নারদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Suvray (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ref সংগঠন + বানান (খুব অল্প) শুদ্ধি + {{wikify}}
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{wikify}}
'''নারদ''' কলহ সংগঠক হিসেবে খ্যাত একজন দেবর্ষি বিশেষ। তিনি ব্রহ্মা’র অন্যতম মানসপুত্র।
'''নারদ''', [[হিন্দু পুরাণ]]মতে [[কলহ]]সংঘটক হিসেবে খ্যাত একজন দেবর্ষি। তিনি [[ব্রহ্মা]]র মানসপুত্র।


==জন্ম রহস্য==
==জন্ম রহস্য==
[[ব্রহ্মা]] দেবর্ষি নারদকে সৃজনকার্যের ভার গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু ঈশ্বর সাধনা ও ভগবৎপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কায় তিনি তাতে রাজী না হওয়ায়, [[বিরিঞ্চি]]’র অভিশাপে নারদকে [[গন্ধর্ব]] ও মানবযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল।
পুরাণমতে, [[ব্রহ্মা]] দেবর্ষি নারদকে সৃষ্টি করার ভার গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু ঈশ্বর সাধনা ও ভগবৎপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কায় তিনি তাতে রাজি না হওয়ায়, [[বিরিঞ্চি]] অভিশাপে নারদকে [[গন্ধর্ব]] ও মানবযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিলো।


==মানসপুত্র কি?==
==মানসপুত্র কি?==
সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। [[মনুস্মৃতি]] গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন মারীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও '''নারদ'''। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত এ সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা। এঁরা তাঁকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন। তাঁর এই পুত্রগণ তাঁর শরীর থেকে জাত হননি, হয়েছেন তাঁর মন থেকে। এ কারণে তাঁদের [[মানসপুত্র]] বলা হয়।
সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। [[মনুস্মৃতি]] গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন মারীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত এ সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা। এঁরা তাঁকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন। তাঁর এই পুত্রগণ তাঁর শরীর থেকে জাত হোননি, হয়েছেন তাঁর মন থেকে। একারণে তাঁদের মানসপুত্র বলা হয়।


==অবাধ যাতায়াতে নারদের ভূমিকা==
==অবাধ যাতায়াতে নারদের ভূমিকা==
দেবর্ষি নারদ অতিশয় হরিভক্ত ছিলেন এবং তন্ময়চিত্তে তপোরত হয়ে হরিসাধন করতে ভালবাসতেন। দেবর্ষি নারদ নিজের ইচ্ছায় যত্রতত্র গমন করতে পারতেন এবং সকল জায়গায়ই তার অবাধ যাতায়াত ছিল। এছাড়াও, প্রয়োজন মনে করলে তিনি সকল ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করতেন।
দেবর্ষি নারদ অতিশয় হরিভক্ত ছিলেন এবং তন্ময়চিত্তে তপোরত হয়ে হরিসাধন করতে ভালবাসতেন। দেবর্ষি নারদ নিজের ইচ্ছায় যত্রতত্র গমন করতে পারতেন এবং সকল জায়গায়ই তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিলো। এছাড়াও প্রয়োজন মনে করলে তিনি সকল ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করতেন।<ref name="SBB">''সরল বাঙালা ব্যাকরণ'', সুবলচন্দ্র মিত্র, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, ১৯৯৫</ref>


==ঘটকরূপে নারদ==
==ঘটকরূপে নারদ==
দক্ষ প্রজাপতির কন্যা দাক্ষায়ণী [[সতী]] পিতার মুখে স্বামী শিবের নিন্দা শুনে প্রাণত্যাগ করেন। কালান্তরে তিনি গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর পত্নী মেনকা’র কন্যা পার্বতীরূপে পুণরায় জন্মগ্রহণ করেন। [[পার্বতী]] যৌবনপ্রাপ্ত হলে দেবর্ষি নারদ গিরিরাজের নিকট পার্বতীর পতিরূপে শিবের নাম উত্থাপন করেন। এভাবেই নারদ ঘটক হয়ে হর-পার্বতীর বিবাহ সংঘটন করে দিয়েছিলেন।
দক্ষ প্রজাপতির কন্যা দাক্ষায়ণী [[সতী]] পিতার মুখে স্বামী শিবের নিন্দা শুনে প্রাণত্যাগ করেন। কালান্তরে তিনি গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর পত্নী মেনকার কন্যা পার্বতীরূপে পুণরায় জন্মগ্রহণ করেন। [[পার্বতী]] যৌবনপ্রাপ্ত হলে দেবর্ষি নারদ গিরিরাজের নিকট পার্বতীর পতিরূপে শিবের নাম উত্থাপন করেন। এভাবেই নারদ ঘটক হয়ে হর-পার্বতীর বিবাহ সংঘটন করে দিয়েছিলেন।



