জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা
জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা
স্থানজাঠিভাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, বাংলাদেশ
তারিখ২৩ এপ্রিল ১৯৭১ (ইউটিসি+৬:০০)
লক্ষ্যবাঙালি হিন্দু, রাজবংশী
হামলার ধরনব্রাশফায়ার, গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড
ব্যবহৃত অস্ত্রমেশিনগান
নিহত৩,০০০-৩,৫০০
হামলাকারী দলপাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার

জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা হলো ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার জাঠিভাঙ্গা এলাকায় বাঙালি হিন্দু ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকারদের দ্বারা চালিত একটি গণহত্যা।[১][২] পাকিস্তানিদের সহযোগীরা ছিলেন জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগপাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা। গণহত্যার শিকার সকলেই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। ধারণা করা হয়, গণহত্যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩,০০০ জনেরও বেশি বাঙালি হিন্দু প্রাণ হারান।

ঘটনাবলি[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চণ্ডীপুর, আলমপুর, বাসুদেবপুর, গৌরীপুর, মিলনপুর, খামারভোপলা, শুকানপুকুরী, ঢাবঢুবসহ ১২টি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায় ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।[৩] যাত্রার এক পর্যায়ে তারা জাঠিভাঙ্গা নামক স্থানে একত্রিত হয়। জাঠিভঙ্গায় আসার পর স্থানীয় দালালেরা তাদের পথরোধ করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে খবর দেয়।[৪] হিন্দু পুরুষদের জাঠিভাঙ্গা মাঠে একত্রিত করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুইটি সামরিক ট্রাকে করে তদস্থলে আগমন করে এবং হিন্দুদের সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। সকালে গণহত্যা শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলে। সেনাবাহিনীর প্রস্থানের পর স্থানীয় সহযোগীদরা মৃতদেহ পাশের পাথরাজ নদীর ধারে নিয়ে আসে এবং মাটিচাপা দেয়।[৩]

ঘটনায় ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ জন নিহত হন বলে ধারণা করা হয়।[৫] তবে, হত্যাকাণ্ডে তিন সহস্রাধিক ব্যক্তি নিহত হন বলে স্বীকৃত। আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ জন নারী বিধবা হন বলে ধারণা করা হয়।

স্মৃতিসৌধ[সম্পাদনা]

২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার গণহত্যার স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করে।[৩] ২০১১ সালে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়রা নিহতদের স্মরণে শোকর‍্যালি বের করে এবং স্মরণসভার আয়োজন করে। সভায় বক্তারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবি করেন।[৪]

২০১১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সরকার গণহত্যায় নিহত ৮৯ জনের বিধবা স্ত্রীকে ২,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুল ইসলামের মতে, গণহত্যার শিকার পাঁচশত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রীকে ধাপে ধাপে স্কিমের আওতায় আনা হবে।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Aid for war widows, finally"The Daily Star। আগস্ট ২৫, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৯, ২০১২ 
  2. "Jhathibhanga massacre day observed in Thakurgaon"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৮, ২০১৬ 
  3. "যুদ্ধাপরাধের বিচার চান শহীদদের স্ত্রীরা"Samakal। এপ্রিল ১৮, ২০১০। ২০১৩-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০১২ 
  4. "জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা: ঠাকুরগাঁওয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি"bdnews24.com। এপ্রিল ২৩, ২০১১। নভেম্বর ১৩, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০১২ 
  5. "Thakurgaon was freed on this day in 1971"The Daily Star। ডিসেম্বর ৩, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০১২ 
  6. "ঠাকুরগাঁওয়ের ৫শ' বিধবা ভাতা পাচ্ছেন"The Daily Janakantha। আগস্ট ২৬, ২০১১। নভেম্বর ২৪, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০১২