শরৎচন্দ্র রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শরৎচন্দ্র রায়
জন্ম৪ নভেম্বর ১৮৭১
মৃত্যু৩০ এপ্রিল ১৯৪২
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামএস. সি. রায়
পেশাআইনজ্ঞ, নৃতাত্ত্বিক, নৃবিজ্ঞানী, অধ্যাপক, প্রভাষক
পরিচিতির কারণনৃতত্ত্ববিজ্ঞান

শরৎচন্দ্র রায় (৪ নভেম্বর ১৮৭১ ― ৩০ এপ্রিল ১৯৪২ [১] ) ছিলেন নৃবিজ্ঞানের একজন প্রখ্যাত ভারতীয় পণ্ডিত। তিনিই প্রথম ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদ তথা নৃবিজ্ঞানী এবং ভারতীয় নৃতত্ত্বের জনক হিসাবে বিবেচিত হন। [২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শরৎচন্দ্রের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার করাপাড়ায়। পিতা পূর্ণচন্দ্র রায় ছিলেন বেঙ্গল জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্য। যখন তাঁর পিতা পুরুলিয়ায় বদলি হন, কিশোর শরৎচন্দ্র উপজাতি মানুষদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় তাঁর মাতুলালয়ে এসে পড়াশোনা করতে থাকেন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ স্নাতক হন। এই কলেজ থেকে তিনি ইংরাজী বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি তৎকালীন রিপন কলেজ বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আইনবিদ্যায় স্নাতক তথা বি.এল পাশ করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহের ধলা হাইস্কুলে প্রধানশিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে রাঁচির জিইএল মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হন। রাঁচিতে আদিবাসীদের দুর্দশা সম্পর্কে জানতে পারেন। সে সময় বিহার ও ওড়িশার আদিবাসীদের প্রতি যে অত্যাচার চলত তিনি আইনসম্মত পন্থায় বন্ধ করার চেষ্টা করেন। শেষে নিজে শিক্ষকতা ছেড়ে আইনজীবী হিসাবে অনুশীলন শুরু করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার চব্বিশ পরগনা জেলা আদালতের আবেদনকারী হন। পরের বছর তিনি রাঁচির জুডিসিয়াল কমিশনারের আদালতে অনুশীলন করেন। [৩]

নৃতত্ত্ববিজ্ঞানী হিসাবে কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আইনজ্ঞ হিসাবে ছোটনাগপুরের অভ্যন্তরীণ এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিদর্শনের সময় আদিবাসীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছেন। বিশেষকরে মুন্ডাওরাওঁ সহ অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষেরা যেভাবে  উপনিবেশিক প্রশাসনে অব্যাহত নিপীড়নের শিকার হন, আইন আদালতে তাদের যেমন  অবজ্ঞা করা হয় এবং 'উচ্চ বর্ণ'-এর হিন্দু আইনজীবীদের আদিবাসীদের রীতিনীতি, ধর্ম, আচার ও ভাষা সম্পর্কে স্বল্পজ্ঞানের কারণে সুবিচারে বঞ্চিত হন - এ সমস্ত বিষয় শরৎচন্দ্রকে প্রভাবিত করেছিল। আর এই সমস্ত বিষয় নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে রেখে তাদের ভাষা, রীতিনীতি, ধর্মীয় আচার আচরণ, মানবতার স্বার্থে আইন এবং উপনিবেশিক নাগরিক আইন কার্যকর করা লক্ষ্যে তিনি বেশ কয়েক বৎসর ও দশক জনজাতির মধ্যে অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন - আত্মনিয়োগ করেন নৃতত্ত্বচর্চায়। নৃতত্ত্বের উপর বহু গ্রন্থ, প্রবন্ধ মোনোগ্রাফ ইত্যাদি রচনা করে, প্রথম এই বিষয়ে সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এগুলি সামগ্রিকভাবে বিচার্য বিষয় ও ভবিষ্যতে গবেষণার ভিত্তি হিসাবে পরিগণিত হয়। যদিও তিনি নৃতত্ত্ব বিষয়ে প্রথাগত শিক্ষা নেন নি, তবুও তিনি প্রথম ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক বা প্রথম ভারতীয় নৃ-বিজ্ঞানী হিসাবে বিবেচিত হন। [৪]

