জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
MUHAMMAD MUHIBBULLAH (আলোচনা | অবদান)
MUHAMMAD MUHIBBULLAH (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
পরিচিতি
{{তথ্যছক সংগঠন

আলহামদুলিল্লাহ! সকল প্রসংশা মহা মহীয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। আর সালাত ও সালাম সায়্যিদুল মুরসালীন,খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর।

ইলম আল্লাহ তায়া‘লার এক বিশেষ গুণ। যা খিলাফতে ইলাহীর মূল ভিত্তি। বিশুদ্ধভাবে পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ইলমে ওহীই মূলত ইলম হিসাবে আখ্যায়িত হতে পারে। হযরত আদম (আ.) থেকে যে ধারা শুরু হয়েছিল এবং তার পরিসমাপ্তি ও পরিপূর্ণতা ঘটে আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। তাঁর পরে নয়া নবীও আসবে না কেউ এবং ওহীও নাযিল হবে না আর।

সাহাবা-ই কিরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং সালফে সালেহীন ও আকাবিরে উম্মত ছিলেন এই ইলমেরই প্রকৃত ওয়ারিছ। তাঁরা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যতা ও আমানতদারীর সাথে এই ইলম পরবর্তীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বিশ^স্ততা, নির্ভরযোগ্যতা, সুমহান চরিত্র মাধুরী, ত্যাগ ও কুরবানী, সাধনা ও ঐকান্তিকতা ইত্যাদি সকল দিক থেকেই তাঁরা ছিলেন বিশ^নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্য উত্তরাধিকারী ও নিজ নিজ যুগের প্রোজ্জ্বল নক্ষত্র। সকল ক্ষেত্রেই তাঁরা মানুষদেরকে দিয়েছেন সঠিক দিক নির্দেশনা। বাতিলের রক্তচক্ষু, ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন, কুচক্রীদের প্রলোভন, জাগতিক ভোগ-বিলাসের মোহ কোন কিছুই তাঁদেরকে আপন কর্তব্য থেকে সামান্যতম বিচ্যুত করতে পারেনি।

ভারতবর্ষে  ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে সাহাবায়ে কেরামের যুগেই। তখন থেকেই ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের খন্ড খন্ড প্রয়াস চলে আসছিল। পরবর্তীতে মুসলিম শাসনের দীর্ঘ সাতশত বছরে মুসলমানরা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এতটাই অগ্রসর হয়ে যায় যে, কোন নগর বন্দর এমন ছিল না যেখানে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এমন কি গ্রাম-গঞ্জে পর্যন্ত এ শিক্ষার বিস্তার ঘটে। এ ধারার অনুসারীরাই ভারতবর্ষে ইসলামী আদর্শ বিস্তারে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখে।

তৎকালে পৃথিবীর সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিদেশীরা আসত ভারতে ব্যবসা বাণিজ্য করতে। বাণিজ্যের এ পথ ধরেই অপরাপর বৈদেশিক কোম্পানিগুলোর ন্যায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে পা রাখে। এক সময় ছলে-বলে কৌশলে এ দেশের রাজ্য ক্ষমতা দখল করে নেয়। ক্ষমতার আসন পাকাপোক্ত করার জন্য তারা সুদূর প্রসারী ও আগ্রাসী তৎপরতা শুরু করে। অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয়া হয় এ দেশের মানুষকে। রাজনৈতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে স্তব্ধ করে দেয়া হয় রাজনৈতিক ভাবে পূনরুত্থানের সম্ভাবনাকে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এদেশের মানুষের মন-মস্তিষ্ককে। আদর্শিক চেতনার ভিত্তিতে জেগে উঠা সম্ভাব্য বিপ্লবের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়ার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

তাদের এই সর্বব্যাপী অপতৎপরতা ও ক্ষমতার দাপটে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ পরাধীনতার জীবন গ্রহণ করে নিয়েতে বাধ্য হয়। কিন্তু সত্যের অতন্দ্র প্রহরী চিরস্বাধীন চেতা উলামায়ে কেরাম এ পরাধীনতাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা স্বাধীনতার পক্ষে অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। এবং তাঁরা বিরোধিতা, বিদ্রোহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের উপর্যুপুরী কর্মসূচী দানের মাধ্যমে অতিষ্ঠ করে তোলেন ক্ষমতাসীন ইংরেজ বেনিয়াদেরকে। যার ফলে উলামায়ে কেরামের উপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। বাজেয়াপ্ত হয় তাদের সহায় সম্পত্তি । জেল-জুলুম, হত্যা-নির্যাতন, দেশান্তর, দ্বীপান্তর কোন কিছুই বাদ যায় নি। কিন্তু কোন কিছুই তাদেরকে অবদমিত করতে পারেনি। তাদের ছড়ানো সেই চেতনা ক্রমান্বয়ে  আন্দোলিত হতে থাকে সারা দেশে।

এক পর্যায়ে ইংরেজরা বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে দেয়ার হীন মানসে সকল সরকারী জায়গীর ও অনুদান বন্ধ করে দেয় এবং ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে সরকারী চাকুরী-বাকুরীর সুবিধা হতে বঞ্চিত করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। কিন্তু চির সংগ্রামী আলেম সমাজ এতে দমবার পাত্র নন। তাঁরা সর্বসাধারণের অনুদানের নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে তুললেন ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে একই ধারা ও প্রক্রিয়ার উপর গড়ে উঠে হাজার হাজার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার পাশাপাশি আজাদীর দীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেয়া হত এই সব প্রতিষ্ঠানে। তাদের মাধ্যমে পুরো ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার চেতনা। ফলে উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ জনতার সার্বজনীন প্রচেষ্টায় একদিন স্বাধীনতার মুক্ত পতাকা নীল আকাশে পতপত করে উড়ে বিশে^র দরবারে এ দেশের স্বধীনতার ঘোষণা দেয়।

এই শিক্ষা ধারার প্রভাবে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির ময়দানে হয়েছে এক নবদিগন্তের অভ্যুদয়। দ্বীনের দাওয়াত ও প্রচার প্রসারে তাঁদের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। বাতিল ও কুসংস্কার প্রতিরোধে তাদের রয়েছে এক অনবদ্য দীর্ঘ ইতিহাস।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দ্বীনি তা’লীম ও তারবিয়তের এই কাজ উপমহাদেশের সর্বত্র বিছিন্নভাবে চলতে থাকে। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এসকল প্রতিষ্ঠান। দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলামকে  মূল হিসেবে সামনে রেখে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তার অভিরুচির অনুকূলে শিক্ষা কারিকুলাম ও পঠ্যসূচী তৈরি করে নেয়। সময়ের দাবীর নিরিখে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচীতে কিছু সংস্কার করতে থাকে। ফলে একই ধারার অনুসারী এ সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কারিকুলামে যথেষ্ঠ অমিল সৃষ্টি হয়। শ্রেণির নামকরণ, বর্ষ নির্ধারণ, এমনকি পাঠ্যসূচীতেও বেশ অমিল পরিলক্ষিত হয়। তা ছাড়া সামষ্টিক উদ্যোগে যে উন্নতি ও অগ্রগতি হওয়া সম্ভব ছিল, তা থেকে জাতি বঞ্চিত থেকে যায়। যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে শিক্ষা ধারা সংস্কারের যে প্রয়োজন ছিল তাও কাঙ্খিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি।

এ সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা ও ধর্মীয় শিক্ষাকে যুগোপযোগী অভিন্ন কারিকুলামে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সমন্বিত প্রয়াস ও সার্বজনীন উদ্যোগের। তা ছাড়া বিংশ শতকের শুরু থেকে এ শিক্ষার বিরুদ্ধে বাতিলের ধ্বজ্জাধারীরা সাংগঠনিকভাবে নানা অপতৎপরতা শুরু করে। ফলে বিছিন্ন ভাবে গড়ে উঠা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাঙ্খিত সফলতা অর্জনে হিমশিম খেতে থাকে। বাতিল যেভাবে আসে তার মোকাবেলাও সেভাবে করতে হয়। তাই সংগঠিত বাতিলকে রুখতে ও যুগোপযোগী কর্মসূচী গ্রহণের তাগিদে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংগঠনিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ করা এবং একই কারিকুলাম ও সিলেবাসের আওতায় শিক্ষাকে আরো গঠনমূলক, গতিশীল ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কোথাও কোথাও জেলা ও অঞ্চল ভিত্তিক ঐক্যও গড়ে উঠেছিল। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি বারবার। বিশেষভাবে দেওবন্দ ও দেওবন্দিয়্যাতের চেতনা ও ফিকির  থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছি। তাই এ সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহত্তর ঐক্যের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগে ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর মুতাবিক ৫মুহাররম ১৪৩৮ হিজরী শুক্রবার বাদ জুমা দারুল উলূম দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা ও আফকারের সফল ধারক-বাহক যুগের কিংবদন্তী আলেমে দ্বীন শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা.-এর নেতৃত্বে দেশের বিশিষ্ট ও শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাগন এক জরুরী বৈঠকে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ (বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়্যা বাংলাদেশ)’ নামে একটি জাতীয় বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

