ছাত্রী স্কুলের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।

সবার পরিশ্রম আর আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্কুল তার নিজস্ব নিয়মে সামনে এগিয়ে চললো। কিন্তু সমস্যা হল প্রধান শিক্ষক। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৭ সাল দশ বছরে নয় জন প্রধান শিক্ষক বদল হয়ে দশম বছরে যোগদান করলেন মিসেস নূরন নাহার। সে সময়ে প্রধান শিক্ষিকা হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তাও ঠাকুগাঁওয়ে কারো ছিল না। জনাব নূরন নাহার ছিলেন দিনাজপুরের মেয়ে। ঠাকুরগাঁও কলেজের প্রভাষক চৌধুরী মোহাম্মদ হুমায়ন কবীরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষন কলেজ থেকে বিএড প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। মির্জা রুহুল আমিনের অনুরোধে তিনি প্রধান শিক্ষিকার পদে যোগদান করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র তেইশ বছর। স্কুল ভালোভাবেই চলতে লাগলো এবং ভাল স্কুল হিসাবে পরিচিতিও পেতে লাগল।

১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজশাহী ডি.ডি.পি.আই অফিসের তৎকালীন পরিদর্শিকা মিসেস রাবেয়া আলী। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর সহধর্মিনী। মিসেস রাবেয়া আলী স্কুল পরিদর্শন শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্কুল সরকারীকরণের ঘোষনা দিলেন।

১৯৬৯ সালেই স্কুলে শুরু হয়েছিল নির্মান কাজ। ৭ টি বড় বড় শ্রেণিকক্ষ, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, হোস্টেল বিল্ডিং, হোস্টেল সুপারের বাসভবন, দারোয়ানের বাসভবন, সীমানা প্রাচীর ইত্যাদি। ১৯৭১ সালে পাক সেনারা সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। ৭২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আবার স্কুল শুরু হল। যুদ্ধের ডামাডোলের পরও এস.এস.সি এর ফলাফল সন্তোষজনক ছিল। বিদ্যালয়ের প্রবীন ও দক্ষ শিক্ষক জনাব খলিলুর রহমানের কন্যা নাজমা বেগম লাভলী রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান ও মানবিক সম্মিলিত গ্রুপ থেকে ১৯তম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের সুনাম বাড়িয়ে দিল।

স্কুল সরকারি হওয়ার পর মিসেস নূরণ নাহার নিয়োগ পেয়েছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় পরীক্ষায় পাশ করার পর ১৯৮৩ সালে তিনি প্রধান শিক্ষিকা পদে পদোন্নতি পান। এর মাঝে প্রধান শিক্ষিকার পদে ছিলেন পর্যায়ক্রমে জনাব অপর্না ব্যানার্জী, জনাব রহিমা খাতুন এবং মিস নীহার সেন। এদের মধ্যে জনাব রহিমা খাতুন প্রধান শিক্ষিকা থাকাকালে বিদ্যালয় লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় ও বিশেষ সুনাম অর্জন করে। তখন খেলাধুলার সাথে বৌচি খেলার ও প্রচলন ছিল। ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্রীবৃন্দ বৌচি খেলায় জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ ও চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে। বৌচি খেলার পাশাপাশি ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, লৌহগোলক নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপে-ও মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে জয়লাভ করেছিল। সে সময়ে স্কুলে যারা খেলাধুলা করত তাদের মধ্যে বাবুনী, মিশু, তরিফা, আলেয়া, কল্পনা, রুম্পা, রোজিনা, জাহানারা, আইভি, ইভা, রীমা, সেলিনা, ঝর্ণা, রোজী, দেলেরা, মমতাজ, লাবণী, অঞ্জলীদের নাম জানা যায়।

রহিমা খাতুন স্কুলে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ খুলে গিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে এ বিভাগ থেকে ছাত্রীরা প্রথম পরীক্ষা দেয় এবং প্রথম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক জনাব ওয়ারেছ সাহেবের মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিন রোজী।

বিদ্যালয়টি সবচেয়ে বেশি সুনাম অর্জন করে এবং শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের আসন পায় জনাব নূরন নাহার প্রধান শিক্ষা থাকাকালীন ১৯৮৩-২০০০ খ্রিঃ। সে সময়ে সহকারি শিক্ষক/শিক্ষিকা ছিলেন জনাব আব্দুল হক, জনাব দেলেরা বেগম, জনাব আনসারা খাতুন, জনাব ছবি সেন গুপ্তা, জানব রেখা রানী মল্লিক, জনাব মির্জা হাসনা বানু, জনাব মহসীন আলী সরকার, জনাব খন্দকার মোজাম্মেল হক, জনাব তপতী চক্রবর্তী, জনাব কানন চক্রবর্তী, জনাব হালিমা খাতুন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক শঙ্কর কুমার ঘোষসহ আরো অনেকে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা দিনের পর দিন বিদ্যালয়ের গৌরব বাড়িয়ে চললো। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১৯৮২ সালে শঙ্করী রানী চৌধুরী গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে ৩য় স্থান, ৮৩ সালে মানবিক বিভাগ থেকে নাদিরা হক ৯ম স্থান, ৮৪ সালে সালমা খাতুন ৫ম স্থান, ৯০ সালে জায়দা শারমিন ২০তম স্থান অধিকার করে। ৯১ সালে মানবিক বিভাগে গুলশান আরা বেগম ১০ম স্থান এবং ৯৩ সালে শাহানা সুলতানা মানবিক বিভাগে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ২য় স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের সুনাম বাড়িয়ে দেয় বহুগুন।

একই বছর সম্মিলিত মেধা তালিকায় ২০তম স্থান অধিকার করে মাহমুদা রহমান। ১৯৯৪ সালে মোর্শেদা শাকিলা জাহান মানবিক বিভাগ থেকে (স্থান জানা যায় নি), ১৯৯৫ সালে মেয়েদের মধ্যে ৫ম এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১১তম স্থান অধিকার করে মির্জা আমিরুন নেসা। যারা শিক্ষা বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছে এবং যাদের নাম আমি পেয়েছি শুধু তাদের কথাই উল্লেখ করলাম (এর বাইরে ও কেউ থাকতে পারে)। তাছাড়া স্টার মার্কস পাওয়া ও প্রথম বিভাগে উত্তীর্নদের সংখ্যাও ছিল অনেক।

১৯৯০ সালে প্রধান শিক্ষিকা নূরন নাহার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

প্রধান শিক্ষিকা জনাব মাহবুবা খাতুন দায়িত্বে থাকাকালে ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের গৌরব অর্জন করে। এরপর ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খোলা হয়।


[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "স্কুল ইতিহাস » Thakurgaon Govt. Girls' High School, Thakurgaon"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-২৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]