বিপণন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
+
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''বাজারজাতকরণ''' হলো [[পণ্য]] বা [[মূল্য|মূল্যের]] বিনিময়ে কোনো ব্যক্তি বা দলের [[প্রয়োজন]] ও [[অভাব]] পূরণ করার সামাজিক এবং ব্যবস্থাপকীয় কার্যক্রম।
'''বাজারজাতকরণ''' হলো [[পণ্য]] বা [[মূল্য|মূল্যের]] বিনিময়ে কোনো ব্যক্তি বা দলের [[প্রয়োজন]] ও [[অভাব]] পূরণ করার সামাজিক এবং ব্যবস্থাপকীয় কার্যক্রম।<ref name="KotlerIntro">''Principles of Marketing'' (10th Edition), Philip Kotler & Gary Armstrong, Pearson Prentice Hall (International Edition), ISBN: 0-13-121276-1; প্রকাশকাল: ২০০৩-২০০৪। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।</ref> Converse-এর মতে, "সময়গত, স্থানগত এবং স্বত্ত্বগত উপযোগ সৃষ্টি করাই বাজারজাতকরণ"। আমেরিকান মার্কেটিং এ্যাসোসিয়েশন-এর প্রদত্ত সংজ্ঞানুসারে:
{{cquote|সংগঠন ও স্টেক হোল্ডারদের সুবিধার্থে ক্রেতা সম্পর্কভিত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং ক্রেতা সৃষ্টি, যোগাযোগ স্থাপন ও ভ্যালু প্রদানের লক্ষ্যে সম্পাদিত সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং প্রক্রিয়ার সমষ্টিকেই বাজারজাতকরণ বলে।<ref name="MktMgt"/><ref name="বাজারজাতকরণব্যবস্থাপনা">''বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা'', মো: জাহিদ হোসেন শিকদার, দেওয়ান জোবাইদা নাসরীন, মো: মঞ্জুরুল আলম; কাজী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০০৬। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।</ref>}}