বোর্ডের উদ্দেশ্য

 ইলমে ওহী হেফাজত ও প্রচার প্রসারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন।

 শিক্ষার ক্ষেত্রে সামগ্রিকতা সৃষ্টি এবং একটি ব্যাপকতর সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন করে তোলা।

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম ও সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের আলোকে শরীয়ত তথা কোরআন সুন্নাহকে সঠিকভাবে  অনুধাবন করা।

 কওমী মাদরাসার স্বার্থ রক্ষা ও তার বিরুদ্ধে উদ্ভুত যাবতীয় ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করা।

 শিক্ষার্থীদের  মাঝে আসলাফ ও আকাবিরের চিন্তা-চেতানার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদেরকে প্রকৃত ওয়ারিসে নবী হিসেবে গড়ে তোলা।

 আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদা বিশ^াসের উপর অটল অবিচল থাকা।


বোর্ডের লক্ষ্য

 দেওবন্দিয়্যাতের চেতনায় উজ্জীবিত থেকে মুয়ামালা-মুয়াশারা, নীতি-নৈতিকতা, আখলাক ও তাহজীব, ইলমে ওহীর হেফাজত ও সংরক্ষণ, ইবাদত-বন্দেগী, আকিদা-বিশ^াস তথা দ্বীনের সর্ব বিষয়ে হক ও হক্কানিয়্যাতের অজেয় দূর্গ আকাবিরে দেওবন্দের অনুসরণ ও নিকট অবস্থান নিশ্চিত করা।

 একজন শিক্ষার্থীকে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণে ও বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষাদানের মাধ্যমে যোগ্যতর করে গড়ে তোলা।

 ধর্মীয় জ্ঞানসমূহ অর্থাৎ কুরআন মাজীদ, হাদীস শরীফ, তাফসীর, ফিকাহ, আকাইদ, উসূলে তাফসীর, উসূলে হাদীস, উসূলে ফিকাহ এবং অন্যান্য মাযহাবী জ্ঞানার্জন এবং তৎসঙ্গে ইসলামী শাস্ত্রসমূহের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দানের মাধ্যমে দ্বীনের এক একটি স্তম্ভ তৈরি করা।

 মাতৃভাষা বাংলা ও আর্ন্তজাতিক ভাষা আরবী ও ইংরেজীসহ উর্দূ, ফার্সি এবং অন্যান্য ভাষাসমূহের প্রয়োজন মাফিক শিক্ষা প্রদান করা।

 লিখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলামের প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের খিদমত আঞ্জাম দানে যোগ্যতর সৈনিক গড়ে তোলা।

 শিক্ষা-দীক্ষা এবং তা’লীম-তারবিয়তের মাধ্যমে খাইরুল কুরুন এবং সালাফে সালেহীনের ন্যায় ইসলামের মহান আদর্শিক নেতৃত্ব  সৃষ্টির একনিষ্ঠ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

 ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারের লক্ষ্যে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’-এর আওতায় বিভিন্ন এলাকায় কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা এবং এলাকার সকল মসজিদে সাবাহী মক্তব শিক্ষা চালু করা।

 কুফর, শিরক ও বিদআতসহ, সকল প্রকার ধর্মদ্রোহীতা এবং বদদ্বীনির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা।

 নব্য ও প্রাচীন বাতিল মতাদর্শীদের পক্ষ থেকে ইসলামের স্বীকৃত বিষয় সমূহের উপর যে কোন ধরণের হামলার সুনির্দিষ্ট ও সপ্রমান জবাব দ্বারা তাদের প্রতিহত করা।

 মওদুদী, শিয়া ও কাদিয়ানীবাদসহ সকল প্রকার বাতিল চিহ্নিত করে মুসলমানদেরকে তাদের ফেতনা সম্পর্কে সতর্ক করা।

 প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে শুধু আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার- এর পথ প্রদর্শন করা। সকল প্রকার রাষ্ট্রদ্রোহীতা থেকে বেঁচে থাকা ও আদর্শ সমাজ বিনির্মানে সহায়ক কাজে সহযোগিতা করা।

বোর্ডের বৈশিষ্ট্য

 শিক্ষা-দীক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রদান করা।

 আল-হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষায় অত্র বোর্ডে ১ম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীকে আকর্ষনীয় পুরুস্কারে পুরুস্কৃত করা এবং অত্র বোর্ডের ফযিলত জামাতে মেধা তালিকায় ১ম স্থান অধিকারকারী শিক্ষার্থীকেও বিশেষ পুরুস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা। এছাড়াও কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য মারহালায় মেধা তালিকায় উন্নীত শিক্ষার্থীদের মাঝেও উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।

 ইফতা বিভাগের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ইফতার শিক্ষার্থীদের বোর্ডের অধীনে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগ্রহণ।

 শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড কর্তৃক যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ।

বোর্ডের পরিকল্পনা

 কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরকে বৈধ ভিসায় দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা।

 আরব বিশ্বসহ বিশ্বের সুবিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা।

বোর্ডের সিলেবাস

আকাবির ও আসলাফের প্রণীত “দারসে নেযামী”-ই (যুগোপযোগী পরিমার্জন ও সংযোজনসহ) হচ্ছে  বোর্ডের সিলেবাস।

কর্মপন্থা

ক. প্রণয়ন ও প্রকাশনা

১. কওমী মাদরাসা সমূহের তা’লীম ও তারবিয়তের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে যুগোপযোগী পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা।

২. শিক্ষার মানোন্নয়নে যুগ চাহিদানুযায়ী পাঠ্য পুস্তক রচনা ও প্রকাশ করা।

৩. র্বোডের মূখপাত্র হিসেবে বার্ষিক/ ত্রৈমাসিক/মাসিক/পাক্ষিক/সাময়িক পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করা।

খ. প্রশিক্ষণ

১. শিক্ষকদেরকে শিক্ষাদানে পরিপক্ক করে তোলার লক্ষ্যে ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণের’ ব্যবস্থা করা।

২. সর্বপ্রকার বাতিল মতবাদের প্রতিরোধে বলিষ্ঠ অবদান রাখতে মাদরাসার শিক্ষকদেরকে সক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্যে সময়ে সময়ে  উক্ত বিষয় সম্পর্কে সেমিনার, আলোচনা সভা ও তারবিয়তী কোর্স এর ব্যবস্থা করা।

৩. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য মাহে রমজানে বিশেষ কোর্স চালু করা। যেমন, নাহু, সরফ, উসূল ইত্যাদি।

৪. তাহফীজুল কুরআন, নাজেরা ও নূরানী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৫. লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহী ও উৎসাহী করে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।

গ. তত্ত¡াবধান

১. তা’লিম ও তারবিয়তের মান যাচায়ের জন্য বোর্ডভূক্ত মাদরাসা সমূহের পরিদর্শন করা।

২. বোর্ডভূক্ত মাদরাসা সমূহের আয় ব্যায়ের হিসাবের রিপোর্ট তদারকি করা।

৩. বোর্ডভূক্ত মাদরাসা সমূহের যে কোন সমস্যার নিয়মতান্ত্রিক সমাধান কল্পে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার পক্ষ হতে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে যথা নিয়মে সহযোগিতা করতে হবে।

৪. মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুরোধক্রমে বোর্ডের অডিটর দ্বারা হিসাবপত্র অডিট করানোর ব্যবস্থা করা।

ঘ. কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ

১. প্রতি মারহালার শেষবর্ষে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।

২. যথা সময়ে সনদপত্র প্রদান করা।

৩. মারহালায়ে তাকমীল ফিল হাদীস ও তাহফিযুল কোরআন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর দস্তারে ফযিলত প্রদানের ব্যবস্থা করা করা।

ঙ. গবেষণা

১. আধুনিক কালের নব উদ্ভুত বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা ও গবেষণা করতঃ শরিয়তের দৃষ্টি ভঙ্গি নিরুপণের উদ্দেশ্যে আহকামে শরিয়ত স¤¦ন্ধে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে ইফতা ও গবেষণা পরিষদ গঠন করা।

২. গবেষণা প্রসূত সিদ্ধান্ত সমূহ জনসাধারণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা।

৩. গবেষণার জন্য সমৃদ্ধশালী লইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা।

৪. প্রতি মাসে একবার করে অথবা আকস্মিক প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ভাবে উক্ত পরিষদের বৈঠক করা।

