হাখা

স্থানাঙ্ক: ২২°৩৮′৪৩.৯৪৭৬″ উত্তর ৯৩°৩৬′১৮.১২৯″ পূর্ব / ২২.৬৪৫৫৪১০০০° উত্তর ৯৩.৬০৫০৩৫৮৩° পূর্ব / 22.645541000; 93.60503583
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাখা
হাকা
রাজধানী
হাখা
হাখা
হাখা মিয়ানমার-এ অবস্থিত
হাখা
হাখা
মায়ানমারে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৮′৪৩.৯৪৭৬″ উত্তর ৯৩°৩৬′১৮.১২৯″ পূর্ব / ২২.৬৪৫৫৪১০০০° উত্তর ৯৩.৬০৫০৩৫৮৩° পূর্ব / 22.645541000; 93.60503583
প্রদেশ মায়ানমার
রাজ্যটেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Chin State
জেলাহাখা জেলা
Townshipহাখা শহর
আয়তন
 • মোট১২.৫০ বর্গমাইল (৩২.৪ বর্গকিমি)
উচ্চতা৬,১২৮ ফুট (১,৮৬৭ মিটার)
জনসংখ্যা (২০১৪)[১]২৪,৯২৬
 • Religionsখ্রিস্টান
সময় অঞ্চলMST (ইউটিসি+6:30)

হাখা (বর্মী: ဟားခါးမြို့; এমএলসিটিএস: ha: hka: mrui., উচ্চারিত: [hákʰá mjo̰][২][৩]) মিয়ানমারের চিন প্রদেশের রাজধানী যা আগে হাকা নামেও ডাকা হতো। হাখা চিন রাজ্যের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর মোট আয়তন ১২.৫০ বর্গ মাইল (৩২.৪৭ বর্গ কিলোমিটার)। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮৬৭ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই উচু জায়গাটি একটি মালভূমি। যদিও শহরটি একদম ছোট, তবুও এটি চিন রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর এবং রাজধানীও। হাখার আশপাশে অনেক জায়গা রয়েছে। চাইলেই এই শহরটিকে এর চারপাশে এর বর্তমান আয়তনের দশ গুণ বিস্তৃত করা যাবে। পুরো চিন রাজ্যটিই পাহাড়ে আবৃত। হাখা শহরটিও তাই পাহাড়ের কোল ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে, ইংরেজি "U" আকৃতির বর্ণের মতো। শহরটির প্রধান সড়ক "U" আকৃতিতে তৈরি। সবরকম অবকাঠামো এই সড়কটির আশপাশে তৈরি হয়েছে। ছোট করে আরেকটি রাস্তা শহরের মধ্যে রয়েছে। চিন রাজ্যের অন্যান্য রাজ্য থান্তল্যাং, ফালাম, গাংগাও এবং মাটুপির সাথে হাখার সংযোগী রাস্তা রয়েছে।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৪০০ শতকে একটি লাই নামক নৃগোষ্ঠী দ্বারা হাখা জায়গাটিতে জনবসতির সৃষ্টি হয়। বহুর প্রজন্ম ধরে জায়গাটি স্থানীয় মানুষদের দ্বারাই শাসিত হয়ে আসছিল। ১৮৮৯ সালে বৃটিশ সৈনিকরা এই স্থানে আসে। তখনও সেখানে ৬০০টির মতো বাড়ি ছিল।

বৃটিশরা উপমহাদেশে আসার পর পাহাড়ি উপজাতিগুলোতে বশীভূত করার অপারেশন শুরু করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯০ সালের ১৯ জানুয়ারী হাখা জায়গাটিকে তারা দখল করে। পরবর্তীতে এখানে তারা একটি উপজেলা অফিস তৈরি করে। কিছুদিন পর হাখা একটি শহরে পরিণত হয়।

