আড়ং (ব্র্যাক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আড়ং
ধরনএনজিও
শিল্পপোশাক, গহনা, গৃহস্থালী ও আনুষঙ্গিক উপকরণ, নকশা, নারী উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন
প্রতিষ্ঠাকালঢাকা, বাংলাদেশ (১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৮ (1978-12-18))[১]
প্রতিষ্ঠাতাআয়েশা আবেদ
মার্থা চেন
সদরদপ্তর,
অবস্থানের সংখ্যা
২১টি (ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, সিলেটময়মনসিংহে ২০টি আড়ং ও ধানমণ্ডিতে ১টি তাগা আউটলেট)[২]
বাণিজ্য অঞ্চল
বাংলাদেশ
প্রধান ব্যক্তি
শিলু আবেদ, প্রতিষ্ঠাতা
ফজলে হাসান আবেদ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ব্র‍্যাক
ড. মুহাম্মদ মুসা, নির্বাহী পরিচালক, ব্র‍্যাক
তামারা হাসান আবেদ, জ্যেষ্ঠ পরিচালক, ব্র‍্যাক
মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা
শশী কুমার, পরিচালন প্রধান, এএএফ
পণ্যসমূহপোশাক
গহনা
কাপড়
হস্তশিল্প
চামড়া শিল্প
জুতা
গৃহস্থালী সামগ্রী
আয়২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১২ অর্থবছর)
বিভাগসমূহতাগা
ওয়েবসাইটwww.aarong.com

আড়ং বাংলাদেশের একটি হস্ত ও কারুশিল্প ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।[৩] ব্র্যাকের পরিচালক ফজলে হাসান আবেদ ১৯৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর আড়ং প্রতিষ্ঠা করেন।[১] বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের ৮টি শহরে আড়ং-এর মোট ২৯ টি শাখা রয়েছে।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আড়ং একটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ। ৬৫ হাজার মানুষ আড়ংয়ের জন্য পণ্য উৎপাদন করেন। দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে আড়ং। ২০১৭ সালে পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা।[৫] বিক্রির পরিমাণ বছরে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। স্যার ফজলে হাসান আবেদের হাতে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি শুরু হয়। শুরুতে এসব পণ্য ঢাকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করা হতো।

১৯৭৬ সালে মানিকগঞ্জের ৫ জন দুস্থ নারী নিয়ে কাজ শুরু করেন আয়েশা আবেদ।[৬] এক দুর্ঘটনায় ১৯৮১ সালে মারা যান আয়েশা আবেদ। ১৯৮৩ সালে মানিকগঞ্জে প্রথম ‘আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন ফজলে হাসান আবেদ। এরপর ধীরে ধীরে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠে জামালপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, শেরপুর, ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামে। বর্তমানে সারাদেশে ১৪টি ফাউন্ডেশন রয়েছে। আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন হচ্ছে আড়ংয়ের পণ্য তৈরির কারখানা। মানিকগঞ্জে রয়েছে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের প্রধান কারখানা। ৫টি শাখার তত্ত্বাবধানে রয়েছে ৮০টি সাব-সেন্টার। টেইলারিং, ব্লক প্রিন্ট, ক্রিন প্রিন্ট, টাই-ডাই, ক্যামিকেল ডাই, ন্যাচারল ডাই, বাটিক, হ্যান্ড প্রিন্ট, তাঁতসহ সকল গার্মেন্টস আইটেমের কাজ করা হয়। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি ও শার্টের কাজ হয় মানিকগঞ্জে। নকশীকাঁথার কাজ হয় জামালপুর, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও যশোরে। দেশে সাব-সেন্টার রয়েছে ৬৬০টি।[৭]

১৯৭৮ সালে রাজধানীর সোবহানবাগে আড়ংয়ের একটি বিক্রয়কেন্দ্র যাত্রা শুরু করে। আড়ংয়ের কর্মীদেরও ৪৫ শতাংশ নারী।

