উদয়ী মানিকজোড়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উদয়ী মানিকজোড়
উদয়ী মানিকজোড়, জাপান
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Ciconiiformes
পরিবার: Ciconiidae
গণ: Ciconia
প্রজাতি: C. boyciana
দ্বিপদী নাম
Ciconia boyciana
Swinhoe, 1873
বিস্তৃতি

       প্রজননক্ষেত্র
       শীতকালীন বিচরণস্থল

উদয়ী মানিকজোড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Ciconia boyciana) Ciconiidae (সাইকোনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Ciconia (সাইকোনিয়া) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির বৃহদাকৃতির জলচর পাখি। উদয়ী মানিকজোড়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বয়েসের মানিকজোড় (লাতিন: ciconia = মানিকজোড়, boyciana = বয়েসেরর, রবার্ট হেনরি বয়েসের নামানুসারে)। পাখিটি প্রায় সমগ্র পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[২] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে বিপন্ন বলে ঘোষণা করেছে।[১] প্রজাতিটি স্বভাবে পরিযায়ী এবং কোন উপপ্রজাতি নেই। সারা পৃথিবীতে উদয়ী মানিকজোড়ের সংখ্যা আনুমানিক ১০০০-২৪৯৯টি।[২]

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

উদয়ী মানিকজোড়ের প্রজননস্থল এবং স্থায়ী আবাস চীনরাশিয়ার পূর্ববর্তী সীমান্ত। এছাড়া সম্প্রতি সীমান্তের দক্ষিণে হাইলংজিয়াং প্রদেশে এদের বংশবিস্তার করার খবর পাওয়া গেছে। গ্রীষ্মকালে পূর্ব মঙ্গোলিয়ায় এদের অনিয়মিত হিসেবে দেখা যায়। শীতকাল এদের প্রধান পরিযানস্থল তাইওয়ানহংকং পর্যন্ত সমগ্র ইয়াংজি বেসিন। খুব অল্প সংখ্যায় এদেরকে জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়ায় দেখা যায়।[১] ২০০৭ সালের মে মাসে জাপানে প্রায় ৪০ বছর পর বন্য পরিবেশে একজোড়া উদয়ী মানিকজোড়ের ডিম ফুটে ছানা বের হয়।[৩] ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমারনেপালে উদয়ী মানিকজোড় শীতকালীন পরিযায়ী হিসেবে আসে বলে বিভিন্ন বই-পুস্তকে দাবি করা হলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।[১][৪] এমনকি পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় পাখিটি কখনও দেখা গেছে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।[৫]

বিবরণ[সম্পাদনা]

উড়ন্ত উদয়ী মানিকজোড়

উদয়ী মানিকজোড় আকারে বেশ বড়সড় পাখি। দৈহিক গঠনের দিক থেকে এর সাথে ধলা মানিকজোড়ের বেশ মিল। সেকারণে এক সময় প্রজাতিটিকে ধলা মানিকজোড়ের একটি উপপ্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হত। ধলা মানিকজোড়ের তুলনায় এটি আকারে বেশ বড়। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১০-১৫০ সেন্টিমিটার, ডানার বিস্তার ৭.৩ ফুট এবং ওজন ২.৮-৫.৯ কেজি।[৬][৭] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে কোন যৌন দ্বিরূপতা নেই। তবে পুরুষ পাখি গড়ে স্ত্রী পাখির থেকে একটু বড়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা কালো। পালকে মেলানিন থাকার কারণে পালক কালো দেখায়। গলা, পিঠ, ডানা-ঢাকনি, দেহতল, লেজ ও লেজ-ঢাকনি সাদা। অন্যসব মানিকজোড়ের মত মুখে পালকহীন চামড়া নেই। চোখের কোলের চামড়া লাল। এছাড়া ঠোঁটের নিচের চামড়া পালকহীন ও গোলাপি। লম্বা পা টকটকে লাল রঙের। চোখ খড় হলুদ। লম্বা সোজা ঠোঁটের গোড়ায় হালকা লালচে ভাব থাকে। ঠোঁট স্লেট ধূসর। অপ্রাপ্তবয়স্ক মানিকজোড়ের ঠোঁট কমলা।

স্বভাব[সম্পাদনা]

উদয়ী মানিকজোড় ঘাসক্ষেত, জলাভূমি, পতিত জমি এবং ডোবাময় মাঠে বিচরণ করে। শুষ্ক এলাকায়ও দেখা যায়। সচরাচর একা, জোড়ায় ছোট ঝাঁকে থাকে। খাবারের সন্ধানে খুব ভোরে জলাভূমিতে নামে। হেঁটে হেঁটে ভেজা ঘাস ও জলাভূমিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে এরা মাংসাশী পাখি। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, শামুক, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, ছোট স্তন্যপায়ী ও মাছ। ধীরে ধীরে ডানা মেলে এরা উড়ে চলে। হালকা বাতাসে ভেসে থাকে। আশ্রয়ের জন্য এরা একটিমাত্র গাছকে বেছে নেয়। কোন ব্যাঘাত না ঘটলে ঐ গাছে এরা রাতের পর রাত আশ্রয় নেয়। শীতে সচরাচর নীরব থাকে। তবে প্রজনন মৌসুমে ঠোঁট দিয়ে ঠক-ঠক আওয়াজ তোলে।

প্রজনন[সম্পাদনা]

প্রজনন মৌসুমে এরা লোকালয়ের উঁচু দালান, ঘরবাড়ি, খাড়া বাঁধ কিংবা উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে বড় মাচার মত আগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই বাসা করে। বাসা বানাতে ৫-১৫ দিন সময় লাগে। বাসা বানানো শেষে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সংখ্যায় ২-৬টি এবং সাদা রঙের। ৩০ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ciconia boyciana ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে, The IUCN Red List of Threatened Species এ উদয়ী মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
  2. Ciconia boyciana ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ আগস্ট ২০১২ তারিখে, BirdLife International এ উদয়ী মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
  3. Endangered white storks hatch egg, Steve Jackson, BBC News, 20 May 2007.
  4. Olivier, R.C.D. (১৯৭৯)। Wildlife Conservation and Management in Bangladesh, FAO Field Doc. no. 10। FAO। 
  5. Rasmussen, P. C. and Anderton, J.C. (২০০৫)। Birds of South Asia: the Ripley Guide। Barcelona: Lynx Edicions। 
  6. Hancock & Kushan, Storks, Ibises and Spoonbills of the World. Princeton University Press (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-১২-৩২২৭৩০-০
  7. CRC Handbook of Avian Body Masses by John B. Dunning Jr. (Editor). CRC Press (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৪৯৩-৪২৫৮-৫.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]