পরবর্তীতে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ম্যান ইন ইন্ডিয়া পত্রিকাসহ অন্যান্য জার্নাল প্রকাশনার মাধ্যমে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন খোলা নৃতত্ত্ব বিজ্ঞান বিভাগে বক্তৃতায় এবং পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিডার হিসাবে কাজের মধ্য দিয়ে নৃ-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে তিনি আরো প্রসারিত করেন। [৫]

অবদান[সম্পাদনা]

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

  • দ্য মুণ্ডাজ অ্যান্ড দেয়ার কান্ট্রি  (১৯১২)
  • দ্য ওরাওঁ অফ ছোটানাগপুর  (১৯১৫)
  • দ্য বিরহোরজ (১৯২৫) (বইটির ডিজিটাল সংস্করণ এই লিঙ্কে- [১] )
  • ওরাওঁ রিলিজিয়ন অ্যান্ড কাস্টমস (১৯২৭)
  • দ্য হিল ভুইয়াজ অফ ওরিস্যা (১৯৩৫)
  • দ্য খরিয়াজ ভলিয়্যুম ১ (১৯৩৭)
  • দ্য খরিয়াজ ভলিয়্যুম ২ (১৯৩৭) [৬]

পত্রপত্রিকা[সম্পাদনা]

  • ম্যান ইন ইন্ডিয়া ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে  শরৎচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত ভারতে নৃতত্ত্ববিজ্ঞানে প্রথম জার্নাল। [৭]
  • তিনি সিংভূমের অসুর আদিবাসী ও হো জনজাতির উপর টোটেমিজম, ছোটনাগপুরের পাহিরা, লেপচা জনজাতির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া; সিকিমের জনজাতির আত্মীয়তা, খাসিয়া জনগোষ্ঠী; খোন্ড জনজাতির আত্মত্যাগ; কোরকু জনগোষ্ঠীর স্মারক; রাজপুতানার ধীবর লেক বা জয়সামন্দ লেক অঞ্চলের কৃষ্ণাঙ্গ ভীল জনগোষ্ঠী এবং বার্মার জাতিগত গোষ্ঠীর উপর বিশদে রচিত নিবন্ধাদি বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। [৮]

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

  • কায়সার-ই-হিন্দ রৌপ্য পদক,১৯১৩
  • রায় বাহাদুর, ১৯১৯
  • ফোকলোর সোসাইটি অব লন্ডন -এর  সাম্মানিক সদস্য নির্বাচিত হন (একমাত্র ভারতীয়)
  • ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের নৃতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে) নির্বাচিত হন।
  • অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের লোককথা বিভাগের সভাপতি (১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে) নির্বাচিত হন।
  • আন্তর্জাতিক নৃতাত্ত্বিক বিজ্ঞান কংগ্রেসের সাম্মানিক পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
  • ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের ফাউন্ডেশন ফেলো ছিলেন।
  • পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশন ফেলো ছিলেন।
  • ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস নৃতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের উপর লেখা প্রবন্ধের স্মারক সংকলন প্রকাশ করে তাঁকে প্রদান করে [৯]
  • তাঁর নামাঙ্কিত শরৎচন্দ্র রায় ইনস্টিটিউট অফ অ্যানথ্রোপলজিক্যাল স্টাডিজ" ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে রাঁচিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। [১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Anjali Bose (২০১৯)। Sansad Bengali Charitabhidhan Vol.I। Sahitya Sansad,Kolkata। পৃষ্ঠা 701। আইএসবিএন 978-81-7955-135-6 
  2. Upadhyay, Vijay S. and Gaya Pandey. Indian Anthropologists - Sarat Chandra Roy: The Father of Indian Ethnography (1871–1942) in History of Anthropological Thought, Concept Publishing Company, 1993, p. 395.
  3. Upadhyay and Pandey, p. 395-6.
  4. Upadhyay and Pandey, p. 396.
  5. Upadhyay and Pandey, p. 398.
  6. Upadhyay and Pandey, p. 396.
  7. Upadhyay and Pandey, p. 397-8.
  8. Upadhyay and Pandey, p. 401.
  9. Upadhyay and Pandey, p. 397
  10. Srivastava, Vinay Kumar and Sukant K. Chaudhury. Anthropological Studies of Indian Tribes in Sociology And Social Anthropology In India, edited by Yogesh Atal, Indian Council of Social Science Research, 2009, p. 52.