টার্কিশ এয়ারলাইন্স

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টার্কিশ এয়ারলাইন্স
Türk Hava Yolları A.O.
আইএটিএ আইসিএও কলসাইন
TK THY TURKISH
প্রতিষ্ঠাকাল২০ মে ১৯৩৩
হাব
গৌণ হাব
  • সাবিহা গোকচেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট
ফোকাস শহর
নিয়মানুযায়ী উড়ান পরিকল্পনাMiles&Smiles
জোটস্টার অ্যালায়েন্স
অধীনস্ত কোম্পানি
বিমানবহরের আকার280
গন্তব্য304
প্রধান কার্যালয়ইস্তানবুল আতাতুর্ক বিমানবন্দর,
ইস্তানবুল, তুরস্ক
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি
  • তেমেল কোটিল (CEO & President)
  • হামদি তোপচু (Chairman of the Board)
আয়বৃদ্ধি ১৮.৭৮ বিলিয়ন (2013)[১]
পরিচালন আয়হ্রাস ১.৪৮ বিলিয়ন (2013)
নিট আয়হ্রাস ৬৮৩ মিলিয়ন (2013)
মোট সম্পদবৃদ্ধি ২৫.৪ বিলিয়ন (2013)
মোট ইক্যুইটিবৃদ্ধি ৬.৯৬ বিলিয়ন (2013)
কর্মচারী১৮,৮৮২ (2013)[১][২]
ওয়েবসাইটwww.turkishairlines.com
টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং বি৭৩৭ এর একটি চিত্র

টার্কিশ এয়ারলাইন্স (তুর্কি ভাষায়: Türk Hava Yolları) তুরস্কের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা। এর সদর সপ্তর ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে অবস্থিত।[৩][৪] টার্কিশ এয়ারলাইন্স তুরস্কের অভ্যন্তরে ৪১টি গন্তব্যে এবং দেশের বাহিরে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের ২০৬টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। গন্তব্যের দিক থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এয়ারলাইন্স।[৫] এটি মোট ২৪৭টি গন্তব্যে যাতায়াত করে। ২০০৮ এর এপ্রিল থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স স্টার অ্যালায়েন্সের সদস্য।[৬]

টার্কিশ এয়ারলাইন্সের কার্গো সেবা বিশ্বের ৪৭টি শহরে কার্গো সার্ভিস পরিচালনা করে।[৭]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সালের ২০ মে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিভাগ হিসেবে টার্কিশ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় এয়ারলাইনটিতে কেবল দুইটি পাঁচ আসন বিশিষ্ট, দুইটি চার আসনবিশিষ্ট এবং একটি দশ আসনবিশিষ্ট বিমান ছিল। ১৯৩৫ সালে টার্কিশ এয়ারলাইন্সকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৩৮ সালে একে আবার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি অংশ করা হয়।

প্রাথমিকভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থা হিসেবে চালু হলেও টার্কিশ এয়ারলাইন্স ১৯৪৭ সালে আঙ্কারাইস্তানবুলএথেন্স ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে গমনাগমন শুরু করে। এসময় এয়ারলাইন্সটির বহরে বেশ কয়েকটি ডগলাস ডিসি এবং ডগলাস সি মডেলের বিমান যুক্ত হয়, ফলে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে সুবিধা হয়।

এরপরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যুক্ত হয় নিকোসিয়া, বৈরুত এবং কায়রো। তবে ১৯৬০ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ গন্তব্যেই এয়ারলাইন্সটির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৫৬ সালে এয়ারলাইন্সটিকে Türk Hava Yollari A.O. (সংক্ষেপে THY) নামে নামকরণ করে। সংস্থাটির মূলধনে ৬০ মিলিয়ন টার্কিশ লিরা প্রদান করা হয়। এর পরপরেই টার্কিশ এয়ারলাইন্স ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-এ যুক্ত হয়। ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ ওভারসিস এয়ারওয়েজ কর্পোরেশন টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ৬.৫ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের আওতায় এয়ারলাইন্সটিকে কারিগরী সেবা দিতে শুরু করে। পরবর্তী বিশ বছর পর্যন্ত এই অধিগ্রহণের অস্তিত্ব ছিল।