জাতীয় দ্বীন মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর অবদান

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র বিষয় দেখা যায়। বৈচিত্র্যময়তা এ ধরার এক অনন্য বৈশিষ্ঠ। ‘জাতীয় দ্বীন মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে বাংলাদেশ’-এর ব্যাপারটি মূলত এমনই পরিলক্ষিত হয়। যদিও অতি সল্প সময়ের পথ চলা এ বোর্ডের, কিন্তু জাতীয় অবদান রাখার  ক্ষেত্রে তার বৈচিত্র্যময়তা ও বৈশিষ্ঠের হিসাব অনেক দীর্ঘ। অনেক স্মৃতি ও ইতিহাস বিজড়িত। পরিচিতির এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে  তার মাত্র কয়েকটি তুলে ধরা হল।

১. কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি আদায়

ভারত বর্ষে ইস্ট ইন্ডয়া কোম্পানির আগমন ও তৎপরবর্তী ইংরেজরা ক্ষমতা দখলের পর ইসলাম ও মুসলামানদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণ্য সড়যন্ত্রের বিজ বপন করে ছিল তা কারোরই অজানা নয়। বিশেষভাবে মূলধারার  ইসলামী শিক্ষাকে সমূলে মূছে ফেলার জন্য সর্ব শেষ তারা আলিয়া মাদরাসা উদ্ভাবন করে। যার ফলে মূল ধারার শিক্ষায় শিক্ষীতগণ ধীরে ধীরে সমাজে হেয়তার শিকার হতে থাকে। সংর্কীন হতে আরম্ভ করে তাদের কর্ম জীবনের সীমানা। ছিটকে পড়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও দায়-দায়িত্ব হতে অনেক দূরে। এমনি কি মূলধারার একজন উচ্চ শিক্ষত ব্যক্তিও সমাজে অশিক্ষত বলে বিবেচিত হতে থাকে। দেশ গড়া ও দেশের সেবা হতে সে হয় বঞ্চিত। তার সনদের কোন মান দিতে হবে বা দেওয়া প্রয়োজন দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত অনেক সরকার পরিবর্তন হলেও কেউ এ দিকে দৃষ্টিপাত করেনি। অবশ্য উলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ এ ব্যাপারে কিছু চেষ্টা করলেও তা হালে পানি পায়নি। আলহামদুলিল্লাহ জাতীয় ঐক্যের রূপকার মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ এর ঐকান্তিক চেষ্টায় ২০১৮ সালে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা রাষ্ট্রিয়ভাবে কওমী মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) এর সনদকে মাষ্টার ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী) এর সমমান প্রদানের মাধ্যমে সম্মানীত করেন। এ যুগান্তকারী অবদানে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’-এর নাম কওমী মাদরাসার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরদিন।

২. কওমী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করণে জাতীয় দ্বীনি মদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর ভূমিকা ।

সনদের মান প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে কওমী মাদরাসা কখনোই ষড়যন্ত্রের বাইরে ছিল না। তবে আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবানী তিনি তার অসীম দয়ায় কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে তার আপন ধারায় টিকিয়ে রেখেছেন। অসংখ্য প্রতিকুলতার ভেতরেও কওমী মাদরাসার শিক্ষার মূল উৎস দারুল উলূম দেওবন্দের (ঊসুলে হাশতেগানা) ঐতিহাসিক মূলনীতির উপর  দাড়িয়ে আপন স্বকীয়তা রক্ষা করে অসামান্য খিদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে।

নীতিমালা সমূহ

১. ব্যাপকভাবে অনুদান সংগ্রহের ব্যবস্তা করা: যথাসম্ভব মাদরাসার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে অধিকহারে চাঁদা আদায়ের বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজেও এর জন্য চেষ্টা করতে হবে, অন্যের মাধ্যমেও চেষ্টা করাতে হবে। মাদরাসার হিতাকাঙ্খীদেরও এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

২. ছাত্রদের খানা-পিনার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা: যেভাবেই হোক মাদরাসার ছাত্রদের খানা চালু রাখতে হবে বরং ক্রমান্বয়ে তা উন্নত করার ব্যাপারে হিতাকাঙ্খী ও কল্যাণকামীদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

৩. ব্যবস্থাপক ও শূরা সদস্যদের প্রসঙ্গে: মাদরাসার ব্যবস্থাপক ও শূরা সদস্যগণকে মাদরাসার উন্নতি, অগ্রগতি এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজের মত প্রতিষ্ঠার একগুঁয়েমী যাতে কারো মাঝে না হয় এ দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি এমন অবস্থা দেখা দেয় যে, সদস্যগণ নিজ নিজ মতের বিরোধিতা কিংবা অন্যের মতামতের সমর্থন করার বিষয়টি সহনশীলভাবে গ্রহণ করতে না পারেন তাহলে এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিমূল নড়বড়ে হয়ে পড়বে। আর যথাসম্ভব মুক্ত মনে পরামর্শ দিতে হবে এবং মাদরাসার শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি লক্ষ্যণীয় হতে হবে।  নিজের মত প্রতিষ্ঠার মনোবৃত্তি না থাকতে হবে। এ জন্য পরামর্শদাতাকে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তার মতামত গ্রহণীয় হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই আশাবাদী না হতে হবে। পক্ষান্তরে শ্রোতাদেরকে মুক্তমন ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তা  শুনতে হবে। অর্থাৎ এরূপ মনোবৃত্তি রাখতে হবে যে, যদি অন্যের মত যুক্তিযুক্ত ও বোধগম্য হয়, তাহলে নিজের মতের বিপরীত হলেও তা গ্রহণ করে নেওয়া হবে। আর মুহতামিম বা পরিচালকের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে সম্পাদন যোগ্য বিষয়ে সদস্যগণের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া অবশ্যই জরূরী। তবে মুহতামিম নিয়মিত সদস্যদের থেকেও পরামর্শ করতে পারবেন কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত এমন কোন বিদগ্ধ জ্ঞানী আলেম থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন যিনি সকল দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের জন্য হিতাকাঙ্খী ও কল্যাণকামী। তবে যদি ঘটনাক্রমে পরিষদের সকল সদস্যের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ না হয় এবং প্রয়োজনমাফিক পরিষদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের সাথে পরামর্শক্রমে কাজ করে ফেলা হয়, তাহলে কেবল এ জন্য অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত হবে না যে, ‘আমার সাথে পরামর্শ করা হল না কেন?’ কিন্তু যদি মুহতামিম কারো সঙ্গেই পরামর্শ না করেন, তাহলে অবশ্যই পরিষদ আপত্তি করতে পারবে।

৪. শিক্ষক নির্বাচন প্রসঙ্গে: মাদরাসার সকল শিক্ষককে অবশ্যই সমমনা ও একই চিন্তা চেতনার অনুসারী হতে হবে। সমকালীন (দুনিয়াদার) আলেমদের ন্যায় নিজ স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত না হতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি কখনো এরূপ অবস্থা দেখা দেয়, তাহলে মাদরাসার জন্য এটি মোটেও কল্যাণকর হবে না।

৫. পাঠদান ও নেসাব: পূর্ব থেকে যে পাঠ্যসূচী নির্ধারিত রয়েছে কিংবা পরবর্তীতে পরামর্শের ভিত্তিতে যে পাঠ্যসূচী নির্ধারণ করা হবে, তা যাতে সমাপ্ত হয়; এই ভিত্তিতেই পাঠদান করতে হবে। অন্যথায় এ প্রতিষ্ঠান সুপ্রতিষ্ঠিতই হবে না, আর যদি হয়ও তবু তা ফায়দাজনক হবে না।

৬. অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয়: এ প্রতিষ্ঠানের জন্য যতদিন পর্যন্ত কোন স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে; ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার শর্তে তা এমনিভাবেই চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি স্থায়ী আয়ের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমন কোন জায়গীর লাভ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা কিংবা বিশ্বস্থ কোন আমীর উমারার অনুদানের অঙ্গীকার ইত্যাদি, তাহলে এরূপ মনে হচ্ছে যে, আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার দোদুল্যমান অবস্থা; যা মূলতঃ আল্লাহমুখী হওয়ার মূল পুঁজি, তা হাত ছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবী সাহায্যের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। তদুপরি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও কর্মচারীগণের মাঝে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহ বিবাদ দেখা দিবে। বস্তুতঃ আয় আমদানি ও গৃহাদি নির্মাণের বিষয়ে অনেকটাই অনাড়ম্বরতা ও উপায় উপকরণহীন অবস্থা বহাল রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

৭. সরকারী অনুদান কিংবা সাহায্য পরিহার করা: সরকার ও আমীর উমারাদের সংশ্লিষ্টতাও এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে হচ্ছে।

