সমুদ্রের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং মহাসাগরের উপর এর প্রভাব। আঞ্চলিক প্রভাবগুলো ইটালিক্সে প্রদর্শিত হয়েছে।[১]
এই নাসা অ্যানিমেশনটি পৃথিবীর মহাসাগরীয় প্রক্রিয়াগুলিকে পৃথিবীর পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ব্যবস্থাগুলির মধ্যে চালিকা শক্তি হিসাবে উপস্থাপন করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এর অন্যতম প্রধান প্রভাব হলো সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে বারবার সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া, সমুদ্র অম্লীকরণ, সামুদ্রিক বরফ হ্রাস, সমুদ্রস্তর বিভাজনের বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস - এগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের ওপর পড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব। 'আটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন' (AMOC) সহ সামুদ্রিক স্রোতের ব্যাপক পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।[২] জলবায়ু পরিবর্তনের এই পরিণতিগুলো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে।[৩] মানুষের তৈরি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণই জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাস গ্রিনহাউজ গ্যাসের কয়েকটি উদাহরণ। জলবায়ু ব্যবস্থার অতিরিক্ত তাপের বেশিরভাগটাই সমুদ্র শোষণ করে নেওয়ায় সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৪] এছাড়া, বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের একটি বড় অংশ সমুদ্র গ্রহণ করে। যার ফলে সমুদ্রের পানির pH মাত্রা কমে যাচ্ছে।[৫] বিজ্ঞানীদের হিসেব মতে, মানুষের সৃষ্ট মোট কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের প্রায় ২৫% সমুদ্র শোষণ করে নেয়।[৬]

মহাসাগরের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যকে মহাসাগরের তাপমাত্রার স্তরবিন্যাস বলা হয়। বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে এটি বৃদ্ধি পায়।[৭]:৪৭১ সমুদ্রের স্তরগুলির মিশ্রণ হ্রাস পাওয়াতে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি উষ্ণ পানি স্থির হয়ে যায়। এটি গভীর থেকে ঠান্ডা পানির প্রবাহকেও কমিয়ে দেয়। মিশ্রণ কমে যাওয়ার ফলে মহাসাগর তাপ শোষণ করতে পারে না। ফলে ভবিষ্যতের উষ্ণায়নের একটি বড় অংশ বায়ুমণ্ডল এবং ভূমিতে স্থানান্তরিত হয়। এর একটি ফলাফল হলো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য ঝড়ের জন্য উপলব্ধ শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। আরেকটি ফলাফল হলো মহাসাগরের উপরের স্তরে মাছের পুষ্টির পরিমাণ হ্রাস। এই পরিবর্তনগুলি মহাসাগরের কার্বন সংরক্ষণের ক্ষমতাও হ্রাস করে।[৮] একই সাথে, লবণাক্ততার বৈসাদৃশ্যও বাড়ছে। নোনা এলাকাগুলি আরও নোনা হয়ে উঠছে এবং অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত এলাকাগুলি আরও কম নোনা হচ্ছে।[৯]

উষ্ণ পানি ঠান্ডা পানির তুলনায় কম অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। এর ফলে, মহাসাগর থেকে অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। বর্ধিত তাপীয় স্তরবিন্যাস পৃষ্ঠের পানি থেকে গভীর পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। এটি পানির অক্সিজেনের পরিমাণ আরও কমিয়ে দেয়।[১০] মহাসাগর ইতিমধ্যে তার পুরো পানিস্তম্ভে অক্সিজেন হারিয়েছে। অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চল বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হচ্ছে।[১১]:৪৭১

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতর পানির তাপমাত্রা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। এই পরিবর্তনগুলি সামুদ্রিক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারে[১২] বা কিছু প্রজাতির জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যার ফলে প্রজাতির বন্টন সম্পূর্ণভাবে বদলে যেতে পারে।[১৩] এর ফলে উপকূলীয় মৎস্যচাষ ও পর্যটনশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিভিন্ন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র যেমন প্রবাল প্রাচীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনই প্রবাল প্রাচীরকে সাদা করে ফেলতে (কোরাল ব্লিচিং) পারে যা এইসব ভঙ্গুর প্রাচীরের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়াও, সমুদ্রের অম্লীকরণ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি সমুদ্রের উৎপাদনশীলতা ও প্রজাতির বন্টনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে, বৈশ্বিক মৎস্যচাষ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয় এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হতে থাকে। উষ্ণতার কারণে সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়া মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। মেরু ভালুকের মতো অনেক মেরু প্রাণীর অস্তিত্ব আজ চরম বিপদের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই নানামুখী প্রতিক্রিয়া জলবায়ু ব্যবস্থা এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর অভাবনীয় চাপ সৃষ্টি করছে।[১৪]

গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট পরিবর্তন[সম্পাদনা]

মানুষের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আটকে থাকা অতিরিক্ত তাপের অধিকাংশই সমুদ্র শোষণ করে নেয়, যা সমুদ্রের গভীর স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে।[১৫]
বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশে শক্তি (তাপ) বৃদ্ধি (২০০৭ সালের তথ্য)

বর্তমানে (২০২০ সালের হিসেবে), বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) মাত্রা ৪১০ পিপিএম এরও বেশি। শিল্প-বিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় এটি প্রায় ৫০% বেশি। গত ৫.৫ কোটি বছরের ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডে এই মাত্রার বৃদ্ধি এবং এর দ্রুততা অভূতপূর্ব। মানুষের কার্যকলাপের ফলেই এই অতিরিক্ত CO2 তৈরি হচ্ছে, এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত। এর প্রধান কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বিভিন্ন শিল্পকারখানার নির্গমন, এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন। কমপক্ষে ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিক থেকেই বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে এই বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে যে, সমুদ্র মানুষ-সৃষ্ট CO2 এর একটি প্রধান শোষক হিসেবে কাজ করে। বেশ কিছু প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে, মোটামুটি এক-চতুর্থাংশ মানুষ-সৃষ্ট CO2 নির্গমন সমুদ্র শোষণ করে নেয়।


২০১৯ সালের পর থেকে পর্যবেক্ষিত পরিবর্তন এবং প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:

১৯৭০ সালের পর থেকে পৃথিবীর মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু ব্যবস্থায় সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের ৯০% এরও বেশি এই মহাসাগরগুলি শোষণ করে নিয়েছে। বিগত কয়েক দশকে সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে; এই হার ১৯৯৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ (marine heatwaves) হলো এমন ঘটনা যখন কোনো নির্দিষ্ট সামুদ্রিক অঞ্চলের তাপমাত্রা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। এই তাপপ্রবাহের ঘটনা ১৯৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দ্বিগুণ হয়েছে, এবং এর তীব্রতাও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এই তাপপ্রবাহ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রের পানি অধিক অম্লীয় হয়ে উঠছে (ocean acidification)। এই অম্লতা বৃদ্ধি প্রবালপ্রাচীর সহ অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি করে। এছাড়াও, সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে যা সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

১৯৬০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা ঘিরে দক্ষিণ মহাসাগর থেকে শুরু করে প্রতিটি মহাসাগরে তাপমাত্রা পরিবর্তনের চিত্র।[১৬]

মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি[সম্পাদনা]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯২% শোষণ করে নেয়ার কারণে, সমুদ্রের তাপমাত্রার চেয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প-বিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় ভূমি ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা দেখানো নাসার তথ্য সম্বলিত একটি চার্ট।[১৭][১৮]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহাসাগরের তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং এই বৃদ্ধির হার দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। মহাসাগরগুলোর অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার পরিমাপ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২২ সালে সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের রেকর্ডটি ছিল ২০২১ সালে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যহীনতারই এটি একটি অনিবার্য পরিণতি। শিল্প-বিপ্লবের আগের সময়কাল এবং ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৬৮ থেকে ১.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

সাউদার্ন ওশান বা দক্ষিণ মহাসাগর অঞ্চলেই এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ দশকের মধ্যে অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের দক্ষিণ মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বৈশ্বিক হারের প্রায় দ্বিগুণ।

মহাসাগরের গভীরতার সাথে এই উষ্ণতার হার পরিবর্তিত হয়। উপরের স্তরগুলোতে (৭০০ মিটারের উপরে) উষ্ণতা দ্রুততম হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক হাজার মিটার গভীরতায়, গত শতাব্দীতে (১৯৮১ থেকে ২০১৯) উষ্ণতার হার ছিল প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মহাসাগরের গভীরতর অঞ্চলে (২০০০ মিটার গভীরতা) এই উষ্ণতার হার প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অ্যান্টার্কটিক মহাসাগরের ক্ষেত্রে, সর্বোচ্চ উষ্ণতার (০.৩ °সে প্রতি শতাব্দীতে) স্থানটি হলো ৪৫০০ মিটার গভীরতা।

মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা[সম্পাদনা]

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মহাসাগরের তাপমাত্রার তারতম্য হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি এবং মেরু অঞ্চলে তা কম থাকে। মহাসাগরের মোট তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তনই মহাসাগরগুলো উষ্ণ হওয়ার সবচেয়ে ভালো তথ্য প্রদান করে। ১৯৬৯-১৯৯৩ সালের তুলনায় ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা বেড়েছে।

মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা হলো মহাসাগর কর্তৃক শোষিত ও সঞ্চিত তাপশক্তি। এই ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন স্থানে ও গভীরতায় মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা মাপা প্রয়োজন। একটি মহাসাগরীয় অববাহিকা বা সম্পূর্ণ মহাসাগরের ওপর তাপের ক্ষেত্রিক ঘনত্ব সমাকলনের মাধ্যমে মোট তাপধারণ ক্ষমতা বের করা যায়। এই তাপধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে মানুষের সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। ১৯৭১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বাড়তি ৯০% এরও বেশি তাপশক্তি শোষণ করেছে মহাসাগরসমূহ। ২০২০ সালের মধ্যে, মোটামুটি এক-তৃতীয়াংশ যোগ হওয়া শক্তি ৭০০ মিটারেরও বেশি গভীরতায় প্রবেশ করেছে।

২০২৩ সালে, বিশ্বের মহাসাগরগুলি আবারও ঐতিহাসিক রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতর ছিল, যা আগের বছর ২০২২-এর রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিশ্বের পাঁচটি সর্বোচ্চ মহাসাগরীয় তাপ পর্যবেক্ষণ হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগর- এই সব অঞ্চলে বিশ্বব্যাপী পরিমাপের ষাট বছরেরও বেশি সময়ের রেকর্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা পড়েছে। মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

মহাসাগরের পানি সৌরশক্তি বেশ দক্ষতার সাথে শোষণ করে। বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলির তুলনায় এদের তাপধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই সমগ্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তুলনায় মহাসাগরের ওপরের অংশের অল্প কয়েক মিটারেই বেশি তাপশক্তি ধারণ করে। ১৯৬০ সালের আগে থেকেই গবেষণা জাহাজ এবং স্টেশনগুলি সারা বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও অধিক গভীরতার তাপমাত্রা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করেছে। ২০০০ সাল থেকে, প্রায় ৪০০০ এরও বেশি আর্গো রোবোটিক ফ্লোট সমুদ্রের তাপমাত্রার অস্বাভাবিকতা বা তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তন পরিমাপ করছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে পর্যবেক্ষণের উন্নতির সাথে সাথে, উপরের অংশের মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতা ত্বরান্বিত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০০৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শীর্ষ ২০০০ মিটার গভীরতায় তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তনের হার ছিল +০.৫৮ ± ০.০৮ ওয়াট/বর্গমিটার (বা ৯.৩ জেটাজুলের বার্ষিক গড় শক্তি বৃদ্ধি)।

মহাসাগরের তাপধারণ ক্ষমতার পরিবর্তনের গ্রহের সামুদ্রিক এবং স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে; উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র এবং সম্প্রদায়গুলিতে এর বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। প্রত্যক্ষ প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য, সমুদ্রের বরফ, পানিচক্রের তীব্রতার পরিবর্তন এবং সামুদ্রিক জীবনের অভিবাসন ও বিলুপ্তি।

মহাসাগরের অম্লীকরণ[সম্পাদনা]

মহাসাগরের অম্লীকরণ: গড় সমুদ্রের পানির pH। আলোহা স্টেশন থেকে pH এর সরাসরি মাপের উপর ভিত্তি করে গড় সমুদ্রের পানির pH দেখানো হয়।[১৯]
শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে পিএইচ-এর পরিবর্তন। RCP2.6 হলো "কম CO2 নির্গমন" এর দৃশ্যকল্প। RCP8.5 হলো "উচ্চ CO2 নির্গমন" এর দৃশ্যকল্প।[২০]

