মাহবুব উল আলম চৌধুরী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Faisal Hasan (আলোচনা | অবদান)
রেফারেন্স+
Faisal Hasan (আলোচনা | অবদান)
+
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{unreferenced}}
{{unreferenced}}
'''মাহবুব উল আলম চৌধুরী''' ([[৭ নভেম্বর]], [[১৯২৭]] - [[২৩ ডিসেম্বর]], [[২০০৭]]) একজন কবি, সাংবাদিক এবং [[বাংলা ভাষা আন্দোলন|ভাষা সৈনিক]]। তিনি একুশের প্রথম কবিতার কবি।<ref> {{cite book | last1 = আহমদ নেছার | title = স্মরণে আবরণে চট্টগ্রামের কৃতী পুরুষ | pages = ১২২ | accessdate = 2010-09-05}}</ref><ref> {{cite web | url = http://www.news-bangla.com/index.php?option=com_content&task=view&id=3839&Itemid=1 | title = ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী | accessdate = 2010-09-05 | last = মোরশেদ | first = সাহেদুর | work = দৈনিক ডেসটিনি}}</ref>
'''মাহবুব উল আলম চৌধুরী''' ([[৭ নভেম্বর]], [[১৯২৭]] - [[২৩ ডিসেম্বর]], [[২০০৭]]) একজন কবি, সাংবাদিক এবং [[বাংলা ভাষা আন্দোলন|ভাষা সৈনিক]]। তিনি একুশের প্রথম কবিতার কবি।<ref> {{cite book | last1 = আহমদ নেছার | title = স্মরণে আবরণে চট্টগ্রামের কৃতী পুরুষ | pages = ১২২ | accessdate = 2010-09-05}}</ref><ref> {{cite web | url = http://www.news-bangla.com/index.php?option=com_content&task=view&id=3839&Itemid=1 | title = ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী | accessdate = 2010-09-05 | last = মোরশেদ | first = সাহেদুর | work = দৈনিক ডেসটিনি}}</ref><ref> {{cite web | url = http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-23/news/27103 | title = তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন | accessdate = 2010-09-05 | last = সবুর | first = মুহম্মদ}}</ref>


==জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন==
==জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন==
মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] [[রাউজান|রাউজান উপজেলার]] গহিরা আসাদ চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমদুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা রওশন আরা বেগম। তিনি ১৯৪৭ সালে গহিরা হাইস্কুল হতে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে [[মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট|প্রবেশিকা]] পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে [[চট্টগ্রাম কলেজ|চট্টগ্রাম কলেজে]] ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েটে অধ্যয়নের সময় রাজনৈতিক কারণে তাকে লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে।
মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] [[রাউজান|রাউজান উপজেলার]] গহিরা আসাদ চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমদুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা রওশন আরা বেগম। তিনি ১৯৪৭ সালে গহিরা হাইস্কুল হতে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে [[মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট|প্রবেশিকা]] পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে [[চট্টগ্রাম কলেজ|চট্টগ্রাম কলেজে]] ভর্তি হন। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর কলেজ পরিদর্শনে এসে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তৃতা প্রদানকালে আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করলে মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রতিবাদে সোচ্চার হন এবং শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন।<ref> {{cite web | url = http://www.news-bangla.com/index.php?option=com_content&task=view&id=3839&Itemid=1 | title = ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী | accessdate = 2010-09-05 | last = মোরশেদ | first = সাহেদুর | work = দৈনিক ডেসটিনি}}</ref>


