ডেরেক প্রিঙ্গল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডেরেক প্রিঙ্গল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামডেরেক রেমন্ড প্রিঙ্গল
জন্ম (1958-09-18) ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮ (বয়স ৬৫)
নাইরোবি, কেনিয়া
ডাকনামমি. ডেরেক
উচ্চতা৬ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৯৬ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
সম্পর্কডিজে প্রিঙ্গল (বাবা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪৯৫)
১০ জুন ১৯৮২ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট৬ আগস্ট ১৯৯২ বনাম পাকিস্তান
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৬৬)
১৭ জুলাই ১৯৮২ বনাম পাকিস্তান
শেষ ওডিআই২১ মে ১৯৯৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭৮–১৯৯৩এসেক্স
১৯৮২এমসিসি
১৯৭৯–১৯৮২কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩০ ৪৪ ২৯৫ ৩১৭
রানের সংখ্যা ৬৯৫ ৪২৫ ৯২৪৩ ৪৮৭৩
ব্যাটিং গড় ১৫.১০ ২৩.৬১ ২৮.২৬ ২৫.৯২
১০০/৫০ –/১ –/– ১০/৪৮ –/২৯
সর্বোচ্চ রান ৬৩ ৪৯* ১২৮ ৮১*
বল করেছে ৫২৮৭ ২৩৭৯ ৪৫১৩৯ ১৫৪১০
উইকেট ৭০ ৪৪ ৭৬১ ৩৮৩
বোলিং গড় ৩৫.৯৭ ৩৮.১১ ২৮.২৬ ২৭.১৪
ইনিংসে ৫ উইকেট ২৫
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ৫/৯৫ ৪/৪২ ৭/১৮ ৫/১২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১০/– ১১/– ১৫৪/– ৮৭/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

ডেরেক রেমন্ড প্রিঙ্গল (ইংরেজি: Derek Pringle; জন্ম: ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮) নাইরোবিতে জন্মগ্রহণকারী কেনীয় বংশোদ্ভূত সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। বর্তমানে তিনি ক্রিকেট সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছেন।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন 'মি. ডেরেক' নামে পরিচিত ডেরেক প্রিঙ্গল। ফ্লেস্টেড স্কুলে অধ্যয়ন শেষে ক্যামব্রিজের ফিৎজউইলিয়াম কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি।

দলে তিনি মূলতঃ বোলার ছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করার পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকরী ব্যাটিং করতেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এসেক্সের পক্ষে খেলেন। এছাড়াও, এমসিসি ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন।

কাউন্টি ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৭৮ থেকে ১৯৯৩ সময়কালের মধ্যে এসেক্সের পক্ষালম্বন করেছেন ডেরেক প্রিঙ্গল। ১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত সফলতম দলটির অন্যতম সদস্যরূপে গ্রাহাম গুচ, মার্ক ওয়াহ, নাসের হুসেন, জন লিভারনিল ফস্টারের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দের সান্নিধ্য পেয়েছেন। এ সময়ে এসেক্স কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করেছিল ছয়বার। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্নাতক-পূর্ব শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় দলে ১৯৮২ সালে অধিনায়কত্ব করেন তিনি।[২]

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

১০ জুন, ১৯৮২ তারিখে ভারতের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়। একই সালের ১৭ জুলাই তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক ঘটে তার।

১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৩০ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ৬৯৫ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৭০ উইকেট পেয়েছেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পক্ষে ৪৪টি ওডিআইয়ে অংশ নেন। তন্মধ্যে দুইবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়েছিল তার। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায়ও অংশ নেন তিনি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রিঙ্গলের ব্যাটিং গড় বোলিং গড়ের সমান ছিল।

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। ইয়ান বোথামের সাথে বেশ কয়েকটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। দল নির্বাচকমণ্ডলী উপলব্ধি করেন যে, ১৯৮২ সালে ভারত ও পাকিস্তান সফরে ফাস্ট বোলিংয়ের তুলনায় স্পিন বোলিংই অধিক কার্যকর। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত দলের বাইরে অবস্থান করতে হয় তাকে।

