নীলশির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নীলশির
Anas platyrhynchos
স্ত্রী ও পুরুষ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: আন্সেরিফর্মিস
পরিবার: অ্যানাটিডি
গণ: Anas
প্রজাতি: A. platyrhynchos
দ্বিপদী নাম
Anas platyrhynchos
লিনিয়াস, ১৭৫৮
উপপ্রজাতি

A. p. platyrhynchos লিনিয়াস, ১৭৫৮
A. p. domesticus লিনিয়াস, ১৭৫৮
A. p. conboschas C. L. Brehm, 1831 (disputed)

বৈশ্বিক বিস্তৃতি (আদি নিবাস ও অবমুক্তকরণ অঞ্চল)

নীলশির (বৈজ্ঞানিক নাম: Anas platyrhynchos) বা নীলমাথা হাঁস Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Anas (আনুস) গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রজাতির বড় আকারের হাঁস।[২][৩] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকাএশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। নিউজিল্যান্ডঅস্ট্রেলিয়ায় প্রজাতিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। নীলশিরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চওড়াঠুঁটি হাঁস (লাতিন: anus = হাঁস; গ্রিক = platurhunkhos = প্রশস্ত ঠোঁট)।[৩] বিশ্বজনীন প্রজাতি হিসেবে সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩] সারা পৃথিবীতে আনুমানিক ১ কোটি ৯০ লক্ষের কম নীলশির হাঁস রয়েছে।[৫]

পুরুষ নীলশিরের (হাঁসা) মাথা চকচকে সবুজ এবং ডানা ও পেট ধূসর রঙের। স্ত্রী হাঁসের দেহ মেটে রঙের, তাতে ছোট ছোট বাদামী ফোঁটা থাকে। নীলশির জলাশয় ও তার আশেপাশে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। ছোট প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ এর প্রধান খাদ্য। আমাদের গৃহপালিত হাঁসের অধিকাংশ প্রজাতির পূর্বপুরুষ এই নীলশির হাঁস। স্ত্রী নীলশীর একটি নিদিষ্ট সময়ে এক দিন পর পর ৮-১৩টি দাগহীন ডিম পাড়ে।[৬]

শ্রেণিবিন্যাস ও অভিব্যক্তি[সম্পাদনা]

জাঁ জেম্‌স অদুবঁ অঙ্কিত নীলশির

অষ্টাদশ শতকে ক্যারোলাস লিনিয়াস তার অবিস্মরণীয় সিস্তেমা নাতুরি (Systema Naturae) গ্রন্থে সর্বপ্রথম যে সমস্ত প্রজাতির দ্বিপদ নাম প্রদান করেন, তার মধ্যে নীলশির একটি। লিনিয়াসের দেওয়া নামটি এখনও পর্যন্ত এর বৈজ্ঞানিক নাম হিসেবে বহাল আছে।[৭]

নীলশিরের ইংরেজি নাম ম্যালার্ড ("Mallard")। সম্ভবত শব্দটি প্রাচীন ফরাসি malart বা mallart (মালার্ত, অর্থাৎ বুনো হাঁস) থেকে এসেছে। ইংরেজিতে একে মডেলার্ড ("maudelard" বা "mawdelard") নামেও ডাকা হয়, যা প্রাচীন হাই জার্মান মডেলহার্টের (Madelhart) সাথে সম্পর্কিত। [৮]

নীলশির আনুস গণের অন্যান্য নিকট আত্মীয়ের সাথে প্রায়ই বংশবৃদ্ধি করে; যেমন আমেরিকান কালো হাঁস। গৃহপালিত হাঁসের সাথেও এরা সফলভাবে প্রজনন করতে সক্ষম। এছাড়া ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত নয় এমন প্রজাতির সাথে (যেমন, উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস) এরা প্রজনন করে সংকর প্রজাতির সৃষ্টি করে এবং এসব সংকর বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম।[৯] সাধারণত সংকরায়নের ফলে জন্ম নেয়া প্রাণীরা প্রজননক্ষম হয় না। কিন্তু নীলশিরের বেলায় এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। কারণ অন্ত্য প্লাইস্টোসিন যুগে উদ্ভূত এ প্রজাতিটি খুব কম সময়ের মধ্যে খুব দ্রুত নিজের অভিব্যক্তি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।

২০১৩ সালে নীলশিরের জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য আবিষ্কার করা হয়েছে।[১০]

জীবভূগোল অনুসারে নীলশির তার নিকটবর্তী আমেরিকান প্রজাতিগুলোর তুলনায় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রজাতিগুলোর সাথে অধিক সম্পর্কিত। ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছে যে এদের উৎপত্তি সম্ভবত সাইবেরিয়া বা তার আশেপাশে।[১১]

বেরিং সাগর অঞ্চলে নীলশিরের সদস্যদের মাঝে দেশি মেটেহাঁস ও অন্যান্য আমেরিকান নিকটাত্মীয়ের হলোটাইপিক জিনের সন্ধান পাওয়া গেছে।[১২] অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সদস্যরা বেশ আলাদাভাবে বসবাস করছে বলে তাদের মধ্যে জিন বৈচিত্র্য কম। ফলে সেখানকার সদস্যরা নতুন একটি উপপ্রজাতি গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।[১১]