১৯৫০ পরবর্তী সময়ে এয়ারলাইন্সটির বহরে ভাইকার্স ভিসিকাউন্ট, ফকার এফ২৭এস, ডগলাস ডিসি বিমান যুক্ত হয়। টার্কিশ এয়ারলাইন্স তার প্রথম জেট বিমান ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-৯ পরিচালনা শুরু করে ১৯৬৭ সালে। এরপরে তিনটি বোয়িং ৭০৭ জেট বিমান বহরে যুক্ত হয়। ১৯৭০ সালে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের পরিচালিত অন্যান্য বিমানের মধ্যে ছিল ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-১০ এবং ফকার এফ২৮, এগুলো যথাক্রমে ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সাল থেকে চালু হয়।

১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশক[সম্পাদনা]

১৯৮০ এর দশকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স নিম্নমানের সেবার কারণে গ্রাহকের আস্থা হারাতে শুরু করে। এছাড়া এয়ারলাইন্সটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ এর মধ্যে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৭৪ সালে সংঘটির টার্কিশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৮১ তে। ফ্লাইট চলাকালে ফ্রান্সের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানের একটি দরজা ভেঙে যায় এবং ৩৪৬ মানুষ নিহত হয়।

১৯৮৩ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে এবং তুরস্কের ভাবমূর্তি বহনে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের গুরুত্ব অনুধাবন করে। সরকার এয়ারলাইন্সটির সেবার মান উন্নয়ন এবং একে একটি আধুনিক বিমান সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলবার জন্যে কাজ শুরু করে। এয়ারলাইন্সটির বহর যাতে বিশ্বের নতুন বিমানগুলো ব্যবহার করে যাত্রীসেবা দিতে পারে, সেজন্য সরকার অনেকগুলো নতুন বিমান ক্রয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

১৯৮৪ সালে ইসানবুলের ইয়েসিলকোয় বিমানবন্দরে (বর্তমানে আতাতুর্ক বিমানবন্দর) একটি আধুনিক কারিগরী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। ফলে এই কেন্দ্রটি টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বিমানগুলোর কারিগরী রক্ষ্ণাবেক্ষণ সেবা দিতে সমর্থ হয়। এয়ারলাইন্সের মোট কর্মচারী ৬০০০-এর মধ্যে এক চতুর্থাংশই কারিগরী সেবা প্রদানে নিয়োজিত ছিল। ১৯৮৪ সালে টার্কিশ এয়ারলাইন্স কোম্পানির মূলধন ৬০ বিলিয়ন লিরায় উন্নীত করা হয় এবং এক একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। তিনবছর পরে কোম্পানির মূলধন উন্নীট করে ১৫০ বিলিয়ন করা হয়।

১৯৮০ এর মাঝামাঝি সময়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বহরে ৩০টি বিমান ছিল। এসময় এয়ারলাইন্সটি দেশের অভ্যন্তরে ১৬টি এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় ৩৬টি গন্তব্যে বছরে তিন মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করে। টার্কিশ এয়ারলাইন্স তুরস্কের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। ১৯৮৫ সালে টার্কিশ এয়ারলাইন্স এয়ারবাস এ৩১০ চালনা শুরু করে। ১৯৮৬ সালে তুরস্ক-সিঙ্গাপুর পথে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে। ১৯৮৮ সালে ব্রাসেলস হয়ে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটও শুরু হয়।

১৯৮৭ এবং ১৯৮৮ সালে প্রায় এক ডজন এয়ারবাস এ৩১০ ক্রয়ের ফলে টার্কিশ এয়ারলাইন্স মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এসময় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বহরে ছিল ১১টি বোয়িং ৭২৭ এবং ৯টি ডগলাস ডিসি-৯এস। ১৯৮০ এর দশকের শেষাংশে এয়ারলাইন্সটির মোট কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৮,৫০০।

