দারাসবাড়ি মাদ্রাসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(দারাস বাড়ী মাদ্রাসা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
দারাসবাড়ি মাদ্রাসা
দারাস বাড়ী মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসা ঢিবি
সাধারণ তথ্য
শহরচাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
দেশবাংলাদেশ
স্বত্বাধিকারীবাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর

দারাসবাড়ি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বা দারাসবাড়ি মাদ্রাসা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও প্রাচীন ইসলামি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা[১] এটাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বলে মনে করা হয়।[২][৩]

আরবি দরস অর্থ পাঠ করা বা পড়া। সেই অর্থে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দারসবাড়ি বা দারাসবাড়ি বলা হতো। এই দারাসবাড়ি মাদ্রাসার সুনামে এলাকার নাম ও মসজিদের নাম পাল্টে দারাসবাড়ি মসজিদ হয়ে যায়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদিঘি এলাকায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে মহানন্দার তীর ধরে কয়েক কিলোমিটার ভেতর দিকে অবস্থিত। এটি তৎকালীন গৌড়-লখনৌতির বাংলাদেশ অংশে ঘোষপুর মৌজায় কোতোয়ালী দরওয়াজা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে এবং ছোট সোনা কোতোয়ালী সড়কের আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দারাসবাড়ি মসজিদের ১৫০ মিটার পূর্বদিকে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি অবস্থিত।[৪] মসজিদটি এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। মাদ্রাসার পূর্ব ও পশ্চিমে দিকে দুটি পুকুর ছিলো, মাঝখানে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

এটি বাংলাদেশের সবচাইতে প্রাচীন মাদ্রাসার নিদর্শন। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের রাজত্বকালে ১৫০৪ সালের ১ রমজান তারিখে অথবা পঞ্চদশ শতকে সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের আমলে সুলতানের আদেশে এটি নির্মিত হয়। [ক] বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ের ফিরোজপুর এলাকায় দারাস বাড়ী মাদ্রাসা নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন অঞ্চল হতে শিক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হতেন। বাংলার প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে বোখারি ও মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তাহ হাদিস শিক্ষা দেওয়া হতো। তবে হুসেন শাহ পরবর্তী সময়ে ঢাকার সোনারগাঁ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সিহাহ সিত্তাহ হাদিস শিক্ষা দেওয়া হতো। মোহাম্মদ বিন ইয়াজদান বখশ নামক এক আলেমকে দিয়ে বোখারী শরীফ নকল করিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুবিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হয়।[৫][৬]

পুনঃআবিস্কার[সম্পাদনা]

১৯৭০ দশকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কৃষক কৃষি জমিতে লাঙল দিয়ে চাষ করতে গিয়ে আবির রং-এর ইটের সন্ধান পান। এরপরে স্থানীয় প্রশাসন খবর পেলে মাটি খুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান খুজে পান।

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

এই স্থাপনাটি বর্গাকারে নির্মিত। এর প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৫১.৫২ মিটার। এ স্থাপনার মাঝামাঝি অংশে ৩৭.৫০ মি. পরিমাপের বর্গাকার চত্বরের পশ্চিম বাহু ব্যতীত অপর তিন বাহুতে এক সারি করে প্রকোষ্ঠ এবং তিন বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে পাশাপাশি তিনটি ইমাম এর জন্য কোঠা আছে। নামাজের এই তিনটি কোঠার পশ্চিম দেয়ালে তিনটি অবতল মেহরাব আছে। পোড়ামাটির ফলক ও নকশাকার ইট দ্বারা দেয়ালগুলো অলংকৃত রয়েছে।[৭] এখানে মোট ৩৭ টি কক্ষ রয়েছে, ১টি ওয়াক্তিয়া মসজিদ রয়েছে, ভবনের মধ্যখানে ১টি অধ্যক্ষের অফিস রুম রয়েছে। মাদ্রাসার মোট ৩ টি দরজা রয়েছে যা এর অবশিষ্ঠাংশে এখনো স্পষ্ট আছে।

মাদ্রাসাটি দৈর্ঘ্যে ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। মাদ্রাসা ভবনের সঙ্গে ১০.৭ ফুট বিশিষ্ট বারান্দা রয়েছে। ভবনের পশ্চিমে কারুকার্য খচিত ৯টি মেহরাব রয়েছে। ভবনের উত্তর ও দক্ষিণে ৩টি করে জানালা রয়েছে। ভবনে নির্মাণশৈলী দেখে বুঝা যায় এতে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও ছিল, তবে সেটি বর্তমানে পাওয়া যায়না। ভবনের চারপাশের দেওয়াল পুরাতন হয়ে বর্তমানে কোনোরকম টিকে আছে।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. তবে স্থাপনায় প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে বুঝা যায়, মাদ্রাসাটি মূলত ৯০৯ হিজরির ১ রমজান (১৫০৪ খ্রিস্টাব্দ) তারিখে নির্মিত হয়েছিলো। শিলালিপি থেকে আরো জানা যায়, এই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসাটি দারাসবাড়ি মসজিদ থেকে ভিন্ন ছিলো। এবং এই মাদ্রাসাটি ঐতিহাসিক স্থাপনা বেলবারি মাদ্রাসা থেকেও ভিন্ন একটি মাদ্রাসা।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. চক্রবর্তী, রজনীকান্ত (জানুয়ারি ১৯৯৯)। গৌড়ের ইতিহাস (1 & 2 সংস্করণ)। Bankim Chatterjee Street, Calcutta: Dev's Publishing। 
  2. "দেশের সবচেয়ে প্রাচীন মাদ্রাসা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ"m.poriborton.news। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-০৬ 
  3. মাহমুদ মিমপা, জাহিদ হাসান (২৯ জানুয়ারি ২০২০)। "হুমকির মুখে গৌড়ের ঐতিহাসিক স্থাপনা"Risingbd Online। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-০৬ 
  4. মোহাম্মদ জাকারিয়া, আবুল কালাম (এপ্রিল ১৯৯৮)। "রাজশাহী বিভাগ - ইতিহাস-ঐতিহ্য"। বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস - বরেন্দ্র অঞ্চলের পূরাকীর্তি (১ম সংস্করণ)। পৃষ্ঠা ৩১৮। 
  5. খাঁন, এম. আবিদ আলী (মার্চ ১৯৮৭)। গৌড় ও পান্ডুয়ার স্মৃতিকথা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৮০। 
  6. করিম, আবদুল (জানুয়ারী ১৯৯৪)। মুসলিম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য। বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১২০। 
  7. তরু, মাযহারুল ইসলাম (ডিসেম্বর ১৯৯০)। জেলা নবাবগঞ্জ এর ইতিকথা। পৃষ্ঠা ৪৮। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]