==বাজারজাতকরণের মৌলিক ধারণাসমূহ==
==বাজারজাতকরণের মৌলিক ধারণাসমূহ==
* অভাব, প্রয়োজন ও চাহিদা
* প্রয়োজন, অভাব ও চাহিদা
* বাজারজাতকরণ অর্পণ
* বাজারজাতকরণ অর্পণ
* ভ্যালু ও সন্তুষ্টি
* ভ্যালু ও সন্তুষ্টি
৩৭ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
বাজারজাতকরণ দিনে দিনে তার ধারণাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাজারজাতকরণের উন্মেষের সূচনালগ্নে ক্রেতাকে যেভাবে দেখা হতো, আজ, বাজারজাতকরণের যুগে ক্রেতাকে তার সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে দেখা হয়। আর এভাবেই বাজারজাতকরণ কতিপয় মতবাদ বা তত্বে যুগে যুগে আলাদা হয়ে গেছে।
বাজারজাতকরণ দিনে দিনে তার ধারণাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাজারজাতকরণের উন্মেষের সূচনালগ্নে ক্রেতাকে যেভাবে দেখা হতো, আজ, বাজারজাতকরণের যুগে ক্রেতাকে তার সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে দেখা হয়। আর এভাবেই বাজারজাতকরণ কতিপয় মতবাদ বা তত্বে যুগে যুগে আলাদা হয়ে গেছে।
===উৎপাদন মতবাদ===
===উৎপাদন মতবাদ===
এই মতবাদ বাজারজাতকরণের লক্ষ্য-সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে পুরোন মতবাদ। এই মতবাদ মতে, ''ক্রেতা সেই পণ্যই আকৃষ্ট হবে, যা সহজলভ্য ও সুলভ''। এই মতবাদের মূল লক্ষ্যই থাকে অধিক উৎপাদন, কম উৎপাদন খরচ এবং বিস্তৃত বণ্টন। এই মতবাদ কাজ করে দুরকম পরিস্থিতিতে:
উৎপাদন মতবাদ (Production Concept) বাজারজাতকরণের লক্ষ্য-সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে পুরোন মতবাদ। এই মতবাদ মতে, ''ক্রেতা সেই পণ্যই আকৃষ্ট হবে, যা সহজলভ্য ও সুলভ''। এই মতবাদের মূল লক্ষ্যই থাকে অধিক উৎপাদন, কম উৎপাদন খরচ এবং বিস্তৃত বণ্টন। এই মতবাদ কাজ করে দুরকম পরিস্থিতিতে:
# যখন যোগানের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যায়
# যখন যোগানের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যায়
# যখন পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং দাম কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হয়
# যখন পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং দাম কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হয়
তবে এতদসত্ত্বেয় উৎপাদন মতবাদের একনিষ্ঠ প্রয়োগ অনেক সময় কোম্পানীকে 'ক্রেতার চাহিদা পূরণের' মূল লক্ষ্য থেকে সরিয়ে রাখে।
তবে এতদসত্ত্বেয় উৎপাদন মতবাদের একনিষ্ঠ প্রয়োগ অনেক সময় কোম্পানীকে 'ক্রেতার চাহিদা পূরণের' মূল লক্ষ্য থেকে সরিয়ে রাখে।<ref name="KotlerIntro"/>
===পণ্য মতবাদ===
===পণ্য মতবাদ===
''ক্রেতা শুধুমাত্র সেই পণ্যে আকৃষ্ট হবে, যা গুণ, মান, বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল এবং পণ্যটির উৎকর্ষ সাধন করা হয়''- এই মতবাদে দিক্ষীত পণ্য মতবাদ। এতে উৎপাদক যেন বিশ্বাস করেন যে, একটা ভালো মানের 'ইঁদুর-ধরা ফাঁদ'ই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু একজন ক্রেতা যে ইঁদুর ধরা ফাঁদের বদলে ইঁদুর মারার পথ খুঁজতে পারেন, তা ভাবা হয় না। তাই পণ্য মতবাদও বাজারজাতকরণ ক্ষীণদৃষ্টির (Marketing myopia) পরিচয় দেয়। তাছাড়া এই মতবাদে অনেক সময়ই সম্ভাব্য প্রতিযোগীকে বিবেচনা করা হয় না।
''ক্রেতা শুধুমাত্র সেই পণ্যে আকৃষ্ট হবে, যা গুণ, মান, বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল এবং পণ্যটির উৎকর্ষ সাধন করা হয়''- এই মতবাদে দিক্ষীত পণ্য মতবাদ (Product Concept)। এতে উৎপাদক যেন বিশ্বাস করেন যে, একটা ভালো মানের 'ইঁদুর-ধরা ফাঁদ'ই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু একজন ক্রেতা যে ইঁদুর ধরা ফাঁদের বদলে ইঁদুর মারার পথ খুঁজতে পারেন, তা ভাবা হয় না। তাই পণ্য মতবাদও বাজারজাতকরণ ক্ষীণদৃষ্টির (Marketing myopia) পরিচয় দেয়। তাছাড়া এই মতবাদে অনেক সময়ই সম্ভাব্য প্রতিযোগীকে বিবেচনা করা হয় না।<ref name="KotlerIntro"/>
===বিক্রয় মতবাদ===
===বিক্রয় মতবাদ===
''ক্রেতা ততক্ষণ কোনো পণ্য ক্রয় করবে না, যতক্ষণ কোম্পানীর পক্ষ থেকে পণ্যের পক্ষে জোরালো প্রচার ও প্রসার কার্যক্রম হাতে না নেয়া হয়''- এমনটাই ধারণা বিক্রয় মতবাদের। সাধারণত সচরাচর প্রয়োজন হয়না বা কেনা হয়না এমন পণ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয় মতবাদ কাজে লাগানো হয়; যেমন: বীমা পলিসি, বিশ্বকোষ ইত্যাদি। আবার অনেক কোম্পানীর, চাহিদার চেয়েও যোগান বেশি দেবার ক্ষমতা থাকলে তারাও বিক্রয় মতবাদ ব্যবহার করে। কিন্তু বিক্রয় মতবাদ অনেকাংশেই ব্যবসায়িক ধ্যান-ধারণার মতবাদ; এতে অনেক সময়ই যা উৎপাদন করা হয়, তা বিক্রয় করার চিন্তা করা হয়, কিন্তু বাজার যা চায়, তা বিক্রয় করার চিন্তা করা হয় না।