==পরামর্শক নারদ==
==পরামর্শক নারদ==
নারদের পরামর্শেই আদিত্যগণের কাছ থেকে [[হিরণ্যকশিপু]]’র পত্নী [[দিতি]]কে নিজ আশ্রমে রাখেন এবং শিশু [[প্রহ্লাদ]]কে নিয়ে সময় কাটাতেন। [[ধ্রুব]] নারদের কাছে হরিমন্ত্রে দীক্ষিত হন। [[কৃষ্ণ]] পৌত্র [[অনিরুদ্ধ]] বাণরাজপুরে অবরুদ্ধ হলে তিনি দ্বারকায় ঐ সংবাদ প্রদান করে দৈত্যবিনাশে সহায়তা করেন। তারই প্রচেষ্টায় অনেক অসুরের জীবনান্ত হয়। পাণ্ডবগণ ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী স্থাপন করলে দেবর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হয়ে [[দ্রৌপদী]]’র জন্য পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে যাতে বিরোধ না হয়, তার নিয়ম নির্ধারণ করতে উপদেশ দেন। ফলতঃ সকল স্থানেই দেবর্ষি নারদকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বেচ্ছায় উপস্থিতি দেখা যায়।
নারদের পরামর্শেই আদিত্যগণের কাছ থেকে হিরণ্যকশিপুর পত্নী দিতিকে নিজ আশ্রমে রাখেন এবং শিশু [[প্রহ্লাদ]]কে নিয়ে সময় কাটাতেন। [[ধ্রুব]] নারদের কাছে হরিমন্ত্রে দীক্ষিত হন। [[কৃষ্ণ]] পৌত্র [[অনিরুদ্ধ]] বাণরাজপুরে অবরুদ্ধ হলে তিনি দ্বারকায় ঐ সংবাদ প্রদান করে দৈত্যবিনাশে সহায়তা করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় অনেক অসুরের জীবনান্ত হয়। পাণ্ডবগণ ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী স্থাপন করলে দেবর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হয়ে [[দ্রৌপদী]] জন্য পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে যাতে বিরোধ না হয়, তার নিয়ম নির্ধারণ করতে উপদেশ দেন। ফলত সকল স্থানেই দেবর্ষি নারদকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বেচ্ছায় উপস্থিতি দেখা যায়।<ref name="SBB"/>



==জগদ্ধাত্রী পূজার প্রতিমায় নারদ==
==জগদ্ধাত্রী পূজার প্রতিমায় নারদ==
জগদ্ধাত্রী পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই পূজার সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে [[জয়া]]-[[বিজয়া]] ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকতে হয়।
জগদ্ধাত্রী পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই পূজার সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে [[জয়া]]-[[বিজয়া]] ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকতে হয়।



==ভস্মাসুর ও বিষ্ণু==
==ভস্মাসুর ও বিষ্ণু==
ভস্মাসুরের সাধনায় প্রসন্ন হয়ে [[শিব]] ভস্ম কঙ্কনের বর দান করলেন। এমন কঙ্কন যে কারও গায়ে ছোঁয়ালে সে তক্ষুনি ভস্ম হয়ে যাবে। ভস্মাসুরের ইচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করা। নারদ মুনির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শিবের পত্নী পার্বতীকে বিয়ের জন্য ভস্মাসুর শিবের খোঁজে চলল। শিব সমস্ত কথা টের পেয়ে মাছির মতো ছোট হয়ে আকন্দ ফুলের মধ্যে লুকান। পার্বতী বিষ্ণুকে সব জানালে তিনি পার্বতীর মোহিনীরূপ হিসেবে ভস্মাসুরের সঙ্গে রাস্তায় দেখা করলেন। পার্বতী ভস্মাসুরের সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বললে শর্ত হিসেবে সমান তালে নাচার শর্ত দেন। নাচতে নাচতে এক সময় [[বিষ্ণু]] নিজের মাথায় হাত রাখলেন। দেখাদেখি ভস্মাসুরও তার মাথায় হাত রাখল। যেমনি ভস্মাসুর নিজ মাথায় হাত রাখলো, অমনি পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
ভস্মাসুরের সাধনায় প্রসন্ন হয়ে [[শিব]] ভস্ম কঙ্কনের বর দান করলেন। এমন কঙ্কন যে কারও গায়ে ছোঁয়ালে সে তক্ষুনি ভস্ম হয়ে যাবে। ভস্মাসুরের ইচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করা। নারদ মুনির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শিবের পত্নী পার্বতীকে বিয়ের জন্য ভস্মাসুর শিবের খোঁজে চলল। শিব সমস্ত কথা টের পেয়ে মাছির মতো ছোট হয়ে আকন্দ ফুলের মধ্যে লুকান। [[পার্বতী]] বিষ্ণুকে সব জানালে তিনি পার্বতীর মোহিনীরূপ হিসেবে ভস্মাসুরের সঙ্গে রাস্তায় দেখা করলেন। পার্বতী ভস্মাসুরের সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বললে শর্ত হিসেবে সমান তালে নাচার শর্ত দেন। নাচতে নাচতে এক সময় [[বিষ্ণু]] নিজের মাথায় হাত রাখলেন। দেখাদেখি ভস্মাসুরও তার মাথায় হাত রাখল। যেমনি ভস্মাসুর নিজ মাথায় হাত রাখলো, অমনি পুড়ে ছাই হয়ে গেল।<ref>[http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=travel/1205/12bhaba.htm আনন্দবাজার], কলকাতা।</ref>


