মারিয়া রাইশে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মারিয়া রাইশে
১৯১০ সালে মারিয়া রাইশে
জন্ম১৫ই মে ১৯০৩
ড্রেসডেন, জার্মানি
মৃত্যু৮ই জুন ১৯৯৮ (বয়স ৯৫)
লিমা
জাতীয়তাজার্মান - পেরুভীয় 
মাতৃশিক্ষায়তনড্রেসডেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 
পরিচিতির কারণনাজকা রেখাসমূহ

মারিয়া রাইশে (১৫ই মে ১৯০৩- ৮ই জুন ১৯৯৮) একজন জার্মান -পেরুভীয় গণিতবিদ, নৃতত্ত্ববিদ এবং প্রযুক্তি অনুবাদক। তিনি নাজকা রেখাসমূহ নিয়ে ১৯৪০ সালে গবেষণা শুরু করেন। এই অঞ্চলের সংরক্ষণ ও পরিচয় তুুুলে ধরতে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। নিজের অর্থায়নে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তিনি জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তুুুুলেন। তাই সরকার তাকে "রেখাসমূূূূহের মহীয়সী" উপাধিতে ভূষিত করে।[১] ১৯৯৫ সালে নাজকা রেখাসমূহ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[২]

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

মারিয়া রাইশে ১৯০৩ সালের ১৫ই মে জার্মানির ড্রেসডেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ড্রেসডেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধারে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বিদেশী ভাষায় পড়ালেখা করেন।[৩] তিনি পাঁচ ধরনের ভাষায় কথা বলতে পারতেন। 

১৯৩২ সালে মারিয়া রাইশে পেরুতে কর্মরত একজন জার্মান দূতের সন্তানদের শিক্ষক এবং দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত হন। ১৯৩৪ সালে পেরুতে থাকা অবস্থাতেই দূর্ঘটনাক্রমে ফণীমনসায় আঘাত পেয়ে গ্যাংরিনে একটি আঙ্গুল হারান। ১৯৩৯ সালে রাইশে লিমাতে একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। একই সাথে তিনি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের অনুবাদের কাজ চালিয়ে যান।[৪] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি পেরুতেই ছিলেন। সেই সময়ে নাজকা মরভূমির উপর দিয়ে উড্ডয়নকালে তিনি নাজকা রেখাসমূহ আবিষ্কার করেন।[৫]

নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে কর্ম[সম্পাদনা]

১৯৪০ সালে মারিয়া রাইশে মার্কিন ইতিহাসবিদ পল কুওস্কের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পল ব্রুকলিনের লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ছিলেন।

তিনি দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার অবস্থান নিয়ে গবেষণা করেন।  মারিয়া ও পল একসাথে মানচিত্রের রেখার সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় ঘটনার সম্পর্ক খোঁজার কাজে নিয়োজিত হন। পরবর্তীতে রাইশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মকরক্রান্তি রেখা পর্যবেক্ষণ করেন। তার এই তত্ত্ব জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় দিনপঞ্জিতে বড় ধরনের মাত্রা আনে।  ১৯৪৬ সালের দিকে রাইশে নাজকা রেখাসমূহের মানচিত্র আঁকা শুরু করেন। তিনি সেখানে ১৮ রকমের ভিন্ন পশুপাখির অস্তিত্ব ছিল বলে সন্ধান পান। ১৯৪৮ সালে পল চলে গেলেও মারিয়া একাই নিজের কাজ চালিয়ে যান। নিজের গণিত বিষয়ক জ্ঞান দিয়ে তিনি নাজকায় কীভাবে এত বিশাল আকারের ফিগার তৈরি হল তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি তত্ত্ব প্রদান করেন যে, নাজকা রেখাসমূহ সৃষ্টিকারীরা এই রেখাসমূহ সৌর দিনপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার করতো। এছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় চক্র পর্যবেক্ষণে এই রেখাসমূহ ব্যবহার হত।[৪] 

