টম হোরান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টম হোরান
আনুমানিক ১৮৯০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে টম হোরান
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামটমাস প্যাট্রিক হোরান
জন্ম(১৮৫৪-০৩-০৮)৮ মার্চ ১৮৫৪
মিডলটন, কাউন্টি কর্ক, আয়ারল্যান্ড
মৃত্যু১৬ এপ্রিল ১৯১৬(1916-04-16) (বয়স ৬২)
ম্যালভার্ন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামফেলিক্স (ছদ্মনাম)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি রাউন্ড-আর্ম
ভূমিকামাঝারীসারির ব্যাটসম্যান
সম্পর্কজেমস ফ্রান্সিস হোরান (পুত্র), টমাস ইগনাটিয়াস বার্নার্ড হোরান (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ )
১৫ মার্চ ১৮৭৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২১ মার্চ ১৮৮৫ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৭৪–১৮৯১ভিক্টোরিয়া বুশর‌্যাঞ্জার্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৫ ১০৬
রানের সংখ্যা ৪৭১ ৪০২৭
ব্যাটিং গড় ১৮.৮৪ ২৩.২৭
১০০/৫০ ১/১ ৮/১২
সর্বোচ্চ রান ১২৪ ১৪১*
বল করেছে ৩৭৩ ২০৪৪
উইকেট ১১ ৩৫
বোলিং গড় ১৩.০০ ২৩.৬৮
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৪০ ৬/৪০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৬/০ ৩৯/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৫ জুন ২০১৫

টমাস প্যাট্রিক হোরান (ইংরেজি: Tom Horan; জন্ম: ৮ মার্চ, ১৮৫৪ - মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল, ১৯১৬) আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কর্ক এলাকার মিডলটনে জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[১] অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমার অধিকারী মাঝারীসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। মূলতঃ লেগ-সাইডেই তার প্রাধান্য ছিল। এছাড়াও ঐ যুগের প্রচলিত মিডিয়াম-পেসের ন্যায় রাউন্ড-আর্ম বোলিংয়েও তার দক্ষতা ছিল।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া বুশর‌্যাঞ্জার্সের সদস্য ছিলেন।[২] ‘ফেলিক্স’ ছদ্মনামে পরিচিত টম হোরান ক্রিকেট সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন।

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

আইরিশ বংশোদ্ভূত দুইজন ক্রিকেটারের একজন হিসেবে অস্ট্রেলিয়া দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন। ১৮৭৪-৭৫ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। তৎকালীন ভিক্টোরিয়া উপনিবেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন।

১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ড সফরের পূর্বে প্রথম টেস্ট খেলায় অন্যতম সদস্য ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে মার্চ, ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলায় অংশগ্রহণের জন্য তিনিও মনোনীত হন।[৩] অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ন্যাট টমসনের পতনের মাধ্যমে ১ম উইকেট পড়ে। চার্লস ব্যানারম্যানের (১৬৫) সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ রান তুলেন। প্রথম ইনিংসে তিনি ১২ রানে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে হোরান ২০ রান করেন। অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১০৪ রানে অল-আউট হয়। ঐ ইনিংসে তার সংগ্রহটিই দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। খেলায় অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রানের ঐতিহাসিক জয় পায়।[৪]

টম হোরান টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তার প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছেন।[৫] ২৬ জানুয়ারি, ১৮৮৩ তারিখে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের ওয়াল্টার রিডকে বোল্ড করে এ কীর্তিগাথা রচনা করে।[৬][৭]

অধিনায়কত্ব লাভ[সম্পাদনা]

চার বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ড সফর করেন এবং ওভালে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ টেস্টে অংশ নেন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ও শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে ১৮৮৪-৮৫ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দুই টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন। কিন্তু উভয় টেস্টেই হেরে যায় তার দল।

১৮৮৪-৮৫ মৌসুমে ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছিল। ইংল্যান্ড দলের অস্ট্রেলিয়া সফরকালে সংঘটিত খেলোয়াড়দের সাথে দল নির্বাচকমণ্ডলীর আর্থিক মতানৈক্যের কারণে টেস্ট খেলার জন্যে মনোনীত হন। প্রবেশদ্বারে অর্জিত অর্থের পঞ্চাশ শতাংশ দাবী করা হয়েছিল। ঐ সময়ে নিউ সাউথ ওয়েলস বনাম ভিক্টোরিয়ার মধ্যকার খেলা শেষে ১ জানুয়ারি, ১৮৮৫ তারিখে মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবার কথা ছিল। তবে, জ্যাক ব্ল্যাকহাম, হ্যারি বয়েল, জর্জ বোনরপার্সি ম্যাকডোনেলের ন্যায় শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নিউ সাউথ ওয়েলসীয় খেলোয়াড় এ সফরে আর্থিক বিষয়ে আপত্তি করেন। তারা এর প্রতিবাদস্বরূপ প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

