তাবর পর্বত

স্থানাঙ্ক: ৩২°৪১′১৪″ উত্তর ৩৫°২৩′২৫″ পূর্ব / ৩২.৬৮৭২২° উত্তর ৩৫.৩৯০২৮° পূর্ব / 32.68722; 35.39028
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মাউন্ট তাবর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মাউন্ট তাবর
সর্বোচ্চ বিন্দু
উচ্চতা৫৭৫ মিটার (১,৮৮৬ ফুট)
স্থানাঙ্ক৩২°৪১′১৪″ উত্তর ৩৫°২৩′২৫″ পূর্ব / ৩২.৬৮৭২২° উত্তর ৩৫.৩৯০২৮° পূর্ব / 32.68722; 35.39028
ভূগোল

মাউন্ট তাবোর (আরবিতে جبل طابور) (হিব্রুতে: הר תבור) (হার তাবোর) হল নিম্ন গ্যালিলির একটি বৃহৎ পাহাড় যা উত্তর ইসরাইলে জেজরিল উপত্যকার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এর ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) পশ্চিমে রয়েছে গ্যালিলি সাগর। বাইবেলে এর গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।

হিব্রু বাইবেল (জোশুয়া, জাজেস) অনুসারে, মাউন্ট তাবোর হল বারাকের নেতৃত্বে ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনী এবং হাজোরের কেনানীয় রাজা জাবিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত মাউন্ট তাবোরের যুদ্ধের স্থান। এই যুদ্ধে কেনানের সেনাপতি ছিলেন সিসেরা।

খ্রিস্টান ঐতিহ্য অনুসারে, মাউন্ট তাবোর যিশুখ্রিস্টের রূপান্তরের (Transfiguration) স্থান।[১]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

হিব্রু ভাষায় এই পর্বতটির নাম "תבור" (তাবোর), যা দীর্ঘকাল ধরে "নাভি" বা "ট‬בור" (তাবুর) শব্দের সাথে যুক্ত বলে বিবেচিত হতো। তবে এটি সম্ভবত একটি লোক-ব্যুৎপত্তির ফল।[২]

জেরেমিয়ার পুস্তকের গ্রীক সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদে,[৩] মাউন্ট তাবোরের জন্য ইটাবাইরিয়াম (Ἰταβύριον) নামটি ব্যবহৃত হয়েছিল। জোসেফাস তার গ্রীক রচনাগুলিতে একই নাম ব্যবহার করেছিলেন।

যীশুর রূপান্তরের ঘটনাটির সাথে যোগসূত্রের কারণে, এই পর্বতটি অতীতে রূপান্তরের পর্বত (Mount of Transfiguration)[৪] বা রূপান্তরোত্তর পর্বত (Mount of the Transfiguration) হিসাবে পরিচিত ছিল।[৫] এটি খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বে তাবোর আলো, চেক তাবোরাইটদের সম্প্রদায় এবং আরও অনেক বসতি ও প্রতিষ্ঠানের নামস্বরূপ।

এই নামের আরবি রূপ হল "মাউন্ট তাবুর" (جبل طابور) বা "মাউন্ট তুর" (جبل الطور)।[৬]  জাবাল আত-তুর নামটি সিনাই পর্বত এবং গেরিজিম পর্বতের সাথেও যুক্ত।

ভূগোল[সম্পাদনা]

মেঘে ঢাকা তাবর পর্বত

তাবোর পর্বত প্রায় অর্ধ গোলকের মতো আকৃতির। এর চারপাশের সমতল ভূমি থেকে হঠাৎ উঠে এটি প্রায় ৫৭৫ মিটার (১৮৮৬ ফুট) উচ্চতা লাভ করেছে। তাই এটি নিচের সমতলে অবস্থিত কফর তাভোর শহরকে প্রায় ৪৫০ মিটার উচ্চতা দিয়ে শাসন করছে।[৭] পর্বতের শীর্ষে দুটি খ্রিস্টান মঠ অবস্থিত; একটি ক্যাথলিক যা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং অপরটি গ্রীক অর্থোডক্স যা উত্তর-পূর্ব দিকে। শীর্ষে অবস্থিত ক্যাথলিক গির্জাটি অনেক দূর থেকেও সহজেই দেখা যায়।

পর্বতটি একটি একক পর্বতশ্রেণী: আশেপাশের মৃদু ঢালু বা সমতল ভূমি থেকে হঠাৎ করে উঠে আসা একটি বিচ্ছিন্ন পাহাড় বা ছোট পর্বত। এটি কোনভাবেই আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি নয়। নাসরাত পর্বতমালার কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও এটি একটি পৃথক ভূতাত্ত্বিক গঠন।

