বঙ্গীয় আইন পরিষদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বঙ্গীয় আইন পরিষদ
প্রতীক বা লোগো
ধরন
ধরন
এককক্ষীয় (১৮৬১-১৯৩৭)
উচ্চকক্ষীয় (১৯৩৭-১৯৪৭)
ইতিহাস
শুরু১৮৬২ (1862)
বিলুপ্তি১৯৪৭ (1947)
উত্তরসূরীপূর্ববঙ্গ আইনসভা
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা
সভাস্থল
কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি

বঙ্গীয় আইন পরিষদ ব্রিটিশ বঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য) আইনসভা ছিল।[১] এটি ১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির আইনসভা ছিল। ১৯৩৭ সালে সংস্কার গৃহীত হওয়ার পর থেকে ভারত বিভক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ হিসাবে কাজ করে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কাউন্সিলটি 'ভারতীয় কাউন্সিল আইন ১৮৬১' এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯০৯ সালে সংস্কার হওয়া অবধি এটি পরিচালিত হতো ইউরোপিয়ান ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের দ্বারা যেখানে স্থানীয়দের সংখ্যা কম ছিল। ভারতীয় কাউন্সিলস অ্যাক্ট ১৮৯২ এবং ভারতীয় কাউন্সিলস অ্যাক্ট ১৯০৯ এর অধীনে পৌরসভা, জেলা বোর্ডের প্রতিনিধিরা , সিটি কর্পোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, বন্দর, বৃক্ষরোপণ, জমিদার, মুসলিম ভোটার ও চেম্বার অফ কমার্স অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্থানীয় বাঙালির প্রতিনিধিত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ভোটদান ক্ষমতা বিশেষত বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এটিকে শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও জনসাধারণের "স্থানান্তরিত বিষয়গুলি" অর্পণ করা হয়েছিল; অর্থ, পুলিশ, ভূমি রাজস্ব, আইন, ন্যায়বিচার এবং শ্রমের "সংরক্ষিত বিষয়গুলি" বাংলার গভর্নরের নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী পরিষদে রয়ে গিয়েছিল। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে কাউন্সিলের ভৌগোলিক সীমানা বিভক্ত করে আংশিকভাবে পূর্ব বাংলা এবং আসাম আইন পরিষদকে অর্পণ করা হয়েছিল। রাজতন্ত্রের সময়কালে কংগ্রেস পার্টি ও স্বরাজ পার্টি কাউন্সিলকে বয়কট করেছিল; তবে বেঙ্গল প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সংবিধানবাদীরা সক্রিয় সদস্য হিসাবে অব্যাহত ছিলেন।[২][৩]

ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এর আওতায় পরিষদ বঙ্গীয় আইনসভার উচ্চ কক্ষে পরিণত হয়।[৪]

সদস্য[সম্পাদনা]

কাউন্সিল ১৮৬২ সালে ১২ সদস্য থেকে বেড়ে ১৮৯২ এ ২০, ১৯০৯ সালে ৫৩, ১৯১৯ সালে ১৪০ এবং ১৯৩৫ সালে ৬৩-৬৫ তে উন্নীত হয়।[৫]

১৮৬১ সালের আইন[সম্পাদনা]

১৮৬১ সালের আইনের অধীনে পরিষদে বাংলার গভর্নর জেনারেল ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল কর্তৃক মনোনীত ১২ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। সদস্যদের মধ্যে চারজন সরকারি কর্মকর্তা, চারজন বেসরকারী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এবং চারজন বাঙালি ভদ্রলোক অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ১৮৬২ থেকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত এই কাউন্সিলে ১২৩ জনকে মনোনীত করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে কেবল ৪৯ জনই স্থানীয় ভারতীয় সদস্য, ৩৫ জন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং ২৬ জন অভিজাত ছিলেন।[৫]

১৮৯২ এর আইন[সম্পাদনা]

১৮৯২ সালের আইনের অধীনে, গভর্নর জেনারেল ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা কর্পোরেশনের সুপারিশে ৭ জন সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন।[৫]

১৯০৯ এর আইন[সম্পাদনা]

১৯০৯-এর আইনে কাউন্সিলের নিম্নলিখিত গঠন ছিল:[৬]