''ক্রেতা ততক্ষণ কোনো পণ্য ক্রয় করবে না, যতক্ষণ কোম্পানীর পক্ষ থেকে পণ্যের পক্ষে জোরালো প্রচার ও প্রসার কার্যক্রম হাতে না নেয়া হয়''- এমনটাই ধারণা বিক্রয় মতবাদের (Selling Concept)। সাধারণত সচরাচর প্রয়োজন হয়না বা কেনা হয়না এমন পণ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয় মতবাদ কাজে লাগানো হয়; যেমন: বীমা পলিসি, বিশ্বকোষ ইত্যাদি। আবার অনেক কোম্পানীর, চাহিদার চেয়েও যোগান বেশি দেবার ক্ষমতা থাকলে তারাও বিক্রয় মতবাদ ব্যবহার করে। কিন্তু বিক্রয় মতবাদ অনেকাংশেই ব্যবসায়িক ধ্যান-ধারণার মতবাদ; এতে অনেক সময়ই যা উৎপাদন করা হয়, তা বিক্রয় করার চিন্তা করা হয়, কিন্তু বাজার যা চায়, তা বিক্রয় করার চিন্তা করা হয় না।
===বাজারজাতকরণ মতবাদ===
===বাজারজাতকরণ মতবাদ===
বিক্রয় মতবাদের ক্ষীণদৃষ্টিকে সামলে নিয়ে জন্ম হয় বাজারজাতকরণ মতবাদের। [[১৯৫০]] খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝিতে উদ্ভব হয় এ মতবাদের। এ মতবাদ মতে, ''ক্রেতাদের চাহিদা ও সন্তুষ্টির নিমিত্তেই লক্ষ্যার্জন করতে হয়''। বিক্রয় মতবাদের 'পণ্যের জন্য ক্রেতা' ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে 'ক্রেতার জন্য পণ্য' ধারণার মতো যুগান্তকারী অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত ধরণার জন্ম দেয় এই মতবাদ। কিন্তু এ মতবাদও শুধুমাত্র ক্রেতা-ভোক্তা, আর কোম্পানীর বাইরে আর কিছু নিয়ে ভাবে না, তাই এই মতবাদও সর্বাধুনিক মতবাদ নয় বলে অনেকে মনে করেন।
বিক্রয় মতবাদের ক্ষীণদৃষ্টিকে সামলে নিয়ে জন্ম হয় বাজারজাতকরণ মতবাদের (Marketing Concept)। [[১৯৫০]] খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝিতে উদ্ভব হয় এ মতবাদের। এ মতবাদ মতে, ''ক্রেতাদের চাহিদা ও সন্তুষ্টির নিমিত্তেই লক্ষ্যার্জন করতে হয়''। বিক্রয় মতবাদের 'পণ্যের জন্য ক্রেতা' ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে 'ক্রেতার জন্য পণ্য' ধারণার মতো যুগান্তকারী অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত ধরণার জন্ম দেয় এই মতবাদ। কিন্তু এ মতবাদও শুধুমাত্র ক্রেতা-ভোক্তা, আর কোম্পানীর বাইরে আর কিছু নিয়ে ভাবে না, তাই এই মতবাদও সর্বাধুনিক মতবাদ নয় বলে অনেকে মনে করেন।<ref name="KotlerIntro"/>
===সামাজিক বাজারজাতকরণ মতবাদ===
===সামাজিক বাজারজাতকরণ মতবাদ===
[[১৯৭০]] খ্রিস্টাব্দের পর সমাজের উপযোগিতা, স্বার্থ বিবেচনা করে যে বাজারজাতকরণ মতবাদের উন্মেষ ঘটে তা সামাজিক বাজারজাতকরণ মতবাদ হিসেবে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে ক্রেতা-ভোক্তা, কোম্পানীর পাশাপাশি সমাজের, ভালোর এবং নৈতিকতার দৃষ্টিতে বাজারজাতকরণ পরিচালনার ধারণা উৎপত্তিলাভ করে। এতে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণ মুখ্য হয়ে ধরা পড়ে।
[[১৯৭০]] খ্রিস্টাব্দের পর সমাজের উপযোগিতা, স্বার্থ বিবেচনা করে যে বাজারজাতকরণ মতবাদের উন্মেষ ঘটে তা সামাজিক বাজারজাতকরণ মতবাদ (Social Marketing Concept) হিসেবে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে ক্রেতা-ভোক্তা, কোম্পানীর পাশাপাশি সমাজের, ভালোর এবং নৈতিকতার দৃষ্টিতে বাজারজাতকরণ পরিচালনার ধারণা উৎপত্তিলাভ করে। এতে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণ মুখ্য হয়ে ধরা পড়ে।<ref name="KotlerIntro"/>
===সামগ্রিক বাজারজাতকরণ মতবাদ===
===সামগ্রিক বাজারজাতকরণ মতবাদ===
কিন্তু অপরাপর সকল মতবাদই কোনো না কোনো দৃষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলে এই ফাঁক পূরণ করতে একবিংশ শতাব্দিতে উদ্ভব হয় সামগ্রিক বাজারজাতকরণ মতবাদের। এই মতবাদে মনে করা হয়, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সংঘটিত সকল ঘটনা বা কর্মকান্ডেরই একটি বৃহৎ, সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকা উচিত। এই মতবাদ মূলত বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা ও জটিলতা নিরসনে সহায়তা করে। এই মতবাদে মূলত চারটি অংশকে প্রাধান্য দেয়া হয়:
কিন্তু অপরাপর সকল মতবাদই কোনো না কোনো দৃষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলে এই ফাঁক পূরণ করতে একবিংশ শতাব্দিতে উদ্ভব হয় সামগ্রিক বাজারজাতকরণ মতবাদের (Holistic Marketing Concept)। এই মতবাদে মনে করা হয়, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সংঘটিত সকল ঘটনা বা কর্মকান্ডেরই একটি বৃহৎ, সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকা উচিত।<ref name="MktMgt">''Marketing Management'' (12th Edition), Philip Kotler & Kevin Lane Keller, Prentice Hall India, ISBN: 81-203-2799-3; প্রকাশকাল: ২০০৬। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।<ref> এই মতবাদ মূলত বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা ও জটিলতা নিরসনে সহায়তা করে। এই মতবাদে মূলত চারটি অংশকে প্রাধান্য দেয়া হয়:
* সম্পর্ক বাজারজাতকরণ
* সম্পর্ক বাজারজাতকরণ
** ক্রেতা
** ক্রেতা

