সর্বন

স্থানাঙ্ক: ৪৮°৫০′৫৫″ উত্তর ২°২০′৩৬″ পূর্ব / ৪৮.৮৪৮৬১° উত্তর ২.৩৪৩৩৩° পূর্ব / 48.84861; 2.34333
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সরবোন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সাঁত-উ্যরস্যুল গির্জা
সর্বনের প্রবেশদ্বারের উপরে লেখা শিরোনাম
সর্বন ভবনের সামনের অংশ
সর্বন চত্বর
সর্বন অট্টালিকার বাইরের অংশ

সর্বন ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত একটি ভবন। এটি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ঐতিহাসিক একটি ভবন। ভববটি প্যারিসের "কার্তিয়ে লাতাঁ" নামক ঐতিহাসিক এলাকার একটি অংশ।

বর্তমানে এটিতে পঁতেও-সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বন নুভেল বিশ্ববিদ্যালয়, পারি-সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়, প্যারিস দেকার্ত বিশ্ববিদ্যালয়, একল নাসিওনাল দে শার্ত্র (জাতীয় চার্টার বিদ্যালয়), একল প্রাতিক দে প্রোভঁস এত্যুদ (উচ্চশিক্ষার কারিগরী বিদ্যালয়) মত বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কক্ষ রয়েছে।

১৮৮৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বন চ্যাপেলটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।[১] ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ সালে গ্র্যান্ড অ্যাম্ফিথিয়েটার (অন্যান্য কক্ষ ও লাউঞ্জগুলো) এবং সকল ভবন (সামনের অংশগুলি এবং ছাদ) ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।[১]

সর্বন কলেজ[সম্পাদনা]

কলেজ দ্য সর্বন-এর নামকরণ করা হয়েছে ফরাসি ধর্মতত্ত্ববিদ রোবের দ্য সর্বন-এর নামানুসারে। তিনি ১২৫৭ সালে নিজ নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত ধর্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে কলেজটি স্থাপন করেন তিনি, যার মূল মন্ত্র ছিল: "একটি ভাল সমাজে একত্রিতভাবে, নৈতিকভাবে এবং কায়মনোবাক্যে বসবাস করার জন্য"। মধ্যযুগে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কলেজগুলোর মধ্যে সর্বন ছিল প্রথম দিকের।[২][৩] বিশ্ববিদ্যালয়টি কলেজটির চেয়ে প্রায় এক শতাব্দী পুরনো। ১২ শতকের শেষ নাগাদ অনেক ছোটখাট কলেজ প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৬ শতকে সর্বন, ক্যাথলিকপ্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে যে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম সৃষ্টি হয়েছিল তার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাথলিক ভাবধারার প্রতি কঠোরভাবে রক্ষণশীল মনোভাব পালন করত। রাজা প্রথম ফ্রঁসিস ফরাসি প্রতিবাদী মণ্ডলীর খ্রিস্টানদের প্রতি আপেক্ষিক সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এর ফলে কলেজ এবং রাজার মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিবাদী মণ্ডলীর খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। সেই সময় সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময়টা রাজার সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল কলেজটি।

ফরাসি বিপ্লব এর সময় কলেজটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৮০৮ সালে নেপোলিয়ান কলেজটি খুলে দিলেও ১৮৮২ সালে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। ফরাসি বিপ্লবের আগ পর্যন্ত প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় যে সকল কলেজের অস্তিত্ব ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল। মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত হেস্টিংস র‍্যাসডিল এর দি ইউনিভার্সিটিস অভ ইউরোপ ইন দ্যা মিডল এজেস" (১৮৯৫) (মধ্যযুগে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো) এ এই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আওতাধীন প্রায় ৭০ টি কলেজের তালিকা রয়েছে; এগুলোর কিছু স্বল্পস্থায়ী ছিল এবং মধ্যযুগ শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু কলেজ আধুনিক যুগের প্রারম্ভ পর্যন্ত টিকে গিয়েছিল, যেমন কলেজ দ্যা কোয়াট্রে-ন্যাশন্স।

বিপ্লবকালীন সময়ে ভবন[সম্পাদনা]

ফরাসি বিপ্লবের সময়, ১৭৯১ সালে ভবনটি ছাত্রদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং লে চ্যাপেলিয়ার আইনের মাধ্যমে সোর্বিয়ান সমাজ বিলুপ্ত করা হয় পাশাপাশি একই সময় প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রদেশটি বিলুপ্ত করা হয়। ১৭৯৪ সালে চ্যাপেলটিকে দেবীর মন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট একে শিল্পীদের স্টুডিওতে রুপান্তরিত করেন।[৪].

