আফ্রিকা দখলের লড়াই: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Thijs!bot (আলোচনা | অবদান)
r2.6.3) (রোবট যোগ করছে: nn:Kappløpet om Afrika
Xqbot (আলোচনা | অবদান)
রোবট পরিবর্তন করছে: he:המרוץ לאפריקה; কসমেটিক পরিবর্তন
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{Unreferenced|date=মার্চ ২০১০}}
{{Unreferenced|date=মার্চ ২০১০}}


[[Image:ColonialAfrica 1914.png|thumb|right|350px|১৯১৪ সালে আফ্রিকায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দখলকৃত এলাকা]]'''আফ্রিকা দখলের লড়াই''' ([[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি ভাষায়]]: Scramble for Africa) ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ৭টি ইউরোপীয় দেশের (যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি) আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশ উপনিবেশ আকারে করায়ত্ত করার প্রতিযোগিতা। ১৮৭০-এর দশকে এটি শুরু হয়, ১৮৮০ ও ১৮৯০-এর দশকে এটি চরমে পৌঁছে, এবং ২০শ শতকের শুরুর দশকে এর সমাপ্তি ঘটে। আফ্রিকার সাধারণ জনগণ এই উপনিবেশ স্থাপনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও ইউরোপীয়দের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে পরাজিত হয়।
[[চিত্র:ColonialAfrica 1914.png|thumb|right|350px|১৯১৪ সালে আফ্রিকায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দখলকৃত এলাকা]]'''আফ্রিকা দখলের লড়াই''' ([[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি ভাষায়]]: Scramble for Africa) ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ৭টি ইউরোপীয় দেশের (যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি) আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশ উপনিবেশ আকারে করায়ত্ত করার প্রতিযোগিতা। ১৮৭০-এর দশকে এটি শুরু হয়, ১৮৮০ ও ১৮৯০-এর দশকে এটি চরমে পৌঁছে, এবং ২০শ শতকের শুরুর দশকে এর সমাপ্তি ঘটে। আফ্রিকার সাধারণ জনগণ এই উপনিবেশ স্থাপনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও ইউরোপীয়দের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে পরাজিত হয়।