অবস্থান ও উপপ্রজাতিভেদে নীলশিরের দৈহিক আকৃতিতে বিভিন্নতা দেখা যায়। গ্রীনল্যান্ডের হাঁস দক্ষিণের হাঁসের তুলনায় আকারে বড়, গাট্টাগোট্টা এবং খাটো ঠোঁটবিশিষ্ট। কোন কোন সময় এদের গ্রীনল্যান্ড নীলশির (A. p. conboschas) নামে আলাদা একটি উপপ্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিবরণ[সম্পাদনা]

পুরুষ নীলশিরের ডানায় উজ্জ্বল দর্পণ পালক

নীলশির মাঝারি আকারের জলচর পাখি হলেও অধিকাংশ হাঁসের তুলনায় ঈষৎ ভারি। এর দৈর্ঘ্য ৫০–৬৫ সেমি (২০–২৬ ইঞ্চি) (যার মধ্যে লেজ বাদে দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ), ডানার বিস্তার ৮১–৯৮ সেমি (৩২–৩৯ ইঞ্চি),[১৩] এবং ওজন ০.৭২–১.৫৮ কেজি (১.৬–৩.৫ পা)।[১৪][১৫] ডানার প্রমাণ দৈর্ঘ্য ২৫.৭ থেকে ৩০.৬ সেমি (১০.১ থেকে ১২.০ ইঞ্চি), ঠোঁট ৪.৪ থেকে ৬.১ সেমি (১.৭ থেকে ২.৪ ইঞ্চি) ও পায়ের পাতা ৪.১ থেকে ৪.৮ সেমি (১.৬ থেকে ১.৯ ইঞ্চি).[১৬]

Anas platyrhynchos

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Anas platyrhynchos"The IUCN Red List of Threatened Species। ১২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৩ 
  2. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১১৬। আইএসবিএন 9840746901 
  3. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৭। 
  4. "Mallard, Anas platyrhynchos"BirdLife International। ২০১১-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-১৮ 
  5. Delany, S.; Scott, D., Waterbird population estimates (The Netherlands: Wetlands International, Wageningen, 2006).
  6. ''Anas platyrhynchos'', Domestic Duck; DigiMorph Staff – The University of Texas at Austin. Digimorph.org. Retrieved on 2012-08-23.
  7. Linnaeus, Carl (১৭৫৮)। Systema naturae per regna tria naturae, secundum classes, ordines, genera, species, cum characteribus, differentiis, synonymis, locis. Tomus I. Editio decima, reformata (Latin ভাষায়)। Stockholm: Laurentius Salvius। পৃষ্ঠা 125। 
  8. Simpson, John; Weiner, Edmund, সম্পাদক (১৯৮৯)। "Mallard"। Oxford English Dictionary (2nd সংস্করণ)। Oxford: Clarendon Press। আইএসবিএন 0-19-861186-2 
  9. Phillips, John C. (১৯১৫)। "Experimental studies of hybridization among ducks and pheasants"। Journal of Experimental Zoology18 (1): 69–112। ডিওআই:10.1002/jez.1400180103 
  10. The duck genome and transcriptome provide insight into an avian influenza virus reservoir species
  11. Kulikova, Irina V.; Drovetski, S. V.; Gibson, D. D.; Harrigan, R. J.; Rohwer, S.; Sorenson, Michael D.; Winker, K.; Zhuravlev, Yury N.; McCracken, Kevin G. (২০০৫)। "Phylogeography of the Mallard (Anas platyrhynchos): hybridization, dispersal, and lineage sorting contribute to complex geographic structure" (পিডিএফ)The Auk122 (3): 949–965। ডিওআই:10.1642/0004-8038(2005)122[0949:POTMAP]2.0.CO;2। ১০ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  12. Kulikova, Irina V.; Zhuravlev, Yury N.; McCracken, Kevin G. (২০০৪)। "Asymmetric hybridization and sex-biased gene flow between Eastern Spot-billed Ducks (Anas zonorhyncha) and Mallards (A. platyrhynchos) in the Russian Far East" (পিডিএফ)The Auk121 (3): 930–949। ডিওআই:10.1642/0004-8038(2004)121[0930:AHASGF]2.0.CO;2। ১০ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  13. Cramp, Stanley, সম্পাদক (১৯৭৭)। Handbook of the Birds of Europe the Middle East and North Africa, the Birds of the Western Palearctic, Volume 1: Ostrich to Ducks। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-857358-6 , p. 505.
  14. Mallard, Life History, All About Birds – Cornell Lab of Ornithology. Allaboutbirds.org. Retrieved on 2012-08-23.
  15. John B. Dunning Jr., সম্পাদক (১৯৯২)। CRC Handbook of Avian Body Masses। CRC Press। আইএসবিএন 978-0-8493-4258-5 
  16. Madge, Steve, Waterfowl: An Identification Guide to the Ducks, Geese, and Swans of the World. Houghton Mifflin Harcourt (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৯৫-৪৬৭২৬-৮

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]