==কর্ম জীবন==
==কর্ম জীবন==
১৩ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:
১৯৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। ১৯৫৩ সালে [[গণতন্ত্রী পার্টি]] গঠিত হলে তিনি তার কেন্দ্রীয় কমিটির সভ্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি [[যুক্তফ্রন্ট|যুক্তফ্রন্টের]] পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে একটি সাংস্কৃতিক স্কোয়াড নিয়ে [[মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী|মাওলানা ভাসানীর]] কাগমারী সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৬৫-৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির দুটি অংশের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিতে দলটি দ্বিখন্ডিত হয়ে যাবার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি হতে অবসর গ্রহণ করেন এবং শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকেন।
১৯৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। ১৯৫৩ সালে [[গণতন্ত্রী পার্টি]] গঠিত হলে তিনি তার কেন্দ্রীয় কমিটির সভ্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি [[যুক্তফ্রন্ট|যুক্তফ্রন্টের]] পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে একটি সাংস্কৃতিক স্কোয়াড নিয়ে [[মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী|মাওলানা ভাসানীর]] কাগমারী সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৬৫-৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির দুটি অংশের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিতে দলটি দ্বিখন্ডিত হয়ে যাবার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি হতে অবসর গ্রহণ করেন এবং শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকেন।
===সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড===
===সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড===
মাহবুব উল আলম চৌধুরী নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের লোকসঙ্গীত সম্মেলন, যুব উৎসব সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি কবি নজরুল নিরাময় সমিতি গঠন করেন এবং এ সমিতির অর্থায়নে অসুস্থ [[কাজী নজরুল ইসলাম|কবি নজরুলকে]] চিকিৎসাকল্পে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফাদার পীয়ের সহায়তায় গ্রামের উন্নতি সাধনের জন্যে নিজ গ্রামে ''শান্তির দ্বীপ'' প্রকল্প শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত ''দৈনিক স্বাধীনতা'' পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।
মাহবুব উল আলম চৌধুরী নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের লোকসঙ্গীত সম্মেলন, যুব উৎসব সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। কবি মাহবুব উল আলম চট্টগ্রামে প্রথম বিশ্বশান্তি পরিষদ গঠন করেন ১৯৪৯ সালে। পারমাণবিক বোমা নিষিদ্ধ করার দাবীতে এই পরিষদ চট্টগ্রাম থেকেই ৭ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিল। যা সুইডেনে বিশ্বশান্তি পরিষদে পাঠানো হয়।<ref> {{cite web | url = http://www.dainikazadi.org/agame_details.php?news_id=38 | title = বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস ।। কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী | accessdate = 2010-09-05 | last = রায়হান | first = আরিফ | work = দৈনিক আজাদী}}</ref> ১৯৫৩ সালে তিনি কবি নজরুল নিরাময় সমিতি গঠন করেন এবং এ সমিতির অর্থায়নে অসুস্থ [[কাজী নজরুল ইসলাম|কবি নজরুলকে]] চিকিৎসাকল্পে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফাদার পীয়ের সহায়তায় গ্রামের উন্নতি সাধনের জন্যে নিজ গ্রামে ''শান্তির দ্বীপ'' প্রকল্প শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত ''দৈনিক স্বাধীনতা'' পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।
==রচনা==
==রচনা==
===কাব্যগ্রন্থ===
===কাব্যগ্রন্থ===
৩২ নং লাইন: ৩২ নং লাইন:
*মিসরের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৫৬)
*মিসরের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৫৬)
*বিপ্লব (১৯৪৬)
*বিপ্লব (১৯৪৬)
==পুরস্কার ও সম্মাননা==
১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে [[বাংলা একাডেমী]] কর্তৃক ফেলোশিপ এবং ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক সংবর্ধনা দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রামের অনোমা সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী, ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম সংগীত পরিষদ, ২০০০ সালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, ২০০১ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ২০০২ সালে পদাতিক নাট্য সংসদ কর্তৃক সংবর্ধনাসহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবিকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী সংবর্ধনা প্রদান করে। এ ছাড়া ২০০৫ সালের ১৫ মার্চ [[চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়|চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের]] আবৃত্তি মঞ্চের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও পদক দেয়া হয়। ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় পুরস্কার, ২০০৬ সালে ঋষিজ পদক ও সংবর্ধনা দেয়া হয়। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==
<references/>
<references/>

১০:১৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মাহবুব উল আলম চৌধুরী (৭ নভেম্বর, ১৯২৭ - ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৭) একজন কবি, সাংবাদিক এবং ভাষা সৈনিক। তিনি একুশের প্রথম কবিতার কবি।[১][২][৩]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা আসাদ চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমদুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা রওশন আরা বেগম। তিনি ১৯৪৭ সালে গহিরা হাইস্কুল হতে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর কলেজ পরিদর্শনে এসে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তৃতা প্রদানকালে আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করলে মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রতিবাদে সোচ্চার হন এবং শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন।[৪]

