রৌমারী উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৩′৪৩″ উত্তর ৮৯°৫১′০″ পূর্ব / ২৫.৫৬১৯৪° উত্তর ৮৯.৮৫০০০° পূর্ব / 25.56194; 89.85000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রৌমারী
উপজেলা
মানচিত্রে রৌমারী উপজেলা
মানচিত্রে রৌমারী উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৩′৪৩″ উত্তর ৮৯°৫১′০″ পূর্ব / ২৫.৫৬১৯৪° উত্তর ৮৯.৮৫০০০° পূর্ব / 25.56194; 89.85000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাকুড়িগ্রাম জেলা
উপজেলা১৯৮৩
আসনকুড়িগ্রাম-৪
সরকার
 • সাংসদজাকির হোসেন (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
আয়তন
 • মোট১৯৭.৮০ বর্গকিমি (৭৬.৩৭ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট২,০৩,৯৪৯
 • জনঘনত্ব১,০০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৩%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫৬৪০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৪৯ ৭৯
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

রৌমারী উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি মুক্তাঞ্চল উপজেলা হিসেবে খ্যাত। কুড়িগ্রামের মূল ভূখণ্ডের সাথে এই উপজেলাটির কোনো সংযোগ সড়ক নেই,শুধু জল ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এই উপজেলাটি জামালপুর জেলার খুবই সন্নিকটে এবং ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো।

অবস্থান ও আয়তন[সম্পাদনা]

কুড়িগ্রাম জেলার দক্ষিণাংশে ২৫°২৭´ থেকে ২৫°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৫´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে রৌমারি উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলার উত্তরে উলিপুর উপজেলাভারতের আসাম, দক্ষিণে চর রাজিবপুর উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম. পশ্চিমে চর রাজিবপুর উপজেলা, চিলমারী উপজেলাউলিপুর উপজেলা

নামকরণ[সম্পাদনা]

ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে রুই মাছ পাওয়া যেত, এ কারণে এ অঞ্চলটি 'রুইমারী' নামে পরিচিত ছিলো; যা কালক্রমে রৌমারী নামে রুপান্তরিত হয়।

আয়তন[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলার মোট আয়তন ১৯৭.৮০ বর্গ কিলোমিটার।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের প্রাক্কালে আসামের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গোয়ালপাড়া জেলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রৌমারী সীমান্তের নিকট বড়াইবাড়ি নামক স্থানে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মানকাচরের আবদুল কাশেম মিয়া পাকিস্তান কেল্লা প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্থানীয় যুবকদের সংঘবদ্ধ করে একটি মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। এই স্থানে একটি বিশাল মঞ্চ স্থাপন করে সাত দিন ধরে ঐ উঁচু মঞ্চে উঠে মওলানা ভাসানী লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে ভাষণ দেন।

প্রশাসনিক এলাকা[সম্পাদনা]

রংপুর জেলার অধীনে রৌমারী থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় কোনো পৌরসভা নাই ও ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম রৌমারী থানার আওতাধীন।

ইউনিয়নসমূহ:

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

নির্বাচন অফিস তথ্যমতে,রৌমারী উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১শত ৫০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৯ হাজার ১৭৩ জন ও নারী ভোটার ৭৭ হাজার ৯৭৭জন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী রৌমারী উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪৩%। এ উপজেলায় ৮টি কলেজ, ২টি কারিগরি কলেজ, ২৬টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১০৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি আলিম মাদ্রাসা ও ১৩টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

কলেজ
  • রৌমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪)
  • রৌমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫)
  • যাদুর চর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৯)
  • যাদুর চর মডেল কলেজ (১৯৯৯)
  • চর শৌলমারী ডিগ্রী কলেজ(১৯৯৫)
  • শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ,পাখিউড়া(২০১১)
  • চর শৌলমারী আদর্শ মহিলা কলেজ(২০১৩)

উচ্চ বিদ্যালয়[সম্পাদনা]

  • টাপুরচর উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৪১)
  • যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬)
  • রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮)
  • চর শৌলমারী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৭০)
  • শৌলমারী এম আর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৬)
  • চর শৌলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • কাজাইকাটা জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়
  • সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়
প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • নতুন বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৬৮)
  • রৌমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮)
  • চাকতাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২)
  • মির্জাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৬)
  • চর শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
মাদ্রাসা
  • নূরপুর রহমানিয়া দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা, ব্যাপারী পাড়া,তুরা রোড। (১৯৭২)
  • ফুলুয়ার চর জুনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩৩)
  • রৌমারী কেরামতিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩৭)
  • জাফরগঞ্জ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা

স্বাস্থ্য[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলায় ১টি সরকারি হাসপাতাল, ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৫,৫৫৫ হেক্টর। এ উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৭%, শিল্প ০.৮০%, ব্যবসা ৬.৪০%, পরিবহন ও যোগাযোগ ০.৫৭%, চাকরি ৩.২৫%, নির্মাণ ০.৪৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৭.৩০%।

ভূমিমালিক ৫৫.০৫%, ভূমিহীন ৪৪.৯৫%। শহরে ৪৫.৩৪% এবং গ্রামে ৫৬.৪৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম, তিল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি খেসারি, ছোলা, অড়হর, তিসি, কাউন, চীনা, শন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলায় ৬৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৪৮৯ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ৩০ নটিক্যাল মাইল নদীপথ রয়েছে।

ধর্মীয় উপাসনালয়[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলায় ৩৪৫টি মসজিদ, ৫টি মন্দির রয়েছে ও কোনো গির্জা নাই।

  • রৌমারী জামে মসজিদ
  • থানা জামে মসজিদ
  • ব্যাপারীপাড়া জামে মসজিদ (১৮৮২)

নদ-নদী[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদী, হলহলি নদী, সোনাভরী নদী, জিনজিরাম নদী। এছাড়াও এ উপজেলায় অনেক বিল রয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিল হল নটান বিল, ইছাকুড়ি বিল, ভেড়ামারী বিল, আলীর ডোবা, মাদাইডাঙ্কার বিল, বাউশমারীর বিল, দেওকুড়া বিল। ধারণা করা হয়, এ উপজেলায় অনেক চর রয়েছে যার মধ্যে থেকে এ অঞ্চলটি জেগে উঠেছে।[২]

হাটবাজার[সম্পাদনা]

রৌমারী উপজেলায় ১৯টি হাটবাজার রয়েছে ও ২টি মেলা হয়ে থাকে।

উল্লেখযোগ্য হাটবাজার
  • রৌমারী হাট বাজার
  • বাইটকামারী হাট বাজার
  • কর্তিমারী হাট বাজার
  • চর শৌলমারী হাট বাজার
  • দাঁতভাঙ্গা হাট বাজার
  • সায়েদাবাদ হাট বাজার
  • আমবাড়ি হাট বাজার
  • শিমুলতলী হাট বাজার
  • পাখিউড়া হাট বাজার
  • টাপুরচর হাট বাজার
  • শেখের হাট বাজার
  • চুলিয়ার চর হাট বাজার
  • সোনাপুর হাট বাজার
  • বড়াইকান্দি হাট বাজার
  • কাজাইকাটা গাছবাড়ী হাট বাজার
  • গোয়ালগ্রাম হাট বাজার
  • খেওয়ার চর হাট বাজার
  • কাজাইকাটা লাউবাড়ী হাট বাজার

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী[সম্পাদনা]

  • পাক্ষিক: দ্বীপ দেশ
  • মাসিক: উত্তর চিত্র
  • অবলুপ্ত: অগ্রদূত

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় সেক্টর কামান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান এবং আরও অনেকে পর্যায়ক্রমে এখান থেকে ১১নং সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা করেন। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং এখান থেকে চিলমারী, উলিপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হতো। রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল বলা হয় কারণ পাক হানাদাররা এ অঞ্চলে আসতে সাহস পায়নি।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

  • বলদমারা ঘাট
  • পাখিউড়া ব্রিজ
  • বড়াইবাড়ি - ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সীমান্ত যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও ৩ জনের "শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ"
  • রৌমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
  • তুরা রোড
  • তুরা স্থলবন্দর
  • চানমারী
  • ফলুয়ার চর নৌকা ঘাট
  • গোয়ালপাঁড়া রাজার ঘোড়দৌড় মাঠ

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি[সম্পাদনা]

জনপ্রতিনিধি[সম্পাদনা]

সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা সংসদ সদস্য রাজনৈতিক দল
২৮ কুড়িগ্রাম-৪ রৌমারী উপজেলা, চর রাজিবপুর উপজেলা, চিলমারী উপজেলা বিপ্লব হাসান পলাশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং পদবী নাম
০১ উপজেলা চেয়ারম্যান[৩] মোহাম্মদ ইমান আলী ইমন
০২ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোজাফ্ফর হোসেন
০৩ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ মাহমুদা আক্তার স্মৃতি
০৪ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হান্নান

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "এক নজরে রৌমারী"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "নদ-নদী - রৌমারী উপজেলা"www.rowmari.kurigram.gov.bd। ৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২২ 
  3. "জনাব মোঃ শেখ আব্দুল্যাহ্ - রৌমারি উপজেলা"www.rowmari.kurigram.gov.bd। ৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]