মহাসাগরের অম্লীকরণ হলো পৃথিবীর মহাসাগরের পিএইচ-এর ক্রমাগত হ্রাস। ১৯৫০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, সাগরের উপরিতলের পিএইচ গড়ে প্রায় ৮.১৫ থেকে ৮.০৫-এ নেমে এসেছে। মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড হল মহাসাগরের অম্লীকরণের প্রধান কারণ। বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) স্তর ৪১০ পিপিএম ছাড়িয়ে গেছে (২০২০ সালে)। বায়ুমণ্ডল থেকে সৃষ্ট CO2 সাগরে শোষিত হয়। এই রাসায়নিক বিক্রিয়া কার্বনিক অ্যাসিড (H2CO3) উৎপন্ন করে যা একটি বাইকার্বনেট আয়ন (HCO−3) এবং একটি হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুক্ত হাইড্রোজেন আয়নের (H+) উপস্থিতি সমুদ্রের পিএইচ কমিয়ে দেয়, অম্লতা বৃদ্ধি করে (এর মানে এই নয় যে সমুদ্রের জল এখনই অম্লীয়; এটি এখনও ক্ষারীয়, pH এর মান ৮ এর চেয়ে বেশি। তবে এর অম্লতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।)। সামুদ্রিক ক্যালসিফাইং জীব, যেমন মলাস্ক এবং প্রবাল, বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কারণ এরা শেল এবং কঙ্কাল তৈরি করতে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের উপর নির্ভর করে।

পৃথিবীর মহাসাগরগুলিতে পিএইচ-এ ০.১ পরিবর্তন হলে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব ২৬% বৃদ্ধি পায় (pH স্কেল লগারিদমিক, তাই pH ইউনিটে একটি পরিবর্তন হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের দশগুণ পরিবর্তনের সমতুল্য)। সমুদ্র-পৃষ্ঠের pH এবং কার্বনেট স্যাচুরেশন অবস্থা সমুদ্রের গভীরতা এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। শীতল এবং উচ্চ অক্ষাংশের জল আরও বেশি CO2 শোষণ করতে সক্ষম। এর ফলে অম্লতা বৃদ্ধি পেতে পারে, pH কমে যেতে পারে এবং এই এলাকার কার্বনেট স্যাচুরেশন লেভেল কমতে পারে। অন্যান্য যেসব কারণ বায়ুমণ্ডল-সাগরের CO2 বিনিময়কে প্রভাবিত করে, এবং এর ফলে স্থানীয়ভাবে মহাসাগরের অম্লীকরণে ভূমিকা রাখে, সেগুলো হল: মহাসাগরীয় স্রোত এবং আপওয়েলিং জোন, বড় মহাদেশীয় নদীর নৈকট্য, সামুদ্রিক বরফের আচ্ছাদন, এবং জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও কৃষিকাজ থেকে সৃষ্ট নাইট্রোজেন এবং সালফারের সাথে বায়ুমণ্ডলীয় বিনিময়।

মহাসাগরের পিএইচ হ্রাসের ফলে সামুদ্রিক জীবের জন্য একাধিক ক্ষতিকারক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিফিকেশন হ্রাস, বিপাকীয় হার হ্রাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, এবং প্রজননের মতো মৌলিক কার্যকলাপের জন্য শক্তি হ্রাস। মহাসাগরের অম্লীকরণের প্রভাব তাই সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করছে যা মানবতার একটি বড় অংশের জন্য খাদ্য, জীবিকা এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র সেবা প্রদান করে। প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রবাল প্রাচীর দ্বারা প্রদত্ত মাছ ধরা, পর্যটন এবং উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। অতএব, মহাসাগরের অম্লীকরণ মহাসাগরের সাথে যুক্ত খাদ্য শৃঙ্খলকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১৪ ("জলের নিচে জীবন")-এর একটি লক্ষ্য রয়েছে "মহাসাগর অম্লীকরণের প্রভাব হ্রাস ও মোকাবেলা করা"। কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করা (অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের ব্যবস্থা) একমাত্র সমাধান যা মহাসাগরের অম্লীকরণের মূল কারণকে সমাধান করে। যেসব প্রশমন ব্যবস্থা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করতে পারে তা মহাসাগরের অম্লীকরণকে বিপরীত করতে পারে। আরও নির্দিষ্ট মহাসাগর-ভিত্তিক প্রশমন পদ্ধতিগুলি (যেমন মহাসাগরের ক্ষারত্ব বৃদ্ধি, বর্ধিত আবহাওয়া) মহাসাগরের অম্লীকরণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই কৌশলগুলি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, তবে সাধারণত প্রযুক্তিগতভাবে এগুলো এখনও প্রস্তুত নয় এবং এদের সাথে অনেক ঝুঁকিও রয়েছে।

মহাসাগরের অম্লীকরণ পৃথিবীর ইতিহাসে আগেও ঘটেছে। এর ফলে মহাসাগরের যে বাস্তুতান্ত্রিক ধ্বস নেমেছিল, তা বৈশ্বিক কার্বন চক্র এবং জলবায়ুতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।

পরিবেশের উপর প্রভাব[সম্পাদনা]

সমুদ্রপৃষ্ঠের উর্ধ্বগতি[সম্পাদনা]

১৮৮০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ ২৫০ মিলিমিটার (৯.৮ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পেয়েছে,[২১] যার ফলে অন্যান্য ধরণের বন্যা (জোয়ারের সময়ে বন্যা, ঝড়ের ঢেউ) ঘটার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

আগামী দশকগুলিতে এবং তার পরেও অনেক উপকূলীয় শহর উপকূলীয় বন্যার সম্মুখীন হবে। স্থানীয় ভূমিধস, যা প্রাকৃতিক কিন্তু মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে, উপকূলীয় বন্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। উপকূলীয় বন্যা ২০৫০ সালের মধ্যে কয়েকশ মিলিয়ন লোককে হুমকির সম্মুখীন করবে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।

১৯০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, গড় বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠ ১৫-২৫ সেমি (৬-১০ ইঞ্চি), গড়ে ১-২ মিমি (০.০৩৯-০.০৭৯ ইঞ্চি) প্রতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হার ২০২১-২০২২ দশকে প্রতি বছর ৪.৬২ মিমি (০.১৮২ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনই এর মূল কারণ। ১৯৯৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, জলের তাপীয় প্রসারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের ৪২% অংশীদার ছিল। নাতিশীতোষ্ণ হিমবাহগুলি গলে যাওয়ার জন্য ২১% কারণ ছিল, যখন গ্রিনল্যান্ডে মেরু হিমবাহগুলি ১৫% এবং অ্যান্টার্কটিকায় ৮% এর জন্য দায়ী। পৃথিবীর তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতিও শ্লথ হয়ে যায় এবং তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধির গতি ২০৫০ সাল পর্যন্ত, ইতিমধ্যেই যে উষ্ণায়ন ঘটেছে তার প্রতিক্রিয়ায় ত্বরান্বিত হতে থাকবে। এরপর কি হবে তা নির্ভর করে মানুষের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ওপর। নির্গমনে যদি গভীরভাবে ছেদ পড়ে তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি ২০৫০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে ধীরগতির হতে পারে। এটি বর্তমানের তুলনায় ২১০০ সাল নাগাদ ৩০ সেন্টিমিটারের (১ ফুট) সামান্য বেশি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। উচ্চ নির্গমনের ক্ষেত্রে এর গতি আরও বাড়তে পারে। তখনকার সময়ে এটি ১ মিটারের (৩১⁄২ ফুট) বেশি এমনকি ২ মিটার (৬১⁄২ ফুট) পর্যন্ত ওঠা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে, সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি আগামী ২০০০ বছরে ২–৩ মিটার (৭-১০ ফুট) হবে যদি উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২.৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট) সীমিত থাকে। উষ্ণায়ন যদি ৫°C (৯.০°F) এ পৌঁছায় তবে সমুদ্রের উচ্চতা হবে ১৯–২২ মিটার (৬২–৭২ ফুট)।

সমুদ্রপৃষ্ঠের এই উর্ধ্বগতি পৃথিবীর প্রতিটি উপকূলীয় এবং দ্বীপ জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে। এটি বন্যা, উচ্চতর ঝড়ের ঢেউ, জোয়ার এবং সুনামির মাধ্যমে হতে পারে। এর অনেক নক-অন প্রভাব আছে। এগুলি ম্যানগ্রোভের মতো উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। সেচের জলের লবণাক্ততার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। বন্দরের ক্ষয়ক্ষতি সমুদ্র ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটায়। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রক্ষিপ্ত উত্থান বর্তমানে কয়েক কোটি লোকের বসবাসকারী স্থানগুলিকে বার্ষিক বন্যার ঝুঁকিতে ফেলবে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনে তীব্রভাবে হ্রাস পাবার ব্যবস্থা না নিলে, শতাব্দীর পরবর্তী দশকগুলিতে এই সংখ্যা কয়েকশ মিলিয়নে উন্নীত হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের সরাসরি উর্ধ্বগতির সংস্পর্শে না আসা এলাকাগুলো ব্যাপক আকারের অভিবাসন এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়তে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। তবে, বিভিন্ন স্থানীয় কারণ যেমন জোয়ারের পরিসর বা ভূমি নিমজ্জন এর প্রভাবের তীব্রতা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চল, খাত এবং দেশসমূহের ভিন্ন প্রতিরোধ ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা প্রভাবের মাত্রা নির্ধারণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, বিশেষ করে পূর্ব উপকূল বরাবর, বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ইতিমধ্যেই বেশি। শতাব্দীর শেষ নাগাদ এটি বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের ব্যাপকতম ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে ১২টিই এশিয়ায়। এই আটটি দেশ - বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম - বৈশ্বিকভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান এবং ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্ব জনসংখ্যার ৭০%। স্বল্পমেয়াদে মানব জনগোষ্ঠীর উপর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে নিচু ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান এই শতাব্দীর শেষের দিকে এদের অনেককে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলবে।

সমাজ তিনটি উপায়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পরিচালিত পশ্চাদপসরণ, উপকূলীয় পরিবর্তনে আবাসন, বা সমুদ্র প্রাচীরের মতো কঠোর-নির্মাণ অনুশীলনের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হল কঠিন পন্থা। এছাড়া বালিয়াড়ি পুনর্বাসন এবং সৈকত পুষ্টির মতো নরম পদ্ধতিও রয়েছে। কখনও কখনও এই অভিযোজন কৌশলগুলি একসাথে চলে। অন্য সময় বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কোনো এলাকার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সেক্ষেত্রে পরিচালিত পশ্চাদপসরণ ব্যবস্থা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি আফ্রিকার জন্য একটি বিশেষ সমস্যা। কারণ সেখানে নিম্নভূমি উপকূলীয় এলাকার জনসংখ্যা আগামী ৪০ বছরের মধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ বৃদ্ধি পেতে পারে। ধনী রাষ্ট্রগুলির মতো সমুদ্রপৃষ্ঠের উর্ধ্বগতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পন্থাগুলি বাস্তবায়নে গরিব দেশগুলিও সংগ্রাম করতে পারে। কিছু স্থানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা দ্বারা আরও মিশ্রিত হতে পারে। একটি উদাহরণ হল ডুবে যাওয়া শহরে ভূমিধস। উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাকে ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সরে যাওয়ার মাধ্যমে মানিয়ে নেয়। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বাধাগুলি এটিকে অসম্ভব করে তুলতে পারে।

পরিবর্তনশীল সমুদ্রস্রোত[সম্পাদনা]

সমুদ্র উপকূলে ঢেউ

সমুদ্রস্রোত বিভিন্ন অক্ষাংশের সূর্যালোক ও বায়ুর তাপমাত্রার তারতম্য, সাথে লবণাক্ত ও মিঠা পানির ভিন্ন ঘনত্ব, এবং প্রবাহমান বায়ুর দ্বারা সৃষ্টি হয়। বিষুব রেখার কাছে উষ্ণ বাতাস উপরে উঠে যায় এবং মেরু অঞ্চলের দিকে যাওয়ার সময় ঠাণ্ডা হতে থাকে। এই ঠাণ্ডা বায়ু মেরুর কাছে নেমে যায়, কিন্তু বিষুব রেখার দিকে যাওয়ার সাথে সাথে আবার উষ্ণ হয়। এই প্রক্রিয়ায় বড় আকারের বায়ু প্রবাহের ধরণ তৈরি হয় যাকে হ্যাডলি কোষ বলা হয়। এই ধরণের কোষ প্রতিটি গোলার্ধে একটি মধ্য-অক্ষাংশীয় কোষও পরিচালনা করে। এসব বায়ু প্রবাহের ধরণগুলো ভূপৃষ্ঠের স্রোতকে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে নিয়ে যায় যেখানে বাতাস শীতল থাকে। এতে পানি ঠাণ্ডা হয়ে নিচের অক্ষাংশের পানির তুলনায় অনেক ঘন হয়ে যায় এবং সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। উত্তর আটলান্টিকে একে নর্থ আটলান্টিক ডিপ ওয়াটার (NADW) এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিক বটম ওয়াটার (AABW) বলে।

এই ডুবন্ত প্রক্রিয়া, নিম্ন অক্ষাংশে পানির উত্থান, এবং ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর বায়ুর চাপের ফলে সমুদ্রস্রোতগুলো সারা সমুদ্রে পানি পরিচালনা করে। কিন্তু যখন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি আসে, তখন পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে গভীর পানি তৈরির এলাকাগুলোতে। সমুদ্র উষ্ণ হওয়া এবং হিমবাহ ও মেরু বরফের টুপি গলার সাথে সাথে, যেসব উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলে গভীর পানি তৈরি হয় সেখানে অনেক বেশি মিঠা পানি যুক্ত হয়। এতে করে ভূপৃষ্ঠের পানির ঘনত্ব কমে যায় ফলে পানি আগের চেয়ে ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়।

