রেস্তোরাঁ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি'র ম্যানহ্যাটানে প্রতিষ্ঠিত একটি আধুনিক রেস্তোরাঁ

রেস্তোরাঁ (ফরাসি : [ʁɛs.tɔ.ʁɑ̃]) খাদ্যদ্রব্য, কোমল পানীয় প্রস্তুত ও তা সংশ্লিষ্ট ভোজন রসিকদের কাছে সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। এর বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে খাদ্যের জন্য নির্ধারিত বিনিময় মূল্য পূর্বেই কিংবা খাদ্য গ্রহণের পরবর্তী সময়ে গ্রহণ করে। সাধারণতঃ লিখিত কিংবা মৌখিক খাদ্য তালিকা প্রদর্শন ও মূল্যমানের উপর নির্ভর করে গ্রাহকদেরকে তা সরবরাহ করা হয় ও খাওয়ানো হয়। তবে অনেক রেস্তোরানই বিশেষ খাবার গ্রহণের জন্য গ্রাহকদের রূচিবোধকে আমন্ত্রণ জানায় ও প্রাধান্য দেয়। প্রয়োজনে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের সাথে গ্রাহকের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্য সরবরাহের জন্য প্রস্তাবনা করা হয় এবং রেস্তোরানের লোকেরা তা নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট স্থানে তা পৌঁছানো হয়

উৎপত্তিগত দিক[সম্পাদনা]

সুপ্রাচীনকালে ভ্রমণ কিংবা স্থানান্তরজনিত কারণে অতিথিশালাসরাইখানার উৎপত্তি হয়। ভ্রমণকারীদের খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপনার ধারণা সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীরাও এখানে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে; যদিও তা খুবই স্বল্প আকারের।

আধুনিককালের রেস্তোরাঁগুলো পূর্ব থেকেই অতিথিদের জন্য নির্ধারিত খাদ্যসহ তাদের চাহিদামাফিক খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশন করে থাকে। অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে আধুনিক রেস্তোরাঁ ধারণার উৎপত্তি হয়েছিল।[১]

বাংলাদেশের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

ষাটের দশকে গুলিস্তানের বিখ্যাত রেক্স রেস্তোরান আলোচিত ছিল। শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার জায়গাও ছিল এটি, অনেকটা কলকাতার ‘কফি হাউস’ ধরনের। মাত্র দেড় টাকায় জাম্বু সাইজের কাবাব-পরোটা পাওয়া যেত। গুলিস্তানের ‘গুলসিতাঁ’, ‘ক্যাসবা’—নামীদামি রেস্তোরাঁ ছিল। গুলসিতানে সুরা পান হতো। গুলিস্তানে আর একটি রেস্তোরাঁ ছিল ‘সেলিমাবাদ’ নামে। ভাত থেকে আরম্ভ করে সবকিছুই পাওয়া যেত বেশ কম দামে। বিশেষ করে সলিমাবাদের শিঙাড়া ছিল অতিবিখ্যাত। নবাবপুর রেলগেটের পাশে ছিল একটি মোগলাই পরোটার দোকান। তখনকার বিখ্যাত বনেদি স্যুট প্রস্তুতকারক ‘এ ডি পল’ এবং ‘বরকতুল্লা’ও ছিল এখানেই। পাশেই পুরোনো স্টেডিয়ামের বিরাট মাঠ। গুলসিতাঁ রেস্তোরাঁর উল্টো দিকে ‘বেবি আইসক্রিম’ নামে একটি আইসক্রিমের বার ছিল, অতি সুস্বাদু আইসক্রিম, তবে বেশ দামি; হারুন নামে একজন অবাঙালি অভিনেতা ছিলেন এর মালিক।[২]

বাংলাদেশে ২০২১ সালে হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার। ২০২১ সালে হোটেলে কর্মরত জনবল ২০ লাখ ৭২ হাজার হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০, বাকি ১ লাখ ৭৩৭ জন নারী। ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাত থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।[৩]

পরিচালনা[সম্পাদনা]

রেস্তোরাঁ বা ভোজনালয়ের স্বত্ত্বাধিকারীকে রেস্তোরেঁচিউর নামে ডাকা হয়। রেস্তোরাঁ ও রেস্তোরেঁচিউর - উভয় শব্দই ফরাসী রেস্তোরাঁর শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে পুণঃস্থাপন করা বা পুণঃসংরক্ষণ করা। পেশাজীবি পাকশি, রাধুনীকে শেফ বা বাবুর্চী নামে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ তিনিই রেস্তোরাঁর প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। তাকে রন্ধনকার্যে যোগ্য সহায়তা করেন একদল কর্মী ও সহকারী বাবুর্চী।