==সর্বদা সম্ভাষণ==
==সর্বদা সম্ভাষণ==
হাতে বীণা সহযোগে দেবর্ষি নারদ যে কোন সময়, যে কোন স্থানে কারো সাথে স্বাক্ষাৎ করলেই কিংবা হলেই যে কথাটি সর্বাগ্রে উচ্চারণ করেন তা হলোঃ '''“নারায়ণ, নারায়ণ”''' যা বাংলা কিংবা হিন্দি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন পৌরাণিকি কাহিনীতে দেখা ও শোনা যায়।
হাতে বীণা সহযোগে দেবর্ষি নারদ যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে কারো সাথে স্বাক্ষাৎ করলেই যে কথাটি সর্বাগ্রে উচ্চারণ করেন তা হলো: ''“নারায়ণ, নারায়ণ”'' যা বাংলা কিংবা হিন্দি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন পৌরাণিকি কাহিনীতে দেখা ও শোনা যায়।


==নারদীয় অভিশাপ==
==নারদীয় অভিশাপ==
শিবভক্ত যক্ষরাজ কুবেরের পুত্র [[নলকুবর]] এবং [[মণিগ্রীব]] প্রায়শঃই মদ্যপান এবং স্ত্রী-সঙ্গে আসক্ত ছিল। একবার তারা শিবের আলয় কৈলাস পর্বতস্থ মন্দাকিনী গঙ্গার তীরে সুরম্য উপবনে অপুর্ব সুন্দরী নারীদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল। সেই সুবাসিত পুষ্পশোভিত উদ্যানে তারা অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান করে নারীদের কণ্ঠে মধুর সঙ্গীত শুনছিল। মদ্যপানে মত্ত হয়ে তারা পদ্মশোভিত গঙ্গায় সেই সমস্ত রমণীদের সঙ্গে জলক্রীড়া করতে লাগল-ঠিক যেমন মত্ত হস্তী-হস্তিনীদের সঙ্গে ক্রীড়া করে। যখন তারা জলকেলি করছিল, তখন দেবর্ষি নারদ সেদিকে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, নলকুবর এবং মণিগ্রীব মদ্যপানে অত্যন্ত মত্ত হয়ে আছে, তাই তারা তাঁর আগমন উপলব্ধি করতে পারেনি। যুবতী রমণীরা ততটা মত্ত ছিল না, তাই তারা অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে শীঘ্র বস্ত্র দ্বারা নিজেদের শরীর আচ্ছাদিত করল। এ ঘটনায় শাস্তিস্বরূপ নলকুবর এবং মণিগ্রীব-কে শত বৎসরের জন্য অর্জুন বৃক্ষরূপে থাকার জন্য অভিশাপ দেন। পরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্যে এসে তারা শাপমুক্ত হয়।
শিবভক্ত যক্ষরাজ কুবেরের পুত্র [[নলকুবর]] এবং [[মণিগ্রীব]] প্রায়শই মদ্যপান এবং স্ত্রী-সঙ্গে আসক্ত ছিলো। একবার তারা শিবের আলয় কৈলাস পর্বতস্থ মন্দাকিনী গঙ্গার তীরে সুরম্য উপবনে অপুর্ব সুন্দরী নারীদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেই সুবাসিত পুষ্পশোভিত উদ্যানে তারা অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান করে নারীদের কণ্ঠে মধুর সঙ্গীত শুনছিলো। মদ্যপানে মত্ত হয়ে তারা পদ্মশোভিত গঙ্গায় সেই সমস্ত রমণীদের সঙ্গে জলক্রীড়া করতে লাগলো- ঠিক যেমন মত্ত হস্তী-হস্তিনীদের সঙ্গে ক্রীড়া করে। যখন তারা জলকেলি করছিলো, তখন দেবর্ষি নারদ সেদিকে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, নলকুবর এবং মণিগ্রীব মদ্যপানে অত্যন্ত মত্ত হয়ে আছে, তাই তারা তাঁর আগমন উপলব্ধি করতে পারেনি। যুবতী রমণীরা ততটা মত্ত ছিলো না, তাই তারা অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে শীঘ্র বস্ত্র দ্বারা নিজেদের শরীর আচ্ছাদিত করলো। এ ঘটনায় শাস্তিস্বরূপ নলকুবর এবং মণিগ্রীবকে শত বৎসরের জন্য অর্জুন বৃক্ষরূপে থাকার জন্য অভিশাপ দেন। পরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্যে এসে তারা শাপমুক্ত হয়।<ref>[http://www.iskconbd.org/nolmonigrib.htm ''ইসকন'']</ref>