আধুনিক পর্যবেক্ষণ এবং জীবাশ্ম থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, শিল্প-পূর্ব যুগ থেকে অ্যাটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) দুর্বল হয়ে থাকতে পারে। (AMOC বৈশ্বিক থার্মোহ্যালাইন সঞ্চালনের একটি অংশ)। কিন্তু তথ্যে এত অনিশ্চয়তা আছে যে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। ২০২১ সালে মূল্যায়নকৃত জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত পূর্বাভাসগুলো থেকে জানা যায় যে ২১তম শতাব্দীতে AMOC খুব সম্ভবত দুর্বল হয়ে যাবে। এত বড় মাত্রার দুর্বলতা বৈশ্বিক জলবায়ুতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলটি বেশ ঝুঁকিতে থাকবে।

মহাসাগরের স্রোতগুলোতে যেকোন পরিবর্তন সমুদ্রের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে (যা পানির তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়) এবং মহাসাগরীয় উৎপাদনশীলতাকেও প্রভাবিত করে কারণ স্রোতগুলো পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে (দেখুন: ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং মোট প্রাথমিক উৎপাদনের ওপর প্রভাব)। যেহেতু AMOC গভীর সমুদ্র সঞ্চালন খুব ধীর (পুরো সমুদ্রে চক্রাকারে পানি প্রবাহিত করতে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার বছর লাগে), জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এতে ধীরে ধীরে দেখা যাবে।

সমুদ্র স্তরবিন্যাস বৃদ্ধি[সম্পাদনা]

উপকূলীয় উত্থিত-প্রবাহ অঞ্চলে হাইপোক্সিয়া (অক্সিজেন স্বল্পতা) ও সমুদ্রের অম্লীকরণ বৃদ্ধির কারণসমূহ: নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে বায়ুপ্রবাহ গভীর সমুদ্রের নিম্ন-অক্সিজেনযুক্ত, উচ্চ পুষ্টি ও উচ্চ দ্রবীভূত অজৈব কার্বন (DIC) সমৃদ্ধ পানিকে অক্সিজেন সর্বনিম্ন অঞ্চলের উপর থেকে উপকূলে উত্থিত করে। উৎপাদনশীল মহীসোপান বরাবর পানির প্রবাহে অক্সিজেন হ্রাস (DO) ও কার্বন বৃদ্ধির (DIC) তীব্রতা, উৎপাদনশীলতা এবং সমুদ্র তলদেশে পানি অবস্থানের সময়কাল দ্বারা নির্ধারিত হয়।[২২][২৩]

সমুদ্র স্তরবিন্যাসের পরিবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি উৎপাদনশীলতা ও অক্সিজেনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। ঘনত্বের ভিত্তিতে পানির স্তরগুলিতে বিভক্ত হওয়াকে স্তরবিন্যাস বলা হয়। সকল মহাসাগরীয় অববাহিকাতেই স্তরবিন্যাস ঘটে। স্তরবিন্যাস পানির উল্লম্ব মিশ্রণকে সীমিত করে, সমুদ্রের উপরিভাগ এবং অভ্যন্তরভাগের মধ্যে তাপ, কার্বন, অক্সিজেন ও কণার বিনিময় হ্রাস করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে লবণাক্ততার পরিবর্তনের কারণে ১৯৭০ সাল থেকে সমুদ্রের উপরিভাগে স্তরবিন্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের পানির বাষ্পীভবনের কারণে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়, যা লবণাক্ততা এবং ঘনত্বের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এদিকে, বরফ গলে যাওয়ার ফলে উচ্চ অক্ষাংশে লবণাক্ততা হ্রাস পেতে পারে।

তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, এবং চাপ - এই তিনটিই পানির ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। ভূপৃষ্ঠের পানি প্রায়শই গভীর পানির তুলনায় উষ্ণ থাকায় কম ঘন হয়, ফলে স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি হয়। আটলান্টিক মেরিডিয়নাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) -এর কার্যকারিতায় এই স্তরবিন্যাস মারাত্মক ভূমিকা রাখে। AMOC এর বৈশ্বিক আবহাওয়া এবং জলবায়ুর গভীর প্রভাব রয়েছে। স্তরবিন্যাস এজন্যও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ পুষ্টির উপাদানকে নিম্নস্তর থেকে উপরিভাগে বয়ে নিয়ে আসতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মহাসাগরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, সমুদ্রের উপরিস্থিত স্তর থেকে অক্সিজেনকে গভীর পানিতে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।

নিম্ন অক্সিজেন মাত্রা[সম্পাদনা]

মানচিত্রে উন্মুক্ত সমুদ্র এবং উপকূলীয় জলরাশিতে কম এবং ক্রমহ্রাসমান অক্সিজেন মাত্রার এলাকাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে লাল বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই এলাকাগুলোতে মানুষের কারণে সৃষ্ট পুষ্টি উপাদানের কারণে অক্সিজেনের মাত্রা ২mg/L থেকেও কম হয়ে গেছে। এছাড়াও সমুদ্রের ৩০০ মিটার গভীরতায় বিস্তৃত অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চলগুলো (oxygen minimum zone) নীল রঙের ছায়া দিয়ে দেখানো হয়েছে।[২৪]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের অক্সিজেন মাত্রায় প্রভাব পড়ছে, বিশেষত উপকূলীয় এলাকা এবং উন্মুক্ত সমুদ্রে।

উন্মুক্ত সমুদ্রের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। এদেরকে অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চল (oxygen minimum zone) বলা হয়। ধীরগতির সমুদ্র সঞ্চালনের কারণে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন থেকে এই অঞ্চলগুলো বিচ্ছিন্ন থাকে। একইসাথে, উপরের স্তর থেকে নেমে আসা জৈব পদার্থ ভেঙে যাওয়ার সময় অক্সিজেন খরচ হয়। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পানির ঘনত্ব কমে, সঞ্চালনের গতি মন্থর হয়, এবং অক্সিজেন ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ এই কম অক্সিজেন যুক্ত অঞ্চলের পরিধি বাড়ছে।

গত ৫০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৬০-এর দশক থেকে সামগ্রিকভাবে সমুদ্রের অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় ২% কমে গেছে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত, সমুদ্র সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরে কম অক্সিজেন যুক্ত অঞ্চলের প্রাধান্য বেশি লক্ষ্য করা যায়। কম অক্সিজেন প্রায় সব ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অক্সিজেনের মাত্রা খুবই কম হয়ে গেলে সেসব এলাকায় জীববৈচিত্র্য অনেকটাই কমে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এই অক্সিজেন ন্যূনতম অঞ্চলগুলোর পরিধি আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যা এইসব এলাকার সামুদ্রিক জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি।

নদী থেকে ক্রমবর্ধমান পুষ্টি উপাদান উপকূলে এসে জমা হয়, যার ফলে জৈব পদার্থ উৎপাদন ও তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। কিছু কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে এর ফলে অক্সিজেনের চরম ঘাটতির সৃষ্টি হয়, যে অঞ্চলগুলোকে 'মৃত অঞ্চল' (dead zone) হিসেবে অভিহিত করা হয়। পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরে তাপমাত্রার তারতম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই 'মৃত অঞ্চলগুলো' সম্প্রসারিত হচ্ছে।

মহাসাগরের নীল থেকে সবুজে পরিণত হওয়া[সম্পাদনা]

উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে মহাসাগর ধীরে ধীরে নীল থেকে সবুজে পরিণত হচ্ছে। পৃথিবীর অধিকাংশ মহাসাগরের পৃষ্ঠে এই রঙের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্ল্যাঙ্কটনের জনসংখ্যার পরিবর্তনের কারণেই এটি হতে পারে।

মহাসাগরের পানি নীল দেখায় কারণ এটি সূর্যের আলোর লাল অংশ শোষণ করে এবং নীল অংশ প্রতিফলিত করে। যখন প্ল্যাঙ্কটনের মতো জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন তারা ক্লোরোফিল উৎপাদন করে, যা সবুজ আলো প্রতিফলিত করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে। প্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধি মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য এবং খাদ্য শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, এটি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে মহাসাগরের পানি উষ্ণ হচ্ছে, যা কিছু প্রজাতির প্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। কৃষিক্ষেত্র থেকে বর্জ্য এবং দূষণকারী পদার্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পানিতে পুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা প্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। বরফ গলে পানিতে লবণাক্ততা হ্রাস পায়, যা কিছু প্রজাতির প্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। প্ল্যাঙ্কটন সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্ল্যাঙ্কটনের জনসংখ্যার পরিবর্তন সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। প্ল্যাঙ্কটন বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। প্ল্যাঙ্কটনের জনসংখ্যার পরিবর্তন কার্বন চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। মহাসাগর নীল থেকে সবুজে পরিণত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

পৃথিবীর আবহাওয়া ব্যবস্থা এবং বায়ু প্রবাহে পরিবর্তন[সম্পাদনা]

জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর সাথে সম্পর্কিত সমুদ্রের উষ্ণতার ফলে পৃথিবীর জলবায়ু এবং আবহাওয়া ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এর ফলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ও মৌসুমী বায়ুর তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও মারাত্মক হবে, যেখানে কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়বে এবং অন্যসব এলাকায় খরা দেখা দেবে। পরিবর্তনশীল বায়ু প্রবাহের কারণে কিছু কিছু এলাকায় তরঙ্গের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি[সম্পাদনা]

মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন "মহাসাগরগুলিকে উষ্ণ করতে থাকে”, যা অতীতের জমে থাকা প্রভাবগুলির স্মৃতি বহন করে। এর ফলাফল হলো মহাসাগরে তাপের পরিমান বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। পরিণামে, এটি "ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলিকে আরও তীব্র, বড়, দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে এবং তাদের বন্যার বৃষ্টিপাতকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে"। এর একটি উদাহরণ হলো ২০১৭ সালের হারভে হারিকেন।

১৯৪৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শক্তি অপচয় সূচক (পাওয়ার ডিসিপেশন ইনডেক্স) অনুযায়ী উত্তর আটলান্টিক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের কার্যকলাপ। তুলনা করার জন্য কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তা দেখানোর জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাকে PDI-এর পাশাপাশি প্লট করা হয়েছে। একটি পাঁচ বছরের ওজনযুক্ত গড় ব্যবহার করে লাইনগুলিকে মসৃণ করা হয়েছে, যা মাঝের বছরে প্লট করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন নানা ভাবে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়কে প্রভাবিত করতে পারে: বৃষ্টিপাত ও বায়ুর গতিবেগ বৃদ্ধি, সামগ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা হ্রাস, অত্যন্ত তীব্র ঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণিঝড় যে স্থানে সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছায় সেই স্থানের মেরুদেশীয় সম্প্রসারণ।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি তাদের শক্তির উৎস বা "জ্বালানী" হিসাবে উষ্ণ, আর্দ্র বায়ু ব্যবহার করে। জলবায়ু পরিবর্তন যেহেতু সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে, তাই সম্ভাব্যভাবে এই জ্বালানী আরও বেশি পরিমাণে উপলব্ধ হচ্ছে।

১৯৭৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে, স্যাফির-সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি ৩ এবং তারও বেশি শক্তির ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের অনুপাত বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর আটলান্টিক এবং দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে এই প্রবণতাটি সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়েছে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি মেরুদিকের দিকে শীতল জলের মধ্যে অগ্রসর হচ্ছে এবং এই সময়ের মধ্যে এখানে ঝড়ের তীব্রতায় কোনও বৃদ্ধি ঘটেনি। ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উষ্ণতার সাথে, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের একটি বড় অংশ (১৩% বেশি) ক্যাটাগরি ৪ এবং ৫ শক্তিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হয়। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন আটলান্টিক অববাহিকায় ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের দ্রুত তীব্রতার প্রবণতা চালিত করছে। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের এই দ্রুত তীব্রতা বৃদ্ধি পূর্বাভাস করা কঠিন এবং তাই এটি উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলির জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।

উষ্ণ বায়ু আরও বেশি জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে: ক্লাসিয়াস-ক্লেপেরন সম্পর্ক দ্বারা তাত্ত্বিক সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্পের পরিমাণ দেওয়া হয়, যা উষ্ণতা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ প্রায় ৭% বৃদ্ধি করে। ২০১৯ সালের একটি পর্যালোচনা প্রবন্ধে মূল্যায়ন করা হয় এমন সব মডেলই ভবিষ্যতে বৃষ্টিপাতের হার বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়বে। এটা যুক্তিসঙ্গত যে, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের পরিবর্তনের ফলে চরম বায়ুপ্রবাহেও বৃদ্ধি পায়, এবং এর ফলে উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলির জন্য ঝড়ের বিপদ আরও বেড়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বন্যা, ঝড় এবং নদীর বন্যার যৌথ প্রভাব বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সামগ্রিক সংখ্যাকে প্রভাবিত করবে সে বিষয়ে বর্তমানে কোন ঐক্যমত নেই। বেশিরভাগ জলবায়ু মডেল ভবিষ্যতের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়াকে চিত্রিত করে। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ-রেজোলিউশনের নয়টি জলবায়ু মডেলের তুলনা করে ২০২০ সালের একটি প্রবন্ধে বলা হয়, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর গোলার্ধের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে এর সংকেতগুলো স্পষ্ট নয়।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যে অক্ষাংশে সর্বোচ্চ তীব্রতা প্রাপ্ত হয় সেই অক্ষাংশের মেরুদিকের সম্প্রসারণ ঘটেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে জড়িত থাকতে পারে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বদিকে সম্প্রসারণও হয়েছে। ১৯৪৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সঞ্চারণ গতিতে মন্দা দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি কতটা হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়: জলবায়ু মডেলগুলি এই বৈশিষ্ট্যটি সব দেখায় না।

