চৌষট্টি যোগিনী মন্দির, মোরেনা

স্থানাঙ্ক: ২৬°২৬′১২″ উত্তর ৭৮°১৪′০৭″ পূর্ব / ২৬.৪৩৬৮° উত্তর ৭৮.২৩৫২° পূর্ব / 26.4368; 78.2352
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চৌষট্টি যোগিনী মন্দির, অন্যান্য যোগিনী মন্দিরের মত বৃত্তাকৃতি।

মোরেনার চৌষট্টি যোগিনী মন্দির (এটি একাত্তরশো মহাদেব মন্দির নামেও পরিচিত) ভারতীয় অঙ্গরাজ্য মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির যা ভারতের সেইসব কতিপয় যোগিনী মন্দিরগুলির অন্যতম যেগুলি এখনো ভালো অবস্থায় বিদ্যমান। চৌষট্টি প্রকোষ্ঠযুক্ত একটি বৃত্তাকার প্রাচীর দ্বারা নির্মিত এই মন্দিরের মধ্যস্থলে একটি উন্মুক্ত মণ্ডপ এক আঙিনার দ্বারা বিচ্ছিন্ন; যেটিও আকৃতিতে বৃত্তাকার (এখানেই ভগবান শিবের অবস্থান)।[১] বিশ্বাস করা হয় যে, ১৯২০ এর দশকে নির্মিত দিল্লির পার্লামেন্ট হাউজ (সংসদ ভবন) ১৩২৩ সালে উল্লিখিত এই বৃত্তাকৃতি চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের আদর্শে নক্সাকৃত। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এই মন্দিরটিকে একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌধ হিসাবে ঘোষণা করেছে।

অবস্থান[সম্পাদনা]

পাহাড়ের উপর থেকে মন্দিরের দৃশ্য।

মন্দিরটি একশ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত[২] এবং এর প্রবেশপথে পৌঁছাতে একশোটি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। এটি মোরেনা জেলায় পাদাওলির কাছে মিতাওলি (মিতাবলী বা মিতাওয়ালি নামেও পরিচিত) গ্রামে অবস্থিত।[১] চৌষট্টি যোগিনী মন্দির সড়ক, রেল ও বিমানপথ দ্বারা ভালভাবে সংযুক্ত। এর সবচেয়ে নিকটবর্তী রেলহেড হল মোরিনা (যেটি পনেরো কিমি দূরে) এবং বিমানবন্দর হল গোয়ালিয়র, যেটি ৪০ কিলোমিটার (২৫ মা)[৩][৪] দূরে অবস্থিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৩২৩ সালের একটি শিলালিপি অনুসারে (বিক্রম সংবৎ ১৩৮৩ ),[৫] মন্দিরটি মধ্যপ্রদেশের কচ্ছপঘাতবংশীয় মহারাজা দেবপাল (রাজত্বকাল: ১০৫৫ খ্রিঃ - ১০৭৫ খ্রিঃ) নির্মাণ করেন। বলা হয় যে, মন্দিরটিতে সূর্যের আপাত বার্ষিক গতিপথের উপর ভিত্তি করে জ্যোতিষশাস্ত্রগণিতের শিক্ষা দেওয়া হত।[৬]

২৮/১১/১৯৫১ তারিখের ৭১তম আইন দ্বারা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এই মন্দিরটিকে একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌধ হিসাবে ঘোষণা করেছে।[৩][৪]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

কেন্দ্রীয় পবিত্র স্থল
বর্তমানে শিবলিঙ্গ অধিষ্ঠিত গর্ভগৃহ সমন্বিত অভ্যন্তরভাগ

মন্দিরটি বাইরের দিক থেকে বৃত্তাকার এবং একশো সত্তর ফুট ব্যাসার্ধযুক্ত ;[২] এর অভ্যন্তরে চৌষট্টিটি ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ প্রতিটি একটি উন্মুক্ত পিলারের সমষ্টিবদ্ধ মণ্ডপ দ্বারা গঠিত। অন্য একটি পূর্বমুখী বৃত্তাকার মন্দির সমন্বিত সমগ্র স্থাপত্যটির বাইরের বৃত্তাকার দেওয়ালের ছাদটি সমতল। একটি বড় প্যাসেজ বা আঙিনা বাইরের বেষ্টনী ও ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে সমর্পিত মূল মন্দিরের মধ্যে বিদ্যমান। মন্দিরে ঢোকার মুখে একটি খোলা গাড়ী-বারান্দা আছে। [১] বহির্দেওয়ালের বাইরের গাত্রে হিন্দু দেবদেবীদের খোদাইকৃত মূর্তি বর্তমান। চৌষট্টিটি কক্ষের প্রত্যেকটির বহির্বৃত্তে শিবের চিত্র অঙ্কিত আছে। তবুও, সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে একথা সমর্থনলাভ করেছে যে, আদিতে এদের মধ্যে একটি করে যোগিনী চিত্র অঙ্কিত ছিল এবং তার ফলে মন্দিরটির নাম হয় চৌষট্টি যোগিনী মন্দির[৭]

বলা হয় যে, চৌষট্টিটি কক্ষের এবং মূল মন্দিরের ওপরের ছাদে এক-একটি শিখর বা চূড়া ছিল যেগুলি পরে পরিবর্তিত আকার দেবার সময় বাদ দেওয়া হয়। মূল মন্দিরের মধ্যে একটি ছিদ্রযুক্ত ফলক আছে যার মাধ্যমে বৃষ্টির জলকে একটি বড় ভূনিম্নস্থ স্থানে নিকাশ করা হয়। ছাদ থেকে বৃষ্টির জলনিকাশি পাইপলাইনটি চোখে পড়ে। মন্দিরটির প্রাচীন স্মারকসমূহ ঠিকমতো সংরক্ষণে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।[৪]

মন্দিরের নক্সাটি ভূমিকম্পের ধাক্কা প্রতিরোধী, যা গত কয়েক শতক ধরে এর বৃত্তাকার অবয়বের কোন ক্ষতি হতে দেয়নি। মন্দিরটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল তিন (Seismic Zone III) এ অবস্থিত। মন্দিরের ভূমিকম্পের প্রভাব থেকে সুরক্ষার প্রশ্ন ভারতীয় সংসদে তোলা হলে পার্লামেন্টের বৃত্তীয় গঠনের সাথে এর সাদৃশ্য বিতর্কের অবতারণা করেছিল। [৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

চৌষট্টি যোগিনী মন্দির, জবলপুর

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Museums 2001, p. 21.
  2. "Mitawali". National Informatics Centre.
  3. "Ekattarso Mahadeva Temple"। Archaeological Survey of India। 
  4. "History Hunting"The Pioneer। ২১ জুলাই ২০১৩। 
  5. "Research Proposal On"Birth of Women Dacoits A Case Study of U.P. and M.P.""National Informatics Centre, Government of India। ৬ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৬ 
  6. "Government should have confidence in this House". The Hindu. 9 August 2012.
  7. "Chausath Yogini Temple: A striking similarity to the Indian Parliament". New Delhi Television (NDTV).

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Museums, Directorate of Archaeology & (২০০১)। Puratan, Volume 12। Department of Archaeology and Museums, Madhya Pradesh।