কুমির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুমির
সময়গত পরিসীমা: ৫.৫–০কোটি Eocene – বর্তমানকাল
পশ্চিম আফ্রিকান কুমির (ক্রোকোডিলাস সকাস)
লোনা পানির কুমির (ক্রোকোডিলাস পরোসাস)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: সরীসৃপ
বর্গ: ক্রোকোডিলিয়া
আদর্শ প্রজাতি
Crocodylus niloticus
Laurenti, 1768
Genera
Worldwide distribution of crocodiles

কুমির (ক্রোকোডাইল; ক্রোকোডিলাইন উপবর্গ, এরা ট্রু ক্রোকোডাইল নামে পরিচিত) হল একপ্রকার জলচর চতুষ্পদ প্রাণী। এগুলিকে দেখা যায় আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর আমেরিকাদক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে।[১]

কুমির, অ্যালিগেটর ও ঘড়িয়ালরা সাধারণ দৃষ্টিতে একই রকম দেখতে হলেও, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এরা পৃথক বর্গের অন্তর্গত। ঘড়িয়ালের মুখের ডগার কাছটি গোলাকার। তবে অ্যালিগেটর ও কুমিরকে পৃথক করা একটু কঠিন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে কুমিরের মাথাটি সরু ও দীর্ঘ আকারের হয়। অ্যালিগেটরের মুখটি অনেকটা ইংরেজি ইউ (U) আকৃতিবিশিষ্ট এবং কুমিরের মুখটি ইংরেজি ভি (V) আকৃতিবিশিষ্ট হয়। কুমিরের উপরের ও নিচের চোয়াল দুটির প্রস্থ এক এবং নিচের চোয়ালের দাঁতগুলি মুখ বন্ধ থাকা অবস্থায় উপরের চোয়ালের দাঁতগুলির উপরে থাকে। ফলে দাঁতগুলি ওই অবস্থায় দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট্য অ্যালিগেটরের নেই।[২] একই বর্গের অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় কুমির অনেক বেশি উগ্র হয়।[৩]

সব ধরনের কুমিরই আকৃতি ও জীববিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে একই রকম। কিন্তু তাদের আকার, প্রকৃতি, আচরণ ও বাসস্থানের ধরন প্রজাতি অনুসারে বিভিন্ন হয়। যদিও এই সব ব্যাপারে তাদের মধ্যে বেশ কিছু মিলও দেখা যায়। সব কুমিরই অর্ধ-জলচর প্রাণী। এরা মূলত নদী, হ্রদ ও জলাভূমির মিষ্টি জলেই বাস করে। কোনো প্রজাতির কুমির অর্ধ-লবনাক্ত ও লবনাক্ত জলেও বাস করে। এরা মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত মাছ, সরীসৃপ, পাখিস্তন্যপায়ী প্রাণীই এদের খাদ্য।

কুমির বিষুবীয় অঞ্চলে বাস করে। শীতল পরিবেশের প্রতি এরা সংবেদনশীল। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ইওসিন যুগে এরা অন্যান্য ক্রোকোডিলিয়ান প্রজাতির থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল।[৪] ক্রোকোডাইলোমর্ফিয়ার অন্যান্য শাখার মতো এই শাখাটিও বিগত সাড়ে ২২ কোটি বছর ধরে নানা গণ-বিলুপ্তি সত্ত্বেও টিকে আছে। তবে এখন বাসস্থানের সমস্যা ও বেআইনি শিকারের ফলে কুমিরের অনেক প্রজাতিই বিপন্ন বা লুপ্তপ্রায়।

নাম[সম্পাদনা]

  • ভারতীয় কুমীর = মগর (Crocodylus palustris palustris)।
  • মকর = গঙ্গাদেবীর কুমীরের মত দেখতে পৌরাণিক বাহন।
  • সংস্কৃত "কুম্ভীর" শব্দটি থেকে "কুমীর" এসে থাকলেও "কুম্ভ" হয়তো ঘড়িয়ালের নাকের ডগার ঘড়া। সে অর্থে কুম্ভীর ঘড়িয়াল

