রসিককৃষ্ণ মল্লিক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
→‎পরবর্তী জীবন: ব্যক্তির নাম সংশোধন করা হল।
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
২৩ নং লাইন: ২৩ নং লাইন:


== পরবর্তী জীবন ==
== পরবর্তী জীবন ==
কলেজ জীবন সমাপ্ত হওয়ার পর [[হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও|ডিরোজিওর]] শিষ্যদল বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মে প্রবৃত্ত হন। রসিককৃষ্ণ মল্লিকও এ সমস্ত কর্মে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেন। ক্রমে তার পরিবার পরিজন ভীত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তার মাতা তার মতি ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধা প্রতিবেশিনীদের প্ররোচনায় তাকে পাগলাগুঁড়ো খাওয়ান। [[ডেভিড হেয়ার|হেয়ারের]] জীবনচরিতে [[প্যারীচাঁদ মিত্র]] লিখেছেন ওই ওষুধ খেয়ে রসিককৃষ্ণ মল্লিক সমস্ত রাত্রি অচেতন হয়ে পড়ে থাকতেন। এ অবস্থায় তাকে [[কাশী]] প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। নৌকা প্রস্তুত, তার হাত পা বাঁধা। তিনি চেতনালাভ করে কোনোক্রমে নিজেকে বন্ধনমুক্ত করে পিতৃগৃহ থেকে পলায়ণ করেন। এরপর তিনি চোরবাগানে বাসা নিয়ে থাকতেন। এই বাসা [[হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও|ডিরোজিওর]] শিষ্যদলের আড্ডা হয়ে ওঠে। এখানে হিন্দু সমাজের কেল্লা ভঙ্গ করার সমস্ত পরামর্শ হত। এরপরে বোধহয় [[দক্ষিণারঞ্জন রায়|দক্ষিণারঞ্জন রায়ের]] অর্থে ও উৎসাহে "জ্ঞানান্বেষন" নামক দ্বিভাষী পত্রিকা বার হয়, যার সম্পাদনার দায়িত্ব রসিককৃষ্ণ মল্লিকের ওপর পরে।
কলেজ জীবন সমাপ্ত হওয়ার পর [[হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও|ডিরোজিওর]] শিষ্যদল বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মে প্রবৃত্ত হন। রসিককৃষ্ণ মল্লিকও এ সমস্ত কর্মে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেন। ক্রমে তার পরিবার পরিজন ভীত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তার মাতা তার মতি ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধা প্রতিবেশিনীদের প্ররোচনায় তাকে পাগলাগুঁড়ো খাওয়ান। [[ডেভিড হেয়ার|হেয়ারের]] জীবনচরিতে [[প্যারীচাঁদ মিত্র]] লিখেছেন ওই ওষুধ খেয়ে রসিককৃষ্ণ মল্লিক সমস্ত রাত্রি অচেতন হয়ে পড়ে থাকতেন। এ অবস্থায় তাকে [[কাশী]] প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। নৌকা প্রস্তুত, তার হাত পা বাঁধা। তিনি চেতনালাভ করে কোনোক্রমে নিজেকে বন্ধনমুক্ত করে পিতৃগৃহ থেকে পলায়ণ করেন। এরপর তিনি চোরবাগানে বাসা নিয়ে থাকতেন। এই বাসা [[হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও|ডিরোজিওর]] শিষ্যদলের আড্ডা হয়ে ওঠে। এখানে হিন্দু সমাজের কেল্লা ভঙ্গ করার সমস্ত পরামর্শ হত। এরপরে বোধহয় [[দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়|দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের]] অর্থে ও উৎসাহে "জ্ঞানান্বেষন" নামক দ্বিভাষী পত্রিকা বার হয়, যার সম্পাদনার দায়িত্ব রসিককৃষ্ণ মল্লিকের ওপর পরে।


== কর্মকাল ==
== কর্মকাল ==

১৪:৪৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রসিককৃষ্ণ মল্লিক
জন্ম১৮১০
মৃত্যু৮ জানুয়ারি ১৮৫৮
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পেশাসাংবাদিক

রসিককৃষ্ণ মল্লিক (১৮১০- ৮ জানুয়ারি ১৮৫৮) নব্যবঙ্গ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়রামগোপাল ঘোষের পর তিনিই নব্যবঙ্গ দলের অগ্ৰণী ছিলেন। এরূপ শোনা যায় যে অ্যাকাডেমিকের বক্তৃতা যারা শুনতে আসতেন, তারা রামগোপাল ঘোষের উন্মাদনী বক্তৃতা অপেক্ষা রসিককৃষ্ণ মল্লিকের গভীর চিন্তা ও বিজ্ঞতাপূর্ণ বক্তৃতা অধিক ভালবাসতেন।[১][২]

জন্ম ও পরিবার

আনুমানিক ১৮১০ সালে কলকাতার সিন্দুরীয়া পটী নামক স্থানে রসিককৃষ্ণ মল্লিকের জন্ম হয়। তার পিতার নাম নবকিশোর মল্লিক। নবকিশোর মল্লিকের শহরে সুতোর ব্যবসা ছিল। প্রাচীন কলকাতার শেঠবংশীয়গণ এই তিলি জাতীয় বণিকদল ভুক্ত ছিলেন। এ থেকে অনুমিত হয় যে এনারা কলকাতার প্রাচীন অধিবাসী ছিলেন।