ভিক্টোরিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ ঐ টেস্টে নয়জন খেলায়াড়কে নিয়ে দল গঠন করে। টম হোরানকে অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।[৮]

২৬ থেকে ২৯ বছর বয়সে তিনি তার স্বর্ণালী সময় অতিক্রম করেন। এ সময়ে তিনি তার প্রথম-শ্রেণীর আট সেঞ্চুরির সাতটি করেন। তন্মধ্যে জানুয়ারি, ১৮৮২ সালে নিজ দেশে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিজস্ব সর্বোচ্চ ১২৪ রান তুলেন।

সাংবাদিকতা[সম্পাদনা]

পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবনের বোলিং গড়
চার্লস ম্যারিয়ট (ইংল্যান্ড)
৮.৭২
ফ্রেডরিক মার্টিন (ইংল্যান্ড)
১০.০৭
জর্জ লোহম্যান (ইংল্যান্ড)
১০.৭৫
লরি ন্যাশ (অস্ট্রেলিয়া)
১২.৬০
জন ফেরিস (অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড)
১২.৭০
টম হোরান (অস্ট্রেলিয়া)
১৩.০০
হ্যারি ডিন (ইংল্যান্ড)
১৩.৯০
আলবার্ট ট্রট (অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড)
১৫.০০
মাইক প্রোক্টর (দক্ষিণ আফ্রিকা)
১৫.০২
জ্যাক আইভারসন (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.২৩
টম কেন্ডল (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.৩৫
অ্যালেক হারউড (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.৪৫
বিলি বার্নস (ইংল্যান্ড)
১৫.৫৪
জন ট্রিম (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৬.১৬
বিলি বেটস (ইংল্যান্ড)
১৬.৪২

তথ্য: ক্রিকইনফো
যোগ্যতা: পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবনে কমপক্ষে ১০ উইকেট।

১৮৭৯ সালে সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে লেখালেখির কাজ করতেন। মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত ৩৭ বছর যাবৎ এর সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী প্রথম অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার হিসেবে হোরান নিজেকে লেখক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেন। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীকালে অনেক খেলোয়াড় সংবাদমাধ্যমে ঝুঁকে পড়েন।

বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়-লেখক বিল ও’রিলি তাকে দক্ষতাসম্পন্ন ক্রিকেট লেখক হিসেবে বর্ণনা করেন। গিডিওন হেই লিখেছেন যে, ‘মাঠে অত্যন্ত নিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হোরানের সমতুল্য কেবলমাত্র হোরানই।’[৩]

১৯৮৯ সালে তার নিবন্ধের অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়। ক্রিকেট খেলা নিয়ে তার ভূমিকার কথা স্বীকারপূর্বক হোরানকে স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে মরণোত্তর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৯]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

আইরিশ সিটি অব কর্কের কাছাকাছি মিডলটনে জন্মগ্রহণ করেন টম হোরান। শৈশবেই ভাই-বোনদের নিয়ে পিতা-মাতার সাথে অস্ট্রেলিয়া অভিবাসিত হন। মেলবোর্নের ফিটজরয় এলাকায় অবস্থিত বেল স্ট্রিট স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানেই জ্যাক ব্ল্যাকহামের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। ব্ল্যাকহামের সংস্পর্শেই হোরান ক্রিকেটের প্রতি অনুরক্ত হন।

১৮৭৯ সালে মেলবোর্নের এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে কেট পেনিফাদারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাদের সংসারে নয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ঊনবিংশ শতকের শুরুতে দুই সন্তান ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Tom Horan"ESPN Cricinfo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৪ 
  2. CricketArchive Player Oracle, Retrieved 14 April, 2017
  3. Haigh, Gideon (১১ এপ্রিল ২০০৬)। "Tom Horan - Cricket writer par excellence" (ইংরেজি ভাষায়)। CricInfo। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০০৯ 
  4. "England in Australia Test Series - 1st Test Australia v England" (ইংরেজি ভাষায়)। Cricket Archive। ১৯ মার্চ ১৮৭৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০০৯ 
  5. "Bowling records (Test matches) – Wicket with first ball in career" (ইংরেজি ভাষায়)। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪ 
  6. "The Ashes (1882–1883): Scorecard of second Test" (ইংরেজি ভাষায়)। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪ 
  7. "Australia v England: IFW Bligh's XI in Australia 1882/83 (3rd Test) – timeless match" (ইংরেজি ভাষায়)। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪ 
  8. 200 Years of Australian Cricket: 1804–2004বিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজনSydney, Australia: Pan Macmillan Australia Pty Ltd। ২০০৪। পৃষ্ঠা 68আইএসবিএন 1-4050-3641-9 
  9. "Thomas Horan - Media"Hall of Fame (ইংরেজি ভাষায়)। Sports Australia। ৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০০৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
বিলি মারডক
অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক
১৮৮৪-৮৫
উত্তরসূরী
হিউ ম্যাসি