==গণেশ ও নারদ==
==গণেশ ও নারদ==
কোন একদিন গণেশকে পাহাড়ায় রেখে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব বাড়ী আসেন। গণেশ শিবকে ভেতরে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্ব সৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হন। নারদ ও দেবগণ পার্বতীকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুণর্জীবন দাবীসহ ইচ্ছা পোষণ করেন যেন তার পুত্র গণেশ সকলেরই পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের কাটা মুণ্ডটি আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে প্রেরণ করেন এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্ররূপে স্বীকার করতে বাধ্য হন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও [[গণেশ]] নামে আখ্যায়িত হন।
কোনো একদিন গণেশকে পাহারায় রেখে পার্বতী গোসল করতে গেলে শিব, বাড়ি আসেন। গণেশ শিবকে ভেতরে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্ব সৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হোন। নারদ ও দেবগণ পার্বতীকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুণর্জীবন দাবীসহ ইচ্ছা পোষণ করেন যেন তার পুত্র গণেশ সকলেরই পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের কাটা মুণ্ডটি আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে পাঠান এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্ররূপে স্বীকার করতে বাধ্য হন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও [[গণেশ]] নামে আখ্যায়িত হোন।


==নারদ ও বাল্মিকী==
==নারদ ও বাল্মিকী==
৩৮ নং লাইন: ৩৬ নং লাইন:


==জগন্নাথদেবের মূর্তির নামকরণ==
==জগন্নাথদেবের মূর্তির নামকরণ==
ভগবান [[শ্রীকৃষ্ণ]] তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে নিজ মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তি নির্মাণে রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকায় এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী হিসেবে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন ও শর্তস্বরূপ রাজাকে জানান যে মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। রাজা ও রাণী-সহ সকলেই প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং মন্দিরে শুনতে পেতেন কাঁঠ খোদাইয়ের আওয়াজ। অত্যুৎসাহী রাণী কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধ-সমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণবেশী কাষ্ঠশিল্পীই ছিলেন দেবশিল্পী [[বিশ্বকর্মা]]। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধ-সমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃতস্বরূপ।
ভগবান [[শ্রীকৃষ্ণ]] তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে নিজ মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তি নির্মাণে রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকায় এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী হিসেবে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন ও শর্তস্বরূপ রাজাকে জানান যে মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। রাজা ও রাণী-সহ সকলেই প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং মন্দিরে শুনতে পেতেন কাঁঠ খোদাইয়ের আওয়াজ। অত্যুৎসাহী রাণী কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধ-সমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণবেশী কাষ্ঠশিল্পীই ছিলেন দেবশিল্পী [[বিশ্বকর্মা]]। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধ-সমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃতস্বরূপ।