সামুদ্রিক লবণাক্ততার পরিবর্তন[সম্পাদনা]

জলবায়ু পরিবর্তন এবং হিমবাহ গলার কারণে, মহাসাগরে মিঠা পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে থার্মোহ্যালাইন সার্কুলেশন প্যাটার্ন বিঘ্নিত হতে পারে এবং এভাবে মহাসাগরের লবণাক্ততা পরিবর্তিত হতে পারে। এই থার্মোহ্যালাইন সার্কুলেশনই মহাসাগরের গভীর থেকে ঠান্ডা, পুষ্টি সমৃদ্ধ পানিকে ওপরে তুলে আনার জন্য দায়ী, এই প্রক্রিয়াটি আপওয়েলিং নামে পরিচিত।

সমুদ্রের পানি মূলত মিঠা পানি এবং লবণের সমন্বয়ে তৈরি। সমুদ্রের পানিতে লবণের ঘনত্বকে লবণাক্ততা বলা হয়। যেহেতু লবণ বাষ্পীভূত হয় না, তাই মিঠা পানির বৃষ্টিপাত ও বাষ্পীভবন লবণাক্ততাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। তাই জলচক্রের পরিবর্তনগুলো পৃষ্ঠতলের লবণাক্ততার পরিমাপে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়, যা ১৯৩০-এর দশক থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণে একটি স্পষ্ট প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়: বিশ্বব্যাপী লবণাক্ততার বিন্যাস আরও ব্যাপকতর হয়ে উঠছে। এর অর্থ হল উচ্চ লবণাক্ততার অঞ্চলগুলি আরও বেশি লবণাক্ত হয়েছে এবং নিম্ন লবণাক্ততার অঞ্চলগুলি আরও কম লবণাক্ত হয়েছে। যে অঞ্চলগুলিতে উচ্চ লবণাক্ততা দেখা যায় সেগুলোতে বাষ্পীভবনের প্রাধান্য থাকে। লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে বাষ্পীভবনের হার আরও বাড়ছে। একইভাবে, নিম্ন লবণাক্ততার অঞ্চলগুলি যে আরও কম লবণাক্ত হয়ে উঠছে, তা থেকে বোঝা যায় যে বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বাড়ছে।

সমুদ্রের বরফ হ্রাস ও পরিবর্তন[সম্পাদনা]

১৯৭৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আর্কটিক সমুদ্র বরফের পরিমাণ (ক্ষেত্রফল) হ্রাস

আর্কটিক অঞ্চলে, অ্যান্টার্কটিকার তুলনায় সমুদ্রের বরফ বেশি হারে হ্রাস পাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে সমুদ্রের বরফ হ্রাস না পেয়ে বরং এর পরিস্থিতিতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে এর আয়তন এবং পরিমাণে ব্যাপক হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। এই অঞ্চলে এখন গ্রীষ্মে বরফের পরিমাণ যে হারে গলে যাচ্ছে, শীতে তা পুনরায় জমে উঠছে না। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনই আর্কটিকের বরফ হ্রাসের জন্য দায়ী। বর্তমান শতাব্দীর মধ্যেই গ্রীষ্মকালে আর্কটিক সমুদ্রের বরফ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্যাটেলাইট দ্বারা পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকে  আর্কটিক অঞ্চলের সমুদ্রের বরফের পরিমাণ ৫০% এরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। এই অঞ্চলটি গত ৪০০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দশা পার করছে। ফলস্বরূপ, বরফ হ্রাসের হার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে - প্রতি দশকে ৪.৭%। ১৯৭৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আর্কটিক-জুড়ে বরফ গলার সময়কাল প্রতি দশকে পাঁচ দিন হারে দীর্ঘায়িত হয়েছে, যার মূল কারণ শরতের শেষ দিকে বরফ জমাট বাঁধার সময়ের বিলম্ব। আইপিসিসির ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন (২০২১) অনুযায়ী, ২০৫০ সালের পূর্বেই কোন কোন সেপ্টেম্বর মাসে আর্কটিকের সমুদ্রের বরফের আয়তন ১ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. এর নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আর্কটিক মহাসাগরের বরফ ৩.৭৪ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. অঞ্চল পর্যন্ত গলে যায়, যা ১৯৭৯ সালে রেকর্ড করা শুরুর পর থেকে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম আয়তন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ গলে যায়, যার মধ্যে ৭.৬ ট্রিলিয়ন টন ছিল আর্কটিক অঞ্চলের বরফ। ১৯৯০ দশক থেকে বরফ গলার গতি বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।

বরফ গলে যাওয়ার একটি মূখ্য কারণ হচ্ছে আর্কটিক ত্বরণ (Arctic Amplification)। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে পৃথিবীর অন্যান্য অংশের তুলনায় আর্কটিক অঞ্চল দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এছাড়া বরফ গলার ফলে মধ্য-অক্ষাংশগুলিতে জেট স্ট্রিম দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হয়। এর ফলে অঞ্চলগুলির আবহাওয়া আরও চরম এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আর্কটিক অঞ্চলে বরফ কমে যাওয়ায় অনেক জাহাজ চলাচলের পথ এখন খুলে গেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বরফ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এবং আর্কটিক মহাসাগরে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি এই অঞ্চলের পোলার ভাল্লুক সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। সমুদ্রের বরফ গলার সার্বিক প্রক্রিয়াটিকে আর্কটিক ডাইপোল অ্যানোমালাই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে, যদিও ধারণা করা হচ্ছে ২০০৭ থেকে ২০২১ এর মধ্যে এটি বরফ গলার মাত্রা কিছুটা হ্রাস করেছে। এই ধারা অব্যাহত নাও থাকতে পারে।

অ্যান্টার্কটিকায় সমুদ্রের বরফের পরিমাণ বছরের পর বছর অনেক পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্যের জন্য একটি প্রবণতা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায় এবং ২০১৩ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে রেকর্ড উচ্চতা এবং রেকর্ড নিম্নমান লক্ষ্য করা গেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে স্যাটেলাইট দ্বারা পরিমাপ শুরুর পর থেকে সাধারণ প্রবণতা প্রায় সমান ছিল। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সমুদ্রের বরফে হ্রাস দেখা গেছে, কিন্তু উচ্চতর তারতম্যের কারণে, এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতার সাথে মিলে না। সমতল প্রবণতা আর্কটিক সমুদ্রের বরফের বিপরীতে, যাতে হ্রাসের প্রবণতা দেখা গেছে।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রতিবেদন দিতে গিয়ে, গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে একটি "রিজিম শিফট" (পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন) ঘটতে পারে "যার ফলে পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলি আর সমুদ্রের বরফের পরিবর্তনশীলতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে না"।[২৫]
২০১২ সালে (তৎকালীন রেকর্ড) অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল; হলুদ রূপরেখার সাথে তুলনা করুন, যা ১৯৭৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সেপ্টেম্বর মাসের গড় সীমা দেখায়।
অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফের আচ্ছাদন ফেব্রুয়ারি বা মার্চে প্রতি বছর তার সর্বনিম্ন সীমায় সংকুচিত হয়; এরপর বরফের আবরণ সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর পর্যন্ত বাড়তে থাকে, যেখানে এটি সর্বোচ্চ পরিমাণে পৌঁছায়।
দক্ষিণ গোলার্ধের শরৎ ও শীতকালে (২১শে মার্চ থেকে ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪; অ্যানিমেশনে তারিখ লেবেল দিয়ে) অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের সর্বনিম্ন বিন্দু থেকে ক্রমান্বয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃদ্ধিপ্রাপ্তির একটি অ্যানিমেশন। বসন্তকালে বরফ গলার দৃশ্য দেখানো হবে না।

IPCC AR5 রিপোর্টে উপসংহারে পৌঁছেছিল যে "এটা খুবই সম্ভবত" যে বার্ষিক গড় অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমাণ ১৯৭৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রতি দশকে ১.২ থেকে ১.৮%, যা প্রতি দশকে ০.১৩ থেকে ০.২০ মিলিয়ন কিমি² বৃদ্ধি পেয়েছে। IPCC AR5 এও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তথ্যের অভাব সমুদ্রের বরফের মোট আয়তন বা ভরের প্রবণতা নির্ধারণে বাধা দেয়। সমুদ্রের বরফের ক্ষেত্রের বৃদ্ধির সম্ভবত অনেকগুলি কারণ রয়েছে। এগুলি দক্ষিণ গোলার্ধের পশ্চিমা বায়ুর পরিবর্তনের সাথে যুক্ত, যা প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস এবং ওজোন গহ্বর থেকে পরিবর্তনের সমন্বয়ে গঠিত। বায়ু সমুদ্রের বরফের চলাচলকে চালিত করে এবং মডেলিং গবেষণা থেকে জানা যায় যে সমুদ্রের বরফের প্রসার বরফের স্রোতের গতিবেগের পরিবর্তন দ্বারা চালিত হয়েছিল। আরেকটি সম্ভাব্য চালিকা হল বরফের তাকগুলি গলে যাওয়া, যা সমুদ্রে মিঠা পানির প্রবাহ বাড়ায়; এটি দুর্বলভাবে স্তরীভূত সমুদ্রের পৃষ্ঠের স্তরকে বাড়িয়ে তোলে এবং তাই উষ্ণ উপপৃষ্ঠের পানির পৃষ্ঠে পৌঁছানোর ক্ষমতা হ্রাস করে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় এই প্রভাবটি জলবায়ু মডেলে পাওয়া গেছে যা ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন অনুকরণ করার জন্য চালানো হয়, ফলে শীতের মাসগুলিতে সমুদ্রের বরফ বৃদ্ধি পায়।

বায়ু প্যাটার্নে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি, যা অ্যান্টার্কটিকার চারপাশে এক্সট্রাট্রপিকাল ঘূর্ণিঝড় এবং অ্যান্টিসাইক্লোনের সংখ্যায় আঞ্চলিক পরিবর্তনের সাথে সংযুক্ত, কিছু এলাকায় সমুদ্রের বরফকে আরও উত্তরে এবং অন্যদের মধ্যে তত উত্তরে নয়। অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমাণে আঞ্চলিকভাবে পরিবর্তিত প্রবণতা গঠনে বায়ুমণ্ডলীয় এবং মহাসাগরীয় চালকরা সম্ভবত অবদান রেখেছে। ২০২১ সালের IPCC AR6 রিপোর্টটি ১৯৭৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে গড় অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করা ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে নিশ্চিত করেছে কিন্তু মূল্যায়ন করেছে যে ২০১৪ সালের পরে একটি হ্রাস হয়েছে, ২০১৭ সালে সবচেয়ে কম পরিমাণে পৌঁছেছে এবং এরপর অনুসরণ করেছে বৃদ্ধি। রিপোর্টটি তখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ১৯৭৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শীত এবং গ্রীষ্ম উভয় ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের ক্ষেত্রে কোন উল্লেখযোগ্য প্রবণতা নেই "উচ্চ আস্থা" রয়েছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারির শুরুতে, ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার রিপোর্ট করেছে যে অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিমাণ ৪৫ বছরের স্যাটেলাইট রেকর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল - পূর্ববর্তী রেকর্ডের (২০১৮) নিচে ৫০০,০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। ডিসেম্বরের শেষার্ধের জন্য পাঁচটি সর্বনিম্ন বছরের মধ্যে চারটি ২০১৬ সাল থেকে ঘটেছে। সমুদ্রের বরফের পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি এখানে বসবাসকারী সাইক্রোফাইলগুলিকে প্রভাবিত করে। বায়ুমণ্ডলীয় এবং মহাসাগরীয় সঞ্চালনের উপর প্রভাবের কারণে অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের পরিবর্তনগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রের বরফ যখন তৈরি হয়, তখন এটি লবণ বের করে দেয় (সমুদ্রের পানি লবণাক্ত কিন্তু সমুদ্রের বরফ মূলত সতেজ) তাই ঘন লবণাক্ত পানি তৈরি হয় যা ডুবে যায় এবং অ্যান্টার্কটিক বটম ওয়াটার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জলবায়ুর উপাদানের সময়ের মাপকাঠি[সম্পাদনা]