১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয়রা কেবল আফ্রিকার অংশবিশেষের, বিশেষত উপকূলীয় এলাকায়, কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছিল। ম্যালেরিয়া আর পীতজ্বরের প্রকোপে তারা আফ্রিকার গভীরে প্রবেশ করতে পারছিল না। ব্রিটেনের দখলে ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তরীপ। এছাড়া সিয়েরা লিয়োন ও আরও কিছু পশ্চিম আফ্রিকান এলাকা ব্রিটেনের দখলে ছিল। ফ্রান্স ১৮৩৪ সালে আলজেরিয়া দখল করে; এছাড়াও ফ্রান্স সেনেগাল নদীর তীরের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। পর্তুগাল অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকের দখল নেয়। এসময় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অংশ দখলে রেখেছিল [[উসমানীয় সাম্রাজ্য]]। তিউনিসিয়া থেকে মিশর হয়ে লোহিত সাগরের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত এ সাম্রাজ্যের দখল ছিল।
১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয়রা কেবল আফ্রিকার অংশবিশেষের, বিশেষত উপকূলীয় এলাকায়, কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছিল। ম্যালেরিয়া আর পীতজ্বরের প্রকোপে তারা আফ্রিকার গভীরে প্রবেশ করতে পারছিল না। ব্রিটেনের দখলে ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তরীপ। এছাড়া সিয়েরা লিয়োন ও আরও কিছু পশ্চিম আফ্রিকান এলাকা ব্রিটেনের দখলে ছিল। ফ্রান্স ১৮৩৪ সালে আলজেরিয়া দখল করে; এছাড়াও ফ্রান্স সেনেগাল নদীর তীরের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। পর্তুগাল অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকের দখল নেয়। এসময় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অংশ দখলে রেখেছিল [[উসমানীয় সাম্রাজ্য]]। তিউনিসিয়া থেকে মিশর হয়ে লোহিত সাগরের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত এ সাম্রাজ্যের দখল ছিল।
১১ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
এই সবকিছুর ধারাবাহিকতায় ১৮৮০-র দশকের শুরুর দিকে ধীরে ধীরে আফ্রিকা দখলের লড়াই শুরু হয়। ১৮৮৪-১৮৮৫ সালের বার্লিন পশ্চিম আফ্রিকা সম্মেলনের পর পুরোদমে এর বিস্তার ঘটে। ২০শ শতকের শুরুর দশক পর্যন্ত সময় আফ্রিকান অধিবাসীদের বাধা দূর করতে পার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১৯১২ সালের দিকে [[লাইবেরিয়া]] ও [[ইথিয়োপিয়া]] বাদে গোটা আফ্রিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দখলে আসে। এসময় ঔপনিবেশিক শাসন গোটা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনে। আফ্রিকান উপনিবেশগুলি কেবল ১৯৫৫ ও ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্বাধীনতা লাভ করে। অনেকগুলি দেশ ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এসে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন অর্জন করে।
এই সবকিছুর ধারাবাহিকতায় ১৮৮০-র দশকের শুরুর দিকে ধীরে ধীরে আফ্রিকা দখলের লড়াই শুরু হয়। ১৮৮৪-১৮৮৫ সালের বার্লিন পশ্চিম আফ্রিকা সম্মেলনের পর পুরোদমে এর বিস্তার ঘটে। ২০শ শতকের শুরুর দশক পর্যন্ত সময় আফ্রিকান অধিবাসীদের বাধা দূর করতে পার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১৯১২ সালের দিকে [[লাইবেরিয়া]] ও [[ইথিয়োপিয়া]] বাদে গোটা আফ্রিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দখলে আসে। এসময় ঔপনিবেশিক শাসন গোটা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনে। আফ্রিকান উপনিবেশগুলি কেবল ১৯৫৫ ও ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্বাধীনতা লাভ করে। অনেকগুলি দেশ ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এসে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন অর্জন করে।


[[Category:আফ্রিকার ইতিহাস]]
[[বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার ইতিহাস]]


[[an:Reparto d'Africa]]
[[an:Reparto d'Africa]]
২৩ নং লাইন: ২৩ নং লাইন:
[[eu:Afrikaren banaketa]]
[[eu:Afrikaren banaketa]]
[[fr:Partage de l'Afrique]]
[[fr:Partage de l'Afrique]]
[[he:המירוץ לאפריקה]]
[[he:המרוץ לאפריקה]]
[[hi:अफ्रीका के लिये हाथापाई]]
[[hi:अफ्रीका के लिये हाथापाई]]
[[hr:Utrka za Afriku]]
[[hr:Utrka za Afriku]]

২০:৩৪, ৮ মে ২০১১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

১৯১৪ সালে আফ্রিকায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দখলকৃত এলাকা

আফ্রিকা দখলের লড়াই (ইংরেজি ভাষায়: Scramble for Africa) ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ৭টি ইউরোপীয় দেশের (যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি) আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশ উপনিবেশ আকারে করায়ত্ত করার প্রতিযোগিতা। ১৮৭০-এর দশকে এটি শুরু হয়, ১৮৮০ ও ১৮৯০-এর দশকে এটি চরমে পৌঁছে, এবং ২০শ শতকের শুরুর দশকে এর সমাপ্তি ঘটে। আফ্রিকার সাধারণ জনগণ এই উপনিবেশ স্থাপনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও ইউরোপীয়দের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে পরাজিত হয়।

১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয়রা কেবল আফ্রিকার অংশবিশেষের, বিশেষত উপকূলীয় এলাকায়, কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছিল। ম্যালেরিয়া আর পীতজ্বরের প্রকোপে তারা আফ্রিকার গভীরে প্রবেশ করতে পারছিল না। ব্রিটেনের দখলে ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তরীপ। এছাড়া সিয়েরা লিয়োন ও আরও কিছু পশ্চিম আফ্রিকান এলাকা ব্রিটেনের দখলে ছিল। ফ্রান্স ১৮৩৪ সালে আলজেরিয়া দখল করে; এছাড়াও ফ্রান্স সেনেগাল নদীর তীরের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। পর্তুগাল অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকের দখল নেয়। এসময় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অংশ দখলে রেখেছিল উসমানীয় সাম্রাজ্য। তিউনিসিয়া থেকে মিশর হয়ে লোহিত সাগরের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত এ সাম্রাজ্যের দখল ছিল।

