সিপাহী ও জনতার বিপ্লব
৭ নভেম্বর ১৯৭৫-এ বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান | |||
---|---|---|---|
সিপাহী ও জনতার বিপ্লব ১৯৭২–১৯৭৫ বাংলাদেশে বামপন্থী বিদ্রোহ ও বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানেরের অংশ | |||
তারিখ | ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ | ||
অবস্থান | |||
কারণ | ৩ নভেম্বর ১৯৭৫-এ বাংলাদেশে অভ্যুত্থান | ||
লক্ষ্য |
| ||
ফলাফল | সফল
| ||
পক্ষ | |||
নেতৃত্ব দানকারী | |||
ক্ষয়ক্ষতি | |||
নিহত | ৪৩ জন সেনা কর্মকর্তা (মোশাররফ, হুদা ও হায়দার সহ) | ||
আটক | ৩৩ বিএসএস & জাসদ সদস্য (তাহের সহ) |
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থান বা সিপাহী ও জনতার বিপ্লব জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের বামপন্থী রাজনীতিবিদদের সহযোগিতায় বামপন্থী সেনা সদস্যরা সংঘটিত করেছিল। এই অভ্যুত্থানে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়েছিলো। যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাথে জড়িতদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এই অভ্যুত্থানে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্ষমতা গ্রহণ ও রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথ সুগম হয়।[১]
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়। সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।[২] শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন।[৩] খোন্দকার মোস্তাক আহমদ তাকে বদলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিলেন। [৪] খোন্দকার মোস্তাক আহমদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান, মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহকে উপ-সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে প্রতিস্থাপন করেছেন। [৫] পাকিস্তান শেখ মুজিবুর রহমানকে অপসারণকে স্বাগত জানায় এবং চীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। [৫] জেনারেল স্টাফের চিফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড পুনঃস্থাপনের জন্য বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান অনিচ্ছুক বা এটি করতে অক্ষম প্রমাণিত হন। সেনাবাহিনী ও ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অসন্তোষ ছিল এবং কর্নেল শাফাত জামিল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দারের মতো অফিসার খোন্দকার মোশতাক আহমদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। [৫]
ঘটনাবলি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার ছিলেন ভারতীয় এজেন্ট, যারা বাংলাদেশকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে দিবে। [৬] কর্নেল আবু তাহের সরকার প্রতিস্থাপনের জন্য তার ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুগত সৈনিকদের সংগঠিত করেছিলেন। তারা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থান শুরু করে। খালেদ মোশাররফ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার অভ্যুত্থানকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন, সেনাবাহিনীর সৈন্যরা তাদের হত্যা করে। [৫] কর্নেল আবু তাহের ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দিয়েছিলেন। [৭] রাস্তায় সৈন্যরা চিৎকার করে নারা-ই-তাকবীর এবং সিপাহী-জনতা জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়। [৮]
ধারণা করা হয়, কর্নেল আবু তাহের ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মৃত্যুর সাথে জড়িত ছিলেন। [৬] সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে খালেদ মোশাররফ গৃহবন্দী করে রেখেছিল। এই অভ্যুত্থান জিয়াউর রহমানকে সরকারে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছিল। [৯][১০] কর্নেল আবু তাহেরকে ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ফাঁসি দিয়েছিলেন। [১১]
ফলাফল
[সম্পাদনা]জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল[১২] এই দিনটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে স্মরণ করে এবং বার্ষিকী পালন করে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এটিকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং এটিকে নেতিবাচকভাবে দেখে। [৬] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সামরিক অভ্যুত্থানকে নাগরিক সামরিক অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছে। [৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "৭ই নভেম্বর: বিপ্লব ও সংহতি নাকি সৈনিক হত্যা দিবস? - BBC বাংলা"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-৩০।
- ↑ "7th November 1975: Conflict between 'isms'"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ হারুন-অর-রশীদ (২০১২)। "রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ সালেহ আতহার খান (২০১২)। "আহমদ, খোন্দকার মোশতাক"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ ক খ গ ঘ "When Caesar died . . . and with him all the tribunes"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-১১-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ ক খ গ "November 7: Let the truth be known"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ "Colonel Abu Taher"। thedailystar.net। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ "None righted the wrong"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-১১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ ক খ "BNP seeks permission from DMP to hold rally Nov 8"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ "Observing 7th Nov: BNP now to hold rally on Nov 11"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ "Murder most foul . . ."। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০২-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০।
- ↑ এমাজউদ্দীন আহমদ (২০১২)। "বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।