লেভ বার্গ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লেভ বের্গ

লেভ সেমিয়োনভিচ বের্গ (১৪ মার্চ ১৮৭৬, বেন্ডার - ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫০, লেলিনগ্রাদ) একজন খ্যাতনামা রুশ ভূতত্ত্ববিদ, জীববিজ্ঞানী ও মৎস্যবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ভূতত্ত্ববিদ সংস্থার সভাপতি ছিলেন।

তিনি চার্লস ডারউইন ও ল্যামার্কের বিবর্তনের বিরোধিতা করেন ও নোমোজেনেসিস নামক নিজস্ব বিবর্তন তত্ত্ব প্রদান করেন।

জীবন[সম্পাদনা]

লেভ বার্গের জন্ম বেসারাবিয়ায়। তাঁর পিতা সাইমন গ্রেগরোভিচ বার্গ একজন নোটারি ছিলেন। তাঁর মার নাম ক্লারা লেভোনা বার্নস্টাইন-কোগান । লেভ কিসিনেভ জিমনেসিয়াম থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[১]মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন।[২]

মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জলপ্রাণবিজ্ঞান (Hydrobiology) ও ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি পরবর্তীতে মৎস্যবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন ও ১৯২৮ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য হন।

লেভ বার্গ ১৮৯৮ সালে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯০৩ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরে কাজ করেন। তিনি ভূগোল ইনস্টিটিউটে কাজ করেন , যেটি এখন সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল অনুষদের অংশ।

মধ্য এশিয়ার হ্রদগুলোর গভীরতা সম্পর্কে তিনি অধ্যয়ন করেন। তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান-সম্পর্কিত দোকুচায়েভ মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। এ মতবাদ সোভিয়েত জীববিদ্যার ভিত্তি গড়ে দেয়। তিনি জলবায়ুতত্ত্বের উপর "জলবায়ু ও জীবন"(১৯২২) ও "জলবায়ুতত্ত্বের মূল ধারণা"(১৯২৭) রচনা করেন।

জীবদ্দশায় বার্গ মৎস্যবিজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ ছিলেন। [৩] তিনি চার খণ্ডে ১৯১৬ সালে "রাশিয়ার মাছ" বইটি প্রকাশ করেন। ১৯৪৯ সালে "সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্বাদু পানির মাছ" শীর্ষক চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং এজন্য তিনি স্তালিন পুরস্কার লাভ করেন। [৪] তিনি ল্যাম্প্রে ও সালমনের প্রতীকী সম্পর্ক নিরূপণ করেন। ৬০টি প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নামে তাঁর নামের অংশ বিদ্যমান।

২০০১ সালে ট্রান্সনিসত্রিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাঁর সম্মানে একটি রূপার মুদ্রা ইস্যু করে। [৫]

নোমোজেনেসিস[সম্পাদনা]

বার্গ নোমোজেনেসিস তত্ত্বের জন্য সুপরিচিত। ১৯২২ সালে তাঁর প্রকাশিত "প্রাকৃতিক আইন ও নোমোজেনেসিস" বইটি রাশিয়ায় প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে এর প্রথম ইংরেজি সংস্করণ ও ১৯৬৯ সালে এর দ্বিতীয় ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বইগুলোতে তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং এজন্য তিনি অনেকগুলো পরীক্ষামূলক তথ্য উপস্থাপন করেছেন। [৬]

প্রত্নতত্ত্ব, প্রাণিবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের বহুবিধ তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,বিবর্তন কোনো বিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া নয়। তিনি তাঁর লেখায় প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরেন।[৭]

বার্গ দাবি করেন, প্রজাতির বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে যে ভিন্নতা দেখা যায়,তা কতগুলো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিয়ামক দ্বারা সীমাবদ্ধ । বৈশিষ্ট্যের এ সীমাবদ্ধতা প্রাকৃতিক নির্বাচনের অস্তিত্ব খারিজ করে দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোও এর সপক্ষে প্রমাণ দেয় । বার্গ ডারউইন ও ল্যামার্কের মতবাদকে ভ্রান্ত আখ্যা দেন ও এদের বিকল্প হিসেবে পরিবৃত্তিক পরিবর্তনের ধারণা উত্থাপন করেন।

প্রত্নতাত্ত্বিক উইলহেলম ওয়াগেন দ্বারা উদ্বুদ্ধ বার্গ এ পরিবৃত্তিক বিবর্তনের নাম দেন "ওয়াগেন বিবর্তন।"

জে বি এস হালডেন বইটিকে ডারউইনের মতবাদের বিরুদ্ধে রচিত শ্রেষ্ঠ পুস্তক হিসেবে অভিহিত করেন।

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

বার্গ ১৯১০ সালে পলিনা আব্রামোভনা কোতলোভকারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।পলিনা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করলে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ লেভকে দুই সন্তানের অভিভাবকত্ব দেয়। লেভের মা তাদের( সাইমন ও রাইসা,জন্ম যথাক্রমে ১৯১১ ও ১৯১৩ সালে) বড় করে তুলেন। বার্গ ১৯২৩ সালে মারিয়া মিখাইলোভনা ইভানোভাকে বিয়ে করেন। মারিয়ার বাবা জাহাজের কমান্ডার ছিলেন। [২]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

অ্যান্টার্কটিকার বার্গ পর্বত[৮], ভার্না জেমলিয়া ও জর্জা ভার্নায় অবস্থিত "বার্গ শৃঙ্গের"নামকরণ লেভ বার্গের নামানুসারে করা হয়।[৯]

রাশিয়ান ভূগোল সংগঠন তাঁকে সেমেনভ-তিয়ান-শানস্কি স্বর্ণপদক আজীবন সম্মাননা হিসেবে প্রদান কররে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]