লোহিত নদী
লোহিত নদী বা জায়ু নদী ভারত এবং চীনে প্রবাহিত একটি নদী। এটি ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি শাখা নদী। কাঙরি গারপো পর্বতমালায়, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এ নদীর উত্থান ঘটে। সেখানে এটি জায়ু নদী নামে পরিচিত (Chinese )। এটি এ পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে অববাহিত হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ২০০ কিলোমিটার (১২০ মা) ) পথ যাত্রা করে আসামের সমভূমিতে প্রবেশ করে। প্রবেশের আগ পর্যন্ত এটি লোহিত নদী নামে পরিচিত। এটি উত্তাল, অশান্ত, এবং রক্তের নদী হিসেবে পরিচিত। রক্তিম নদী হিসেবে পরিচিত হওয়ার কারণ এর অববাহিকায় মাটির অত্যধিক পরিমাণ লৌহ এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপস্থিতি। এটি প্রবাহিত হয়েছে মিশমি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে। পরিশেষে মিলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মাথায় সিয়াং-এর (ব্রহ্মপুত্র) সাথে।
বেশিরভাগ অংশ ঘনভাবে বনাঞ্চল, সুউচ্চ গাছপালা উপ-ক্রান্তীয় বনে পরিণত করেছে। পুরো ভারতের ঘনতম গ্রীষ্মীয় জঙ্গলসমূহের একটি। নানান রঙের রডোডেন্ড্রন উঁচুতে পর্যন্ত ফোটে, নিচের খাঁজে নিজেদের ফুটিয়ে তোলে অর্কিড। এ অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে ওষধি গাছ এবং গুল্মের ভাণ্ডার। মিশমি তিতা, কপটিস গাছ ইত্যাদির জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
মিশমি পাহাড়ে দাপট ধরে রেখেছে। সমভূমিতে বসবাস করে খাম্পতি জনগোষ্ঠী, জিংপো জনগোষ্ঠী, কট্টর বৌদ্ধ এবং বার্মার পাটকাই পাহাড় থেকে আসা অভিবাসীরা। লোহিত নদীর অববাহিকা ধরে, তিব্বতীয় ধর্মের সর্বপ্রাণবাদী বিশ্বাস বিকাশ লাভ করেছে। প্রতিদানস্বরূপ, অগ্রাধিকার পেয়েছে টেরাভাডা বৌদ্ধধর্ম, যা কিনা বৌদ্ধধর্মের দুটি আদি শাখার একটি। আরও অগ্রাধিকার পেয়েছে হিন্দু মন্দির। এই অঞ্চলটি তিব্বত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যকার বহু সংস্কৃতির সংমিশ্রণকে ধারণ করে।
লোহিত নদী চীন থেকে ভারতে আসে এবং ভারতের পূর্ব দিকে সর্বাধিক জনবহুল উঁচুস্থান দিয়ে প্রবাহিত হয় কিবিথু নামক স্থানে। ভারতীয় সেনাবাহিনী বিভিন্ন অভিযান এবং প্রশিক্ষণের জন্য এই নদীটি ব্যবহার করে।
ভূপেন হাজারিকা সেতু নামেও পরিচিত, ধোলা-সাদিয়া সেতুটি একটি কাঠের সেতু। এটা ভারতের দীর্ঘতম কাঠের সেতু যা আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে যুক্ত করেছে। সেতুটি দক্ষিণের ধোলা গ্রাম থেকে সাদিয়া হয়ে উত্তরে লোহিত নদীর উপর বিস্তৃত।