কিরীটেশ্বরী মন্দির
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/1e/Kiriteswari_Temple.jpg/220px-Kiriteswari_Temple.jpg)
কিরীটেশ্বরী মন্দির হল হিন্দুধর্মের শাক্ত মতের পবিত্র তীর্থ শক্তিপীঠগুলির অন্যতম। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ কোর্ট রোড রেলওয়ে স্টেশনের ৩ মাইল দূরে 'কিরীটকণা' (বা 'কিরীটকোণা') গ্রামে অবস্থিত। রাঢ় বাংলার প্রাচীন পীঠস্থানগুলির মধ্যে কিরীটকণা অন্যতম; যদিও বর্তমান মন্দিরটি বেশি পুরানো নয়। এই মন্দিরের নিকটে একাধিক মন্দির আছে। তান্ত্রিকমতে, এখানে দেবী দাক্ষায়ণী সতীর 'কিরীট' অর্থাৎ মুকুটের কণা পতিত হয়েছিল। যেহেতু এখানে দেবীর কোনও অঙ্গ পতিত হয়নি, তাই এই স্থানকে অনেক তন্ত্রবিদ্ 'পূর্ণ পীঠস্থান' না বলে 'উপপীঠ' বলে থাকেন। এই পীঠে দেবী 'বিমলা' এবং তার ভৈরব 'সম্বর্ত' নামে পূজিত হন।[১]
লোকবিশ্বাস[সম্পাদনা]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/78/Kiriteswari_Temple3.jpg/220px-Kiriteswari_Temple3.jpg)
লোকবিশ্বাস অনুসারে, শক্তিপীঠ নামাঙ্কিত তীর্থগুলিতে দেবী সতীর দেহের নানান অঙ্গ ও অলঙ্কার প্রস্তরীভূত অবস্থায় রক্ষিত আছে। "শক্তি" অর্থাৎ প্রত্যেক "পীঠস্থানে" পূজিতা দেবী, যিনি দাক্ষায়ণী, দুর্গা বা পার্বতীর বিভিন্ন রূপ; "ভৈরব" অর্থাৎ ঐ দেবীর স্বামী (সঙ্গী), যারা প্রত্যেকেই শিবের বিভিন্ন রূপ; "দেহ খণ্ড বা অলঙ্কার" অর্থাৎ সতী দেবীর শরীরের বিভিন্ন অংশ বা অলঙ্কার যা ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র দ্বারা ছেদনের পর সেই "পীঠস্থানে" পতিত হয়েছিল। সাধারণত ৫১টি শক্তিপীঠের কথা বলা হয়ে থাকলেও, শাস্ত্রভেদে পীঠের সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ে মতভেদ আছে।
বিবরণ[সম্পাদনা]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/63/Kiriteswari_Temple1.jpg/220px-Kiriteswari_Temple1.jpg)
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/82/Kiriteswari_Temple2.jpg/220px-Kiriteswari_Temple2.jpg)
শাক্তধর্মে এই স্থান একটি প্রাচীন মহাপীঠ হিসাবে প্রসিদ্ধ। পাঠান-মুঘল শাসনকালেও এই স্থানের খ্যাতি ছিল। রিয়াজুস সালতীন গ্রন্থে ও রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে কিরীটকোণাকে 'তীরতকোণা' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[২]
পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এখানে দেবী কিরীটেশ্বরীর মেলা বসে। মন্দিরে দেবীর কোনও প্রতিমূর্তি নেই, একটি উঁচু পাথরের উপর বেদী আছে; এই বেদীর উপর আরেকটি ছোট বেদী আছে যা দেবীর কিরীট বলে পূজা করা হয়। কিরীটেশ্বরী মন্দিরের চারিদিকে অনেক ছোট-ছোট মন্দির আছে; তারমধ্যে একটি চারচালা মন্দিরকে সপ্তদশ শতাব্দীর তৈরি বলে মনে করা হয়। রাজা রাজবল্লভের প্রতিষ্ঠিত শিবমন্দিরও এখানে আছে। গ্রামের মধ্যে গুপ্তমঠ নামে এক নতুন মন্দিরে কিরীটেশ্বরীর পূজার ব্যবস্থা আছে।[১] নাটোরের সাধন-অনুরাগী রাজা রামকৃষ্ণ বড়নগর থেকে এখানে আসতেন। এখনও মন্দির-প্রাঙ্গনে দুটি পাথরখণ্ড দেখা যায়, যার উপর বসে রাজা রামকৃষ্ণ সাধনা করতেন।[১] কথিত আছে মুর্শিদাবাদের নবাব মীর জাফর আলী খান কুষ্ঠরোগগ্রস্ত হলে শেষ জীবনে তার হিন্দু দেওয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী কিরীটেশ্বরী দেবীর চরণামৃত পান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।[৩]
অনেকের মতে দেবীর ভৈরব 'সম্বর্ত' বলে যে মূর্তিটি পূজা করা হয়, সেটি আসলে একটি বুদ্ধমূর্তি।[৪] যা মূর্তি রাঢ়ের এই অঞ্চলের সঙ্গে বৌদ্ধসংস্কৃতির পরিচয় দেয়।
১১৭৭ বঙ্গাব্দে বিজয়রাম সেন রচিত 'তীর্থ-মঙ্গল' কাব্যে কিরীটেশ্বরীর বর্ণনা আছেঃ
কিরীটেশ্বরী পূজা দিতে গেলা শীঘ্রগতি।
কথোগুলি বাত্রী গেলা কর্ত্তার সংহতি।।
মহাসরঞ্জাম সঙ্গে গিয়া কিরীটকোণা।
দেবীকে প্রণাম কৈল দিয়া কিছু সোনা।।
ষোড়শোপচারে পূজা কৈল ভগবানে।
দক্ষিণা করিলা কত কৈল বিতরণে।।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা: ৪৫-৪৭
- ↑ বিজয়রাম সেন বিশারদ প্রণীত 'তীর্থ-মঙ্গল' : নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩২২ সন, পৃষ্ঠা - ১৮৬-১৮৭
- ↑ "Kiriteswari Temple- Murshidabad-West Bengal"। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ The Mussud of Mursidabad (1704-1904) : Compiled by Purna Chandra Majumdar, Mursidabad 1905, page - 279
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)