==শিবমুখে গান ও গঙ্গার জল==
==শিবমুখে গান ও গঙ্গার জল==
সঙ্গীত জগত রক্ষার উদ্দেশ্যে পার্বতীর সহায়তায় কৈলাশে বিরাট জলসার আয়োজন করেন নারদ। সেখানে বীণা সহযোগে শিবের গানের প্রতিক্রিয়ায় ছয় [[রাগ]] এবং ছত্রিশ রাগিনী শিবকে ঘিরে নাচতে থাকে। ব্রহ্মা শিবের গানের কোন অর্থই বুঝেননি। জলসার অন্য নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিষ্ণু গানের বেহাল অবস্থা দেখে গলে জল হয়ে যাচ্ছেন দেখে ব্রহ্মা ঐ জল কমন্ডলুতে ধারণ করেন। কমন্ডলুর জলই বর্তমান গঙ্গার জল।
সঙ্গীত জগত রক্ষার উদ্দেশ্যে পার্বতীর সহায়তায় কৈলাশে বিরাট জলসার আয়োজন করেন নারদ। সেখানে [[তানপুরা]] সহযোগে শিবের গানের প্রতিক্রিয়ায় ছয় রাগ এবং ছত্রিশ রাগিনী শিবকে ঘিরে নাচতে থাকে। ব্রহ্মা শিবের গানের কোন অর্থই বুঝেননি। জলসার অন্য নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিষ্ণু গানের বেহাল অবস্থা দেখে গলে জল হয়ে যাচ্ছেন দেখে ব্রহ্মা ঐ জল কমন্ডলুতে ধারণ করেন। কমন্ডলুর জলই বর্তমান গঙ্গার জল।<ref>http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?font=unicode&font=banglaplain&font=unicode&portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1210422621003</ref>



==সৃষ্টিকর্মে নারদ==
==সৃষ্টিকর্মে নারদ==
[[বীণা]] বাদ্য যন্ত্রটি নারদেরই সৃষ্ট। তিনি [[নারদ সংহীতা]] নামক সংগীত শাস্ত্র প্রণয়ন করেছিলেন। নারদ প্রণীত [[স্মৃতি]]ও সমধিক বিখ্যাত। নারদ রচিত [[নারদীয় পুরাণ]] অষ্টাদশ পুরাণের অন্তর্গত।
[[বীণা]] বাদ্য যন্ত্রটি নারদেরই সৃষ্ট। তিনি [[নারদ সংহীতা]] নামক সংগীত শাস্ত্র প্রণয়ন করেছিলেন। নারদ প্রণীত [[স্মৃতি]]ও সমধিক বিখ্যাত। নারদ রচিত [[নারদীয় পুরাণ]] অষ্টাদশ পুরাণের অন্তর্গত।<ref name="SBB"/>



==সঙ্গীতজ্ঞ নারদ==
==সঙ্গীতজ্ঞ নারদ==
দেবর্ষি অতিশয় সংগীত অনুরাগী ছিলেন। প্রথমতঃ ব্রহ্মার নিকট কিঞ্চিৎ সংগীতবিদ্যা শিখেছিলেন তিনি। পরে উলুকেশ্বরের নিকট বহু বছর গান্ধর্ব বিদ্যা আলোচনা করে কিছু পারদর্শিতা ও দক্ষতা লাভ করেন। এ সময়েই তার মনে সংগীত বিষয়ে বেশ গর্বভাবের উদয় হয়, কিন্তু [[দর্পহারী]] অচিরেই নারদের দর্প চূর্ণ করে দেন। পরিশেষে ভগবান বিষ্ণু’র কৃষ্ণাবতারে তার নিকট গানযোগ শিক্ষা করিয়া ব্রহ্মানন্দলাভে কৃতার্থ হন।
দেবর্ষি অতিশয় সংগীত অনুরাগী ছিলেন। প্রথমতঃ ব্রহ্মার নিকট কিঞ্চিৎ সংগীতবিদ্যা শিখেছিলেন তিনি। পরে উলুকেশ্বরের নিকট বহু বছর গান্ধর্ব বিদ্যা আলোচনা করে কিছু পারদর্শিতা ও দক্ষতা লাভ করেন। এ সময়েই তার মনে সংগীত বিষয়ে বেশ গর্বভাবের উদয় হয়, কিন্তু [[দর্পহারী]] অচিরেই নারদের দর্প চূর্ণ করে দেন। পরিশেষে ভগবান বিষ্ণু’র কৃষ্ণাবতারে তার নিকট গানযোগ শিক্ষা করিয়া ব্রহ্মানন্দলাভে কৃতার্থ হোন।<ref name="SBB"/>


==নারদের সংবাদ শীর্ষে অনিরুদ্ধ==
দেবর্ষী নারদ বাণ রাজার প্রাসাদে ঊষার প্রণয়ের মোহে অনিরুদ্ধের বন্দী হওয়ার সংবাদ শ্রীকৃষ্ণকে জানান। এ সংবাদ পেয়ে ভগবান [[শ্রীকৃষ্ণ]], [[বলরাম]] ও [[প্রদ্যুম্ন]] তাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে শোণিতপুরে যান। রাজা বাণ শিবের সহায়তায় সহস্র বাহু নিয়েও কৃষ্ণের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়ে পরাজিত হন।



