তাওয়াক্কুল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(তাওয়াক্বুল থেকে পুনর্নির্দেশিত)

তাওয়াক্কুল (আরবি: توكل) একটি আরবি শব্দ। তাওয়াক্কুল এর অর্থ ভরসা করা, নির্ভর করা, স্বীকৃতি প্রদান করা। তাওয়াক্কুল আলা-(আ)ল্লাহ অর্থ হলো আল্লাহর উপর ভরসা করা। ইসলামে তাওয়াক্কুল একটি ইবাদাত (উপাসনা)। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্যের উপর তাওয়াক্কুল করা শির্‌ক হিসেবে গণ্য হয়।[১]

ইসলামে তাওয়াক্কুল হল, মানুষ কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করবে এবং তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখবে।[১]

তাওয়াক্কুলের প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

  • যেসব বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতা রাখে না সেসব বিষয়ে ভরসা করা। যেমন - অলৌকিক সাহায্য ও নিরাপত্তার জন্য মৃত বা অনুপস্থিত কারো ওপর ভরসা করা। এ প্রকারের ভরসা বড় শির্ক[টীকা ১] হিসেবে গণ্য।[২]
  • বাহ্যিক উপায় উপকরণের উপর নির্ভর করা। যেমন - কারো ঐ ক্ষমতার উপর ভরসা করা, যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। এ প্রকারের ভরসা অবৈধ ও ছোট শির্ক[টীকা ২] হিসেবে গণ্য।[২]
  • কাউকে কোনো কাজে নিযুক্ত করা। যে জন্য তাকে নিযুক্ত করা হল, তা অর্জনের ব্যাপারে তার উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা করা। এটা ইসলামে বৈধ।[২]

কুরআনে উল্লেখ[সম্পাদনা]

তাওয়াক্কুল সম্পর্কে কুরআনের কয়েকটি আয়াতের ভাবানুবাদ:

যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তবে তোমাদের উপর বিজয়ী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাদেরকে লাঞ্ছিত করেন তবে কে এমন আছে যে, তোমাদেরকে এর পরে সাহায্য করবে? আর আল্লাহর উপরই যেন মুমিনগণ তাওয়াক্কুল করে।

— আলি ‘ইমরান ৩:১৬০

আর মূসা বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক’।

— ইউনুস ১০:৮৪

আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে সব বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে। সুতরাং তুমি তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর তাওয়াক্কুল কর। আর তোমরা যা কিছু কর সে ব্যাপারে তোমার রব গাফেল নন।

— হুদ ১১:১২৩

তাদেরকে তাদের রাসূলগণ বলল, ‘আমরা তো কেবল তোমাদের মতই মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসার সাধ্য আমাদের নেই। আর কেবল আল্লাহর উপরই মুমিনদের তাওয়াক্কুল করা উচিত’।

— ইবরাহীম ১৪:১১

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর তাওয়াক্কুল করেছে, তাদের উপর শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই।

— আন-নাহল ১৬:৯৯

আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না এবং তাদের নির্যাতন উপেক্ষা কর আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর; তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।

— আল-আহযাব ৩৩:৪৮

‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের (মুক্তির) পথ তৈরি করে দেন। আর তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন; যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে; আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’

— (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)

হাদীস[সম্পাদনা]

তিরমিযী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করতে, তবে আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পাখির ন্যায় রিযিক দান করতেন। পাখি সকাল বেলায় ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে।”

— [মুসনাদে আহমাদ: ১/৩০, তিরমিযী: ২৩৪৪, ইবনে মাজাহঃ ৪১৬৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. যে শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম থাকে না, তাকে বড় শির্ক বলা হয়।
  2. যে শির্ক ইসলাম থেকে বের করে না দিলেও তাওহীদের বিশ্বাসে ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে তাকে ছোট শির্ক বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, ছোট শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবেনা।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল : গুরুত্ব ও তাৎপর্য। ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ। পৃষ্ঠা ২। 
  2. সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযানআল-ইরশাদ ইলা সহিহ আল-ই'তিকাদ [ছহীহ আক্বীদার দিশারী]। শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী কর্তৃক অনূদিত। মাকতাবাতুস সুন্নাহ। পৃষ্ঠা ১২৪। 

কুরআনের অনুবাদ উৎস[সম্পাদনা]