১৯৮৬ সালে ক্যানাবিস ধূমপানের অভিযোগে ইয়ান বোথামকে ৩ মাসের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। ফলশ্রুতিতে প্রিঙ্গল বোথামের কার্যাবলী সম্পাদনে অগ্রসর হন।

১৯৮৬ সালটি ইংরেজ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য অন্যতম দূর্যোগপূর্ণ বছররূপে চিহ্নিত হয়েছিল। গ্রীষ্মের প্রথম তিন খেলায় বোলিং বেশ ভালো করলেও ভারতীয় স্পিন আক্রমণ বিশেষতঃ মনিন্দর সিংকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হন। ঐ বছরের ওভালের চূড়ান্ত টেস্টের মাধ্যমে বোথাম পুনরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। এরফলে ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেও তিনি বঞ্চিত হন।

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

পরের বছরের শীত মৌসুমে ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপে বোথামের অনুপস্থিতিতে দলে অন্তর্ভুক্ত হন। এশীয় পিচে তার বোলিং বেশ অকার্যকররূপে প্রমাণিত হয়। গুজরানওয়ালায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৩ রানের ইনিংস খেললেও ঐ প্রতিযোগিতার অন্য কোন খেলায় অংশ নেননি।

বছর শেষে আরেক উদীয়মান অল-রাউন্ডার ডেভিড ক্যাপেলের কাছ স্থানচ্যূত হন। নর্দাম্পটনের খেলোয়াড় ক্যাপেল তার পরিবর্তে সিডনির দ্বি-শতবার্ষিকী টেস্টে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্য তাকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। টেক্সাকো ট্রফি সিরিজে অংশ নিয়ে দ্রুত এর প্রতিদান দেন ও ৫ উইকেট দখল করেন। লিডসের দ্বিতীয় খেলায় গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ রান তুলে দলে সবিশেষ অবদান রাখেন যা দুদলের মধ্যকার পার্থক্য গড়তে সহায়তা করে। এটিই তার সেরা অর্জন ছিল।

পিঠের অস্ত্রোপাচারের কারণে ইয়ান বোথাম এ মৌসুমে দলের বাইরে অবস্থান করলে তিনি প্রথম দুই টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণে দিশেহারা হয়ে যান। ম্যানচেস্টার টেস্টে ডেভিড ক্যাপেল তার পরিবর্তে খেললেও দূর্বল ক্রীড়াশৈলীর কারণে লিডস টেস্টে পুনরায় খেলেন। এবার তিনি ৫ উইকেট দখল করেন। ৫ম টেস্টে তিনি আরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওভাল টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম স্লিপে ডেসমন্ড হেইন্সের ক্যাচ নেয়ার প্রচেষ্টাকালে আঙ্গুলে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন নিয়মিত অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ। তবে ঐ খেলায় তার দল পরাজিত হয়।

আসা-যাওয়ার পালা[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালে আবারো দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছ থেকে আসা-যাওয়ার পালার কবলে পড়েন প্রিঙ্গল। টেক্সাকো ট্রফিতে বোথাম ও প্রিঙ্গল একত্রে খেলেন। তবে গ্ল্যামারগনের বোলার স্টিভ বারউইকের বলে আঘাতপ্রাপ্ত হলে বোথামকে বাইরে অবস্থান করতে হয়। লিডসের নিচু পিচে চারজন বোলারের অন্যতম হিসেবে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘোরান। তাস্বত্ত্বেও ওভালের চূড়ান্ত টেস্টের পূর্ব-পর্যন্ত তাকে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়েছে।