==অন্যরূপ নারদ==
==অন্যরূপ নারদ==
অপর এক নারদের উল্লেখ রয়েছে যা ছান্দোগ্য উপনিষদের সপ্তম অধ্যায়ে ব্রহ্ম-বিজ্ঞান প্রসঙ্গে সনৎকুমার নারদ সংবাদ দৃষ্ট হয়; তিনি অতি প্রাচীন।
অপর এক নারদের উল্লেখ রয়েছে যা ছান্দোগ্য উপনিষদের সপ্তম অধ্যায়ে ব্রহ্ম-বিজ্ঞান প্রসঙ্গে সনৎকুমার নারদ সংবাদ দৃষ্ট হয়; তিনি অতি প্রাচীন।<ref name="SBB"/>


==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==
{{reflist}}
* সুবলচন্দ্র মিত্র, সরল বাঙালা ব্যাকরণ, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, ১৯৯৫।
* ইংরেজী উইকিপিডিয়া থেকে বঙ্গানুবাদ।


==বহিঃসংযোগ==
==বহিঃসংযোগ==
* http://dictionary.evergreenbangla.com/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A6/
* http://dictionary.evergreenbangla.com/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A6/
* http://www.iskconbd.org/nolmonigrib.htm
* http://www.iskconbd.org/nolmonigrib.htm
* http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=travel/1205/12bhaba.htm
* http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=travel/1205/12bhaba.htm
* http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?font=unicode&font=banglaplain&font=unicode&portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1210422621003

[[বিষয়শ্রেণী:হিন্দু পুরাণ]]
[[বিষয়শ্রেণী:পুরাণ]]

১৬:৪৭, ১৬ নভেম্বর ২০১০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নারদ, হিন্দু পুরাণমতে কলহসংঘটক হিসেবে খ্যাত একজন দেবর্ষি। তিনি ব্রহ্মার মানসপুত্র।

জন্ম রহস্য

পুরাণমতে, ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদকে সৃষ্টি করার ভার গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু ঈশ্বর সাধনা ও ভগবৎপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কায় তিনি তাতে রাজি না হওয়ায়, বিরিঞ্চির অভিশাপে নারদকে গন্ধর্ব ও মানবযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিলো।

মানসপুত্র কি?

সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। মনুস্মৃতি গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন মারীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত এ সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা। এঁরা তাঁকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন। তাঁর এই পুত্রগণ তাঁর শরীর থেকে জাত হোননি, হয়েছেন তাঁর মন থেকে। একারণে তাঁদের মানসপুত্র বলা হয়।

অবাধ যাতায়াতে নারদের ভূমিকা

দেবর্ষি নারদ অতিশয় হরিভক্ত ছিলেন এবং তন্ময়চিত্তে তপোরত হয়ে হরিসাধন করতে ভালবাসতেন। দেবর্ষি নারদ নিজের ইচ্ছায় যত্রতত্র গমন করতে পারতেন এবং সকল জায়গায়ই তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিলো। এছাড়াও প্রয়োজন মনে করলে তিনি সকল ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করতেন।[১]

ঘটকরূপে নারদ

দক্ষ প্রজাপতির কন্যা দাক্ষায়ণী সতী পিতার মুখে স্বামী শিবের নিন্দা শুনে প্রাণত্যাগ করেন। কালান্তরে তিনি গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর পত্নী মেনকার কন্যা পার্বতীরূপে পুণরায় জন্মগ্রহণ করেন। পার্বতী যৌবনপ্রাপ্ত হলে দেবর্ষি নারদ গিরিরাজের নিকট পার্বতীর পতিরূপে শিবের নাম উত্থাপন করেন। এভাবেই নারদ ঘটক হয়ে হর-পার্বতীর বিবাহ সংঘটন করে দিয়েছিলেন।

পরামর্শক নারদ

নারদের পরামর্শেই আদিত্যগণের কাছ থেকে হিরণ্যকশিপুর পত্নী দিতিকে নিজ আশ্রমে রাখেন এবং শিশু প্রহ্লাদকে নিয়ে সময় কাটাতেন। ধ্রুব নারদের কাছে হরিমন্ত্রে দীক্ষিত হন। কৃষ্ণ পৌত্র অনিরুদ্ধ বাণরাজপুরে অবরুদ্ধ হলে তিনি দ্বারকায় ঐ সংবাদ প্রদান করে দৈত্যবিনাশে সহায়তা করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় অনেক অসুরের জীবনান্ত হয়। পাণ্ডবগণ ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী স্থাপন করলে দেবর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হয়ে দ্রৌপদীর জন্য পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে যাতে বিরোধ না হয়, তার নিয়ম নির্ধারণ করতে উপদেশ দেন। ফলত সকল স্থানেই দেবর্ষি নারদকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বেচ্ছায় উপস্থিতি দেখা যায়।[১]