এসময় টার্কিশ এয়ারলাইন্স বৈশ্বিক বিমান-পরিবহন সংকটের সম্মুখীন হয় এবং ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কোন লাভ করতে পারেনি। ১৯৯০-এর মাঝামাঝি সময়ে অবস্থার উন্নতি হয় এবং উত্তর-আমেরিকার গন্তব্য থেকে বেশি যাত্রী গমনাগমন করতে শুরু করে। ১৯৯৪ সালের জুলাই-এ টার্কিশ এয়ারলাইন্স ইস্তানবুল-নিউ ইয়র্ক পথে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে।

১৯৯৫ সালে কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধি করে ১০ ট্রিলিয়ন লিরা করা হয়। এ বছরে এয়ারলাইন্সটি তাদের তিনটি বোয়িং ৭২৭-কে পণ্যবাহী বিমানে পরিণত করে। ডিসি-৯এস বিমান বহর থেকে বাদ দেয়া হয়। ঐ বছর টার্কিশ এয়ারলাইন্স ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা অর্জন করে এবং ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করে।

১৯৯৬ এর দিকে অন্যান্য ইউরোপীয় এয়ারলাইন্সগুলির তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় টার্কিশ এয়ারলাইন্স। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে উন্নতি করার জন্য এয়ারলাইন্সটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের সাথে চুক্তি করে। টার্কিশ এয়ারলাইন্স জাপান এয়ারলাইন্সের সাথে চুক্তির মাধ্যমে ১৯৯৭ ও ৮৮ সালে জাপানের ওসাকা ও টোকিওতে যাত্রী পরিবহন সেবা চালু করে। এছাড়া টার্কিশ এয়ারলাইন্স অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্স, সুইসএয়ার এবং ক্রোয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সাথেও অনুরূপ চুক্তি সম্পন্ন করে।

২০০০-এর দশক[সম্পাদনা]

২০০০ সালে ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি নতুন টার্মিনাল খোলা হয়। টার্কিশ এয়ারলাইন্স তাদের আন্তর্জাতিক গন্তব্যের সংখ্যা ক্রমেই বাড়াতে থাকে এবং এলক্ষ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে। এসব এয়ারলাইন্সের মধ্যে ছিল আসিয়ানা এয়ারলাইন্স, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, মালায়সিয়ান এয়ারলাইন্স, পোলিশ এয়ারলাইন্স, চেক এয়ারলাইন্স এবং ক্যাথে প্যাসেফিক। ২০০১ সালে আন্তালিয়া-ফ্রাঙ্কফুর্ট সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়।

২০০১ সালে তুরস্কের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে টার্কিশ এয়ারলাইন্স কিছুটা সমস্যার মুখে পড়ে। সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ এর হামলার পরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এসময় ৩০০ কর্মী ছাটাই হয়, কর্মচারীদের বেতন ১০% হ্রাস করা হয়। বড় কোন ক্ষতি ছাড়াই টার্কিশ এয়ারলাইন্স স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "FInancial Statements 2013" (পিডিএফ)। Turkish Airlines। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৪ 
  2. "Turkish Airlines Fact Sheet" (পিডিএফ)। turkishairlines.com। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৮ 
  3. "Contact Us." Turkish Airlines. Retrieved on 26 June 2010. "Turkish Airlines General Management Turkish Airlines General Management Building Atatürk Airport, Yesilkoy 34149 Istanbul Turkey"
  4. "Map." Turkish Airlines. Retrieved on 26 June 2010.
  5. "Turkish Airlines again expands its network" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Turkish Airlines। ৫ মার্চ ২০১৪। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৫ 
  6. Turkish Airlines - Star Alliance
  7. "Turkish Cargo Destinations"। turkishcargo.com.tr। ২৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]