হুগলি রিভারফ্রন্ট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কলকাতা রিভারফ্রন্ট প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ

হুগলী রিভারফ্রন্ট হল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম মহানগর কলকাতা এবং কলকাতার যমজ শহর হাওড়ার মাঝে প্রবাহিত হুগলী নদীর, সৌন্দর্য্যায়িত দুটি তীরে। হুগলী নদীর পূর্ব তীরে কলকাতায় এবং পশ্চিমে হাওড়া শহর। নদীটির পূর্ব তীরে ২০১১ সালে প্রথম সৌন্দর্যমণ্ডিতকরণ শুরু হয় এবং ২০১২ সালে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

হুগলী নদীর তীরে (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) ১৭ তম -১৯ তম শতাব্দীতে ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগিজ, ডাচ এবং ড্যানিশদের ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। পরে, বড় বড় পাটকল তৈরি করা হয় এবং শিল্পায়ন শুরু হয়। বনওদরের কার্যকলাপ হ্রাসের সঙ্গে, পাট শিল্পের পাশাপাশি রাজনৈতিক গতিবিদ্যা পরিবর্তন হিসাবে, হুগলী নদীর প্রবাহ আরও উপেক্ষিত হতে শুরু করে। বড় বড় গুদাম, মন্দির, ঘাট, এবং নদীর মুখোমুখি নদীর তীরের পুনঃস্থাপন প্রয়োজন। উপরন্তু, নতুন উন্নয়ন এলাকাটির পুনরুজ্জীবনের জন্য জরুরি । এই উন্নয়নের কারণ ঐতিহ্য ভিত্তিক।ঐতিহ্যকে সঙ্গে রেখে নতুনের আগমন ঘঠানো হয়েছে নদী তীরে।[২]

হুগলী নদী তীরের প্রথম সৌন্দর্যবর্ধক অংশ হল নদীর পূর্ব তীরের নির্মিত মিলেনিয়াম পার্ক। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলেপমেন্ট অথোরিটির (কে.এম.ডি. এ.) উদ্যোগে নতুন শতকের উপহার হিসাবে স্ট্যান্ড রোড ও হুগলী নদীর মাঝে ১৯৯৯ সালে ২৬ ডিসেম্বর এটির উদ্বোধন হয় । এই উদ্যানটি হল গঙ্গা তীরের সৌন্দর্য্যবর্ধন প্রকল্পের এখনহুগলী রিভারফ্রন্টের প্রথম পর্ব।এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার পার্কের সম্প্রসারণ করেছে। সাধারণভাবে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় হুগলী নদীর তীরে লন্ডনের টেমস নদীর আদলে রিভারফ্রন্ট চালু করার প্রচেষ্টা শুরু করেন ২০১১ সালে। প্রথম পর্যায়ে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে কদমতলা ঘাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার নদী তীরে সৌন্দর্যবর্ধকের ঘোষণা করা হয়।হুগলী নদীর তীর কলকাতার বিনোদনমূলক স্থান। হুগলী রিভারফ্রন্ট-এর প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতার সবচেয়ে পুরনো দর্শনীয় স্থানগুলির একটি।[৩][৪][৫] সপ্তাহান্তে অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। নদীর গা ঘেঁষে রাস্তায় খাবারের দোকান রয়েছে। ঘাটের কাছে চল্লিশ বছরের পুরনো আইসক্রিম ও ফাস্ট ফুড বিক্রির একটি কেন্দ্র আছে। ভ্রমণ করতে অনেক মানুষ আসেন। তরুণদের মধ্যে এই কেন্দ্রটি বেশ জনপ্রিয়। এখান থেকে অনেকে নদীতে নৌকায় প্রমোদভ্রমণে যান। ২০১২ সালের ২৪ মে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে বাজে কদমতলা ঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পথে সৌন্দর্যায়িত নদীতীরের উদ্বোধন করা হয়েছে।[৬] এই অংশটি আলোকমালা, বাগান, প্রমোদপথ, ফোয়ারা দিয়ে সাজানো হয়েছে এবং এই অংশের ঘাটগুলির সংস্কার করা হয়েছে।

হুগলী রিভারফ্রন্টের অংশ হিসাবে রাত্রে প্রিন্সেপ ঘাট

বলিউডে নির্মিত পরিণীতা ছবির একটি গানের শ্যুটিং প্রিন্সেপ ঘাটে হয়েছে।[৫]