২০:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০১১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাজারজাতকরণ হলো পণ্য বা মূল্যের বিনিময়ে কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রয়োজনঅভাব পূরণ করার সামাজিক এবং ব্যবস্থাপকীয় কার্যক্রম।[১] Converse-এর মতে, "সময়গত, স্থানগত এবং স্বত্ত্বগত উপযোগ সৃষ্টি করাই বাজারজাতকরণ"। আমেরিকান মার্কেটিং এ্যাসোসিয়েশন-এর প্রদত্ত সংজ্ঞানুসারে:

বাজারজাতকরণের মৌলিক ধারণাসমূহ

  • প্রয়োজন, অভাব ও চাহিদা
  • বাজারজাতকরণ অর্পণ
  • ভ্যালু ও সন্তুষ্টি
  • বিনিময়, লেনদেন এবং সম্পর্ক
  • বাজারসমূহ

বাজারজাতকরণ অর্পণ

বাজারজাতকরণ ১০টি বিষয় বা দশ ধরণের সত্তা বাজারজাত করে থাকে:

  • পণ্য

বাজারজাতকরণ মূলত এবং প্রথামিকভাবে পণ্যই বাজারজাত করে থাকে। যেমন: টেলিভিশন, চকলেট, পেনসিল, উড়োজাহাজ ইত্যাদি।

  • সেবা

অগ্রগামী বিশ্বে পণ্যের পাশাপাশি সেবাও বাজারজাত হচ্ছে। উদাহরণ: বিমান, সেলুন বা পার্লার, হিসাববিদ, প্রোগ্রামার ইত্যাদি।

  • ঘটনা

বিভিন্ন সময়ানুগ ঘটনাও বাজারজাত হয়। যেমন: বাণিজ্য মেলা, ক্রিড়া অনুষ্ঠান বার্ষিকী ইত্যাদি।

  • অভিজ্ঞতা

অনেক ফার্মই, কিংবা ব্যক্তি কোনো কাজে দক্ষতার পরিচয় দিতে দিতে একসময় অভিজ্ঞ হয়ে উঠলে তা বাজারজাত করে থাকেন। যেমন: ক্রিকেট খেলোয়াড়ের কাছে প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞ পর্বতারোহীর সাথে এভারেস্ট অভিযান ইত্যাদি।

  • ব্যক্তি

তারকা ব্যক্তিত্বের বাজারজাতকরণ হয়ে থাকে, যেমন: ওপরাহ্‌ উইনফ্রে, টায়রা ব্যঙ্ক, ম্যাডোনা প্রমুখ নিজেরাই একেকজন ব্র্যান্ড।

