লুসিলা গামেরো ডে মেডিনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লুসিলা গামেরো ডে মেডিনা
জন্ম(১৮৭৩-০৬-১২)১২ জুন ১৮৭৩
মৃত্যু২৩ জানুয়ারি ১৯৬৪(1964-01-23) (বয়স ৯০)
দানলি, হন্ডুরাস
জাতীয়তাহন্ডুরীয়
অন্যান্য নামলুসিলা গামেরো মনকাদা
পেশাচিকিৎসক, লেখিকা, নারীবাদী
পরিচিতির কারণহন্ডুরাসে প্রথম উপন্যাস প্রকাশকারী

লুসিলা গামেরো ডে মেডিনা (স্পেনীয়: Lucila Gamero de Medina; জন্ম: ১২ জুন, ১৮৭৩ - মৃত্যু: ২৩ জানুয়ারি, ১৯৬৪) দানলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা আবেগীয়ধর্মী হন্ডুরীয় প্র্রমিলা ঔপন্যাসিক ছিলেন। এছাড়াও, তিনি চিকিৎসক, নারীবাদী ও ভোটাধিকার কর্মী ছিলেন। হন্ডুরাসের প্রথম মহিলা হিসেবে সাহিত্যকর্মে মনোনিবেশ ঘটান এবং মধ্য আমেরিকায় উপন্যাস প্রকাশ করেন।

তিনি চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ থেকে তাকে মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে ডিপ্লোমা লাভে বাঁধা প্রদান করা হয়েছিল। তিনি একটি হাসপাতালের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ও নিজের ডিপার্টমেন্ট এলাকায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। নিজস্ব চিকিৎসাকর্ম এবং সাহিত্যচর্চা ছাড়াও গামেরো সক্রিয় নারীবাদী ও ভোটাধিকার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণসহ ‘কমিতে ফেমেনিনো হন্ডুরেনো’ প্রতিষ্ঠায় সবিশেষ অবদান রাখেন তিনি।

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

লুসিলা গামেরো মনকাদা ১২ জুন, ১৮৭৩ তারিখে হন্ডুরাসের দানলি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ম্যানুয়েল গামেরো ও কামিলা মনকাদা তার পিতা-মাতা ছিলেন।[১] কলেজিও লা এডুকেসিওনে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।[২] এরপর বিদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করতে চান তিনি। তবে তার এ ইচ্ছা বাঁধার মুখোমুখি হয়। চিকিৎসক বাবা তাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষা দেন ও তিনি চিকিৎসক এবং ফার্মাসিস্ট - উভয় দায়িত্বই পালন করতে থাকেন।[৩] তিনি তার পিতার ক্লিনিকের দায়িত্ব নেন ও পারিবারিক ফার্মেসী পরিচালনা করতে থাকেন।[৪] পরবর্তীকালে চিকিৎসা অনুষদের ডিন ড. ম্যানুয়েল জি. জানিগার কাছ থেকে মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে ডিপ্লোমা লাভ করেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯২৪ সালে তিনি দানলির হসপিটাল ডে সাংগ্রের প্রধান হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৩০ সাল থেকে এল পারাইসো ডিপার্টমেন্টে স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।[২]

শিশু অবস্থা থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন।[৫] ১৮৯১ সালের শুরু থেকে ‘লা জুভেন্তাদ হন্ডুরেনা’ সাময়িকীতে ঐ লেখাগুলো প্রকাশিত হতে থাকে।[১] ‘আমালিয়া মন্তিয়েল’ শিরোনামে প্রথম স্বার্থক উপন্যাস রচনায় করেন।[৩] এ উপন্যাসটি যে-কোন হন্ডুরীয় মহিলাদের মধ্যে প্রথম উপন্যাস ছিল যা ১৮৯২ সালে প্রকাশিত হয়।[১] ফ্রয়ল্যান তার্কিওসের পরিচালনায় সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘এল পেনসামিয়েন্তো’য় উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে।[৪] ১৮৯৩ সালে দ্বিতীয় উপন্যাস ‘আদ্রিয়ানা ও মাগারিটা’ প্রকাশ করেন যা হন্ডুরাসে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ছিল।[১] ১৯৪৯ সালে নিজ আত্মজীবনী লিখেন।[৫]