  • প্রাক্তন কর্মকর্তা
    • গভর্নর জেনারেল
    • লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল
    • কেন্দ্রীয় গভর্নর
    • প্রাদেশিক গভর্নর
    • গোত্রীয় কমনওয়েলথ এন্ড কাউন্সিলারস-৪০
    • গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলারস(সুপ্রিম কাউন্সিল অব বেঙ্গল)-২০
    • এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলারস- ২০
  • গভর্নর জেনারেল কর্তৃক মনোনীত সদস্যরা
    • কর্মকর্তা - সর্বোচ্চ ৭০
    • কর্মচারী - সর্বনিম্ন ৫০
    • ভারতীয় বাণিজ্য- ১০
    • বৈদেশিক বাণিজ্য-১৫
    • চাপসৃষ্টিকারী/স্বার্থগোষ্ঠী-৫০
    • উপনিবেশ স্থপতি- ১০
    • বিশেষজ্ঞ- ২৯
    • অন্যান্য- সর্বনিম্ন ৩০
    • অন্যান্য - সর্বোচ্চ ১০
  • লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যরা
    • কলকাতা কর্পোরেশন- ১০
    • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়- ১০
    • পৌরসভা- ৬০
    • জেলা বোর্ড- ৬০
    • জমির মালিক- ৫০
    • আবাহনীস-৩০
    • মোহামেডানস- ৪০
    • বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এন্ড আর্স- ২০
    • কলকাতা ব্যবসায়ী সমিতি -২০
    • বেঙ্গল চেম্বার অব প্রিন্সেস-৫০
    • চৌকিদারি পঞ্চায়েত-২০
    • উপজেলা পরিষদ-৪০
    • ইউনিয়ন পরিষদ-২০
    • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি-১০

১৯১৯ এর আইন[সম্পাদনা]

১৯১৯ সালের আইনের অধীনে কাউন্সিলের ১৪০ জন সদস্য ছিল। এর মধ্যে সাধারণ নির্বাচনী এলাকায় নির্ধারিত ৯২ টি আসন এবং মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানসহ পৃথক ভোটারদের জন্য বরাদ্দ করা ২২ টি আসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর, কলকাতা বন্দর, পাট শিল্প, চা শিল্পের প্রতিনিধিত্ব ছিল।[৭]

১৯৩৫ এর আইন[সম্পাদনা]

ভারত সরকার আইন, ১৯৩৫-এর আওতাধীন হিসাবে পরিষদের নিম্নলিখিত গঠন ছিল :[৫]

  • সাধারণ নির্বাচিত আসন - ১০ টি
  • মুসলিম ভোটার আসন - ১৭
  • ইউরোপীয় ভোটার আসন - ৩
  • বঙ্গ আইন পরিষদের মনোনীত প্রার্থী- ২৭
  • বাংলার গভর্নর মনোনীতরা- 'সংখ্যাসাম্যনীতি ও গোত্রপ্রীতিভিত্তি'।

মেয়াদ[সম্পাদনা]

আইনসভা পরিষদকে প্রথমে দশ বছরের মেয়াদ দেওয়া হয়েছিল। এটি ভারত সরকার আইন ১৯৩৫ এর অধীনে একটি স্থায়ী সংস্থা হয়ে যায়, যার সদস্যদের এক দশমাংশকে অবসর গ্রহণের প্রয়োজন ছিল।[৫]

পরিষদের প্রধান[সম্পাদনা]

কাউন্সিলকে তার সভাপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি, উপপ্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার অধিকার দেওয়ার আগে পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল,লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নর ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Bengal Legislative Council Manual, 1921: Containing Reprints of the Acts ... - Bengal (India). Legislative Council - Google Books"। Books.google.com.bd। ২০১১-১০-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-১৬ 
  2. Vibhuti Bhushan Mishra (১৯৮৭)। Evolution of the Constitutional History of India, 1773-1947: With Special Reference to the Role of the Indian National Congress and the Minorities। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 61। আইএসবিএন 978-81-7099-010-9 
  3. J. H. Broomfield (১৯৬৮)। Elite Conflict in a Plural Society: Twentieth-century Bengalক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা 38। GGKEY:PGQKZ3RNLLG। 
  4. ভাপাল পানগুনি মেনন (৮ ডিসেম্বর ২০১৫)। Transfer of Power in Indiaপ্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৫৩–। আইএসবিএন 978-1-4008-7937-3 
  5. সিরাজুল ইসলাম (২০১২)। "বঙ্গীয় আইন পরিষদ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. J. H. Broomfield (১৯৬৮)। Elite Conflict in a Plural Society: Twentieth-century Bengal। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৮। GGKEY:PGQKZ3RNLLG। 
  7. শওকত আরা হোসেন (১৯৯১)। Politics and Society in Bengal, 1921-1936: A Legislative Perspective। বাংলা একাডেমি। আইএসবিএন 978-984-07-2523-6