রিভারফ্রন্ট[সম্পাদনা]

কলকাতার সুন্দর্যমন্ডীত হুগলী নদীর তীর

সৌন্দর্যবর্ধকের লক্ষ্যে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে জাজেস কোর্ট ঘাট হয়ে বাজে কদমতলা ঘাট (বাবুঘাট) পর্যন্ত নদীর পাড়ে বসানো হয়েছে টাইলস। গোটা এলাকায় দেওয়া হয়েছে আলোর রোশনাই। নদীর তীরে বসানো হয়েছে বিশেষ ধরনের গাছ। লাগানো হয়ে ছে কেরলের নারকেল গাছ। নদীর পাড়ে ঘাসের লন করার জন্য বসানো হয়েছে লন ট্রি। এই দুই কিলোমিটার সাজানো হয়েছে আলোর ফোয়ারা দিয়ে। বসানো হয়েছে ১২৪টি আলোর ঝরনা। এই দুই কিলোমিটার পথে থাকা পাঁচটি ঘাটও সাজানো হয়েছে। ভ্রমণার্থীদের নদীর পাড়ে বেড়ানোর সময় মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ধরনের বেঞ্চ। এই বেঞ্চে বসে ভ্রমণার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন নদীর সৌন্দর্য। দেখতে পারবেন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কলকাতা ও হাওড়া শহরের সংযোগকারী রবীন্দ্র সেতু (হাওড়া ব্রিজ হিসেবে পরিচিত) এবং বিদ্যাসাগর সেতু। এই নদীর তীরজুড়ে সেতার ও বেহালার সুর শোনারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজবে এই সুর গোটা নদীর তীরজুড়ে। এই লক্ষ্যে গোটা এলাকায় বসানো হয়েছে ৯৬টি মিউজিক স্ট্যান্ড। হুগলী নদীর পশ্চিম তীরে হাওড়া শহরেরও করা হয়েছে নদী তীরের সুন্দর্যায়ন। প্রথমে এই প্রকল্পে ২ কিলোমিটার নদী তীরে শুরু হয়েছে। বর্তমানে হাওড়া শহরেও নদীতীরের বা রিভারফ্রন্ট সুন্দর্যায়ন কিছুটা সম্পূর্ণ হয়েছে। এখনও বাকি অংশের কাজ চলছে।

সম্মেলন[সম্পাদনা]

উদ্দেশ্য
ইউনেস্কোর সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল:

  • হুগলী রিভারফ্রন্টে বিদ্যমান / পরিকল্পিত কর্মের স্টক নিন এবং কী সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়গুলি বোঝেন;
  • নদী প্রবাহ / বন্দরের পুনরুজ্জীবনের সফল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গবেষণা পরীক্ষা;
  • হুগলী রিভারফ্রন্টের ঐতিহ্যবাহী সম্পত্তির পর্যালোচনা এবং ঐতিহ্য-ভিত্তিক পুনর্গঠন উন্নয়নের সম্ভাবনা সন্ধান করা।

নেদারল্যান্ডস এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংস্থা (আরসিইউ) হুগলী রিভারফ্রন্টের সমন্বিত সংরক্ষণ ও উন্নয়নে জড়িত সিদ্ধান্ত নির্মাতাদের, ডেভেলপার এবং ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য উপযোগী হতে পারে, যা দেখানো (ডাচ) সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সম্মেলনে অবদান রাখে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষার্থীদের কর্মশালার লক্ষ্য ছিল ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয় কেবল ভবন সংরক্ষণের বিষয়ে, তবে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আড়াআড়ি সম্পর্কেও।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "লন্ডোনের ছোঁয়া কলকাতায়"প্রথম আলো। ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. "Integrated_heritage-based_development_of_the_Hooghly_Riverfront"culturalheritageconnections.org। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  3. "Ghats in Kolkata - Kolkata Ghats - Information about Kolkata Ghats - Kolkata"। Kolkata.clickindia.com। ২০১২-০৪-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৩ 
  4. "Princep Ghat Kolkata"। Indfy.com। ২০১২-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৩ 
  5. "Princep Ghat – Kolkata"। Where Was It Shot। ২০১০-১১-১০। ২০১২-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-০৩ 
  6. "Swanky riverfront opens to public"Times of India। ২৫ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১২