জলবায়ু ব্যবস্থার অনেক সমুদ্র-সম্পর্কিত উপাদান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ধীরে ধীরে সাড়া দেয়। উদাহরণস্বরূপ, গভীর সমুদ্রের অম্লীকরণ হাজার হাজার বছর ধরে চলবে, এবং সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটতেও একই সময়সীমা লাগবে। একইভাবে, যদিও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা হয়, বরফের স্তরের ধীর প্রতিক্রিয়া এবং সমুদ্রের তাপ শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি কয়েক শতাব্দী বা এমনকি সহস্রাব্দ ধরে চলতে থাকবে।

বায়ুমন্ডল থেকে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করায় সমুদ্রের পানির রসায়ন পরিবর্তিত হয়ে অম্লীয় হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির এবং এর প্রভাব বিপরীত করতে হাজার বছর লেগে যেতে পারে। সমুদ্র বিশাল পরিমাণ তাপ শোষণ করতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং এই প্রক্রিয়াটা দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত থাকতে পারে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ হলেও, উষ্ণতার ফলে বরফের স্তর গলতে থাকবে এবং গলে যাওয়া বরফ সমুদ্রে মিশবে। এছাড়াও, উষ্ণ হলে পানির আয়তন বৃদ্ধি পায়। এই দুই-এর সম্মিলিত ক্রিয়ার ফলে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং বহু শতাব্দী ধরে এই চলমান প্রক্রিয়াটি চলতে থাকবে।

সামুদ্রিক জীবনে প্রভাব[সম্পাদনা]

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত মৎস্যসম্পদের উপর প্রভাব এবং ঝুঁকির উদাহরণ

জলবায়ু পরিবর্তন শুধুমাত্র মহাসাগরের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতাকেই পরিবর্তন করবে না, এটি মহাসাগরের বায়োমাস সম্প্রদায়ের গঠনেও পরিবর্তন আনবে। সাধারণত, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রজাতিগুলো মেরু অঞ্চলের দিকে ধাবিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৯৫০ এর দশক থেকে কিছু প্রজাতি ইতোমধ্যে শত শত কিলোমিটার সরে এসেছে। মেরু অঞ্চলের জলে ফাইটোপ্লাঙ্কটন (এক ধরণের ক্ষুদ্র উদ্ভিদ) বৃদ্ধির নির্দিষ্ট মৌসুমও আগের চেয়ে তাড়াতাড়ি শুরু হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের আরও অগ্রগতির সাথে সাথে এই প্রবণতা আরও তীব্র হতে পারে।

মেরু অঞ্চলের সামুদ্রিক পাখি, মাছ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এসব অঞ্চলে, উচ্চতর বিশেষায়িত বেঁচে থাকার কৌশলধারী প্রজাতিগুলিকে আবাসস্থল এবং খাদ্য সরবরাহের বড় ধরণের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এছাড়াও, সমুদ্রের বরফ প্রায়শই তাদের জীবনচক্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, সীল এবং ওয়ালরাসের জন্য বিশ্রামের জায়গা প্রদান করে আর্কটিকে এবং পোলার ভালুকের শিকারের পথ হিসাবে কাজ করে। অ্যান্টার্কটিকাতে সমুদ্রিক পাখি এবং পেঙ্গুইনের বাসস্থান বিন্যাসও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি খুব সংবেদনশীল বলে মনে করা হয়, যদিও বিভিন্ন অঞ্চলে আজ পর্যন্ত এর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন রকম।

২০১৯-২০২১ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিমের তাপপ্রবাহের কারণে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বেরিং সাগরের তুষার কাঁকড়ার সংখ্যা ৮৪% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে ৯.৮ বিলিয়ন কাঁকড়া মারা গেছে।

মহাসাগরের অম্লীকরণ এবং চুন-তৈরিকারী জীবসমূহ[সম্পাদনা]

মহাসাগরের অম্লীকরণের কারণে চুনের পরিবর্তনের বাস্তুসংস্থানগত পরিণতিগুলি জটিল। তবে, অনেক চুন-তৈরিকারী প্রজাতি সম্ভবত মহাসাগরের অম্লীকরণের ক্ষতিকর প্রভাবের সম্মুখীন হবে। মহাসাগরে অম্ল বাড়ার ফলে শেল-তৈরীকারী জীবগুলোর জন্য কার্বনেট আয়ন সংগ্রহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কার্বনেট আয়ন তাদের শক্ত বহিঃকঙ্কালের জন্য অত্যাবশ্যক। মহাসাগরের চুন-তৈরীকারী জীবগুলোর মধ্যে অটোট্রফ থেকে হেটারোট্রফ সব ধরনের জীবই আছে, যেমন কোকোলিথোফোরস, প্রবাল, ফোরামিনিফেরা, একিনোডার্মস, ক্রাস্টেসিয়ান এবং মলাস্ক।

সামগ্রিকভাবে, পৃথিবীর সমস্ত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র অম্লীকরণের পরিবর্তন এবং আরও কিছু মহাসাগরীয় জৈব-রাসায়নিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে। মহাসাগরের অম্লীকরণ হয়তো কিছু জীবাণুকে চুন উৎপাদনের প্রক্রিয়াটিকে সচল রাখতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো থেকে সম্পদ সরিয়ে নিতে বাধ্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, অস্টার Magallana gigas এর বিপাকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা পিএইচ ভারসাম্যহীনতার ফলে শক্তির বাণিজ্যিক অদলবদলের কারণে চুন তৈরীর হারকে প্রভাবিত করে।

সাধারণ অবস্থায়, ক্যালসাইট এবং অ্যারাগোনাইট ভূপৃষ্ঠের জলে স্থিতিশীল থাকে কারণ কার্বনেট আয়ন সমুদ্রের জলের সাপেক্ষে অতিসম্পৃক্ত থাকে। তবে মহাসাগরের পিএইচ কমে যাওয়ার সাথে সাথে কার্বনেট আয়নের ঘনত্বও কমে যায়। এতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট অনিয়ন্ত্রিত স্থিতিতে চলে যেতে পারে এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি কাঠামোগুলি চুন উৎপাদনে চাপের মুখে পড়ে বা বিলীনও হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, প্রবাল, কোকোলিথোফোরস, কোরালিন শৈবাল, ফোরামিনিফেরা, শেলফিশ এবং পটারোপডস উঁচু মাত্রার কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সংস্পর্শে এলে চুন তৈরীতে বাধাগ্রস্থ হয় বা তাদের শেল বা কাঠামো অতি দ্রুত বিলীন হয়ে যেতে থাকে। সক্রিয় সামুদ্রিক সংরক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করলেও পূর্বের অনেক শেলফিশের জনসংখ্যা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।

কিছু গবেষণায় মহাসাগরের অম্লীকরণের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। যেমন, বায়ুমণ্ডলে উচ্চমাত্রার CO2 এর কারণে কোকোলিথোফোরসের চুন তৈরী এবং সালোকসংশ্লেষণ দুটোই বৃদ্ধি পায়। আবার একইভাবে, প্রাথমিক উৎপাদন এবং চুন উত্তপাদন-দুটিই উচ্চ CO2 এর প্রতিক্রিয়ায় সমানভাবে কমে যাওয়া, বা কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ার ধরন আলাদা হওয়াও লক্ষ্য করা যায়।

ঠিক তেমনিভাবে সমুদ্র তারকা, Pisaster ochraceus, উচ্চ অম্লতার সমুদ্রের জলে খুব ভালো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ।

মহাসাগরের অম্লীকরণ চুনের উৎপাদন কমায় ফলে হয়তো বায়ুমণ্ডল থেকে মহাসমুদ্রের গভীরে বা সমুদ্রতলে কার্বন জমা হওয়ার জৈবিক প্রক্রিয়াটিকেও প্রভাবিত করতে পারে। এটি 'জৈবিক পাম্প' নামক প্রক্রিয়াটিকে দুর্বল করে দিতে পারে। সমুদ্রের অম্লীকরণ অ্যান্টার্কটিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের আকারও হ্রাস করতে পারে, যা কার্বন জমা করার জন্য কম কার্যকর হয়ে উঠবে। বিরূপ ফলাফলমূলক পথ (Adverse Outcome Pathway বা AOP) কাঠামো সহ শারীরবৃত্তীয় কাঠামো তৈরীর মাধ্যমে এই ধরনের পরিবর্তনগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রবাল প্রাচীর[সম্পাদনা]

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ব্লিচড স্ট্যাগহর্ন প্রবাল

যদিও কিছু সচল সামুদ্রিক প্রজাতি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে পারে, তবুও প্রবালের মতো অন্যান্য প্রজাতির পক্ষে এটা কঠিন। প্রবাল প্রাচীর হলো এক ধরনের জলজ বাস্তুতন্ত্র যার বৈশিষ্ট্য হলো প্রবাল তৈরিকারী পলিপ। চুনাপাথরের সাহায্যে প্রবাল পলিপের কলোনিগুলি মিলে প্রাচীর তৈরি করে। জীববৈচিত্র্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রবাল প্রাচীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় সুরক্ষা, খাদ্য এবং বহু অঞ্চলে পর্যটন বজায় রাখতে - এইসবের জন্য বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রবাল প্রাচীরের উপর নির্ভরশীল।

গত ৩০-৫০ বছরে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের অম্লীকরণ, দূষণ এবং মাছ ধরার মতো কাজের কারণে শক্ত প্রবালের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে (প্রায় ৫০%)। ভবিষ্যতে এই সমস্যাগুলি আরও তীব্র হতে পারে।

সাগরের পৃষ্ঠের জল উষ্ণ হওয়ার ফলে প্রবাল ‘ব্লিচিং’ বা সাদা হয়ে যায় যার ফলে প্রবালের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আইপিসিসির ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ২০২২ সালে দেখা গেছে যে: "১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে সারা বিশ্বে প্রবাল ব্লিচিংয়ের ঘটনার পরিমাণ ও তীব্রতা উভয়ই বেড়ে চলেছে।" সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ ব্যাপকভাবে প্রবালপ্রাচীর ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে গেলে বহু প্রবাল প্রাচীরে অপরিবর্তনীয় পরিবর্তন এবং ধ্বংস অনিবার্য।

উষ্ণসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রবালগুলির টিস্যুর ভেতরে বাস করা সিম্বায়োটিক শ্যাওলা বেরিয়ে যায়। এই শ্যাওলাই প্রবাল প্রাচীরের উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত রঙের কারণ। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা একটানা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলেই ব্লিচিং হতে পারে এবং ফলস্বরূপ প্রবাল সাদা হয়ে যায়। প্রবাল যদি দীর্ঘ সময় ব্লিচড অবস্থায় থাকে তবে মারা যেতে পারে। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে ১৯৯৮ সালের আগে ব্লিচিংয়ের কোনও ঘটনাই ছিল না। এরপর ১৯৯৮ সালে প্রথম ব্লিচিং হয় এবং তা আরও ঘন ঘন হতে শুরু করে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তিনটি ব্লিচিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

প্রবাল ব্লিচিং ছাড়াও মহাসাগরের পিএইচ মান ক্রমাগত কমে যাওয়াটাও প্রবাল প্রাচীরের জন্য একটি সমস্যা কারণ সমুদ্রের অম্লীকরণ করলাইন শ্যাওলার জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে। করলাইন শ্যাওলার ক্যালসিফিকেশন নির্ধারণ করে যে কীভাবে এটি সমুদ্রের অম্লীকরণের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

গরম পানির প্রবাল প্রাচীরগুলি গত ৩০-৫০ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে। এর প্রধান কারণ সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের পানির অম্লতা বৃদ্ধি, দূষণ এবং মাছ ধরা সহ নানাবিধ মানবসৃষ্ট কারণ। এই বিপদগুলি আগামীদিনে আরও তীব্র হতে পারে।

প্রবাল প্রাচীরের ভেতর যে তরল-পূর্ণ অংশ থাকে (coelenteron), সেখানেই তারা তাদের বহিঃকঙ্কাল (exoskeleton) বৃদ্ধি করে। এই তরলের গুরুত্ব অপরিসীম। যখন সমুদ্রের পানিতে অ্যারাগোনাইটের (aragonite) স্যাচুরেশন যথেষ্ট পরিমাণে থাকে, প্রবালরা খুব দ্রুত এই অ্যারাগোনাইট দিয়ে তাদের কঙ্কাল তৈরি করে। কিন্তু যদি পানিতে অ্যারাগোনাইটের মাত্রা কম থাকে, তখন প্রবালের অভ্যন্তরে সঠিক ভারসাম্য রক্ষায় কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে কঙ্কাল তৈরির প্রক্রিয়াটি ধীর হয়ে যায়। পানিতে অ্যারাগোনাইটের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে এমনও হতে পারে যে অভ্যন্তরীণ অংশে অ্যারাগোনাইট পরিবহনে শক্তি ব্যয় সত্ত্বেও সুফল পাওয়া যাবে না - তখন প্রবালরা কঙ্কাল গড়ার কাজ বন্ধ করে দেয়। কার্বন নিঃসরণ যদি একই হারে চলতে থাকে তবে ২০৫০-৬০ সালের মধ্যে উত্তর আটলান্টিকের ৭০% শীতল পানির প্রবাল ক্ষয়কারী পানির মধ্যে বাস করবে।

