উৎসেচক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উৎসেচক ট্রয়োজ ফসফেট আইসোমারেজ অণুর ত্রিমাত্রিক চিত্র

উৎসেচক বা "এনজাইম" (ইংরেজি: Enzyme) হচ্ছে এক প্রকার জৈব অনুঘটক (ইংরেজি:organic catalyst)। গঠনগতভাবে এটি প্রোটিন জাতীয় পদার্থ । ব্যতিক্রম রাইবোজাইম (ribozyme) এবং ডিএনএজাইম যেখানে যথাক্রমে আরএনএডিএনএ উৎসেচক (এনজাইম) হিসাবে কাজ করে। কোষের প্রায় সমস্ত বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলো জীবন বাঁচানোর রাখার জন্য যথেষ্ট দ্রুত হারে ঘটতে এনজাইম ক্যাটালাইসিস প্রয়োজন।[১]

আন্তর্জাতিক প্রাণরাসায়ন ও অণু জীববিজ্ঞান সম্মিলনের (International Union of Biochemistry and Molecular Biology) নামকরণ কমিটি উৎসেচকদের ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করে ছটি ইসি নম্বর নির্দিষ্ট করেন ও প্রত্যক উৎসেচককে চারটি সংখ্যা দিয়ে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করার প্রথা প্রচলন করে। পরিমাণে পৃথিবীর অধিকতম প্রোটিন আরইউবিপি যার ডাকনাম রিউবিস্কো হল সালোকসংশ্লেষে ব্যবহৃত একটি উৎসেচক: ইসি ৪.১.১.৩৯ । দ্রততম উৎসেচকদের অন্যতম হল ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ: ইসি ৫.৩.১.১

এই এনজাইম প্রাণীদেহে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। মানুষের মুখের মধ্যে যে লালারস তৈরি হয় তাতে এনজাইম থাকে। এটি খাদ্যবস্তুকে গলিয়ে হজমে সাহায্য করে। সাপের উৎসেচক সবচেয়ে বেশি থাকার কারণে সাপ অতি দ্রুত যেকোনো বড় খাবার সহজে গিলে হজম করে ফেলতে পারে তার এই ক্ষমতার মাধ্যমে। বিভিন্ন মৌল বা আয়ন উৎসেচকের কো-ফ্যাক্টর রূপে কাজ করে উৎসেচকের ক্রিয়াকে ত্বরাণ্বিত করে।

উৎসেচক বা এনজাইমের সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

যে জৈব অনুঘটক জীব দেহে উৎপন্ন হয়ে কোষের মধ্যে বা বাইরে উপযুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তাকে উৎসেচক বা এনজাইম বলে। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী কুহন 'এনজাইম' কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।

উৎসেচকের রাসায়নিক প্রকৃতি[সম্পাদনা]

অধিকাংশ উৎসেচক প্রোটিন নিয়ে গঠিত। এই প্রোটিনের সাথে অপ্রোটিন কিছু অংশ থাকে যার নাম কো-এনজাইম।২

উৎসেচকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

  • অধিকাংশ উৎসেচক প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
  • এদের গঠনে কো-এনজাইম থাকে।
  • উৎসেচক রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত বা মন্দীভূত করে।
  • রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎসেচকের কোন পরিবর্তন হয় না।
  • সামান্য পরিমাণ উৎসেচক বিপুল পরিমাণের পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন করতে পারে।
  • নির্দিষ্ট উৎসেচক নির্দিষ্ট বস্তুর ওপর কাজ করে।
  • উৎসেচকের কার্যপ্রণালী দ্বিমুখী হতে পারে। সংশ্লেষ এবং বিশ্লেষণে একই উৎসেচক অংশ নেয়।
  • নির্দিষ্ট উষ্ণতা বা নির্দিষ্ট অম্ল-ক্ষার মাধ্যমে উৎসেচক কাজ করে।

উৎসেচকের নামকরণ[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে নামকরণের সময় উৎসেচক যে বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তার নামের শেষে এ এস ই বা 'এজ' (ase) যুক্ত করে উৎসেচকের নাম দেওয়া হয়। যেমন, লিপিডের ওপর কাজ করে যে উৎসেচক তার নাম লাইপেজ(lipase)। সুক্রোজকে যে উৎসেচক ভেঙে দেয় তার নাম সুক্রেজ(Sucrase)। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে।২

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Stryer L, Berg JM, Tymoczko JL (২০০২)। Biochemistry (5th সংস্করণ)। San Francisco: W.H. Freeman। আইএসবিএন 0-7167-4955-6 উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারযুক্ত প্রকাশনা - বিনামূল্যে পড়া যাবে

২.মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান- ষন্নিগ্রহী, ষন্নিগ্রহী