  • স্থান

বিভিন্ন স্থান, এলাকাও বাজারজাত হতে পারে, যেমন: পর্যটক আকর্ষণীয় স্থান বাজারজাতকরণ। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসেবে কক্সবাজারের প্রচারণা।

  • সম্পত্তি

অস্পৃশ্য সম্পত্তির মালিকানা, চাই স্থাবর সম্পত্তি, কিংবা আর্থিক সম্পত্তি বাজারজাত করা হয়। যেমন: বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এজাতীয় বাজারজাতকরণে সম্পৃক্ত।

  • সংগঠন

বিভিন্ন সংগঠন তাদের লক্ষ্য-ক্রেতাদের কাছে তাদের ভাবমূর্তি প্রস্ফুটিত করতে বাজারজাতকরণ করে। যেমন: বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সংগীত-নৃত্যকলা সংগঠন ইত্যাদি।

  • তথ্য

তথ্যও পণ্যের মতো বাজারজাত হয়। যেমন: অভিধান, বিশ্বকোষ, ম্যাগাজিন, বই-পুস্তক ইত্যাদি।

  • ধারণা

প্রত্যেক বাজার অর্পণই মূলত একটি ধারণা। অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য সংক্রান্ত এমন ধারণার বাজারজাত করে। যেমন: Revlon বলে: "কারখানায় আমরা প্রসাধনী তৈরি করি, দোকানে আমরা আশা বিক্রয় করি।"

বাজারজাতকরণ মিশ্রণ

বাজারজাতকরণ তত্ত্ব বা মতবাদসমূহ

বাজারজাতকরণ দিনে দিনে তার ধারণাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাজারজাতকরণের উন্মেষের সূচনালগ্নে ক্রেতাকে যেভাবে দেখা হতো, আজ, বাজারজাতকরণের যুগে ক্রেতাকে তার সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে দেখা হয়। আর এভাবেই বাজারজাতকরণ কতিপয় মতবাদ বা তত্বে যুগে যুগে আলাদা হয়ে গেছে।

উৎপাদন মতবাদ

উৎপাদন মতবাদ (Production Concept) বাজারজাতকরণের লক্ষ্য-সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে পুরোন মতবাদ। এই মতবাদ মতে, ক্রেতা সেই পণ্যই আকৃষ্ট হবে, যা সহজলভ্য ও সুলভ। এই মতবাদের মূল লক্ষ্যই থাকে অধিক উৎপাদন, কম উৎপাদন খরচ এবং বিস্তৃত বণ্টন। এই মতবাদ কাজ করে দুরকম পরিস্থিতিতে:

  1. যখন যোগানের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যায়
  2. যখন পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং দাম কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হয়

তবে এতদসত্ত্বেয় উৎপাদন মতবাদের একনিষ্ঠ প্রয়োগ অনেক সময় কোম্পানীকে 'ক্রেতার চাহিদা পূরণের' মূল লক্ষ্য থেকে সরিয়ে রাখে।[১]

পণ্য মতবাদ

ক্রেতা শুধুমাত্র সেই পণ্যে আকৃষ্ট হবে, যা গুণ, মান, বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল এবং পণ্যটির উৎকর্ষ সাধন করা হয়- এই মতবাদে দিক্ষীত পণ্য মতবাদ (Product Concept)। এতে উৎপাদক যেন বিশ্বাস করেন যে, একটা ভালো মানের 'ইঁদুর-ধরা ফাঁদ'ই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু একজন ক্রেতা যে ইঁদুর ধরা ফাঁদের বদলে ইঁদুর মারার পথ খুঁজতে পারেন, তা ভাবা হয় না। তাই পণ্য মতবাদও বাজারজাতকরণ ক্ষীণদৃষ্টির (Marketing myopia) পরিচয় দেয়। তাছাড়া এই মতবাদে অনেক সময়ই সম্ভাব্য প্রতিযোগীকে বিবেচনা করা হয় না।[১]