পর্বতের গোড়ায় রয়েছে আরব গ্রামগুলো-- দাবুরিয়্যা, শিবলি এবং উম্ম আল-ঘানাম, যারা পর্বতটিকে ঘিরে রেখেছে। তাবোর পর্বত হাইওয়ে ৬৫ এর কাছে অবস্থিত, এবং শিবলি হয়ে সড়ক পথে এর শীর্ষে পৌঁছানো যায়। বেদুইন গ্রাম শিবলি থেকে একটি পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পদচারণা পথ শুরু হয়েছে। এটি ইজরায়েল ন্যাশনাল ট্রেইলের একটি অংশ।

উদ্ভিদ ও প্রাণী[সম্পাদনা]

মাউন্ট টেবরের ওক গাছ

প্রাচীন ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চলে যে উদ্ভিদ দেখা যেত মাউন্ট তাবোর অঞ্চলও একসময় তেমনই উদ্ভিদে আবৃত ছিল। কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে কয়লা তৈরির শিল্পে ব্যবহারের জন্য সেখানকার অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়। দেশটির ভূদৃশ্য পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে জিউইশ ন্যাশনাল ফান্ডের উদ্যোগে ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে পাহাড়টিতে পুনরায় গাছ লাগানো হয়, যেগুলো আগের স্বাভাবিক উদ্ভিদগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

বর্তমানে মাউন্ট তাবোরের বেশিরভাগ অংশ মাউন্ট তাবোর ওক (Quercus ithaburensis), প্যালেস্টাইন ওক (Quercus calliprinos) প্রভৃতি গাছে আচ্ছাদিত। এই পাহাড়ে প্রায় ৪০০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রয়েছে বড় হলুদ ক্রোকাস (Sternbergia clusiana), পার্সিয়ান লিলি (Fritillaria persica), রেইন-বেলস ফুল (Muscari parviflorum), কালো চোখের লাল টিউলিপ (Tulipa agenensis), অর্কিড, আইরিস (Iris haynei সহ), হলুদ অ্যাস্ফোডেল (Asphodeline Lutea), স্বতঃস্ফূর্ত যব (Hordeum spontaneum), মাউন্ট তাবোর লার্কস্পার (এক ধরনের বহুবর্ষজীবী ঘাস যাতে নীল ফুল ফোটে বসন্তে) (Delphinium ithaburense), সুইট সিসেলি (myrrhoides nodosa) (Umbelliferae পরিবারের একটি বিরল উদ্ভিদ), গ্যালিলিয়ান আলকেট (Alkanna galilaea) এবং পার্সলে-পিয়ার্ট (Aphanes arvensis)।

এই বনভূমিতে নেকড়ে, শিয়াল, শূকর, হাইরাক্স, নেউল এবং ব্রড টুথেড ফিল্ড মাউস (Apodemus mysticanus) এর বসবাস। পাহাড়ের শীর্ষে একটি গুহায় দীর্ঘ-আঙুল বিশিষ্ট বাদুড় (Myotis capaccini) পাওয়া যায়। সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে গ্রীক কচ্ছপ (Testudo graeca), হারডুন টিকটিকি (Laudakia stellio), লেবানন টিকটিকি (Phoenicolacerta laevi), এবং লাল হুইপ সাপ (Platyceps collaris)। এই বনাঞ্চলে জে (Garrulus), সিরিয়ান কাঠঠোকরা (Dendrocopos syriacus), সারডিনিয়ান ওয়ারব্লার (Sylvia melanocephala), ইউরেশিয়ান হবি (Falco subbuteo), গ্রেট টিট (Parus major), গ্রেট স্পটেড কোকিল (Clamator glandarius), এবং স্নেক ঈগল (Circaetus) পাখিও পাওয়া যায় ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The tradition of Mount Tabor as the site of the Transfiguration goes back to at least the 3rd century (Origen). The identification has been doubted in 19th-century scholarship (Henry Alford 1808, John Lightfoot 1825).
  2. Gary A. Rendsburg, "The Etymology of χάρτης ‘Papyrus Roll’", 161 (note 73).
  3. Jer. 49
  4. Luckock, Herbert Mortimer (১৮৮৫), Footprints of the Son of Man: From the Jordan to the Mount of Transfiguration, পৃষ্ঠা 101 .
  5. Richard, Jean (১৯৭৯), The Latin Kingdom of Jerusalem, 2, পৃষ্ঠা 502 .
  6. C. R. Conder and H. H. Kitchener (১৮৮১)। The Survey of Western Palestine1। Committee of the Palestine Exploration Fund। পৃষ্ঠা 367। 
  7. Elevation of Kfar Tavor: 119.9 m