১৮৯৯ সালের ১৫ মার্চে, আমেরিকা থেকে একটি ব্যপটিস্ট ধর্মপ্রচারক দম্পতি হাখায় আসেন এবং একটি ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র তৈরি করেন। তারা হলে আর্থার কারসন (১৮৬০-১৯০৮) এবং তার সহধর্মীনি লারা (১৯৫৮-১৯৪২)। পরবর্তীতে আরো কিছু ধর্মপ্রচারকরা হাখায় আসে এবং পুরো চিন রাজ্যে অনেক উন্নতি করে। চিন রাজ্যের উত্তর-পূর্ব দিকের বেশিরভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নতি, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন, স্বাস্থ্যগত সেবার উন্নতিসহ আরো নানান দিক থেকে চিন রাজ্য উপকৃত হয়। চেস্টার স্ট্রেইট (১৮৯৩-১৯৮৫) হাখায় চিন বাইবেল স্কুল নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ভাষার শিক্ষা দেয়া হত। শুরুতে এখানে ১৩ জন ছাত্র ছিল। এদের মধ্যে তেদিম থেকে চারজন, ফালাম থেকে চারজন, হাখা থেকে পাঁচজন ছাত্র এসেছিল। ছয়মাস পরে সবাই নিজেদের ভাষায় লিখতে সক্ষম হয়েছিল।

১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানী সৈন্যরা হাখা দখল করেছিল। পরে বৃটিশ সৈনিকরা পুনরায় তা দখল করে।

১৯৪৮ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে মায়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর চিন জেলার (তখন এটি চিন জেলা ছিল) গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর ছিল হাখা। ফালাম ছিল তখন রাজধানী। ১৯৭৪ সালে চিন জেলার বিলুপ্তি ঘটে। এটিকে রাজ্যে পরিবর্তিত করা হয়। এবং হাখাকে এর রাজধানী ঘোষণা করা হয়। এর ফলে হাখায় উন্নতির ছোঁয়া লাগে। নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হয়, শহরকে আরো বর্ধিত করা হয়। ফলশ্রুতিতে হাখা চিনের সবচেয়ে বড় শহরে পরিণত হয়। বর্তমানে হাখায় বসবাস করছে প্রায় ২০০০০ হাজার মানুষ।[৫] ২০১২ সালে হাখা জেলা তৈরি করা হয়। এখন হাখা জেলাতেই শহরটি অবস্থিত।

ভূগোল এবং জলবায়ু[সম্পাদনা]

শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬১২০ ফিট উঁচুতে অবস্থিত। এবং রাং তিয়াং পাহাড়ের কোল ঘেঁষেই এর সবকিছু তৈরি হয়েছে। রাং তিয়াং পাহাড়টির উচ্চতা ৭৫৪৩ ফিট। পুরো চিন রাজ্যে এটি অনেক বিখ্যাত এবং খুব সুন্দর একটি পাহাড়।

কোপ্পেন শ্রেণিকরণ জলবায়ুর ভিত্তিতে হাখা সাবট্রপিক্যাল উঁচু জলবায়ুর মধ্যে পড়ে। এখানে তিনটি ঋতু দেখা যায় - শীত, গ্রীষ্ম এবং বর্ষা। তবে সমতলভূমির তূলনায় সবসময় এখানে ঠান্ডা একটু বেশি থাকে।

শীতকালে এখানে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। মাঝে মাঝে প্রায় -২° (২৮° ফারেনহাইট) সেলসিয়াস হয়ে যায়। এছাড়াও ঠান্ডা বাতাসও বয়ে যায়। সকালে এবং সন্ধ্যায় পুরো শহর কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যায়। ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে একটি শৈত্য প্রবাহ মায়ানমারে আঘাত হানে। তখন তাপমাত্রা ০° সেলসিয়াসে (৩২° ফারেনহাইট) নেমে গিয়েছিল।[৬]

হাখায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮৬.২২ ইঞ্চি।

মায়ানমারের আবহাওয়া অধিদপ্তর ১৯৮৮ সাল থেকে দৈনিক আবহাওয়ার বিবরণ প্রকাশ করে আসছে।[৭]