অম্লীভূত পরিবেশের প্রধান প্রভাব হলো, প্রবালের ঘন বহিঃকঙ্কাল গঠন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। কঙ্কালের দৈর্ঘ্য এতটা প্রভাবিত হয় না। কিছু প্রজাতির প্রবালের ক্ষেত্রে বহিঃকঙ্কালের ঘনত্ব এই শতাব্দীর শেষে ২০% এর বেশি কমে যেতে পারে।

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের একটি ৪০০ বর্গ মিটার অংশে সমুদ্রের পানির CO2 মাত্রা কমিয়ে (pH বাড়িয়ে) শিল্পোত্তর-পূর্ব যুগের কাছাকাছি আনা হয়েছিল। পরীক্ষায় দেখা গেছে তাতে প্রবালের ক্যালসিফিকেশন প্রক্রিয়া ৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, সমুদ্রের CO2 মাত্রা বাড়িয়ে (pH কমিয়ে) ২০৫০ সালের পরের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে, ক্যালসিফিকেশন প্রক্রিয়া ৩৪% হ্রাস পায়।

কুইন্সল্যান্ড ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল প্রাচীরে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রবালরা অম্লতা (pH) পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে বেশি প্রতিরোধ গড়তে পারে। এর কারণ তাদের শরীরের ভেতরেই একটি হোমিওস্ট্যাসিস প্রক্রিয়া কাজ করে। তবে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (মেরিন হিটওয়েভ) এর জন্য প্রবাল প্রাচীরের শ্বেতীকরণ (bleaching) ঘটে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রবালপ্রাচীর ধ্বংসের জন্য অম্লতার চেয়ে বরং তাপমাত্রা বৃদ্ধি বেশি দায়ী।

মহাসাগরের উৎপাদনশীলতা[সম্পাদনা]

সমুদ্রের উপরিতলে আলোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া অক্সিজেন নির্গত করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। সমুদ্রে এই আলোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করে ফাইটোপ্লাঙ্কটন – যারা অণুবীক্ষণিক ভাসমান শৈবাল। উদ্ভিদ বৃদ্ধির পর, সমুদ্রে আলোকসংশ্লেষণ দ্বারা গঠিত জৈব পদার্থের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পচন অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বোনেট এবং বাইকার্বোনেট নির্গত করে। গভীর সমুদ্রের কিছু জৈব পদার্থের ডুবে যাওয়া এবং ব্যাকটেরিয়ার পচনের ফলে অক্সিজেন ঘনত্ব কমে যায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বোনেট এবং বাইকার্বোনেট বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের এই চক্র বিশ্বব্যাপী কার্বন চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উপরিতলের পানিতে আলোকসংশ্লেষণ পুষ্টি উপাদান (যেমন নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস) গ্রহণ করে এবং জীবের মৃত্যুর কারণে আলোকসংশ্লেষণ দ্বারা উৎপাদিত জৈব পদার্থ যখন তলিয়ে যায় তখন এই পুষ্টি উপাদানগুলিকে গভীর সমুদ্রে স্থানান্তরিত করে। অতএব, উপরিতলের পানির উৎপাদনশীলতা আংশিকভাবে সমুদ্রের মিশ্রণ এবং স্রোত দ্বারা গভীর সমুদ্র থেকে উপরিতলে পুষ্টির স্থানান্তরের উপর নির্ভর করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান স্তরীভবন সাধারণত সমুদ্রের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। তবে, কিছু এলাকায়, যেমন আগে বরফ-আচ্ছাদিত অঞ্চলগুলিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই প্রবণতা ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণযোগ্য এবং বর্তমানে অনুমানিত জলবায়ু পরিবর্তনের অধীনে অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত মহাসাগরে, জলবায়ুর উষ্ণতার কারণে গত ষাট বছরে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়েছে বলে অনুমান করা হয় এবং তা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

খুব উচ্চ নির্গমন দৃশ্যের ক্ষেত্রে (RCP8.5) ২১০০ সালের মধ্যে মহাসাগরের উৎপাদনশীলতা ৪-১১% কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পতনটিতে আঞ্চলিক তারতম্য দেখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, একই নির্গমন দৃশ্যের ক্ষেত্রে ক্রান্তীয় মহাসাগরীয় NPP আরও হ্রাস পাবে: ৭–১৬%। সমুদ্রের স্তরীভবন বৃদ্ধি এবং পুষ্টি সরবরাহ হ্রাসের কারণে উপরের মহাসাগর থেকে গভীর মহাসাগরে কম জৈব পদার্থ ডুবে যাবে। সমুদ্রের উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণ হল "উষ্ণতা, স্তরীভবন, আলো, পুষ্টি এবং শিকারের সম্মিলিত প্রভাব"।

মৎস সম্পদের ওপর প্রভাব[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে উত্তোলন জালের মাধ্যমে মাছ ধরা। বাংলাদেশের উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়গুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বন্যার ঝুঁকির মুখে রয়েছে।[২৬]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৎস্যচাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাবগুলি: সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের অম্লীকরণ এবং অক্সিজেন হ্রাসের কারণে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির তাপমাত্রা পরিবর্তন, পানির প্রবাহে হেরফের, এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় মিঠাপানির বাস্তুতন্ত্র গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি বিভিন্নভাবে মৎস্যসম্পদের ওপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ: জলবায়ু পরিবর্তন মাছের বন্টনকে পরিবর্তিত করছে এবং সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মাছের পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে পারে । এর ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি গুরুতর হবে, বিশেষ করে যেসব দেশ মৎস্য খাতের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল। আশঙ্কা করা হচ্ছে ক্রান্তীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ পরিমাণে মাছ ধরার সম্ভাবনা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।

এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের আরও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে: সমুদ্রের পানিস্তর বৃদ্ধি উপকূলীয় মৎস্য সম্প্রদায়কে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্তর্দেশীয় মিঠা পানির মৎস্য ও জলজ চাষের ওপর এর প্রভাব পড়ে। বন্যা, রোগজীবাণু, পরজীবী এবং ক্ষতিকারক শৈবাল প্রস্ফুটিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনের ক্ষতি হতে পারে এবং অবকাঠামোরও ক্ষতি হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে, "২১০০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মডেল করা বিশ্বব্যাপী মাছের সম্প্রদায়ের বায়োমাস ৩০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে"। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় দেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের এসব প্রভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মৎস্যচাষ সেদেশের অর্থনীতি এবং লাখ লাখ লোকের জীবিকার একটি প্রধান অংশ।

ক্ষতিকর শৈবাল বৃদ্ধি[সম্পাদনা]

ক্ষতিকারক শৈবাল বা অ্যালগির বৃদ্ধির (Harmful Algal Blooms - HABs) সঠিক কারণগুলি ভালভাবে জানা যায় না। তবে, ১৯৮০ এর দশক থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে এগুলোর পরিধি ও সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে হয়। এই বৃদ্ধির কারণগুলো হলো মানুষের তৈরি কিছু বিষয় যেমন অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি (পুষ্টি দূষণ) এবং জলবায়ু পরিবর্তন (বিশেষ করে জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি)। HABs গঠনের প্রভাবকগুলো হলো মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ, অক্সিজেন হ্রাস, পুষ্টি উপাদানের আধিক্য (ইউট্রোফিকেশন), এবং জল দূষণ। এইচএবিগুলির (HABs) সংখ্যা বৃদ্ধি উদ্বেগের বিষয় কারণ এর ফলে স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তবে, বিশ্বব্যাপী HABs এর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে বরং ব্লুমের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং ভালো পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকেও দায়ী করা যেতে পারে।

সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী[সম্পাদনা]

সামুদ্রিক বা মেরিন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর, বিশেষত আর্কটিক অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীদের উপর, জলবায়ু পরিবর্তনের বেশ কিছু প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে আবাসস্থল ধ্বংস, তাপমাত্রার চাপ, এবং প্রচণ্ড আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসা। অন্যান্য প্রভাবগুলো তুলনামূলক পরোক্ষ, যেমন হোস্ট প্যাথোজেনের (জীবাণু) সংযোগে পরিবর্তন, শিকারী-শিকারের পারস্পরিক ক্রিয়ার কারণে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন, টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনে সংস্পর্শের বৃদ্ধি, এবং বর্ধিত মানব যোগাযোগ। যদিও মহাসাগরের উষ্ণায়নের মেরিন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর ব্যাপক সম্ভাব্য প্রভাব রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে মেরিন স্তন্যপায়ীদের বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি এখনও খুব কমই বোঝা যায়।

মেরিন স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সমুদ্রে বসবাসের জন্য বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলকে প্রভাবিত করছে। কিছু প্রজাতি এত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে না, যার ফলে তাদের বিলুপ্তি ঘটতে পারে।

সাধারণত এটা ধরে নেওয়া হয়েছে যে, আর্কটিক সমুদ্রের বরফের উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী হ্রাসের ফলে আর্কটিক মেরিন স্তন্যপায়ী প্রাণীরা জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। যাইহোক, গবেষণায় দেখা গেছে যে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, গ্রিনল্যান্ড সাগর এবং বারেন্টস সাগরে এমন প্রজাতি রয়েছে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরকে ইতিমধ্যেই মেরিন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য মানব-সৃষ্ট হুমকির একটি হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এখন এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির জন্য একটি হটস্পট। এই অঞ্চলের সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীরা মানব কার্যকলাপ (যেমন, সামুদ্রিক যানবাহন চলাচল, দূষণ এবং অফশোর তেল ও গ্যাস উন্নয়ন) এবং জলবায়ু পরিবর্তন উভয়ের দ্বিগুণ ঝুঁকিতে পড়বে, যাতে সম্ভাব্য যোগমূলক বা সিনারজেটিক প্রভাব থাকতে পারে। ফলস্বরূপ, এই ইকোসিস্টেমগুলি মেরিন ইকোসিস্টেমের কার্যকারিতার জন্য অপরিবর্তনীয় পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে।

স্থলজ জীবের তুলনায় সাধারণত সামুদ্রিক জীবরা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল তাপমাত্রার মুখোমুখি হয় এবং তাই স্থলজ প্রাণীর তুলনায় তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্যে বেশি সংবেদনশীল হয়। বর্ধমান মহাসাগরীয় তাপমাত্রা আরও বেশি করে প্রজাতির অভিবাসনের দিকে পরিচালিত করবে, যেহেতু বিপন্ন প্রজাতিগুলি আরও উপযুক্ত আবাসস্থলের সন্ধান করবে। সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে কিছু জীবজন্তু শীতল জলে চলে যেতে পারে এবং কিছু প্রজাতি আঞ্চলিক জলসীমা থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে বা তাদের বৈশ্বিক পরিসর হ্রাস পেতে পারে। কিছু প্রজাতির সংখ্যার পরিবর্তন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য উপলব্ধ খাদ্যসম্পদের পরিবর্তন করবে, যার ফলে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের বায়োজিওগ্রাফিক শিফট হবে। তদুপরি, যদি কোনও প্রজাতি একটি উপযুক্ত পরিবেশে সফলভাবে স্থানান্তরিত করতে না পারে, তবে যদি এটি মহাসাগরের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারে, তবে এর বিলুপ্তির ঝুঁকি থাকবে।

আর্কটিক সমুদ্রের বরফ হ্রাস পাওয়ার ফলে সমুদ্রের বরফ আবাসস্থল ধ্বংস, পানি এবং বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং প্রচণ্ড আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রের বরফ আবাসস্থল হারালে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য সীল শিকার কমে যাবে, বিশেষ করে পোলার ভালুকের। সমুদ্রের বরফের পরিবর্তনগুলি প্যাথোজেনের সংক্রমণে পরিবর্তনের কারণে প্রাণীর স্বাস্থ্যের উপরও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে, শিকার-ভিত্তিক খাদ্য ওয়েবে স্থানান্তরের কারণে প্রাণীর শারীরিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে এবং আর্কটিক আবাসস্থলে মানুষের বসবাস বৃদ্ধির ফলে টক্সিনের বৃদ্ধি ঘটে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর প্রভাব মূল্যায়ন করার সময় সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু এটি উপকূলীয় পরিবেশগুলিকে প্রভাবিত করে যেগুলোর উপর মেরিন স্তন্যপায়ী প্রজাতি নির্ভরশীল।

মেরু ভাল্লুক[সম্পাদনা]

শীতকালে সমুদ্রের বরফ জমার জন্য অপেক্ষা করছে এক পোলার ভাল্লুক।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে মেরু/পোলার ভাল্লুকের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হল অপুষ্টি বা অনাহারে মৃত্যু যার মূল কারণ হলো আবাসস্থল ধ্বংস। পোলার ভাল্লুকরা সমুদ্রের বরফের ভেসে থাকা বরফের টুকরা থেকে সীল শিকার করে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বছরের শুরুর দিকেই সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ায় ভাল্লুকদের পর্যাপ্ত চর্বি সঞ্চয়ের আগেই তীরে চলে যেতে হয়। সেই সময়ে গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং শরতের শুরুতে তাদের খাবারের অভাব দেখা দেয়, ফলে তারা টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমে পড়ে। সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়ার কারণে ভাল্লুকদের আরও দীর্ঘ দূরত্ব সাঁতার কাটতে হয়, যা তাদের শক্তি আরও বেশি ক্ষয় করে এবং কখনও কখনও তাদের ডুবে মরতেও দেখা যায়। সমুদ্রের বরফ যত পাতলা হতে থাকে, ততই বিকৃতি ঘটে যার কারণে ভাল্লুকদের সীল শিকার কঠিন হয়ে যায়। অপর্যাপ্ত পুষ্টির ফলে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ভল্লুকের প্রজনন হার কমে যায় এবং শাবক এবং কিশোর ভাল্লুকদের বেঁচে থাকার হারও কমে যায়। এছাড়া, সব বয়সের ভাল্লুকের শারীরিক অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার, আর্কটিক ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে এবং অনেক নেতৃস্থানীয় পোলার ভাল্লুক জীববিজ্ঞানী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার ২১০০ সালের মধ্যে পোলার ভাল্লুকের বিলুপ্তির পূর্বাভাস দিয়েছেন।