জগদ্ধাত্রী পূজার প্রতিমায় নারদ

জগদ্ধাত্রী পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই পূজার সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে জয়া-বিজয়া ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকতে হয়।

ভস্মাসুর ও বিষ্ণু

ভস্মাসুরের সাধনায় প্রসন্ন হয়ে শিব ভস্ম কঙ্কনের বর দান করলেন। এমন কঙ্কন যে কারও গায়ে ছোঁয়ালে সে তক্ষুনি ভস্ম হয়ে যাবে। ভস্মাসুরের ইচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করা। নারদ মুনির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শিবের পত্নী পার্বতীকে বিয়ের জন্য ভস্মাসুর শিবের খোঁজে চলল। শিব সমস্ত কথা টের পেয়ে মাছির মতো ছোট হয়ে আকন্দ ফুলের মধ্যে লুকান। পার্বতী বিষ্ণুকে সব জানালে তিনি পার্বতীর মোহিনীরূপ হিসেবে ভস্মাসুরের সঙ্গে রাস্তায় দেখা করলেন। পার্বতী ভস্মাসুরের সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বললে শর্ত হিসেবে সমান তালে নাচার শর্ত দেন। নাচতে নাচতে এক সময় বিষ্ণু নিজের মাথায় হাত রাখলেন। দেখাদেখি ভস্মাসুরও তার মাথায় হাত রাখল। যেমনি ভস্মাসুর নিজ মাথায় হাত রাখলো, অমনি পুড়ে ছাই হয়ে গেল।[২]

সর্বদা সম্ভাষণ

হাতে বীণা সহযোগে দেবর্ষি নারদ যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে কারো সাথে স্বাক্ষাৎ করলেই যে কথাটি সর্বাগ্রে উচ্চারণ করেন তা হলো: “নারায়ণ, নারায়ণ” যা বাংলা কিংবা হিন্দি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন পৌরাণিকি কাহিনীতে দেখা ও শোনা যায়।

নারদীয় অভিশাপ

শিবভক্ত যক্ষরাজ কুবেরের পুত্র নলকুবর এবং মণিগ্রীব প্রায়শই মদ্যপান এবং স্ত্রী-সঙ্গে আসক্ত ছিলো। একবার তারা শিবের আলয় কৈলাস পর্বতস্থ মন্দাকিনী গঙ্গার তীরে সুরম্য উপবনে অপুর্ব সুন্দরী নারীদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেই সুবাসিত পুষ্পশোভিত উদ্যানে তারা অত্যধিক মাত্রায় মদ্যপান করে নারীদের কণ্ঠে মধুর সঙ্গীত শুনছিলো। মদ্যপানে মত্ত হয়ে তারা পদ্মশোভিত গঙ্গায় সেই সমস্ত রমণীদের সঙ্গে জলক্রীড়া করতে লাগলো- ঠিক যেমন মত্ত হস্তী-হস্তিনীদের সঙ্গে ক্রীড়া করে। যখন তারা জলকেলি করছিলো, তখন দেবর্ষি নারদ সেদিকে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, নলকুবর এবং মণিগ্রীব মদ্যপানে অত্যন্ত মত্ত হয়ে আছে, তাই তারা তাঁর আগমন উপলব্ধি করতে পারেনি। যুবতী রমণীরা ততটা মত্ত ছিলো না, তাই তারা অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে শীঘ্র বস্ত্র দ্বারা নিজেদের শরীর আচ্ছাদিত করলো। এ ঘটনায় শাস্তিস্বরূপ নলকুবর এবং মণিগ্রীবকে শত বৎসরের জন্য অর্জুন বৃক্ষরূপে থাকার জন্য অভিশাপ দেন। পরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্যে এসে তারা শাপমুক্ত হয়।[৩]

গণেশ ও নারদ

কোনো একদিন গণেশকে পাহারায় রেখে পার্বতী গোসল করতে গেলে শিব, বাড়ি আসেন। গণেশ শিবকে ভেতরে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্ব সৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হোন। নারদ ও দেবগণ পার্বতীকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুণর্জীবন দাবীসহ ইচ্ছা পোষণ করেন যেন তার পুত্র গণেশ সকলেরই পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের কাটা মুণ্ডটি আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে পাঠান এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্ররূপে স্বীকার করতে বাধ্য হন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও গণেশ নামে আখ্যায়িত হোন।