বিক্রয় মতবাদ

ক্রেতা ততক্ষণ কোনো পণ্য ক্রয় করবে না, যতক্ষণ কোম্পানীর পক্ষ থেকে পণ্যের পক্ষে জোরালো প্রচার ও প্রসার কার্যক্রম হাতে না নেয়া হয়- এমনটাই ধারণা বিক্রয় মতবাদের (Selling Concept)। সাধারণত সচরাচর প্রয়োজন হয়না বা কেনা হয়না এমন পণ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয় মতবাদ কাজে লাগানো হয়; যেমন: বীমা পলিসি, বিশ্বকোষ ইত্যাদি। আবার অনেক কোম্পানীর, চাহিদার চেয়েও যোগান বেশি দেবার ক্ষমতা থাকলে তারাও বিক্রয় মতবাদ ব্যবহার করে। কিন্তু বিক্রয় মতবাদ অনেকাংশেই ব্যবসায়িক ধ্যান-ধারণার মতবাদ; এতে অনেক সময়ই যা উৎপাদন করা হয়, তা বিক্রয় করার চিন্তা করা হয়, কিন্তু বাজার যা চায়, তা বিক্রয় করার চিন্তা করা হয় না।

বাজারজাতকরণ মতবাদ

বিক্রয় মতবাদের ক্ষীণদৃষ্টিকে সামলে নিয়ে জন্ম হয় বাজারজাতকরণ মতবাদের (Marketing Concept)। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝিতে উদ্ভব হয় এ মতবাদের। এ মতবাদ মতে, ক্রেতাদের চাহিদা ও সন্তুষ্টির নিমিত্তেই লক্ষ্যার্জন করতে হয়। বিক্রয় মতবাদের 'পণ্যের জন্য ক্রেতা' ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে 'ক্রেতার জন্য পণ্য' ধারণার মতো যুগান্তকারী অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত ধরণার জন্ম দেয় এই মতবাদ। কিন্তু এ মতবাদও শুধুমাত্র ক্রেতা-ভোক্তা, আর কোম্পানীর বাইরে আর কিছু নিয়ে ভাবে না, তাই এই মতবাদও সর্বাধুনিক মতবাদ নয় বলে অনেকে মনে করেন।[১]

সামাজিক বাজারজাতকরণ মতবাদ

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের পর সমাজের উপযোগিতা, স্বার্থ বিবেচনা করে যে বাজারজাতকরণ মতবাদের উন্মেষ ঘটে তা সামাজিক বাজারজাতকরণ মতবাদ (Social Marketing Concept) হিসেবে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে ক্রেতা-ভোক্তা, কোম্পানীর পাশাপাশি সমাজের, ভালোর এবং নৈতিকতার দৃষ্টিতে বাজারজাতকরণ পরিচালনার ধারণা উৎপত্তিলাভ করে। এতে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণ মুখ্য হয়ে ধরা পড়ে।[১]

সামগ্রিক বাজারজাতকরণ মতবাদ

কিন্তু অপরাপর সকল মতবাদই কোনো না কোনো দৃষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলে এই ফাঁক পূরণ করতে একবিংশ শতাব্দিতে উদ্ভব হয় সামগ্রিক বাজারজাতকরণ মতবাদের (Holistic Marketing Concept)। এই মতবাদে মনে করা হয়, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সংঘটিত সকল ঘটনা বা কর্মকান্ডেরই একটি বৃহৎ, সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকা উচিত।<ref name="MktMgt">Marketing Management (12th Edition), Philip Kotler & Kevin Lane Keller, Prentice Hall India, ISBN: 81-203-2799-3; প্রকাশকাল: ২০০৬। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।<ref> এই মতবাদ মূলত বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা ও জটিলতা নিরসনে সহায়তা করে। এই মতবাদে মূলত চারটি অংশকে প্রাধান্য দেয়া হয়:

  • সম্পর্ক বাজারজাতকরণ
    • ক্রেতা
    • চ্যানেল
    • সহযোগী
  • সমন্বিত বাজারজাতকরণ
    • যোগাযোগ
    • পণ্য ও সেবা
    • চ্যানেলসমূহ
  • অভ্যন্তরীণ বাজারজাতকরণ
    • বাজারজাতকরণ বিভাগ
    • উচ্চতর ব্যবস্থাপনা
    • অন্যান্য বিভাগ
  • সামাজিক দায়বদ্ধ বাজারজাতকরণ
    • নৈতিকতা
    • পরিবেশ
    • বৈধতা
    • সমাজ

তথ্যসূত্র

  1. Principles of Marketing (10th Edition), Philip Kotler & Gary Armstrong, Pearson Prentice Hall (International Edition), ISBN: 0-13-121276-1; প্রকাশকাল: ২০০৩-২০০৪। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; MktMgt নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা, মো: জাহিদ হোসেন শিকদার, দেওয়ান জোবাইদা নাসরীন, মো: মঞ্জুরুল আলম; কাজী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০০৬। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৭, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