পুষ্টির চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি, উষ্ণায়নের ফলে পোলার ভাল্লুকের জীবনের বিভিন্ন দিক প্রভাবিত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলা ভাল্লুকদের জন্য উপযুক্ত গর্ভধারণের গর্ত তৈরিতে সমুদ্রের বরফের পরিবর্তন বাধা সৃষ্টি করে। প্যাক বরফ এবং উপকূলের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায়, মহিলাদের স্থলভাগে প্রিয় গর্ভধারণের এলাকায় পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটতে হয়। ভূমিগর্ভস্থ গর্তগুলি গলে যাওয়ার কারণে মায়েরা যথেষ্ট সুরক্ষা পায় না। আরও উষ্ণ শীতে গর্তের ছাদ ভেঙে পড়তে পারে কিংবা তাপ নিরোধক ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যেসব পোলার ভাল্লুক বর্তমানে বহু-বছরের বরফের ওপর গর্ত করে বাস করে, তাদের ক্ষেত্রে বরফের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বসন্তে সীল শিকারের এলাকায় ফিরে আসার জন্য মা এবং নবজাতক শাবকদের দীর্ঘ পথ হাঁটতে হতে পারে। রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী উষ্ণ জলবায়ুতে আরও সহজে বংশবৃদ্ধি করে।

ভাল্লুক ও মানুষের মধ্যে বিপজ্জনক মিথষ্ক্রিয়া, যেমন আবর্জনার স্তূপে ভাল্লুকের খাবার খোঁজা, ঐতিহাসিকভাবে সেইসব বছরগুলিতে বেশি দেখা গেছে যখন বরফ গলে যাওয়ার ঘটনা আগে ঘটেছিল এবং স্থানীয় পোলার ভাল্লুকরা তুলনামূলকভাবে চর্বিহীন অবস্থায় ছিল। সমুদ্রের বরফ সঙ্কুচিত হওয়া এবং খাদ্যের জন্য ক্ষুধার্ত ভাল্লুকদের ভূখণ্ডে খাবার খোঁজার চেষ্টার ফলে মানুষের ওপর মারাত্মক হামলাসহ মানুষ-ভালুকের মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পোলার ভাল্লুকের বসবাসের পরিসরের দক্ষিণ অংশে সবচেয়ে বেশি। এ কারণেই এই অঞ্চলে স্থানীয় ভাল্লুকদের জনসংখ্যায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি দেখা গেছে। পরিসরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত পশ্চিম হাডসন বে জনসংখ্যাটিও পোলার ভাল্লুকের সবচেয়ে-অধ্যয়নকৃত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি। বসন্তের শেষের দিকে যখন নতুন সীলের শাবক প্রচুর পরিমাণে থাকে, এই গোষ্ঠীর ভাল্লুকগুলি তখন প্রধানত সীল শিকার করে থাকে। পোলার ভাল্লুকদের জন্য শিকারের মৌসুম তখনই শেষ হয় যখন বরফ গলতে শুরু করে। এরপর গ্রীষ্মকালে সমুদ্র আবার জমে যাওয়া পর্যন্ত তারা উপবাস করে বা খুব সামান্য খাবার খেয়ে জীবনধারণ করে।

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে, বর্তমানে পশ্চিম হাডসন বেতে বরফ ভাঙার ঘটনা ৩০ বছর আগের তুলনায় তিন সপ্তাহ আগে ঘটছে, যা পোলার ভাল্লুকের খাবার গ্রহণের মৌসুমের সময়কাল কমিয়ে দিচ্ছে। এই সময়ে পোলার ভাল্লুকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে; ১৯৮০ সালে একলা (এবং সম্ভবতঃ গর্ভবতী) মহিলা পোলার ভাল্লুকের গড় ওজন ছিল প্রায় ২৯০ কেজি (৬৪০ পাউন্ড), যেখানে ২০০৪ সালে তা কমে ২৩০ কেজি (৫১০ পাউন্ড) হয়ে যায়। ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে, পশ্চিম হাডসন বে অঞ্চলের পোলার ভাল্লুকের সংখ্যা ২২% কমে গেছে, যদিও ২০১৭ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যাটি 'স্থিতিশীল' হিসাবে তালিকাভুক্ত ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ায়, মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে পোলার ভাল্লুকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হয়ে যাবে।

আলাস্কায়, সমুদ্রের বরফ সঙ্কুচিত হওয়ার প্রভাব পোলার ভাল্লুকের শাবকদের মৃত্যুর হার বাড়িয়েছে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ত বা আস্তানার অবস্থানে পরিবর্তন এনেছে। সমুদ্রের বরফে গর্ভধারণের গর্তের অনুপাত ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ এর মধ্যে ৬২% থেকে কমে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ৩৭% এ পরিবর্তিত হয়েছে। তাই, আলাস্কার পোলার ভাল্লুকের জনসংখ্যা এখন বিশ্বের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতোই স্থলভাগে গর্ত তৈরি করে বাস করার প্রবণতা বেশি দেখাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আর্কটিকের পোলার ভাল্লুকরা শিকার খুঁজতে স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ দূরত্ব সাঁতার কেটেছে, যার ফলে ২০০৫ সালে অস্বাভাবিকভাবে বিশাল বরফের আস্তরণ কমে যাওয়ার ঘটনায় চারটি পোলার ভাল্লুকের ডুবে মরার রেকর্ড পাওয়া যায়।

একটি নতুন ঘটনার বিকাশ হলো যে, পোলার ভাল্লুকরা এখন নতুন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছে। যদিও এটা আগেও দেখা গেছে কিন্তু খুবই বিরল ছিল, কিন্তু বর্তমানে ক্রমবর্ধমান হারে পোলার ভাল্লুকদের বড় সংখ্যায় তীরে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর কানাডায়, তারা গ্রীষ্মের মাসগুলিতে দীর্ঘ সময় ধরে মূল ভূখণ্ডে থাকছে, এমনকি আরও ভেতরে ভ্রমণও করছে। এর ফলে হাঁসের ডিম, জলচর পাখি এবং ক্যারিবু (একধরনের হরিণ) -এর মতো স্থলজ খাদ্যের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা বাড়তে পারে। পাশাপাশি মানুষ এবং ভালুকের মধ্যে সংঘাতও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সীল[সম্পাদনা]

সমুদ্রের বরফের উপরে হার্প সীল মা তার শাবককে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে

পোলার ভাল্লুকের মতো, সীলও আরেকটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশকিছু সীল প্রজাতি বংশবৃদ্ধির জন্য সমুদ্রের ভাসমান বরফের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। তারা এই বরফের ওপরই তাদের বাচ্চাদের জন্ম দেয় এবং লালন-পালন করে। ২০১০ ও ২০১১ সালে, উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিকের সমুদ্রের বরফ সর্বকালের সর্বনিম্ন বা তার কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। ফলস্বরূপ, পাতলা বরফের ওপর বংশবৃদ্ধি করা হার্প সীল এবং রিংড সীল প্রজাতির বাচ্চাদের মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ জর্জিয়ায় অবস্থিত অ্যান্টার্কটিক ফার সীলদের ওপর ২০ বছরের একটি গবেষণায় এই প্রজাতির সংখ্যা চরমভাবে হ্রাস পেতে দেখা যায়। এই সময়কালে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান উষ্ণতাও লক্ষ্য করেন।

ডলফিন[সম্পাদনা]

ডলফিন হল সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা বিস্তৃত ভৌগোলিক পরিসরে বাস করে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব তাদের ওপর পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে সাধারণ প্রভাব হল বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে অনেক ডলফিন প্রজাতি তাদের আদি বাসস্থান ছেড়ে শীতল জলের আশায় নতুন এলাকায় পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। উষ্ণতর সমুদ্রের আরেকটি কুপ্রভাব হল ক্ষতিকারক শৈবালের বিস্তার বেড়ে যাওয়া। এসব শৈবাল ব্লুমের কারণে বটলনোজ ডলফিনদের মধ্যে ব্যাপক মৃত্যু পরিলক্ষিত হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন বিভিন্ন ডলফিনের ওপর প্রভাবের কয়েকটি উদাহরণ:

  • ভূমধ্যসাগর: ভূমধ্যসাগরে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, উৎসাহী শক্তি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ডলফিনদের শিকারের পরিমাণ কমে গেছে। ২০০৩ সালে ভূমধ্যসাগরের শর্ট-বিকড কমন ডলফিন প্রজাতিকে বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয় কারণ তাদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমছে।
  • পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার শার্ক বে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এরিয়া: ২০১১ সালে সমুদ্রের তাপপ্রবাহের জেরে এই অঞ্চলের ইন্দো-প্যাসিফিক বটলনোজ ডলফিন জনসংখ্যায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস পায়।
  • নদীর ডলফিন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নদীর ডলফিনদের ওপর ব্যাপক। বাষ্পীভবনের হার বেড়ে গেছে, পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃষ্টিপাত কমেছে, এবং পানির অম্লতা বৃদ্ধি পেয়েছে - এই সবকিছুর মিলিত প্রভাব নদীর ডলফিনদের ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

উত্তর আটলান্টিক হুইল[সম্পাদনা]

মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন উত্তর আটলান্টিক হুইল প্রজাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট এবং ক্রমবর্ধমান হুমকি। বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে এদের ওপর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে: প্রজনন ক্ষমতা, বিচরণ ক্ষেত্র, শিকারের প্রাপ্যতা, মানুষের ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পর্ক, এবং পৃথক হুইলের শারীরিক অবস্থার উপর প্রভাব।

সমুদ্রের সঞ্চালন পদ্ধতি এবং পানির তাপমাত্রায় জলবায়ু-চালিত পরিবর্তন এই হুইল প্রজাতির খাদ্য সংগ্রহ এবং আবাসস্থল ব্যবহারের ধরনকে প্রভাবিত করেছে, যার অনেকগুলি ক্ষতিকারক পরিণতি রয়েছে। উষ্ণায়নের ফলে 'ক্যালাঙ্গাস ফিনমার্কিকাস' নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ শিকার প্রজাতির, জুওপ্লাঙ্কটনের প্রাচুর্য কমে গেছে। শিকারের এই হ্রাস হুইল জনসংখ্যার স্বাস্থ্যকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেমন, অপুষ্টি-জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা ও সফলভাবে বাচ্চা প্রসব ও লালন-পালনে সমস্যা সরাসরিভাবে এর সাথে জড়িত।

১৯৯৮ সালে একটি জলবায়ুগত পরিবর্তনের পরে জুওপ্ল্যাঙ্কটনের জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। যদিও ১৯৯৯ সালে এই জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করে, কিন্তু হুইলদের এত দীর্ঘ প্রজনন এবং দেশান্তরের চক্র রয়েছে যে আগের বছরের ন্যূনতম খাদ্যের প্রাপ্যতা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। ১৯৯৬ সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের আগে, যেখানে ২১টি হুইল বাচ্চার জন্ম হয়েছিল, তার বিপরীতে ১৯৯৯ সালে মাত্র একটি বাচ্চার জন্ম হয়। ২০০১ সালে, জুওপ্ল্যাঙ্কটনের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে পুনরুদ্ধার হওয়ার পরে, ৩০টি বাচ্চার জন্ম হয়।

জুওপ্ল্যাঙ্কটনের প্রাচুর্য উত্তর আটলান্টিক অসিলেশন (NAO), উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে প্রভাবশালী জলবায়ু ব্যবস্থা, এর সাথে যুক্ত বলে দেখা গেছে। NAO সূচক দ্বারা নির্ধারিত হিসাবে এই সিস্টেমের চাপের অসঙ্গতিগুলি পর্যায়ক্রমে ইতিবাচক থেকে নেতিবাচকে পরিবর্তিত হয়। ফলে তাপমাত্রা এবং বায়ুর ধরণও প্রভাবিত হয়। ইতিবাচক NAO সূচকের সাথে প্রচুর জুওপ্ল্যাঙ্কটন জনসংখ্যা যুক্ত আছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে, NAO এর আরও ঘনঘন এবং বৃহত্তর তীব্রতায় পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে (যাকে সামুদ্রিক হিটওয়েভ বলা হয়)। এই পরিবর্তনগুলি জুওপ্লাঙ্কটনের প্রাচুর্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে, যা সেইসব হুইলের জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ হবে যারা নতুন খাদ্যের উৎসের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে না।