৮. মুখলিস ব্যক্তিদের থেকে অনুদান গ্রহণ: যথা সম্ভব এমন ব্যক্তিদের চাঁদাই প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক বরকতময় হবে বলে মনে হচ্ছে; যাদের চাঁদাদানের মাধ্যমে সুখ্যাতি লাভের প্রত্যাশা থাকবে না। বস্তুতঃ চাঁদাদাতাগণের নেক নিয়ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক স্থায়ীত্বের কারণ হবে বলে মনে হয়।

কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আজ সে স্বকীয়তা যাতে রক্ষা না পায়। আপন বৈশিষ্ঠে অটল না থাকে বরং তা আলিয়া মদারাসার ন্যায় সরকারি স্বার্থরক্ষার এক লেজুর বৃত্তিক শিক্ষাধারায় পরিণত হয়ে সোনালী ঐতিহ্যের অবসান ঘটে। এক শ্রেণির কওমী ও দ্বীন বিদ্বেষী প্রপাকাÐাকারী সর্বতো এ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল নানা ভাবে। এরই অংশ হিসেবে কওমী মাদরাসার সর্বোচ্ছ সংস্থা ‘আলা-হাইআতুল উলয়া লিল জামি‘আতিল কওমীয়া বাংলাদেশ’ কওমী বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তার আওতাধিন করার উদ্যোগে তারা অনেকেই এগিয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ না করুন যদি এমনটা হয়ে যেত তবে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকত না। যা সংস্থার নেতৃবৃন্দ পরবর্তিতে স্পষ্টভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। এই প্রলয়ঙ্করী ক্ষতির সিদ্ধান্ত থেকেও ‘জাতীয় দ্বীনি মদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’-এর দূরদর্শী ও বিচক্ষণ চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার প্রতিনিধিগণ কওমী মাদরাসাকে রক্ষা করছেন। ফলে দেশজুড়ে কওমী শিক্ষাঙ্গনের বিজ্ঞ উলামাগণ ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ এর অবদানকে স্বীকার করে নিয়েছেন এক বাক্যে।

৩. করোনা কালীন সময়ে কওমী মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা

কোভিট১৯ এর করাল গ্রাসে বিশ্বজুড়ে যখন সকল সেক্টরে স্তব্ধতা ও আতঙ্ক বিরাজমান। শিক্ষাঙ্গনও মুক্তি পায়নি তার ভয়াল থাবা থেকে। শুধু আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের কথা বলছি না, বরং সমগ্র পৃথিবীর পরিণতি যখন একই। কেবল লকডাউনের পর লকডাউন চলছে নানা ভাবে নানা কৌশলে। বিশ্ব বিদ্যালয়, স্কুল কলেজ, আলিয়া মাদরাসা সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন বিজ্ঞমহলের উদ্বেগ উৎকন্ঠার অন্ত নেই। কিন্তু এর পরেও সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রষ্ঠিান খুলে দেয়ার যখন কোন পরিকল্পনাও পরিলক্ষিত হচ্ছিল না  ঠিক তখন অবিশ্বাস্য ভাবে যা ঘটে গেল তা হলো কওমী মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ না করে তা চালু রাখার সিদ্ধান্ত। কে বা কাদের প্রচেষ্টায় সে অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে ছিল তা আমাদের কারোরই অজানা নেই। ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ এর একক প্রচেষ্টায় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের দিক নির্দেশনায় তার প্রতিনিধিগণ মাননীয় সরকারকে মাদরাসা শিক্ষা চালু রাখার সুফল বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে সরকার বৈশ্বিক প্রতিকুল অবস্থার ভেতরেও কওমী মাদরাসা শিক্ষা চালু রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদান করে মাদরাসা অঙ্গনকে তরতাজা ও উজ্জীবিত রাখতে সহায়তা করেছে।

কওমী মাদরাসার ইতিহাসে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ এর স্বর্র্ণিল অবদানও অবিস্বরণীয় হয়ে থাকবে। এ ছাড়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে গঠিত এ বোর্ডের অতি স্বল্প সময়ে জাতিকে আরো অনেক অবদানে শিক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা উত্তোরত্তোর এ বোর্ডকে তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছে দেন এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ কবুল করেন। আমীন।

পরিশিষ্ট  

জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড একটি যুগোপযোগী  আদর্শিক শিক্ষাবোর্ড। মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। দ্বীনের এই দুর্ভেদ্য দুর্গকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন আপনাদের সকলের আন্তরিক দোয়া, সুপরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে দ্বীনি খেদমতের জন্য কবুল করুন।{{তথ্যছক সংগঠন
| name = {{nastaliq|জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ}}
| name = {{nastaliq|জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ}}
| native_name = وفاق المدارس الدينية بنغلاديش
| native_name = وفاق المدارس الدينية بنغلاديش
২৬ নং লাইন: ১৯৭ নং লাইন:
| main_organ = দারুল উলুম দেওবন্দ
| main_organ = দারুল উলুম দেওবন্দ
| parent_organisation = [[আল হাইআতুল উলয়া]]
| parent_organisation = [[আল হাইআতুল উলয়া]]
}}পরিচিতি সংক্ষিপ্ত{{দেওবন্দি}}
}}
{{দেওবন্দি}}
'''জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ''' ({{lang-ar|وفاق المدارس الدينية بنغلاديش}}) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]] অবস্থিত [[বাংলাদেশ সরকার|সরকার]] স্বীকৃত একটি [[কওমি মাদ্রাসা]] শিক্ষা বোর্ড।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-details-1263.html|শিরোনাম=‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’|ওয়েবসাইট=bdlaws.minlaw.gov.bd|সংগ্রহের-তারিখ=2020-09-30}}</ref> বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সমূহের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা নতুন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.banglatribune.com/national/news/148741|শিরোনাম=ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে আসছে নতুন কওমি বোর্ড {{!}} banglatribune.com|ওয়েবসাইট=Bangla Tribune|ভাষা=bn|সংগ্রহের-তারিখ=2020-09-11}}</ref> ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর [[ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ|ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের]] নেতৃত্বে এই বোর্ডটি গঠিত হয় এবং ১৫ অক্টোবর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.banglatribune.com/others/news/152871|শিরোনাম=বোর্ডের খবর নেই, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা {{!}} banglatribune.com|ওয়েবসাইট=Bangla Tribune|ভাষা=bn|সংগ্রহের-তারিখ=2020-09-30}}</ref> এই বোর্ডের অধীনে ১ সহস্রাধিক মাদ্রাসা রয়েছে।{{cn}}
'''জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ''' ({{lang-ar|وفاق المدارس الدينية بنغلاديش}}) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]] অবস্থিত [[বাংলাদেশ সরকার|সরকার]] স্বীকৃত একটি [[কওমি মাদ্রাসা]] শিক্ষা বোর্ড।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-details-1263.html|শিরোনাম=‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’|ওয়েবসাইট=bdlaws.minlaw.gov.bd|সংগ্রহের-তারিখ=2020-09-30}}</ref> বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সমূহের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা নতুন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.banglatribune.com/national/news/148741|শিরোনাম=ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে আসছে নতুন কওমি বোর্ড {{!}} banglatribune.com|ওয়েবসাইট=Bangla Tribune|ভাষা=bn|সংগ্রহের-তারিখ=2020-09-11}}</ref> ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর [[ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ|ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের]] নেতৃত্বে এই বোর্ডটি গঠিত হয় এবং ১৫ অক্টোবর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.banglatribune.com/others/news/152871|শিরোনাম=বোর্ডের খবর নেই, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা {{!}} banglatribune.com|ওয়েবসাইট=Bangla Tribune|ভাষা=bn|সংগ্রহের-তারিখ=2020-09-30}}</ref> এই বোর্ডের অধীনে ১ সহস্রাধিক মাদ্রাসা রয়েছে।{{cn}}



০৯:৪৫, ৫ জুন ২০২২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পরিচিতি

আলহামদুলিল্লাহ! সকল প্রসংশা মহা মহীয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। আর সালাত ও সালাম সায়্যিদুল মুরসালীন,খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর।

ইলম আল্লাহ তায়া‘লার এক বিশেষ গুণ। যা খিলাফতে ইলাহীর মূল ভিত্তি। বিশুদ্ধভাবে পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ইলমে ওহীই মূলত ইলম হিসাবে আখ্যায়িত হতে পারে। হযরত আদম (আ.) থেকে যে ধারা শুরু হয়েছিল এবং তার পরিসমাপ্তি ও পরিপূর্ণতা ঘটে আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। তাঁর পরে নয়া নবীও আসবে না কেউ এবং ওহীও নাযিল হবে না আর।