নারদ ও বাল্মিকী

বাল্মীকি দস্যুবৃত্তি করে পরিবার চালাতেন। একদিন দেবর্ষি নারদকে অর্থ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে আক্রান্ত করলে নারদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তাঁর পাপের ভাগী তাঁর পরিবার হতে চায় কি-না! নারদের মন্ত্রণায় তিনি তাঁর পরিবারের প্রত্যেককে এ প্রশ্ন করলে সকলেই জানায় যে তাঁর পাপের ভাগী তাঁরা হতে চায় না। উক্ত দস্যু জীবনের সত্যতা উপলব্ধি করে নারদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চায়। নারদ তাঁকে রাম নাম জপ করতে শেখান। দস্যু বহু বছর সাধনা করে ব্রহ্মা’র নিকট হতে বরলাভ করে কবিত্বশক্তি প্রাপ্ত হন। তপস্যারত অবস্থায় তাঁর দেহ বল্মীকের স্তুপে ঢেকে গিয়েছিল বলে তাঁর নামকরণ হয় বাল্মীকি

জগন্নাথদেবের মূর্তির নামকরণ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে নিজ মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তি নির্মাণে রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকায় এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী হিসেবে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন ও শর্তস্বরূপ রাজাকে জানান যে মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। রাজা ও রাণী-সহ সকলেই প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং মন্দিরে শুনতে পেতেন কাঁঠ খোদাইয়ের আওয়াজ। অত্যুৎসাহী রাণী কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধ-সমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণবেশী কাষ্ঠশিল্পীই ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধ-সমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃতস্বরূপ।


শিবমুখে গান ও গঙ্গার জল

সঙ্গীত জগত রক্ষার উদ্দেশ্যে পার্বতীর সহায়তায় কৈলাশে বিরাট জলসার আয়োজন করেন নারদ। সেখানে তানপুরা সহযোগে শিবের গানের প্রতিক্রিয়ায় ছয় রাগ এবং ছত্রিশ রাগিনী শিবকে ঘিরে নাচতে থাকে। ব্রহ্মা শিবের গানের কোন অর্থই বুঝেননি। জলসার অন্য নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিষ্ণু গানের বেহাল অবস্থা দেখে গলে জল হয়ে যাচ্ছেন দেখে ব্রহ্মা ঐ জল কমন্ডলুতে ধারণ করেন। কমন্ডলুর জলই বর্তমান গঙ্গার জল।[৪]

সৃষ্টিকর্মে নারদ

বীণা বাদ্য যন্ত্রটি নারদেরই সৃষ্ট। তিনি নারদ সংহীতা নামক সংগীত শাস্ত্র প্রণয়ন করেছিলেন। নারদ প্রণীত স্মৃতিও সমধিক বিখ্যাত। নারদ রচিত নারদীয় পুরাণ অষ্টাদশ পুরাণের অন্তর্গত।[১]

সঙ্গীতজ্ঞ নারদ

দেবর্ষি অতিশয় সংগীত অনুরাগী ছিলেন। প্রথমতঃ ব্রহ্মার নিকট কিঞ্চিৎ সংগীতবিদ্যা শিখেছিলেন তিনি। পরে উলুকেশ্বরের নিকট বহু বছর গান্ধর্ব বিদ্যা আলোচনা করে কিছু পারদর্শিতা ও দক্ষতা লাভ করেন। এ সময়েই তার মনে সংগীত বিষয়ে বেশ গর্বভাবের উদয় হয়, কিন্তু দর্পহারী অচিরেই নারদের দর্প চূর্ণ করে দেন। পরিশেষে ভগবান বিষ্ণু’র কৃষ্ণাবতারে তার নিকট গানযোগ শিক্ষা করিয়া ব্রহ্মানন্দলাভে কৃতার্থ হোন।[১]

অন্যরূপ নারদ

অপর এক নারদের উল্লেখ রয়েছে যা ছান্দোগ্য উপনিষদের সপ্তম অধ্যায়ে ব্রহ্ম-বিজ্ঞান প্রসঙ্গে সনৎকুমার নারদ সংবাদ দৃষ্ট হয়; তিনি অতি প্রাচীন।[১]

তথ্যসূত্র

  1. সরল বাঙালা ব্যাকরণ, সুবলচন্দ্র মিত্র, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, ১৯৯৫
  2. আনন্দবাজার, কলকাতা।
  3. ইসকন
  4. http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?font=unicode&font=banglaplain&font=unicode&portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1210422621003

বহিঃসংযোগ