'ক্যালাঙ্গাস ফিনমার্কিকাস' এর প্রাচুর্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি মৌসুমী তাপমাত্রা এবং সমুদ্র সঞ্চালনের ধরণের পরিবর্তনও হুইলদের ঐতিহাসিক তথ্যের তুলনায় ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এবং বছরের বিভিন্ন সময়ে খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এর মানে হল যে হুইলগুলি এমন আবাসস্থলে এবং বছরের এমন সময়েও উপস্থিত থাকছে যেগুলি জাহাজের আঘাত এবং গিয়ারে জড়িয়ে যাওয়ার মতো হুমকি থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য বিদ্যমান নিয়ম দ্বারা বিবেচিত হয় না। এর ফলে বাচ্চা জন্মের হার কমার পাশাপাশি হুইল মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে, যা সাম্প্রতিক এই জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ। রেকর্ড না করা বা অনথিভুক্ত মৃত্যুর কথা বাদ দিলেও, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে হুইল মৃত্যুর সংখ্যা জন্মের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন একটি প্রবণতা চলতে থাকলে, যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, এই প্রজাতিটির বিলুপ্তিও ঘটতে পারে।

সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া প্রভাব[সম্পাদনা]

মিথেন ক্ল্যাথরেট থেকে মিথেন নির্গমন[সম্পাদনা]

মিথেন ক্ল্যাথরেট হলো সামুদ্রিক পলির নিচে জমা হওয়া হিমায়িত মিথেনের স্তর। সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এই মিথেন ক্ল্যাথরেটে আবদ্ধ গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনকে মুক্ত করে দিতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সাগরের তাপমাত্রা যত বাড়বে, মিথেন ক্ল্যাথরেট থেকে অধিক মাত্রায় মিথেন নির্গত হওয়ার আশঙ্কা আরও তীব্র হতে পারে। এই মিথেন নির্গমন জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যার ফলে বিপর্যয়কর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এই শতাব্দীতে সামুদ্রিক মিথেন ক্ল্যাথরেট থেকে মিথেন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করবে না। তবে, পরিস্থিতির সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা ও নতুন গবেষণা করা জরুরি।

২০০৪ সালে, সমুদ্রের মিথেন ক্ল্যাথরেটের বৈশ্বিক মজুদ ছিল আনুমানিক ১ থেকে ৫ মিলিয়ন ঘনকিলোমিটার।

যদিও মিথেন ক্ল্যাথরেট থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ উদ্বেগের বিষয়, বর্তমান তথ্য অনুযায়ী এই শতাব্দীতে তা তাৎপর্যপূর্ণভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করবে এমন কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Käse, Laura; Geuer, Jana K. (২০১৮)। "Phytoplankton Responses to Marine Climate Change – an Introduction"। YOUMARES 8 – Oceans Across Boundaries: Learning from each other। পৃষ্ঠা 55–71। আইএসবিএন 978-3-319-93283-5এসটুসিআইডি 134263396ডিওআই:10.1007/978-3-319-93284-2_5 
  2. "Summary for Policymakers"। The Ocean and Cryosphere in a Changing Climate (পিডিএফ)। ২০১৯। পৃষ্ঠা 3–36। আইএসবিএন 978-1-00-915796-4ডিওআই:10.1017/9781009157964.001। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৬ 
  3. Worm, Boris; Barbier, Edward B.; Beaumont, Nicola; Duffy, J. Emmett; Folke, Carl; Halpern, Benjamin S.; Jackson, Jeremy B. C.; Lotze, Heike K.; Micheli, Fiorenza; Palumbi, Stephen R.; Sala, Enric; Selkoe, Kimberley A.; Stachowicz, John J.; Watson, Reg (২০০৬)। "Impacts of Biodiversity Loss on Ocean Ecosystem Services"। Science314 (5800): 787–790। ডিওআই:10.1126/science.1132294 
  4. Cheng, Lijing; Abraham, John; Hausfather, Zeke; Trenberth, Kevin E. (১১ জানুয়ারি ২০১৯)। "How fast are the oceans warming?"। Science363 (6423): 128–129। এসটুসিআইডি 57825894ডিওআই:10.1126/science.aav7619পিএমআইডি 30630919বিবকোড:2019Sci...363..128C 
  5. Doney, Scott C.; Busch, D. Shallin; Cooley, Sarah R.; Kroeker, Kristy J. (২০২০-১০-১৭)। "The Impacts of Ocean Acidification on Marine Ecosystems and Reliant Human Communities"। Annual Review of Environment and Resources (ইংরেজি ভাষায়)। 45 (1): 83–112। ডিওআই:10.1146/annurev-environ-012320-083019অবাধে প্রবেশযোগ্য  Text was copied from this source, which is available under a Creative Commons Attribution 4.0 International License "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। Archived from the original on ২০১৭-১০-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০১ 
  6. Doney, Scott C.; Busch, D. Shallin; Cooley, Sarah R.; Kroeker, Kristy J. (২০২০-১০-১৭)। "The Impacts of Ocean Acidification on Marine Ecosystems and Reliant Human Communities"। Annual Review of Environment and Resources (ইংরেজি ভাষায়)। 45 (1): 83–112। ডিওআই:10.1146/annurev-environ-012320-083019অবাধে প্রবেশযোগ্য  Text was copied from this source, which is available under a Creative Commons Attribution 4.0 International License "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। Archived from the original on ২০১৭-১০-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০১ 
  7. Bindoff, N.L., W.W.L. Cheung, J.G. Kairo, J. Arístegui, V.A. Guinder, R. Hallberg, N. Hilmi, N. Jiao, M.S. Karim, L. Levin, S. O'Donoghue, S.R. Purca Cuicapusa, B. Rinkevich, T. Suga, A. Tagliabue, and P. Williamson, 2019: Chapter 5: Changing Ocean, Marine Ecosystems, and Dependent Communities ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-১২-২০ তারিখে. In: IPCC Special Report on the Ocean and Cryosphere in a Changing Climate ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২১-০৭-১২ তারিখে [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, V. Masson-Delmotte, P. Zhai, M. Tignor, E. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Nicolai, A. Okem, J. Petzold, B. Rama, N.M. Weyer (eds.)]. In press.
  8. Freedman, Andrew (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "Mixing of the planet's ocean waters is slowing down, speeding up global warming, study finds"The Washington Post। ১৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২০ 
  9. Cheng, Lijing; Trenberth, Kevin E.; Gruber, Nicolas; Abraham, John P.; Fasullo, John T.; Li, Guancheng; Mann, Michael E.; Zhao, Xuanming; Zhu, Jiang (২০২০)। "Improved Estimates of Changes in Upper Ocean Salinity and the Hydrological Cycle"। Journal of Climate33 (23): 10357–10381। ডিওআই:10.1175/jcli-d-20-0366.1অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2020JCli...3310357C 
  10. Chester, R.; Jickells, Tim (২০১২)। "Chapter 9: Nutrients oxygen organic carbon and the carbon cycle in seawater"। Marine geochemistry (3rd সংস্করণ)। Chichester, West Sussex, UK: Wiley/Blackwell। পৃষ্ঠা 182–183। আইএসবিএন 978-1-118-34909-0ওসিএলসি 781078031। ২০২২-০২-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২০ 
  11. Bindoff, N.L., W.W.L. Cheung, J.G. Kairo, J. Arístegui, V.A. Guinder, R. Hallberg, N. Hilmi, N. Jiao, M.S. Karim, L. Levin, S. O'Donoghue, S.R. Purca Cuicapusa, B. Rinkevich, T. Suga, A. Tagliabue, and P. Williamson, 2019: Chapter 5: Changing Ocean, Marine Ecosystems, and Dependent Communities ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-১২-২০ তারিখে. In: IPCC Special Report on the Ocean and Cryosphere in a Changing Climate ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২১-০৭-১২ তারিখে [H.-O. Pörtner, D.C. Roberts, V. Masson-Delmotte, P. Zhai, M. Tignor, E. Poloczanska, K. Mintenbeck, A. Alegría, M. Nicolai, A. Okem, J. Petzold, B. Rama, N.M. Weyer (eds.)]. In press.
  12. Briand F., সম্পাদক (২০১৩)। "Marine Extinctions: Patterns and Processes - an overview."CIESM Workshop Monographs (ইংরেজি ভাষায়)। 45: 5–19। 
  13. "Summary for Policymakers"। The Ocean and Cryosphere in a Changing Climate (পিডিএফ)। ২০১৯। পৃষ্ঠা 3–36। আইএসবিএন 978-1-00-915796-4ডিওআই:10.1017/9781009157964.001। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৬ 
  14. "Summary for Policymakers"। The Ocean and Cryosphere in a Changing Climate (পিডিএফ)। ২০১৯। পৃষ্ঠা 3–36। আইএসবিএন 978-1-00-915796-4ডিওআই:10.1017/9781009157964.001। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৬ 
  15. Top 700 meters: Lindsey, Rebecca; Dahlman, Luann (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। "Climate Change: Ocean Heat Content"climate.gov। National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA)। ২৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Top 2000 meters: "Ocean Warming / Latest Measurement: December 2022 / 345 (± 2) zettajoules since 1955"NASA.gov। National Aeronautics and Space Administration। ২০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  16. Cheng, Lijing; Abraham, John; Zhu, Jiang; Trenberth, Kevin E.; Fasullo, John; Boyer, Tim; Locarnini, Ricardo; Zhang, Bin; Yu, Fujiang; Wan, Liying; Chen, Xingrong (ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "Record-Setting Ocean Warmth Continued in 2019"। Advances in Atmospheric Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। 37 (2): 137–142। এসটুসিআইডি 210157933ডিওআই:10.1007/s00376-020-9283-7অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2020AdAtS..37..137C 
  17. "The Oceans Are Heating Up Faster Than Expected"। scientific american। ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২০ 
  18. "Global Annual Mean Surface Air Temperature Change"। NASA। ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  19. Ritchie, Roser, Mispy, Ortiz-Ospina. "SDG 14 - Measuring progress towards the Sustainable Development Goals ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২২-০১-২২ তারিখে." SDG-Tracker.org, website (2018).
  20. Gattuso, J.-P.; Magnan, A.; Billé, R.; Cheung, W. W. L.; Howes, E. L.; Joos, F.; Allemand, D.; Bopp, L.; Cooley, S. R.; Eakin, C. M.; Hoegh-Guldberg, O.; Kelly, R. P.; Pörtner, H.-O.; Rogers, A. D.; Baxter, J. M.; Laffoley, D.; Osborn, D.; Rankovic, A.; Rochette, J.; Sumaila, U. R.; Treyer, S.; Turley, C. (৩ জুলাই ২০১৫)। "Contrasting futures for ocean and society from different anthropogenic CO 2 emissions scenarios" (পিডিএফ)Science349 (6243): aac4722। এসটুসিআইডি 206639157ডিওআই:10.1126/science.aac4722পিএমআইডি 26138982। ৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২২ 
  21. "Climate Change Indicators: Sea Level / Figure 1. Absolute Sea Level Change"EPA.gov। U.S. Environmental Protection Agency (EPA)। জুলাই ২০২২। ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Data sources: CSIRO, 2017. NOAA, 2022. 
  22. Chan, Francis; Barth, John; Kroeker, Kristy; Lubchenco, Jane; Menge, Bruce (১ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "The Dynamics and Impact of Ocean Acidification and Hypoxia: Insights from Sustained Investigations in the Northern California Current Large Marine Ecosystem"। Oceanography32 (3): 62–71। এসটুসিআইডি 202922296ডিওআই:10.5670/oceanog.2019.312অবাধে প্রবেশযোগ্য  Material was copied from this source, which is available under a Creative Commons Attribution 4.0 International License ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-১০-১৬ তারিখে.
  23. Gewin, Virginia (আগস্ট ২০১০)। "Oceanography: Dead in the water"। Nature466 (7308): 812–814। এসটুসিআইডি 4358903ডিওআই:10.1038/466812aঅবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 20703282 
  24. Breitburg, Denise; Levin, Lisa A.; Oschlies, Andreas; Grégoire, Marilaure; Chavez, Francisco P.; Conley, Daniel J.; Garçon, Véronique; Gilbert, Denis; Gutiérrez, Dimitri; Isensee, Kirsten; Jacinto, Gil S.; Limburg, Karin E.; Montes, Ivonne; Naqvi, S. W. A.; Pitcher, Grant C.; Rabalais, Nancy N.; Roman, Michael R.; Rose, Kenneth A.; Seibel, Brad A.; Telszewski, Maciej; Yasuhara, Moriaki; Zhang, Jing (৫ জানুয়ারি ২০১৮)। "Declining oxygen in the global ocean and coastal waters"। Science359 (6371): eaam7240। এসটুসিআইডি 206657115ডিওআই:10.1126/science.aam7240অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 29301986বিবকোড:2018Sci...359M7240B 
  25. Purich, Ariaan; Doddridge, Edward W. (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। "Record low Antarctic sea ice coverage indicates a new sea ice state"Communications Earth & Environment4: 314। ডিওআই:10.1038/s43247-023-00961-9অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  26. Sarwar G.M. (২০০৫)। Impacts of Sea Level Rise on the Coastal Zone of Bangladesh (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। Lund University। ১৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