সাহাবা-ই কিরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং সালফে সালেহীন ও আকাবিরে উম্মত ছিলেন এই ইলমেরই প্রকৃত ওয়ারিছ। তাঁরা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যতা ও আমানতদারীর সাথে এই ইলম পরবর্তীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বিশ^স্ততা, নির্ভরযোগ্যতা, সুমহান চরিত্র মাধুরী, ত্যাগ ও কুরবানী, সাধনা ও ঐকান্তিকতা ইত্যাদি সকল দিক থেকেই তাঁরা ছিলেন বিশ^নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্য উত্তরাধিকারী ও নিজ নিজ যুগের প্রোজ্জ্বল নক্ষত্র। সকল ক্ষেত্রেই তাঁরা মানুষদেরকে দিয়েছেন সঠিক দিক নির্দেশনা। বাতিলের রক্তচক্ষু, ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন, কুচক্রীদের প্রলোভন, জাগতিক ভোগ-বিলাসের মোহ কোন কিছুই তাঁদেরকে আপন কর্তব্য থেকে সামান্যতম বিচ্যুত করতে পারেনি।

ভারতবর্ষে  ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে সাহাবায়ে কেরামের যুগেই। তখন থেকেই ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের খন্ড খন্ড প্রয়াস চলে আসছিল। পরবর্তীতে মুসলিম শাসনের দীর্ঘ সাতশত বছরে মুসলমানরা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এতটাই অগ্রসর হয়ে যায় যে, কোন নগর বন্দর এমন ছিল না যেখানে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এমন কি গ্রাম-গঞ্জে পর্যন্ত এ শিক্ষার বিস্তার ঘটে। এ ধারার অনুসারীরাই ভারতবর্ষে ইসলামী আদর্শ বিস্তারে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখে।

তৎকালে পৃথিবীর সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিদেশীরা আসত ভারতে ব্যবসা বাণিজ্য করতে। বাণিজ্যের এ পথ ধরেই অপরাপর বৈদেশিক কোম্পানিগুলোর ন্যায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে পা রাখে। এক সময় ছলে-বলে কৌশলে এ দেশের রাজ্য ক্ষমতা দখল করে নেয়। ক্ষমতার আসন পাকাপোক্ত করার জন্য তারা সুদূর প্রসারী ও আগ্রাসী তৎপরতা শুরু করে। অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয়া হয় এ দেশের মানুষকে। রাজনৈতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে স্তব্ধ করে দেয়া হয় রাজনৈতিক ভাবে পূনরুত্থানের সম্ভাবনাকে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এদেশের মানুষের মন-মস্তিষ্ককে। আদর্শিক চেতনার ভিত্তিতে জেগে উঠা সম্ভাব্য বিপ্লবের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়ার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

তাদের এই সর্বব্যাপী অপতৎপরতা ও ক্ষমতার দাপটে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ পরাধীনতার জীবন গ্রহণ করে নিয়েতে বাধ্য হয়। কিন্তু সত্যের অতন্দ্র প্রহরী চিরস্বাধীন চেতা উলামায়ে কেরাম এ পরাধীনতাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা স্বাধীনতার পক্ষে অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। এবং তাঁরা বিরোধিতা, বিদ্রোহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের উপর্যুপুরী কর্মসূচী দানের মাধ্যমে অতিষ্ঠ করে তোলেন ক্ষমতাসীন ইংরেজ বেনিয়াদেরকে। যার ফলে উলামায়ে কেরামের উপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। বাজেয়াপ্ত হয় তাদের সহায় সম্পত্তি । জেল-জুলুম, হত্যা-নির্যাতন, দেশান্তর, দ্বীপান্তর কোন কিছুই বাদ যায় নি। কিন্তু কোন কিছুই তাদেরকে অবদমিত করতে পারেনি। তাদের ছড়ানো সেই চেতনা ক্রমান্বয়ে  আন্দোলিত হতে থাকে সারা দেশে।

এক পর্যায়ে ইংরেজরা বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে দেয়ার হীন মানসে সকল সরকারী জায়গীর ও অনুদান বন্ধ করে দেয় এবং ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে সরকারী চাকুরী-বাকুরীর সুবিধা হতে বঞ্চিত করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। কিন্তু চির সংগ্রামী আলেম সমাজ এতে দমবার পাত্র নন। তাঁরা সর্বসাধারণের অনুদানের নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে তুললেন ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে একই ধারা ও প্রক্রিয়ার উপর গড়ে উঠে হাজার হাজার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার পাশাপাশি আজাদীর দীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেয়া হত এই সব প্রতিষ্ঠানে। তাদের মাধ্যমে পুরো ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার চেতনা। ফলে উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ জনতার সার্বজনীন প্রচেষ্টায় একদিন স্বাধীনতার মুক্ত পতাকা নীল আকাশে পতপত করে উড়ে বিশে^র দরবারে এ দেশের স্বধীনতার ঘোষণা দেয়।

এই শিক্ষা ধারার প্রভাবে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির ময়দানে হয়েছে এক নবদিগন্তের অভ্যুদয়। দ্বীনের দাওয়াত ও প্রচার প্রসারে তাঁদের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। বাতিল ও কুসংস্কার প্রতিরোধে তাদের রয়েছে এক অনবদ্য দীর্ঘ ইতিহাস।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দ্বীনি তা’লীম ও তারবিয়তের এই কাজ উপমহাদেশের সর্বত্র বিছিন্নভাবে চলতে থাকে। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এসকল প্রতিষ্ঠান। দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলামকে  মূল হিসেবে সামনে রেখে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তার অভিরুচির অনুকূলে শিক্ষা কারিকুলাম ও পঠ্যসূচী তৈরি করে নেয়। সময়ের দাবীর নিরিখে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচীতে কিছু সংস্কার করতে থাকে। ফলে একই ধারার অনুসারী এ সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কারিকুলামে যথেষ্ঠ অমিল সৃষ্টি হয়। শ্রেণির নামকরণ, বর্ষ নির্ধারণ, এমনকি পাঠ্যসূচীতেও বেশ অমিল পরিলক্ষিত হয়। তা ছাড়া সামষ্টিক উদ্যোগে যে উন্নতি ও অগ্রগতি হওয়া সম্ভব ছিল, তা থেকে জাতি বঞ্চিত থেকে যায়। যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে শিক্ষা ধারা সংস্কারের যে প্রয়োজন ছিল তাও কাঙ্খিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি।

এ সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা ও ধর্মীয় শিক্ষাকে যুগোপযোগী অভিন্ন কারিকুলামে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সমন্বিত প্রয়াস ও সার্বজনীন উদ্যোগের। তা ছাড়া বিংশ শতকের শুরু থেকে এ শিক্ষার বিরুদ্ধে বাতিলের ধ্বজ্জাধারীরা সাংগঠনিকভাবে নানা অপতৎপরতা শুরু করে। ফলে বিছিন্ন ভাবে গড়ে উঠা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাঙ্খিত সফলতা অর্জনে হিমশিম খেতে থাকে। বাতিল যেভাবে আসে তার মোকাবেলাও সেভাবে করতে হয়। তাই সংগঠিত বাতিলকে রুখতে ও যুগোপযোগী কর্মসূচী গ্রহণের তাগিদে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংগঠনিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ করা এবং একই কারিকুলাম ও সিলেবাসের আওতায় শিক্ষাকে আরো গঠনমূলক, গতিশীল ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কোথাও কোথাও জেলা ও অঞ্চল ভিত্তিক ঐক্যও গড়ে উঠেছিল। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি বারবার। বিশেষভাবে দেওবন্দ ও দেওবন্দিয়্যাতের চেতনা ও ফিকির  থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছি। তাই এ সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহত্তর ঐক্যের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগে ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর মুতাবিক ৫মুহাররম ১৪৩৮ হিজরী শুক্রবার বাদ জুমা দারুল উলূম দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা ও আফকারের সফল ধারক-বাহক যুগের কিংবদন্তী আলেমে দ্বীন শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা.-এর নেতৃত্বে দেশের বিশিষ্ট ও শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাগন এক জরুরী বৈঠকে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ (বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়্যা বাংলাদেশ)’ নামে একটি জাতীয় বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

বোর্ডের উদ্দেশ্য

 ইলমে ওহী হেফাজত ও প্রচার প্রসারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন।

 শিক্ষার ক্ষেত্রে সামগ্রিকতা সৃষ্টি এবং একটি ব্যাপকতর সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন করে তোলা।

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম ও সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের আলোকে শরীয়ত তথা কোরআন সুন্নাহকে সঠিকভাবে  অনুধাবন করা।

 কওমী মাদরাসার স্বার্থ রক্ষা ও তার বিরুদ্ধে উদ্ভুত যাবতীয় ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করা।