প্যারিসের ধর্মতত্ত্ব অনুষদ[সম্পাদনা]

সময়ের সাথে সাথে, কলেজটি ধর্মতত্ত্ব গবেষণার জন্য প্রধান ফরাসি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদ এর সমার্থক শব্দ হিসেবে "সর্বন" চিহ্নিত হয়ে উঠে। যদিও সেই সময় অন্যান্য কলেজেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ধর্মতত্ত্ব অনুষদ ছিল।

মে, ১৯৬৮[সম্পাদনা]

নানতেরে অবস্থিত প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের মাসাধিক দ্বন্দ্বের পর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২ মে, ১৯৬৮ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়। এই বন্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য প্যারিসে সর্বন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ৩ মে একত্রিত হয়। এ সময় নানতেরের বেশকিছু শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের হুমকি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৬ মে ১৯৬৮, সোমবার ফ্রান্সের জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন, দি ইউনিউয়ন ন্যাশনাল দ্যা ইতুডিয়েন্টস দ্যা ফ্র্যান্স (ইউএনইএফ) - ফ্র্যান্সের বৃহত্তম ছাত্র ইউনিয়ন - এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ইউনিয়ন সর্বনে পুলিশ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য মিছিলের আহবান জানায়। পদযাত্রায় প্রায় ২০,০০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সমমনা মানুষ সর্বনের উদ্দেশ্যে মিছিলে অংশ নেয়। সর্বন তখন পুলিশ দ্বারা ঘেরাওকৃত ছিল এবং মিছিলটি কাছাকাছি এলে এর উপর পুলিশ তাদের লাঠি উচিয়ে অগ্রসর হয়। এই সময় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, এবং কিছু লোক হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা শুরু করে, অন্যরা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে, এর ফলে পুলিশ কিছু সময়ের জন্য পিছু হটতে বাধ্য হয়। পুলিশ তখন কাঁদানে গ্যাস নিয়ে পুনরায় অগ্রসর হয়। শত শত ছাত্র গ্রেফতার হয়। ১০ মে "ব্যারিকেড রজনী" হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই রাতে ছাত্ররা গাড়ি, কাঠ ও খোয়া ব্যবহার করে লাতিন কোয়ার্টারের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। সারারাত রাস্তায় দাঙ্গা পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে চলে সংঘর্ষ, বিশেষ করে রু-গে-লুসাক এর সংঘর্ষ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পরদিন খুব ভোরে ড্যানিয়েল কোন-বেন্দিৎ বেতার মাধ্যমে হরতালের আহ্বান পাঠান। সোমবার, ১৩ মে, দশ লক্ষের উপর শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করে এবং ছাত্ররা সর্বন "জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত" বলে ঘোষণা দেয়।[৫] সরকার সর্বন পুনরায় চালু করেছে এই মিথ্যা প্রতিবেদনে বিশ্বাস করে ছাত্ররা আলোচনা বন্ধ করে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়, কিন্তু ক্যাম্পাসে পৌঁছে বিদ্যালয় তখনও পুলিশের দ্বারা দখলকৃত রয়েছে বলে আবিষ্কার করে।

সর্বন পুনরায় খোলার পর ছাত্ররা একে স্বশাসিত এবং "সাধারণ মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়" বলে ঘোষণা দেয়। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে প্যারিস সহ অন্যান্য এলাকায় সরকার এবং সর্বন দখল কমিটি সহ ফরাসি সমাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রায় ৪০১ টি কর্ম কমিটি গঠন করা হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালে, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়কে তেরোটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভক্ত করা হয়। যা একটি সার্বজনীন রেক্টরেট, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর (চ্যান্সেলারি দেস ইউনিভার্সিটিস দে প্যারিস) এর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যার দফতর সর্বনে। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে থেকে তিনটি সর্বনের ঐতিহাসিক ভবনে কিছু অনুষদ বজায় রেখেছে, এবং নিজেদের নামের সাথে সর্বন যুক্ত করেছে: প্যানথীয়ন-সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বন নুভেল বিশ্ববিদ্যালয়প্যারিস-সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও বিল্ডিংটিতে স্থান পেয়েছে ইকোল ন্যাশনাল দেস চার্টার (জাতীয় চার্টার বিদ্যালয়), ইকোল প্রাতিক দেস প্রোভঁস ইতুদ্যা (উচ্চশিক্ষার কারিগরী বিদ্যালয়), কোর্স দেস সিভিলাইজেশন ফ্রান্সেস দে লা সর্বন (ফরাসি সভ্যতার কোর্স সর্বন) এবং বিবলিওথেক দে লা সর্বন (সর্বনের পাঠাগার)।

বর্তমানে ফ্রান্সের মানুষ তথা ছাত্রদের কাছে সর্বন বলতে প্যানথীয়ন-সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়কে বোঝানো হয়। তবে প্যারিসের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিজদেরকে সর্বন এর একটি অংশ (উত্তরসূরী) বলে মনে করে। কেউ কেউ নিজেদেরকে এই নামেও পরিচিত করে, যেমন সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://www.culture.gouv.fr/public/mistral/merimee_fr?ACTION=CHERCHER&FIELD_1=REF&VALUE_1=PA00088485
  2. English Literature - William Henry Schofield। BiblioLife। ৩১ জানুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-১৬ 
  3. Hilde de Ridder-Symoens (১৬ অক্টোবর ২০০৩)। A History of the University in Europe: Volume 1, Universities in the Middle Ages। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521541138 excerpt
  4. Christian Hottin, « Naissance d’une architecture spécifique », dans Christian Hottin (dir.), Universités et grandes écoles à Paris : les palais de la science, Paris, Action artistique de la ville de Paris, 1999 |isbn=2-913246-03-6}}, p. 37-44, spécialement p. 38.
  5. Paris: May 1968. Solidarity pamphlet series no. 30 (Bromley [Kent]), 1968).

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]