হাখা (১৯৮৯-২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ২৪.৯
(৭৬.৮)
২৬.৪
(৭৯.৫)
২৯.৫
(৮৫.১)
৩২.৫
(৯০.৫)
৩০.০
(৮৬.০)
৩০.০
(৮৬.০)
৩০.০
(৮৬.০)
২৮.০
(৮২.৪)
২৬.৬
(৭৯.৯)
২৭.০
(৮০.৬)
২৬.২
(৭৯.২)
২৪.৭
(৭৬.৫)
৩২.৫
(৯০.৫)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ১৮.৭
(৬৫.৭)
২০.৩
(৬৮.৫)
২২.৯
(৭৩.২)
২৫.১
(৭৭.২)
২৪.০
(৭৫.২)
২৩.০
(৭৩.৪)
২২.৩
(৭২.১)
২১.৯
(৭১.৪)
২১.৯
(৭১.৪)
২১.৫
(৭০.৭)
১৯.৬
(৬৭.৩)
১৮.১
(৬৪.৬)
২১.৬
(৭০.৯)
দৈনিক গড় °সে (°ফা) ১০.৪
(৫০.৭)
১২.৫
(৫৪.৫)
১৫.৫
(৫৯.৯)
১৮.১
(৬৪.৬)
১৮.৮
(৬৫.৮)
১৯.৩
(৬৬.৭)
১৯.২
(৬৬.৬)
১৮.৮
(৬৫.৮)
১৮.৪
(৬৫.১)
১৭.০
(৬২.৬)
১৩.৩
(৫৫.৯)
১০.২
(৫০.৪)
১৬.০
(৬০.৭)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ২.২
(৩৬.০)
৪.৭
(৪০.৫)
৮.২
(৪৬.৮)
১১.১
(৫২.০)
১৩.৭
(৫৬.৭)
১৫.৭
(৬০.৩)
১৬.১
(৬১.০)
১৫.৮
(৬০.৪)
১৫.০
(৫৯.০)
১২.৬
(৫৪.৭)
৭.১
(৪৪.৮)
২.৩
(৩৬.১)
১০.৪
(৫০.৭)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) −৪.৩
(২৪.৩)
−৫.০
(২৩.০)
−১.০
(৩০.২)
৪.৬
(৪০.৩)
৮.৯
(৪৮.০)
১০.২
(৫০.৪)
১১.৫
(৫২.৭)
১১.০
(৫১.৮)
১০.০
(৫০.০)
৩.৫
(৩৮.৩)
−৩.৮
(২৫.২)
−৪.৮
(২৩.৪)
−৫.০
(২৩.০)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১০.০
(০.৩৯)
১৩.১
(০.৫২)
৩৩.৭
(১.৩৩)
৭০.২
(২.৭৬)
১৯০.৮
(৭.৫১)
২৪৩.৪
(৯.৫৮)
৩২০.৮
(১২.৬৩)
৩৪২.৩
(১৩.৪৮)
৩২৮.৮
(১২.৯৪)
২০৯.১
(৮.২৩)
৪৭.১
(১.৮৫)
১৫.২
(০.৬০)
১,৮২৪.৫
(৭১.৮৩)
উৎস: নরয়েজিও আবহাওয়া ইনস্টিটিউট[৮]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

  • চিন রাজ্য সাংস্কৃতিক জাদুঘর
  • রেভ. ভ্যান হরে ভিলা
  • মিশনারীদের কবরস্থান
  • পূর্ব বাংলো
  • হাখা ব্যাপটিস্ট গির্জা

শিক্ষা[সম্পাদনা]

  • হাখা কলেজ
  • হাখা এডুকেশনাল কলেজ
  • চিন খ্রিস্টান বিশ্ববিদ্যালয়
  • সরকারী কারগরী ইন্সটিটিউট, হাখা

ক্রীড়া[সম্পাদনা]

৪০০০ আসনের ওয়ান্থু মং স্টেডিয়াম নির্মানাধীন অবস্থায় রয়েছে। এটি চিন ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের একটি স্টেডিয়াম।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Census Report। The 2014 Myanmar Population and Housing Census। 2। Naypyidaw: Ministry of Immigration and Population। মে ২০১৫। পৃষ্ঠা 51। 
  2. Google Maps (মানচিত্র)। Google। 
  3. Bing Maps (মানচিত্র)। Microsoft and Harris Corporation Earthstar Geographics LLC। 
  4. "Hakha"। Ilovemyanmar.org। এপ্রিল ২৭, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৯, ২০১০ 
  5. https://www.citypopulation.de/Myanmar-Cities.html
  6. "'Cold Wave' likely to sweep Burma"। Mizzima.com। জানুয়ারি ১৫, ২০০৯। আগস্ট ১৭, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৯, ২০১০ 
  7. http://english.dvb.no/news.php?id=2122। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১০, ২০০৯  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)[অকার্যকর সংযোগ]
  8. "Myanmar Climate Report" (পিডিএফ)। Norwegian Meteorological Institute। পৃষ্ঠা 26–36। ৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৮ 
  9. "MYANMAR-STADIUMS"www.arecar.de। ২০১৬-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]