 শিক্ষার্থীদের  মাঝে আসলাফ ও আকাবিরের চিন্তা-চেতানার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদেরকে প্রকৃত ওয়ারিসে নবী হিসেবে গড়ে তোলা।

 আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদা বিশ^াসের উপর অটল অবিচল থাকা।


বোর্ডের লক্ষ্য

 দেওবন্দিয়্যাতের চেতনায় উজ্জীবিত থেকে মুয়ামালা-মুয়াশারা, নীতি-নৈতিকতা, আখলাক ও তাহজীব, ইলমে ওহীর হেফাজত ও সংরক্ষণ, ইবাদত-বন্দেগী, আকিদা-বিশ^াস তথা দ্বীনের সর্ব বিষয়ে হক ও হক্কানিয়্যাতের অজেয় দূর্গ আকাবিরে দেওবন্দের অনুসরণ ও নিকট অবস্থান নিশ্চিত করা।

 একজন শিক্ষার্থীকে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণে ও বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষাদানের মাধ্যমে যোগ্যতর করে গড়ে তোলা।

 ধর্মীয় জ্ঞানসমূহ অর্থাৎ কুরআন মাজীদ, হাদীস শরীফ, তাফসীর, ফিকাহ, আকাইদ, উসূলে তাফসীর, উসূলে হাদীস, উসূলে ফিকাহ এবং অন্যান্য মাযহাবী জ্ঞানার্জন এবং তৎসঙ্গে ইসলামী শাস্ত্রসমূহের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দানের মাধ্যমে দ্বীনের এক একটি স্তম্ভ তৈরি করা।

 মাতৃভাষা বাংলা ও আর্ন্তজাতিক ভাষা আরবী ও ইংরেজীসহ উর্দূ, ফার্সি এবং অন্যান্য ভাষাসমূহের প্রয়োজন মাফিক শিক্ষা প্রদান করা।

 লিখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলামের প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের খিদমত আঞ্জাম দানে যোগ্যতর সৈনিক গড়ে তোলা।

 শিক্ষা-দীক্ষা এবং তা’লীম-তারবিয়তের মাধ্যমে খাইরুল কুরুন এবং সালাফে সালেহীনের ন্যায় ইসলামের মহান আদর্শিক নেতৃত্ব  সৃষ্টির একনিষ্ঠ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

 ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারের লক্ষ্যে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’-এর আওতায় বিভিন্ন এলাকায় কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা এবং এলাকার সকল মসজিদে সাবাহী মক্তব শিক্ষা চালু করা।

 কুফর, শিরক ও বিদআতসহ, সকল প্রকার ধর্মদ্রোহীতা এবং বদদ্বীনির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা।

 নব্য ও প্রাচীন বাতিল মতাদর্শীদের পক্ষ থেকে ইসলামের স্বীকৃত বিষয় সমূহের উপর যে কোন ধরণের হামলার সুনির্দিষ্ট ও সপ্রমান জবাব দ্বারা তাদের প্রতিহত করা।

 মওদুদী, শিয়া ও কাদিয়ানীবাদসহ সকল প্রকার বাতিল চিহ্নিত করে মুসলমানদেরকে তাদের ফেতনা সম্পর্কে সতর্ক করা।

 প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে শুধু আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার- এর পথ প্রদর্শন করা। সকল প্রকার রাষ্ট্রদ্রোহীতা থেকে বেঁচে থাকা ও আদর্শ সমাজ বিনির্মানে সহায়ক কাজে সহযোগিতা করা।

বোর্ডের বৈশিষ্ট্য

 শিক্ষা-দীক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রদান করা।

 আল-হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষায় অত্র বোর্ডে ১ম স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীকে আকর্ষনীয় পুরুস্কারে পুরুস্কৃত করা এবং অত্র বোর্ডের ফযিলত জামাতে মেধা তালিকায় ১ম স্থান অধিকারকারী শিক্ষার্থীকেও বিশেষ পুরুস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা। এছাড়াও কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য মারহালায় মেধা তালিকায় উন্নীত শিক্ষার্থীদের মাঝেও উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।

 ইফতা বিভাগের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ইফতার শিক্ষার্থীদের বোর্ডের অধীনে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগ্রহণ।

 শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড কর্তৃক যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ।

বোর্ডের পরিকল্পনা

 কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরকে বৈধ ভিসায় দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা।

 আরব বিশ্বসহ বিশ্বের সুবিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা।

বোর্ডের সিলেবাস

আকাবির ও আসলাফের প্রণীত “দারসে নেযামী”-ই (যুগোপযোগী পরিমার্জন ও সংযোজনসহ) হচ্ছে  বোর্ডের সিলেবাস।

কর্মপন্থা

ক. প্রণয়ন ও প্রকাশনা

১. কওমী মাদরাসা সমূহের তা’লীম ও তারবিয়তের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে যুগোপযোগী পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা।

২. শিক্ষার মানোন্নয়নে যুগ চাহিদানুযায়ী পাঠ্য পুস্তক রচনা ও প্রকাশ করা।

৩. র্বোডের মূখপাত্র হিসেবে বার্ষিক/ ত্রৈমাসিক/মাসিক/পাক্ষিক/সাময়িক পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করা।

খ. প্রশিক্ষণ

১. শিক্ষকদেরকে শিক্ষাদানে পরিপক্ক করে তোলার লক্ষ্যে ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণের’ ব্যবস্থা করা।

২. সর্বপ্রকার বাতিল মতবাদের প্রতিরোধে বলিষ্ঠ অবদান রাখতে মাদরাসার শিক্ষকদেরকে সক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্যে সময়ে সময়ে  উক্ত বিষয় সম্পর্কে সেমিনার, আলোচনা সভা ও তারবিয়তী কোর্স এর ব্যবস্থা করা।

৩. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য মাহে রমজানে বিশেষ কোর্স চালু করা। যেমন, নাহু, সরফ, উসূল ইত্যাদি।

৪. তাহফীজুল কুরআন, নাজেরা ও নূরানী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৫. লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহী ও উৎসাহী করে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।

গ. তত্ত¡াবধান

১. তা’লিম ও তারবিয়তের মান যাচায়ের জন্য বোর্ডভূক্ত মাদরাসা সমূহের পরিদর্শন করা।

২. বোর্ডভূক্ত মাদরাসা সমূহের আয় ব্যায়ের হিসাবের রিপোর্ট তদারকি করা।

৩. বোর্ডভূক্ত মাদরাসা সমূহের যে কোন সমস্যার নিয়মতান্ত্রিক সমাধান কল্পে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার পক্ষ হতে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে যথা নিয়মে সহযোগিতা করতে হবে।

৪. মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুরোধক্রমে বোর্ডের অডিটর দ্বারা হিসাবপত্র অডিট করানোর ব্যবস্থা করা।

ঘ. কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ

১. প্রতি মারহালার শেষবর্ষে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।

২. যথা সময়ে সনদপত্র প্রদান করা।

৩. মারহালায়ে তাকমীল ফিল হাদীস ও তাহফিযুল কোরআন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর দস্তারে ফযিলত প্রদানের ব্যবস্থা করা করা।

ঙ. গবেষণা

১. আধুনিক কালের নব উদ্ভুত বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা ও গবেষণা করতঃ শরিয়তের দৃষ্টি ভঙ্গি নিরুপণের উদ্দেশ্যে আহকামে শরিয়ত স¤¦ন্ধে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে ইফতা ও গবেষণা পরিষদ গঠন করা।

২. গবেষণা প্রসূত সিদ্ধান্ত সমূহ জনসাধারণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা।

৩. গবেষণার জন্য সমৃদ্ধশালী লইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা।

৪. প্রতি মাসে একবার করে অথবা আকস্মিক প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ভাবে উক্ত পরিষদের বৈঠক করা।

জাতীয় দ্বীন মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর অবদান

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র বিষয় দেখা যায়। বৈচিত্র্যময়তা এ ধরার এক অনন্য বৈশিষ্ঠ। ‘জাতীয় দ্বীন মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে বাংলাদেশ’-এর ব্যাপারটি মূলত এমনই পরিলক্ষিত হয়। যদিও অতি সল্প সময়ের পথ চলা এ বোর্ডের, কিন্তু জাতীয় অবদান রাখার  ক্ষেত্রে তার বৈচিত্র্যময়তা ও বৈশিষ্ঠের হিসাব অনেক দীর্ঘ। অনেক স্মৃতি ও ইতিহাস বিজড়িত। পরিচিতির এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে  তার মাত্র কয়েকটি তুলে ধরা হল।

১. কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি আদায়

ভারত বর্ষে ইস্ট ইন্ডয়া কোম্পানির আগমন ও তৎপরবর্তী ইংরেজরা ক্ষমতা দখলের পর ইসলাম ও মুসলামানদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণ্য সড়যন্ত্রের বিজ বপন করে ছিল তা কারোরই অজানা নয়। বিশেষভাবে মূলধারার  ইসলামী শিক্ষাকে সমূলে মূছে ফেলার জন্য সর্ব শেষ তারা আলিয়া মাদরাসা উদ্ভাবন করে। যার ফলে মূল ধারার শিক্ষায় শিক্ষীতগণ ধীরে ধীরে সমাজে হেয়তার শিকার হতে থাকে। সংর্কীন হতে আরম্ভ করে তাদের কর্ম জীবনের সীমানা। ছিটকে পড়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও দায়-দায়িত্ব হতে অনেক দূরে। এমনি কি মূলধারার একজন উচ্চ শিক্ষত ব্যক্তিও সমাজে অশিক্ষত বলে বিবেচিত হতে থাকে। দেশ গড়া ও দেশের সেবা হতে সে হয় বঞ্চিত। তার সনদের কোন মান দিতে হবে বা দেওয়া প্রয়োজন দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত অনেক সরকার পরিবর্তন হলেও কেউ এ দিকে দৃষ্টিপাত করেনি। অবশ্য উলামায়ে কেরামের মধ্যে কেউ কেউ এ ব্যাপারে কিছু চেষ্টা করলেও তা হালে পানি পায়নি। আলহামদুলিল্লাহ জাতীয় ঐক্যের রূপকার মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ এর ঐকান্তিক চেষ্টায় ২০১৮ সালে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা রাষ্ট্রিয়ভাবে কওমী মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) এর সনদকে মাষ্টার ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী) এর সমমান প্রদানের মাধ্যমে সম্মানীত করেন। এ যুগান্তকারী অবদানে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’-এর নাম কওমী মাদরাসার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরদিন।

২. কওমী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করণে জাতীয় দ্বীনি মদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর ভূমিকা ।

সনদের মান প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে কওমী মাদরাসা কখনোই ষড়যন্ত্রের বাইরে ছিল না। তবে আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবানী তিনি তার অসীম দয়ায় কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে তার আপন ধারায় টিকিয়ে রেখেছেন। অসংখ্য প্রতিকুলতার ভেতরেও কওমী মাদরাসার শিক্ষার মূল উৎস দারুল উলূম দেওবন্দের (ঊসুলে হাশতেগানা) ঐতিহাসিক মূলনীতির উপর  দাড়িয়ে আপন স্বকীয়তা রক্ষা করে অসামান্য খিদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে।

নীতিমালা সমূহ

১. ব্যাপকভাবে অনুদান সংগ্রহের ব্যবস্তা করা: যথাসম্ভব মাদরাসার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে অধিকহারে চাঁদা আদায়ের বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজেও এর জন্য চেষ্টা করতে হবে, অন্যের মাধ্যমেও চেষ্টা করাতে হবে। মাদরাসার হিতাকাঙ্খীদেরও এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

২. ছাত্রদের খানা-পিনার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা: যেভাবেই হোক মাদরাসার ছাত্রদের খানা চালু রাখতে হবে বরং ক্রমান্বয়ে তা উন্নত করার ব্যাপারে হিতাকাঙ্খী ও কল্যাণকামীদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

৩. ব্যবস্থাপক ও শূরা সদস্যদের প্রসঙ্গে: মাদরাসার ব্যবস্থাপক ও শূরা সদস্যগণকে মাদরাসার উন্নতি, অগ্রগতি এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজের মত প্রতিষ্ঠার একগুঁয়েমী যাতে কারো মাঝে না হয় এ দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি এমন অবস্থা দেখা দেয় যে, সদস্যগণ নিজ নিজ মতের বিরোধিতা কিংবা অন্যের মতামতের সমর্থন করার বিষয়টি সহনশীলভাবে গ্রহণ করতে না পারেন তাহলে এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিমূল নড়বড়ে হয়ে পড়বে। আর যথাসম্ভব মুক্ত মনে পরামর্শ দিতে হবে এবং মাদরাসার শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি লক্ষ্যণীয় হতে হবে।  নিজের মত প্রতিষ্ঠার মনোবৃত্তি না থাকতে হবে। এ জন্য পরামর্শদাতাকে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তার মতামত গ্রহণীয় হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই আশাবাদী না হতে হবে। পক্ষান্তরে শ্রোতাদেরকে মুক্তমন ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তা  শুনতে হবে। অর্থাৎ এরূপ মনোবৃত্তি রাখতে হবে যে, যদি অন্যের মত যুক্তিযুক্ত ও বোধগম্য হয়, তাহলে নিজের মতের বিপরীত হলেও তা গ্রহণ করে নেওয়া হবে। আর মুহতামিম বা পরিচালকের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে সম্পাদন যোগ্য বিষয়ে সদস্যগণের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া অবশ্যই জরূরী। তবে মুহতামিম নিয়মিত সদস্যদের থেকেও পরামর্শ করতে পারবেন কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত এমন কোন বিদগ্ধ জ্ঞানী আলেম থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন যিনি সকল দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের জন্য হিতাকাঙ্খী ও কল্যাণকামী। তবে যদি ঘটনাক্রমে পরিষদের সকল সদস্যের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ না হয় এবং প্রয়োজনমাফিক পরিষদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের সাথে পরামর্শক্রমে কাজ করে ফেলা হয়, তাহলে কেবল এ জন্য অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত হবে না যে, ‘আমার সাথে পরামর্শ করা হল না কেন?’ কিন্তু যদি মুহতামিম কারো সঙ্গেই পরামর্শ না করেন, তাহলে অবশ্যই পরিষদ আপত্তি করতে পারবে।

৪. শিক্ষক নির্বাচন প্রসঙ্গে: মাদরাসার সকল শিক্ষককে অবশ্যই সমমনা ও একই চিন্তা চেতনার অনুসারী হতে হবে। সমকালীন (দুনিয়াদার) আলেমদের ন্যায় নিজ স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত না হতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি কখনো এরূপ অবস্থা দেখা দেয়, তাহলে মাদরাসার জন্য এটি মোটেও কল্যাণকর হবে না।

৫. পাঠদান ও নেসাব: পূর্ব থেকে যে পাঠ্যসূচী নির্ধারিত রয়েছে কিংবা পরবর্তীতে পরামর্শের ভিত্তিতে যে পাঠ্যসূচী নির্ধারণ করা হবে, তা যাতে সমাপ্ত হয়; এই ভিত্তিতেই পাঠদান করতে হবে। অন্যথায় এ প্রতিষ্ঠান সুপ্রতিষ্ঠিতই হবে না, আর যদি হয়ও তবু তা ফায়দাজনক হবে না।

৬. অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয়: এ প্রতিষ্ঠানের জন্য যতদিন পর্যন্ত কোন স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে; ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার শর্তে তা এমনিভাবেই চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি স্থায়ী আয়ের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমন কোন জায়গীর লাভ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা কিংবা বিশ্বস্থ কোন আমীর উমারার অনুদানের অঙ্গীকার ইত্যাদি, তাহলে এরূপ মনে হচ্ছে যে, আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার দোদুল্যমান অবস্থা; যা মূলতঃ আল্লাহমুখী হওয়ার মূল পুঁজি, তা হাত ছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবী সাহায্যের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। তদুপরি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও কর্মচারীগণের মাঝে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহ বিবাদ দেখা দিবে। বস্তুতঃ আয় আমদানি ও গৃহাদি নির্মাণের বিষয়ে অনেকটাই অনাড়ম্বরতা ও উপায় উপকরণহীন অবস্থা বহাল রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

৭. সরকারী অনুদান কিংবা সাহায্য পরিহার করা: সরকার ও আমীর উমারাদের সংশ্লিষ্টতাও এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে হচ্ছে।

৮. মুখলিস ব্যক্তিদের থেকে অনুদান গ্রহণ: যথা সম্ভব এমন ব্যক্তিদের চাঁদাই প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক বরকতময় হবে বলে মনে হচ্ছে; যাদের চাঁদাদানের মাধ্যমে সুখ্যাতি লাভের প্রত্যাশা থাকবে না। বস্তুতঃ চাঁদাদাতাগণের নেক নিয়ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক স্থায়ীত্বের কারণ হবে বলে মনে হয়।

কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আজ সে স্বকীয়তা যাতে রক্ষা না পায়। আপন বৈশিষ্ঠে অটল না থাকে বরং তা আলিয়া মদারাসার ন্যায় সরকারি স্বার্থরক্ষার এক লেজুর বৃত্তিক শিক্ষাধারায় পরিণত হয়ে সোনালী ঐতিহ্যের অবসান ঘটে। এক শ্রেণির কওমী ও দ্বীন বিদ্বেষী প্রপাকাÐাকারী সর্বতো এ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল নানা ভাবে। এরই অংশ হিসেবে কওমী মাদরাসার সর্বোচ্ছ সংস্থা ‘আলা-হাইআতুল উলয়া লিল জামি‘আতিল কওমীয়া বাংলাদেশ’ কওমী বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তার আওতাধিন করার উদ্যোগে তারা অনেকেই এগিয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ না করুন যদি এমনটা হয়ে যেত তবে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকত না। যা সংস্থার নেতৃবৃন্দ পরবর্তিতে স্পষ্টভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। এই প্রলয়ঙ্করী ক্ষতির সিদ্ধান্ত থেকেও ‘জাতীয় দ্বীনি মদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’-এর দূরদর্শী ও বিচক্ষণ চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার প্রতিনিধিগণ কওমী মাদরাসাকে রক্ষা করছেন। ফলে দেশজুড়ে কওমী শিক্ষাঙ্গনের বিজ্ঞ উলামাগণ ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ এর অবদানকে স্বীকার করে নিয়েছেন এক বাক্যে।

৩. করোনা কালীন সময়ে কওমী মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা

কোভিট১৯ এর করাল গ্রাসে বিশ্বজুড়ে যখন সকল সেক্টরে স্তব্ধতা ও আতঙ্ক বিরাজমান। শিক্ষাঙ্গনও মুক্তি পায়নি তার ভয়াল থাবা থেকে। শুধু আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের কথা বলছি না, বরং সমগ্র পৃথিবীর পরিণতি যখন একই। কেবল লকডাউনের পর লকডাউন চলছে নানা ভাবে নানা কৌশলে। বিশ্ব বিদ্যালয়, স্কুল কলেজ, আলিয়া মাদরাসা সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন বিজ্ঞমহলের উদ্বেগ উৎকন্ঠার অন্ত নেই। কিন্তু এর পরেও সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রষ্ঠিান খুলে দেয়ার যখন কোন পরিকল্পনাও পরিলক্ষিত হচ্ছিল না  ঠিক তখন অবিশ্বাস্য ভাবে যা ঘটে গেল তা হলো কওমী মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ না করে তা চালু রাখার সিদ্ধান্ত। কে বা কাদের প্রচেষ্টায় সে অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে ছিল তা আমাদের কারোরই অজানা নেই। ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ এর একক প্রচেষ্টায় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের দিক নির্দেশনায় তার প্রতিনিধিগণ মাননীয় সরকারকে মাদরাসা শিক্ষা চালু রাখার সুফল বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে সরকার বৈশ্বিক প্রতিকুল অবস্থার ভেতরেও কওমী মাদরাসা শিক্ষা চালু রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রদান করে মাদরাসা অঙ্গনকে তরতাজা ও উজ্জীবিত রাখতে সহায়তা করেছে।

কওমী মাদরাসার ইতিহাসে ‘জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ’ এর স্বর্র্ণিল অবদানও অবিস্বরণীয় হয়ে থাকবে। এ ছাড়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে গঠিত এ বোর্ডের অতি স্বল্প সময়ে জাতিকে আরো অনেক অবদানে শিক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা উত্তোরত্তোর এ বোর্ডকে তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছে দেন এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ কবুল করেন। আমীন।

পরিশিষ্ট  

জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড একটি যুগোপযোগী  আদর্শিক শিক্ষাবোর্ড। মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। দ্বীনের এই দুর্ভেদ্য দুর্গকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন আপনাদের সকলের আন্তরিক দোয়া, সুপরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে দ্বীনি খেদমতের জন্য কবুল করুন।

জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ
وفاق المدارس الدينية بنغلاديش
অফিসিয়াল লোগো
সংক্ষেপেজাতীয় বেফাক
প্রতিষ্ঠাকাল৭ অক্টোবর ২০১৬
প্রতিষ্ঠাতাফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
প্রতিষ্ঠাস্থানঢাকা
ধরনকওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড
সদরদপ্তর1/বি পশ্চিম হাজিপাড়া, ডিআইটি রোড, রামপুরা, ঢাকা-1219
অবস্থান
  • বাংলাদেশ
  • ঢাকা
পরিষেবাকওমি শিক্ষা ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধন।
সভাপতি
ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
মহাসচিব
মোহাম্মদ আলী
সহ-সভাপতি
ড. মুশতাক আহমদ
সহ-সভাপতি
ইয়াহইয়া মাহমুদ
প্রধান অঙ্গ
দারুল উলুম দেওবন্দ
প্রধান প্রতিষ্ঠান
আল হাইআতুল উলয়া
স্টাফ
মুফতি আবুল কাসেম [মহাপরিচালক] মুহাম্মাদ মুহিব্বুল্লাহ [অফিস সম্পাদক] মাওলানা এহসানুল্লাহ [হিসাব রক্ষক]

পরিচিতি সংক্ষিপ্ত

জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ (আরবি: وفاق المدارس الدينية بنغلاديش) বাংলাদেশে অবস্থিত সরকার স্বীকৃত একটি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।[১] বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সমূহের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা নতুন।[২] ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে এই বোর্ডটি গঠিত হয় এবং ১৫ অক্টোবর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।[৩] এই বোর্ডের অধীনে ১ সহস্রাধিক মাদ্রাসা রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিক্ষা ব্যবস্থা

বোর্ডের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

  • প্রথম পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে রয়েছে ২টি স্তর।
    • প্রথম স্তরঃ প্রাথমিক শিক্ষা। কুরআন তেলওয়াত ও ইসলামিয়াতসহ গণিত, বাংলা, ইংরেজি ও সমাজ বিজ্ঞান প্রভৃতি ৫ম শ্রেণির মান পর্যন্ত। একে বলা হয় আল মারহালাতুল ইবতিদাইয়্যাহ বা কওমী প্রাথমিক মাদ্রাসা।
    • দ্বিতীয় স্তরঃ এতে রয়েছে সাধারণ শিক্ষা সহ ইসলামিক শিক্ষা। অর্থাৎ আরবি ভাষা, আরবি ব্যকরণ ও ফিকাহশাস্ত্র, গণিত, বাংলা, ইংরেজি ও সমাজ বিজ্ঞান। একে বলা হয় আল মারহালাতুল মুতাওয়াসসিতাহ। এর মেয়াদ ৩ বছর। ( ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম )
  • দ্বিতীয় পর্যায়ঃ এপর্যায়ে রয়েছে ৪টি স্তর।
    • ১ম স্তরঃ আল মারহালাতুস সানাবিয়্যাহ (মাধ্যমিক স্তর), যার মেয়াদ ২ বছর (৯ম-১০ম)।
    • ২য় স্তরঃ আল মারহালাতুস সানাবিয়্যাতুল উলইয়া (উচ্চ মাধ্যমিক স্তর), যার মেয়াদ ২ বছর (১১শ - ১২শ)।
    • ৩য় স্তরঃ আল মারহালাতুল ফজিলত (স্নাতক ডিগ্রি)। এর মেয়াদ ২ বছর (১৩শ - ১৪শ)।
    • ৪র্থ স্তরঃ আল মারহালাতুল তাকমিল (মাস্টার্স ডিগ্রি)। এর মেয়াদ ২ বছর। এ স্তরকে দাওরায়ে হাদিস বলা হয়।
  • তৃতীয় পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক ডিপ্লোমা ও গবেষণামূলক শিক্ষা কোর্স। যথাঃ হাদিস, তাফসির, ফিকহ, ফতওয়া, তাজবিদ, আরবি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি, উর্দু ও ফারসি ভাষা, ইসলামের ইতিহাস, সীরাত, ইলমুল কালাম, ইসলামি দর্শন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পৌর বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের গবেষণামূলক শিক্ষা।

কেন্দ্রীয় পরীক্ষা

বর্তমানে বোর্ডের অধীনে নিম্নোক্ত কেন্দ্রীয় পরীক্ষা সমূহ অনুষ্ঠিত হয় :[৪]

  • হিফজ ও নাযেরা
  • ইলমুল কিরাত ও তাজবীদ
  • ইবতিদাইয়্যাহ ( পঞ্চম শ্রেণি
  • মুতাওয়াসসিতা (অষ্টম শ্রেণি)
  • সানাবিয়া (মাধ্যমিক)
  • সানাবিয়া (উলইয়া উচ্চ মাধ্যমিক)
  • ফযীলত (স্নাতক পাস, দুই বছর মেয়াদী)
  • ইফতা (স্নাতক সম্মান, চার বছর মেয়াদি অনার্স)

উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান

বোর্ডের অধীনে এক সহস্রাধিক মাদ্রাসা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য :[৪]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