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের শেষদিককার রোমান্টিক সময়কালে তার সাহিত্যকর্ম উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভালোবাসা ও পরিবার বিষয়কে প্রধান উপজীব্য করে তার বর্ণনাধর্মী উপন্যাসের অধিকাংশ স্থান দখল করে আছে। তবে ‘ব্লাঙ্কা অলমেদো’ তার সেরা জনপ্রিয় উপন্যাস ছিল। এক ভালোবাসার নিটোল চিত্রে গড়া এ উপন্যাসে তিনি সরাসরি হন্ডুরীয় গীর্জার সমালোচনায় মুখরিত হন। ঐ সময়ে রাজনৈতিক চিন্তাধারা গঠিত হতে থাকে ও হন্ডুরীয় সাহিত্যে অভূতপূর্ব ঘটনা হিসেবে এটি স্বীকৃতি পায়। ব্লাঙ্কা অলমেদো বিংশ শতাব্দীর শুরুতে হন্ডুরীয় উপন্যাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়রূপে বিবেচিত হয়।[৬] গামেরো ডে মেডিনার উপন্যাসগুলো হন্ডুরাসের উচ্চ বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়। তাকে উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে মধ্য আমেরিকার অন্যতম সেরা সাহিত্য প্রতিভারূপে আখ্যায়িত করা হয়। হন্ডুরান ল্যাঙ্গুয়েজ একাডেমিসহ মধ্য আমেরিকার অগণিত সাহিত্য সংস্থার সদস্যরূপে মনোনয়ন দেয়া হয়।

বিশিষ্ট সমালোচক ও লেখক লুইস ম্যারিন ওতেরো তাকে ‘হন্ডুরীয় পণ্ডিত গ্র্যান্ড ডেম’ নামে অভিহিত করেছেন।

ভোটাধিকার[সম্পাদনা]

হন্ডুরীয় মহিলাদের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গামেরো ডে মেডিনা আন্দোলন করে গেছেন।[৫] ১৯২৪ সালে দ্বিতীয় প্যান-আমেরিকান মহিলা সম্মেলনে হন্ডুরাসের প্রতিভারূপে মনোনীত হন।[২] ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একদল ভোটাধিকার কর্মী অলিম্পিয়া ভারেলা ওয়াই ভারেলাকে সভাপতি এবং গামেরো ডে মেডিনা, আর্জেন্টিনা ডায়াজ লোজানোপাকা নাভাসের ন্যায় বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে লা সোসাইদাদ ফেমেনিনা পানামেরিকানা আয়োজন করেন। তারা ৫ মার্চ, ১৯৪৭ তারিখে আন্তঃ-আমেরিকান মহিলা কমিশনের অনুমোদনক্রমে কমিতে ফেমেনিনো হন্ডুরেনো গঠন করেন। এ কমিটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মহিলাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। তারা ‘মুজের আমেরিকানা’ সাময়িকী প্রকাশ করেন যা নাভাস আটলান্টিদা ও ১৯৪৪ সালে এল প্রোগ্রেসোয় ক্রিস্টিনা হার্নান্দেজ ডে গোমেজের সাময়িকী আতেনিয়ার পর দেশের তৃতীয় নারীবাদী সাময়িকী ছিল।[৭]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিতা লুসিলা গামেরো ডে মেডিনা, গিলবার্তো মেডিনা’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের আইদা কোরা মেডিনা ও গিলবার্তো গুস্তাভো মেডিনা নামীয় দুই সন্তান ছিল। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে দানলিতে তার দেহাবসান ঘটে।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gaitán, Nery Alexis (১৮ মে ২০১৪)। "Lucila Gamero de Medina en su condición de libre-pensadora" (Spanish ভাষায়)। Tegucigalpa, Honduras: La Tribuna। ২০ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  2. Who's Who in Latin America: A Biographical Dictionary of the Outstanding Living Men and Women of Spanish America and Brazil। Stanford, California: Stanford University Press। ১৯৩৫। পৃষ্ঠা 244। আইএসবিএন 978-0-8047-2315-2। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  3. Alvarenga, Carlos (৯ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Año Académico 2014 Lucila Gamero de Medina: Más Allá de Blanca Olmedo" (Spanish ভাষায়)। Tegucigalpa, Honduras: Presencia Universitaria। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Honduras Escribe নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. Gamero, Roberto (১২ জুন ১৯৭৩)। "Biografía de Lucila Gamero de Medina"Nacer en Honduras (Spanish ভাষায়)। Danli, Honduras: Nacer en Honduras। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  6. Funes, José Antonio। "Libros clave de la narrativa hondureña (I):Blanca Olmedo" (Spanish ভাষায়)। Instituto Cervantes। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৩, ২০০৯ 
  7. Villars, Rina (২০০১)। Para la casa más que para el mundo: sufragismo y feminismo en la historia de Honduras (Spanish ভাষায়) (1 সংস্করণ)। Tegucigalpa: Ed. Guaymuras। পৃষ্ঠা 312–313। আইএসবিএন 978-99926-15-77-5 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]