ওভাল টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে চার উইকেট দখল করে ইংল্যান্ডের সর্বাপেক্ষা সফল বোলার ছিলেন। পরবর্তী শীত মৌসুমে ইংল্যান্ড দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। দল নির্বাচকমণ্ডলী যুবনীতি গ্রহণ করায় প্রিঙ্গলকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। তার পরিবর্তে ইংল্যান্ডের নতুন অল-রাউন্ডার ক্রিস লুইস দলের সদস্য মনোনীত হন।

যুবনীতির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় ১৯৯১ মৌসুমের শুরুতে প্রিঙ্গলকে আবারো দলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইংল্যান্ড সফরে আসে। মাঝামাঝি সময়ে প্রিঙ্গল তার বোলিংয়ের ধরন সুস্পষ্টভাবেই পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যান। কিছুটা ধীরগতিতে ও বলকে সুইংয়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। এ নতুন ধারায় বোলিং করার ফলে ঐ সিরিজের পুরোটাতেই সফলকাম হন।

প্রাণবন্ত হেডিংলি পিচে তার বোলিংয়ে টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে ও তার বিপক্ষে লড়াই করে রান তুলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ব্যাটসম্যানদেরকে। লর্ডসে তিনি পাঁচ উইকেট পান ও বার্মিংহামে দ্বিতীয় ইনিংসে ক্রিস লুইসের সাথে বেশ বড় জুটি গড়েন। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে বোথাম ফিরে আসলে তাকে পুনরায় দলের বাইরে চলে যেতে হয়।

নিউজিল্যান্ড সফর[সম্পাদনা]

পরবর্তী শীতে ১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ঐ সফরের টেস্ট সিরিজে বেশ আটোসাঁটো বোলিং করেন ডেরেক প্রিঙ্গল। এরপর বিশ্বকাপে তার সপ্রতিভ অংশগ্রহণ ছিল ও রীতিমতো তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হন। প্রত্যেক খেলাতেই তিনি বোলিং উদ্বোধনে নামতেন ও মিতব্যয়ীতার দিকে নজর দেন। বিশেষ করে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও পাকিস্তানের কাছে ২২ রানে হেরে যায় তার দল।

১৯৯২ মৌসুমে বোথাম ও প্রিঙ্গল নিজেদের মাঠে শুরুতে একত্রে খেলেন। তবে উভয়ের মাঝেই দূর্বল ক্রীড়াশৈলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। লর্ডসে বোথাম তার সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন। অন্যদিকে লিডস টেস্টের পূর্ব-পর্যন্ত দল থেকে উপেক্ষিত হন প্রিঙ্গল। পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। তবে ওভাল টেস্টে পুনরায় তাকে দেখা যায়। বোলিং উপযোগী পিচে সফলতা পেলেও প্রতিপক্ষের সেরা খেলোয়াড় থাকলে ফলাফল যে-কোন কিছুই হতে পারে। ওয়াসিম আকরামের বলে তার অফ স্ট্যাম্প উড়ে যায়।

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ভারত সফরে তাকে নেয়া হয়নি। তবে, ১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেক্সাকো ট্রফিতে দলের সদস্য হন। টেস্ট দলে তাকে রাখা না হলে স্বল্পকাল পরই নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করেন ডেরেক প্রিঙ্গল।

দলীয় সঙ্গীদের তুলনায় প্রিঙ্গল ফ্যাশন সচেতন ও সঙ্গীতের দিকে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব, ফটোগ্রাফি, লেখালেখিসহ সঙ্গীতের ধারায় সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন।

'চ্যারিয়টস অব ফায়ার' নামীয় চলচ্চিত্রে অতিরিক্ত চরিত্রে ডেরেক প্রিঙ্গল অভিনয় করেছেন।[৩]

ডোনাল্ড প্রিঙ্গল তার বাবা। ডোনাল্ড ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পূর্ব আফ্রিকার সদস্যরূপে দুই খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Derek Pringle"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-০৬ 
  2. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 134–135। আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  3. "Cast of 'Chariots of Fire'"। IMDB। 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]