রেবেকা মাত্তে বেল্লো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রেবেকা মাত্তে বেল্লো
জন্ম(১৮৭৫-১০-২৯)২৯ অক্টোবর ১৮৭৫
মৃত্যু১৫ মে ১৯২৯(1929-05-15) (বয়স ৫৩)
জাতীয়তাচিলীয়
পরিচিতির কারণভাস্কর্য

রেবেকা মাত্তে বেল্লো (স্পেনীয়: Rebeca Matte Bello; জন্ম: ২৯ অক্টোবর, ১৮৭৫ - মৃত্যু: ১৫ মে, ১৯২৯) সান্তিয়াগোতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত চিলীয় প্রমিলা ভাস্কর ছিলেন।[২] তার ভাস্কর্য শিল্পকর্মগুলো চিলীয় জাতীয় জাদুঘরের চারুকলা অনুষদে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও তার অন্যতম ভাস্কর্য ইকারাস ও দেইদালুস জাদুঘরের বাইরে সংরক্ষিত রয়েছে।[৩]

চিলির প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ভাস্কর্যকলার প্রতিষ্ঠান গড়েন তিনি। স্বাধীন শিল্পীস্বত্ত্বার অধিকারী হিসেবে কাজের প্রতি নান্দনিক ধারণা, বিষয়ের মান এবং উন্নতমানের শিল্প উপকরণ ব্যবহার করে শিল্পকলায় প্রভুত্ব কায়েম করেন। মহান মানবতাবাদী আন্দ্রেজ বেল্লো লোপেজ তার প্রপিতামহ ছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

রেবেকা মাত্তে পরিবারের একমাত্র কন্যা ছিলেন। বাবা অগাস্তো মাত্তে চিলির রাষ্ট্রদূত, রাজনীতিবিদ ও চিলীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। মায়ের নাম ছিল রেবেকা রেয়েজ। প্রসবকালীন তার মার স্থায়ীভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, যা থেকে তিনি কখনোই আরোগ্য লাভ করতে পারেননি। এরফলে ছোট্ট রেবেকাকে জুয়ান বেল্লো ডানের বিধবা পত্নী ও তার মাতামহী রোজারিও রেয়েস গোমেজের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সান্তিয়াগোতে অবস্থানকালে দাদীমার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে ঐ সময়ে তিনি চিলির অনেক বুদ্ধিজীবীদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হন। তন্মধ্যে হোস ভিক্টোরিনো লাস্তারিয়া, গ্যাব্রিয়েল জর্দান আমুনাইতেগুল এবং আলবার্তো ব্লেস্ট গানা অন্যতম। তার বাবা প্যারিসে চলে যেতে চেয়েছিলেন ও তিনি ইউরোপে পড়াশোনার আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন।

১৯১৩ সালে তার পিতা বার্লিনে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে কন্যা রেবেকা কর্তৃক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় ও তার স্ত্রীর পাশে সমাহিত করা হয়।

ইউরোপে গিওলিও মন্তেভার্দের তত্ত্বাবধানে ইতালির রোমে প্রথম অধ্যয়ন করেন। এরপর প্যারিসে আর্নেস্ট দুবোইস ও ডেনিস পুখের অধীনে জুলিয়েন একাডেমিতে ছিলেন। এখানেই তিনি তার সেরা সময় অতিবাহিত করেন ও তার কর্মে নাটকীয় পরিবর্তন সাধন করেন। তরুণ চিত্রশিল্পী হিসেবে ওগুস্ত রদ্যাঁ'র কাজে ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

