কাসিদা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসায় লেখা কাসিদ

কাসিদা একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ কবিতার ছন্দে কোন প্রিয়জনের প্রশংসা করা।[১] আরবি শব্দ ক্বাসাদ বিবর্তিত হয়ে ফার্সি 'কাসিদা' হয়েছে।[২]

শব্দের বুত্পত্তি[সম্পাদনা]

আরবী শব্দ 'ক্কাসদ' (قصد) অর্থ নিরেট ও পরিপূর্ণ; মস্তিষ্ক বা মজ্জা; ইচ্ছে করা; আকাঙ্ক্ষা; প্রত্যাশা।[১] যে কবিতায় প্রিয়জনের প্রশংসা করা হয় তাদেরকে আরবী-পরিভাষায় 'কাসিদা' বলে।[২][৩]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

গঠন[সম্পাদনা]

সাহিত্যিক ইবনে কুতাইবাহ কাসিদাকে তিনটি অংশে বিভক্ত করেছেন; নবম শতকে তার লিখিত ‘কিতাব আল-শির ওয়া-আল-শুয়ারা’ (‘Book of Poetry and Poets’)-এ রয়েছে কাসিদার গঠনতত্ত্ব:[১][২]

  • প্রথম অংশ ‘নসিব’: শুরু হবে স্মৃতি-কাতরতা থেকে।
  • দ্বিতীয় অংশ ‘তাখাল্লাস’: স্মৃতি-কাতর বিবরণ থাকবে এতেও, সাথে থাকতো গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা-প্রকৃতির বর্ণনা; এরপর আবেগ-আচ্ছন্নতা থেকেই দেয়া হতো অভিযাত্রার বর্ণনা, যা ‘রাহিল’ নামে পরিচিত।
  • তৃতীয় বা শেষ অংশে দেয়া হতো উপদেশ: এটি তিনভাবে দেয়া হতো:
    • ‘ফাখর’: যেখানে স্ব-গোষ্ঠীর গুণকীর্তন করা হতো;
    • ‘হিজা’: যেখানে অপরাপর গোষ্ঠী সম্পর্কিত স্যাটায়ার করা হতো;
    • ‘হিকাম’: যেখানে প্রচার করা হতো কিছু নৈতিক বাণী।

প্রকার[সম্পাদনা]

কাসিদা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; এগুলোর প্রশস্তিমূলক, দর্শনতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, রমজান উপক্ষে রচিত প্রভৃতি ধরন রয়েছে। কাসিদা সাধারণত: দীর্ঘাকৃতির হয়;[৪] দৈর্ঘ্যে ৬০ হতে ১০০ লাইন; কখনও কখনও তা ২০০ লাইনেরও বেশি হয়।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে চর্চার ইতিহাস[সম্পাদনা]

ফার্সিভাষী মোগলদের মাধ্যমে বাংলা অঞ্চলে কাসিদার প্রচলন ঘটে; আর এই সম্পর্কিত প্রাচীনতম তথ্যটি পাওয়া যায় ১৬০৮ সালে ইসলাম খান চিশতির সাথে নৌ-বহর নিয়ে যশোরে আগত মোঘল সেনাপতি মির্জা নাথানের 'বাহারিস্তান-ই-গায়বি' গ্রন্থে।[২][৫]

বাংলাদেশে, বিশেষত: রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে রমজান মাসে সাহরী খাবার জন্য পাড়ায় পাড়ায় দলবেঁধে কাসিদা গেয়ে মুসলমানদের ঘুম থেকে উঠার জন্যে ডাকা হয়, যা এখানকার দীর্ঘদিনের একটি ঐতিহ্য। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকার কাসিদা ঐতিহ্য।[৬][৭] তবে কখনো কখনো এই দলগুলোর মধ্যে কাসিদা গাওয়া নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও ঘটে থাকে।[৮]

সংযুক্ত আরব আমীরাতে স্কুল পর্যায়ে কাসিদা প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বিচিত্রিতা: কাসিদা।
  2. "কাসিদা"। ২২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৫ 
  3. "পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কাসিদা"। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৬-২৫ 
  4. আমিরাতে কাসিদা প্রতিযোগিতা।
  5. Mirza Nathan (1604). Baharistan-i-Ghaib
  6. Mahmud, Majid Maqbool,Faisal। "Ramadan: South Asia's dying traditions on waking up the faithful"Al Jazeera (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-৩০ 
  7. "The dying art of Qasida"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৩-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-৩০ 
  8. "হাজারীবাগে কাসিদা গাওয়া নিয়ে দু'গ্রুপের সংঘর্ষ"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫ 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]