অর্থনৈতিক অবদান[সম্পাদনা]

২০০৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২,১৫,০০০ রেস্তোরাঁ ছিল যা $২৯৮ বিলিয়ন ডলার অর্থ লেনদেন করে। এছাড়াও, $২৬০ বিলিয়ন ডলার অর্থের লেনদেনে ব্যস্ত ছিল প্রায় ২,১৫,০০০ ফাস্ট ফুডের রেস্তোরাঁ।[৪]

ওহিও'র ক্লিভল্যান্ডে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁগুলোয় এক জরীপে দেখা যায় যে, প্রতি ১ বছর অন্তর গড়পড়তা ৪ জনের মধ্যে ১ জন এবং ৩ বছর পর ১০ জনের মধ্যে ৬ জন মালিকানা ত্যাগ করে কিংবা ব্যবসা থেকে চলে যায়। লক্ষ্যণীয় যে, সবগুলো পরিবর্তনের মধ্যেই আর্থিক সঙ্কট লক্ষ্য করা যায়নি।[৫] তিন বছরের বিষয়টি বিশেষ রেস্তোরাঁগুলোতেও একই প্রভাব বিস্তার করেছিল।[৬]

আইন-কানুন[সম্পাদনা]

দেশে প্রচলিত আইন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যপন্থার উপর নির্ভর করে রেস্তোরাঁগুলো এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় সরবরাহ করতে পারে কিংবা পারে না। উন্নত দেশগুলোর প্রচলিত আইনে খাদ্যবিহীন অবস্থায় মদ বিক্রয়কার্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে,বৈধ পন্থায় মদ বিক্রয়কার্যে নিয়োজিত বারে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন প্রয়োগপূর্বক এ জাতীয় পানীয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে। কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যালকোহল নিয়ে প্রবেশ করার কথা বলে। আবার, অনেক দেশের রেস্তোরাঁগুলোতে বিয়ার কিংবা মদ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা আছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rebecca L. Spang, The Invention of the Restaurant: Paris and Modern Gastronomic Culture (Harvard University Press, 2001), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০০৬৮৫-০
  2. লেখা (২০২৩-০৭-০১)। "টেলিভিশনে নির্ধারিত শিল্পী আসতে না পারলে আমাকে যেভাবে দাঁড় করিয়ে দিত"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০২ 
  3. ১১ বছরে হোটেল ও রেস্তোরাঁ বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার, প্রথম আলো, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
  4. 2006 U.S. Industry & Market Outlook by Barnes Reports.
  5. Kerry Miller, "The Restaurant Failure Myth", Business Week, April 16, 2007. Cites an article by H.G. Parsa in Cornell Hotel & Restaurant Administration Quarterly, published August, 2005.
  6. Miller, "Failure Myth", page 2

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Gernet, Jacques (translated by H. M. Wright) (1962), Daily Life in China on the Eve of the Mongol Invasion, 1250-1276, Stanford: Stanford University Press, আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৭২০-০
  • Haley, Andrew P. Turning the Tables: Restaurants and the Rise of the American Middle Class, 1880-1920 (University of North Carolina Press; 2011) 384 pp
  • Kiefer, Nicholas M. (২০০২)। "Economics and the Origin of the Restaurant" (পিডিএফ)Cornell Hotel and Restaurant Administration Quarterly, (pdf): pp 5–7।  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  • Lundberg, Donald E., The Hotel and Restaurant Business, Boston : Cahners Books, 1974. আইএসবিএন ০-৮৪৩৬-২০৪৪-৭
  • Spang, Rebecca L. (2000), The Invention of the Restaurant, Harvard University Press
  • West, Stephen H. "Playing With Food: Performance, Food, and The Aesthetics of Artificiality in The Sung and Yuan", Harvard Journal of Asiatic Studies (Volume 57, Number 1, 1997): 67–106.
  • Whitaker, Jan (2002), Tea at the Blue Lantern Inn: A Social History of the Tea Room Craze in America", St. Martin's Press.
  • Fleury, Hélène (2007), "L'Inde en miniature à Paris. Le décor des restaurants", Diasporas indiennes dans la ville. Hommes et migrations (Number 1268-1269, 2007): 168-73.