স্পেক্ট্রা দে লা গুইরে।

১৯০০ ও ১৯০১ সালে ইউরোপ এবং চিলি থেকে তিনি তার প্রথম পদক লাভ করেন। ১৯০৮ সালে রেবেকা মাত্তে ভাস্কর্যের কাজ পুনরায় শুরু করেন। মার্বেল ও ব্রোঞ্জের সাহায্যে তৈরীকৃত ঐ সকল কাজগুলোয় তার পরিপক্কতা ও কৌশলের অপূর্ব সন্নিবেশ ঘটে। ১৯০৮ সালে চিলীয় সরকার হেগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের জন্য একটি ভাস্কর্য নির্মাণের আদেশ পায়।[২] ১৯১৪ সালে ঐ ভাস্কর্যটি 'দি ওয়ার' নামে পরিচিতি ছিল।[২] মাত্তের কাছ থেকে চিলীয় সরকার আরও অনেক কাজে সহায়তা পায়। ১৯১৪ সালে হিরোজ অব কনসেপসিওন শিরোনামে ভাস্কর্য তৈরি করেন যা সান্তিয়াগোতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।[২]

ইকারাস ও দাইদালাস (১৯২২)

চিলিতে স্বল্পকাল অবস্থান করে ফ্লোরেন্সে বসতি স্থাপন করেন। তার সমগ্র কর্মজীবনে সরাসরি খোদাইকৃত মার্বেল এবং ব্রোঞ্জের ঢালাইয়ের কাজ করেছেন। ১৯১৮ সালে আকাদেমিয়া দাই বেল্লে আর্তি ফারেঞ্জে শিক্ষকতা শুরু করেন।[২] একই সালে ফ্লোরেন্স একাডেমি অব ফাইন আর্টস কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানসূচক অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করে সবিশেষ সম্মানিত করেন। এ পদে তার পূর্বে কোন বিদেশীকে তথা কোন মহিলাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

পেদ্রো ফেলিপ লারেইন ইনিগুয়েজে নামীয় কূটনীতিবিদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।[২] তাদের সংসারে 'লিলি' নামে পরিচিত 'ইনিগুয়েজ মাত্তে' নাম্নী এক কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এরফলে তিনি বেশ কয়েকবছর কর্মশালায় অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। কিন্তু ১৯২৬ সালে লিলি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে সুইস আল্পসে মৃত্যুবরণ করলে তিনি একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন। এরপর থেকে তিনি আর কোন ভাস্কর্য নির্মাণ করেননি।[২] ও তার কন্যাকে উৎসর্গ করে দাতব্য কাজের দিকে নজর দেন। ১৪ মে, ১৯২৯ তারিখে মাত্তের দেহাবসান ঘটে।

মৃত্যুর পর তার স্বামী 'ইকারাস ও দাইদালাস 'ভাস্কর্যটি চিলীয় জাতীয় জাদুঘরে দান করেন। চিলি সরকার উপহারস্বরূপ ব্রাজিলকে দিয়ে দেয় ও রিও দি জেনেরিওতে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। ১৯২২ সালে চিলির শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাত্তের নামে পুরস্কার প্রবর্তন করে।

উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম[সম্পাদনা]

  • হোরাসিও, ১৯১০, চিলীয় ফাইন আর্টস জাতীয় যাদুঘর
  • দি ইকো, ১৯১২, চিলীয় ফাইন আর্টস জাতীয় যাদুঘর
  • ইকারাস ও দাইদালাস, ১৯২২, চিলীয় ফাইন আর্টস জাতীয় যাদুঘর[৩]
  • লে স্পেক্ট্রে দে লা গুইরে, ১৯০৮-এ আদেশপ্রাপ্তি, ১৯১৪-এ প্রতিস্থাপন, পিস প্যালেস গার্ডেন, দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস (পিস প্যালেসের জন্য চিলীয় সরকারের উপহার)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Tim Burford (১ জুন ২০০৫)। Chile: The Bradt Travel Guide। Bradt Travel Guides। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 000-0-00000-000-0 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১২ 
  2. "Matte Bello, Rebecca (1875 - 1929)"Personales de nuestra historia। Nuestro Chile। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৭, ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (In Spanish)
  3. "Arts and Literature in Chile"। Chile Culture। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৭, ২০১২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

চিত্রমালা[সম্পাদনা]