যেহেতু এই রেখাসমূহ উপর থেকে ভালোভাবে দেখা যেত, তাই তিনি নাজকা রেখাসমূহের ছবির জন্য পেরুর বিমান বাহিনীর সাহায্য নেন। ১৯৪৯ সালে মারিয়া রাইশে নিজের গবেষণা নিয়ে "মরুভূমির রহস্য" নামক একটি বই প্রকাশ করেন। ইতিপূর্বে গবেষকেরা এই রেখাসমূহের সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় কোন সম্পর্ক খুঁজে পাননি। কিন্তু মারিয়া রাইশে ও পল কুওস্কের কাজ এক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মেচন করে। অনেকেই মনে করেন "ঈশ্বরের নিকট থেকে পানি ভিক্ষায়" এই রেখাসমূহ ধর্মীয় কারণেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৬]

রাইশে তার বই বিক্রির অর্থ নাজকা মরুভূমি সংরক্ষণে ব্যয় করেন। তিনি নিজস্ব অর্থে পাহারাদার নিয়োগ করেন। দেশটির সরকার প্যান আমেরিকান মহাসড়ক নির্মানে একটি রেখা ক্ষতিগ্রস্থ করলে তিনি বিভিন্ন জায়গায় এই জায়গাটির গুরুত্ব প্রচারে তদবির করেন। পর্যটকেরা যেন নাজকা রেখাসমূহের কোন ক্ষতি না করেই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন সেজন্য নিজস্ব অর্থায়নেই তিনি উক্ত মহাসড়কের পাশে একটি টাওয়ার নির্মান করেন। ১৯৭৭ সালে রাইশে দক্ষিণ আমেরিকার পর্যবেক্ষকদল নামক একটি অলাভজনক ভ্রমণ, বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক সঙ্গঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তিনি এর উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ছিলেন।[৭]

নাজকায় মারিয়া রাইশের কবরস্থান

বয়সের সাথে সাথে রাইশের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। এছাড়াও তিনি পারকিনসন রোগে ভোগ ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ৮ই জুন জরায়ুমূখী ক্যান্সারে লিমায় বিমানবাহিনীর হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় নাজকার কাছেই নিজের বোনের সাথে তাকে সমাহিত করা হয়। 

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

রাইশের জীবন সঙ্গী ছিলেন এমি মেরেডিথ। এমি রাইশের কাজে বিভিন্ন সময় সাহায্য করেছিলেন।[৮]

ঋণস্বীকার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • ১৯৯৫ সালে নাজকা রেখাসমূহ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।
  • মারিয়া রাইশে জাদুঘর, নাজকা, পেরু
    সমাকৃত্যে যথাযথ মর্যাদার পাশাপাশি রাইশের প্রাক্তন বাড়িটিকে জাদুঘর করা হয়।
  • নাজকায় অবস্থিত মারিয়া রাইশে সেন্টারে তার কাজ ও জীবন নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এই সেন্টার নাজকা রেখাসমূহ নিয়ে করা কাজে আর্থিক সহায়তা দেয়।
  • নাজকা বিমানবন্দর তার নামেই নাজকা-মারিয়া রাইশে নয়ম্যান বিমানবন্দর নামকরণ করা হয়েছে। [৯]
  • মারিয়া রাইশের নামে পেরুতে অন্তত ৫০টি বিদ্যালয়, ফাউন্ডেশন ও এ্যাসোসিয়েশন  রয়েছে।

তথ্যসূত্র [সম্পাদনা]

  1. Jr, Robert McG Thomas (১৯৯৮-০৬-১৫)। "Maria Reiche, 95, Keeper of an Ancient Peruvian Puzzle, Dies"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৩ 
  2. Centre, UNESCO World Heritage। "Lines and Geoglyphs of Nasca and Palpa"whc.unesco.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৫ 
  3. "Indianer-Welt: Nazca - Biographie: Maria Reiche"www.indianer-welt.de। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৩ 
  4. Jr, Robert McG Thomas (১৯৯৮-০৬-১৫)। "Maria Reiche, 95, Keeper of an Ancient Peruvian Puzzle, Dies"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৬ 
  5. "Maria and the Stars of Nazca"www.nazcaresources.com। ২০১৪-০৬-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৩ 
  6. "The Nazca Lines", Peru Cultural Society, accessed 27 January 2012
  7. "Bean Sprouts New Theory" (পিডিএফ)। ১৫ মে ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩  South American Explorer, January 1983
  8. "FemBio - Frauen-Biographieforschung: Maria Reiche"www.fembio.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৫ 
  9. "NZC - Nazca [Nasca - María Reiche Neuman Airport], ICA, PE - Airport - Great Circle Mapper"www.gcmap.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]