আড়ং সাইন বোর্ড
আড়ং এর শপিং ব্যাগ

পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • এক্সিলেন্স ইন সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি ২০১৮ ও ২০১৯[৮]
  • ইন্টারন্যাশনাল ক্র্যাফট অ্যাওয়ার্ড, ক্র্যাফট ভিলেজ অর্গানাইজেশন, ভারত ২০১৭
  • এশিয়া মার্কেটিং এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬
  • অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ফর হ্যান্ডিক্র্যাফট, ইউনেস্কো ২০১২

সমালোচনা ও বয়কট[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে নির্ধারিত দামের দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে আড়ংয়ের উত্তরা শাখাকে চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। শাখাটি একদিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।[৯] ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভবনের কমন স্পেস শো-রুমের কাজে ব্যবহার করায় পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘আড়ং’কে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।[১০] জরিমানা করার ২৪ ঘণ্টার মাঝেই সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি করা হয়।

২০২১ সালের মার্চ মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আড়ংয়ে বিক্রয়কর্মী পদে এক মুসলিম যুবক অভিযোগ করেন: দাঁড়ি কাটতে রাজি না হওয়ায় চাকরি পাওয়া থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আড়ং ব্যাপক সমালোচনায় পরে ও ‘বয়কট আড়ং’ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে সমালোচিত হয়।[১১] পরবর্তীতে আড়ং চাকরিপ্রার্থীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি দুঃখজনক বলে ঘোষণা দেয়।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের পাতা ছিঁড়ে রূপান্তরকাম বিরোধী প্রতিবাদ প্রদর্শন করলে তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আসিফ মাহতাব চাকরিচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি[১২][১৩] সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্র্যাক ভিত্তিক হস্ত ও কারুশিল্প ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান 'আড়ং' বয়কটের আহ্বান জানান।[১৪] তাছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রূপান্তরকাম বিরোধী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে 'আড়ং' বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।[১৫][১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আড়ংয়ের চার দশক"। আলোর নকশা, ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা, প্রথম আলো। পৃষ্ঠা ৪। ৬ নভেম্বর ২০১৮। 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৪ 
  3. কাজী নিপু। "আড়ং – দেশের সর্ববৃহৎ মোমবাতির সংগ্রহশালা"Newspaper1971.com। Newspaper1971.com। ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ 
  4. https://bangladeshpost.net/posts/aarong-opens-its-29th-outlet-in-barishal-133758
  5. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৮-১০-২৬)। "আড়ংয়ের মুনাফা ব্যয় হয় দরিদ্র মানুষের কল্যাণে"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Shuvra, Md Fuad Rabbi (২০২৩-০৭-১১)। "Ayesha Abed: The soul of BRAC"The Good Feed (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ 
  7. "৬৫ হাজার কর্মীর 'আড়ং'"www.uddoktarkhoje.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ 
  8. "About Aarong"www.aarong.com। ২০১৯-০৮-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ 
  9. "আড়ংয়ে দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রি, উত্তরা শাখা এক দিনের জন্য বন্ধ"আমাদের সময়। ৩ জুন ২০১৯। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৯ 
  10. "বনানীতে আড়ংকে দুই লাখ টাকা জরিমানা"। বাংলা ট্রিবিউন। ৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৯ 
  11. "দাড়ি থাকায় চাকরি প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ আড়ংয়ের বিরুদ্ধে"BBC News বাংলা। ২০২১-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৫ 
  12. "পাঠ্যবই নিয়ে কথা বলায় চাকরিচ্যুত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব"দৈনিক ইনকিলাব। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  13. "আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুমুল সমালোচনা"দৈনিক ইনকিলাব। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  14. "সামাজিক মাধ্যমে ব্র্যাক-বিকাশ-আড়ং বয়কটের ডাক; বাস্তবে যা দেখা গেলো"দ্যা বাংলাদেশ মোমেন্টস। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  15. "ব্র্যাক বয়কটের ডাক শিক্ষার্থীদের"দৈনিক ইনকিলাব। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  16. "আড়ং ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বয়কটের আহ্বান"দেশ রূপান্তর। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