কর্ম জীবন

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন

১৯৪৭ সালে মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং এ সংগঠনের কর্মী হিসেবে তিনি ব্রিটিশবিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশ নেন। এ বছরেরই নভেম্বর মাসে তার সম্পাদনায় সীমান্ত নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি ১৯৫২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ছাপা হত এবং দুই বাংলার প্রগতিশীল লেখকরা এতে লিখতেন।

ভাষা আন্দোলন

১৯৫০ সালে পাকিস্তান মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে রিপোর্টে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এ অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রাদেশিক ভাষা আন্দোলন কমিটির সদস্য। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি কবিতাটি রচনা করেন। এ কবিতাটি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম

১৯৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। ১৯৫৩ সালে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হলে তিনি তার কেন্দ্রীয় কমিটির সভ্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে একটি সাংস্কৃতিক স্কোয়াড নিয়ে মাওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৬৫-৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির দুটি অংশের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিতে দলটি দ্বিখন্ডিত হয়ে যাবার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি হতে অবসর গ্রহণ করেন এবং শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকেন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড

মাহবুব উল আলম চৌধুরী নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের লোকসঙ্গীত সম্মেলন, যুব উৎসব সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। কবি মাহবুব উল আলম চট্টগ্রামে প্রথম বিশ্বশান্তি পরিষদ গঠন করেন ১৯৪৯ সালে। পারমাণবিক বোমা নিষিদ্ধ করার দাবীতে এই পরিষদ চট্টগ্রাম থেকেই ৭ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিল। যা সুইডেনে বিশ্বশান্তি পরিষদে পাঠানো হয়।[৫] ১৯৫৩ সালে তিনি কবি নজরুল নিরাময় সমিতি গঠন করেন এবং এ সমিতির অর্থায়নে অসুস্থ কবি নজরুলকে চিকিৎসাকল্পে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফাদার পীয়ের সহায়তায় গ্রামের উন্নতি সাধনের জন্যে নিজ গ্রামে শান্তির দ্বীপ প্রকল্প শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।

রচনা

কাব্যগ্রন্থ

  • আবেগধারা (১৯৪৪)
  • ইস্পাত (১৯৪৫)
  • অঙ্গীকার (১৯৪৬)
  • কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি (১৯৮৮)
  • সূর্যাস্তের অস্তরাগ (২০০৪)
  • সূর্যের ভোর (২০০৬)

নির্বাচিত কলাম

  • গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র (২০০৬)

ছড়ার বই

  • ছড়ায় ছড়ায় (২০০৪)

নাটক

  • দারোগা (১৯৪৪)
  • আগামীকাল (১৯৫৩)

পুস্তিকা

  • মিসরের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৫৬)
  • বিপ্লব (১৯৪৬)

পুরস্কার ও সম্মাননা

১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে বাংলা একাডেমী কর্তৃক ফেলোশিপ এবং ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক সংবর্ধনা দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রামের অনোমা সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী, ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম সংগীত পরিষদ, ২০০০ সালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, ২০০১ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ২০০২ সালে পদাতিক নাট্য সংসদ কর্তৃক সংবর্ধনাসহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবিকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী সংবর্ধনা প্রদান করে। এ ছাড়া ২০০৫ সালের ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি মঞ্চের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও পদক দেয়া হয়। ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় পুরস্কার, ২০০৬ সালে ঋষিজ পদক ও সংবর্ধনা দেয়া হয়। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।

তথ্যসূত্র

  1. আহমদ নেছার। স্মরণে আবরণে চট্টগ্রামের কৃতী পুরুষ। পৃষ্ঠা ১২২। 
  2. মোরশেদ, সাহেদুর। "ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী"দৈনিক ডেসটিনি। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০৫ 
  3. সবুর, মুহম্মদ। "তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০৫ 
  4. মোরশেদ, সাহেদুর। "ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী"দৈনিক ডেসটিনি। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০৫ 
  5. রায়হান, আরিফ। "বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস ।। কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী"দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০৫