এতকিছু সত্ত্বেও ১৮৭০-এর দশক পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশের ৯০% স্থানীয় আফ্রিকানদেরই দখলে ছিল। সবচেয়ে বড় আফ্রিকান দেশগুলি ছিল মুসলিম রাষ্ট্র, যেমন মাহদীর সুদান, মানদিঙ্কার সামোরি তুরে, ঊর্ধ্ব নাইজার নদীর তীর ঘেঁষে তুকোলোর সাম্রাজ্য এবং মধ্য নাইজারের সোকোতো খিলাফত। পূর্ব আফ্রিকা ছিল দাস ও হাতির দাঁতের ব্যবসাকেন্দ্র, যেখানে জাঞ্জিবারের সোয়াহিলি-আরব সুলতান আফ্রিকান যুদ্ধনেতাদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরে ছিল একাধিক আফ্রিকান রাষ্ট্র এবং ওলন্দাজ আফ্রিকানারদের দুটি প্রজাতন্ত্র।

লড়াই শুরু হবার প্রাক্বালে পশ্চিম ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের প্রায় ১০০ বছর পূর্তি হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত অঞ্চল। আগ্নেয়াস্ত্র, পরিবহন ও যোগাযোগ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে তখন এই এলাকায় উন্নতি লাভ করছিল। আর প্রতিটি ইউরোপীয় দেশে স্বদেশপ্রেম ছিল তুঙ্গে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নতির কারণে ইউরোপীয়রা অনেকদিন ধরে রোগশোক ছাড়া ক্রান্তীয় অঞ্চলে বাস করতে পারছিল। শিল্প-উৎপাদন এত বেড়ে গিয়েছিল যে অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্যের জন্য কীভাবে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ইউরোপীয়রা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। ১৮৭০-এর দশকে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবার পর ইউরোপীয়রা বিশ্বের অনুন্নত, শিল্পবিহীন অঞ্চলগুলির দিকে নজর দেয়। এগুলিকে একাধারে ইউরোপীয় পণ্যের বাজার ও কাঁচামালের যোগানদার হিসেবে ব্যবহার করা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তার আগে বিখ্যাত স্কটিশ মিশনারি ডেভিড লিভিংস্টোন দাসপ্রথায় জর্জরিত আফ্রিকানদের "সভ্য" খ্রিস্টান বানানোর উদ্দেশ্যে আফ্রিকায় এসেছিলেন। ১৮৭৩ সালে আফ্রিকায় তাঁর মৃত্যু আফ্রিকানদের "সভ্যকরণের" ব্যাপারে ইউরোপীয়দেরকে নতুন করে উৎসাহী করে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলি আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকা দখলে নিলে কীভাবে তাদের নিজেদের শক্তি খর্ব হবে, এ চিন্তায় ইউরোপের প্রতিটি দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

এই সবকিছুর ধারাবাহিকতায় ১৮৮০-র দশকের শুরুর দিকে ধীরে ধীরে আফ্রিকা দখলের লড়াই শুরু হয়। ১৮৮৪-১৮৮৫ সালের বার্লিন পশ্চিম আফ্রিকা সম্মেলনের পর পুরোদমে এর বিস্তার ঘটে। ২০শ শতকের শুরুর দশক পর্যন্ত সময় আফ্রিকান অধিবাসীদের বাধা দূর করতে পার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১৯১২ সালের দিকে লাইবেরিয়াইথিয়োপিয়া বাদে গোটা আফ্রিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দখলে আসে। এসময় ঔপনিবেশিক শাসন গোটা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনে। আফ্রিকান উপনিবেশগুলি কেবল ১৯৫৫ ও ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্বাধীনতা লাভ করে। অনেকগুলি দেশ ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এসে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন অর্জন করে।