অ্যালিগেটরকেইম্যান (অ্যালিগেটরিডে পরিবার) ও ঘড়িয়াল (গাভিয়ালিডে) হল কুমীরের (ক্রোকোডিলিডে পরিবার) জাতভাই -সবাই ক্রোকোডিলিয়া বর্গের অন্তর্গত।

এই বর্গ আর্কোসরিয়াদের একমাত্র জীবিত বংশধর- অন্যভাগ ডাইনোসররা বহুদিন অবলুপ্ত।

ক্রোকোডিলিয়া বর্গের বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

  • পিঠের চামড়ার ভিতর হাড়ের মত শক্ত পাত (osteoderms)।
  • বড় তুণ্ড, চোয়াল সজোরে বন্ধ হয় কিন্তু খোলার পেশী তত জোরালো নয়।
  • ঘাড় বিশেষ বাঁকাতে পারেনা।
  • জিভ মুখের বাইরে বার করতে পারেনা। জিভের নিচে প্রধান লবণ রেচন গ্রন্থি।
  • বিশাল লেজ পাশাপাশি চ্যাপ্টা- সাঁতারের প্রধান অঙ্গ, ও লড়াইয়ের অস্ত্র। পিঠে দুইসারি কাঁটা পায়ুর কাছাকাছি এসে একটি সারিতে পরিণত হয়।
  • চার পা, হাঁসের মত লিপ্তপদ (web footed)
  • ডুব দেবার সময় কান বন্ধ করতে পারে।
  • মুখবিবর ও নাসিকাপথ আলাদা করার জন্য দ্বিতীয় তালু (টাকরা/ secondary palate)- তাই মুখে খাবার নিয়েও সহজে শ্বাস নিতে পারে।
  • একমাত্র সরীসৃপ যার চারকক্ষ হৃৎপিণ্ড (ভ্রণাবস্থায় পুরো পৃথক হবার পর অলিন্দদ্বয়ের মধ্যের দেওয়ালে আবার সামান্য ফাঁক তৈরি হয়- ফোরামেন অফ প্যানিজ্জা। জলে ডুব দেবার সময় এটি খোলা হয়- তখন রক্ত ফুসফুসে যায়না।
  • একমাত্র সরীসৃপ যার দাঁত স্তন্যপায়ীদের মত হাড়ে শেকর-গাঁথা (thecodont dentition)
একটি সুন্দর কোকো

কুম্ভীরাশ্রু[সম্পাদনা]

কুমীর কাঁদে না। কুম্ভীরাশ্রু (crocodile tears) শব্দটি কপট কান্না অর্থে ব্যবহৃত হয়।

প্রবাদবিখ্যাত[সম্পাদনা]

  • জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ
  • টাকার কুমীর
  • খাল কেটে কুমির আনা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gatesy, Jorge (২০০৩)। "Combined support for wholesale taxic atavism in gavialine crocodylians" (পিডিএফ)Systematic Biology52 (3): 403–422। ডিওআই:10.1080/1063515035019703  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  2. "Crocodilian Biology Database - FAQ - What's the difference between a crocodile and an alligator"। Flmnh.ufl.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-০৫ 
  3. Guggisberg, C.A.W. (১৯৭২)। Crocodiles: Their Natural History, Folklore, and Conservation। Newton Abbot: David & Charles। পৃষ্ঠা 195। আইএসবিএন 0-7153-5272-5 
  4. Buchanan, L.A. 2009. "Kambara taraina sp. nov. (Crocodylia, Crocodyloidea), a new Eocene mekosuchine from Queensland, Australia, and a revision of the genus". Journal of Vertebrate Paleontology 29 (2): 473–486.

অধিকতর পঠন[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]