শিক্ষাজীবন

তৎকালীন রীতি অনুসারে রসিককৃষ্ণ মল্লিক কিছুদিন পাঠশালায় পড়ে ও সামান্য ইংরেজি শিখে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। অল্পকালের মধ্যে সেখানে তিনি বিদ্যা বুদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠিত হন। ১৮২৮ সালে ডিরোজিও যখন হিন্দু কলেজে আসেন, তখন রসিককৃষ্ণ মল্লিক সম্ভবত প্রথম শ্রেণীতে পড়তেন। তিনি ডিরোজিওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার দলে প্রবিষ্ট হন; এবং অপর সকলের মতো আত্মীয় স্বজনের হাতে নিগ্ৰহ সহ্য করতে থাকেন। তৎকালে কলকাতার সুপ্রীম কোর্টে হিন্দু সাক্ষীদের তামা, তুলসীগঙ্গাজল স্পর্শ করে শপথ পূর্বক সাক্ষ্য দিতে হত। এই কার্যের জন্য একজন উড়িয়া ব্রাহ্মণ নিযুক্ত ছিল। জনশ্রুতি অনুযায়ী একবার বালক রসিককৃষ্ণকে কোনো মোকদ্দমাতে সাক্ষী হয়ে উপস্থিত হতে হয়। উড়িয়া ব্রাহ্মণ নিয়মানুসারে তাম্রকুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন। রসিককৃষ্ণ মল্লিক তামা, তুলসী ও গঙ্গাজল স্পর্শ করতে সম্মত হন না। বিচারপতি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে তিনি গঙ্গা মানেন না। যখন ইন্টারপ্রিটার ইংরেজিতে অনুবাদ করে জজকে শোনান যে "I do not believe in the sacredness of the Ganges" তখন আদালতে উপস্থিত হিন্দু শ্রোতৃগণ কানে হাত দেন। অর্ধ দন্ডের মধ্যে এই সংবাদ শহরে ছড়িয়ে পড়ে। রক্ষণশীল সমাজ ধিক্বার জানায়। কুমারী কলেটের লিখিত রামমোহন রায়ের জীবনীচরিতেতে তার এক শিষ্যের বিষয়ে এরূপ ঘটনার উল্লেখ আছে। এই শিষ্য সম্ভবত রসিককৃষ্ণ মল্লিক। তার সম্পর্কিত এরূপ গল্প রামতনু লাহিড়ীকৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা যায়। রসিককৃষ্ণ মল্লিকের যে রামমোহন রায়ের প্রতি প্রগাঢ় আস্থা ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ১৮৩৪ সালে কলকাতাতে যে সভা হয় তাতে বাঙালি বক্তার মধ্যে তিনিই ছিলেন।

পরবর্তী জীবন

কলেজ জীবন সমাপ্ত হওয়ার পর ডিরোজিওর শিষ্যদল বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মে প্রবৃত্ত হন। রসিককৃষ্ণ মল্লিকও এ সমস্ত কর্মে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেন। ক্রমে তার পরিবার পরিজন ভীত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তার মাতা তার মতি ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধা প্রতিবেশিনীদের প্ররোচনায় তাকে পাগলাগুঁড়ো খাওয়ান। হেয়ারের জীবনচরিতে প্যারীচাঁদ মিত্র লিখেছেন ওই ওষুধ খেয়ে রসিককৃষ্ণ মল্লিক সমস্ত রাত্রি অচেতন হয়ে পড়ে থাকতেন। এ অবস্থায় তাকে কাশী প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। নৌকা প্রস্তুত, তার হাত পা বাঁধা। তিনি চেতনালাভ করে কোনোক্রমে নিজেকে বন্ধনমুক্ত করে পিতৃগৃহ থেকে পলায়ণ করেন। এরপর তিনি চোরবাগানে বাসা নিয়ে থাকতেন। এই বাসা ডিরোজিওর শিষ্যদলের আড্ডা হয়ে ওঠে। এখানে হিন্দু সমাজের কেল্লা ভঙ্গ করার সমস্ত পরামর্শ হত। এরপরে বোধহয় দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের অর্থে ও উৎসাহে "জ্ঞানান্বেষন" নামক দ্বিভাষী পত্রিকা বার হয়, যার সম্পাদনার দায়িত্ব রসিককৃষ্ণ মল্লিকের ওপর পরে।

কর্মকাল

কলেজ থেকে বাহির হওয়ার পর রসিককৃষ্ণ মল্লিক হেয়ার স্কুলে শিক্ষকতা করতে থাকেন। তিনি কতকাল এই কাজ করেন তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। যাইহোক শীঘ্রই তার পদোন্নতি হয়। ১৮৩৪ সালের পর হিন্দু কলেজের কৃত্যবিদ্য যুবকদের ডেপুটি কালেক্টরের পদ দেওয়া শুরু হতে থাকে, তখন রসিককৃষ্ণ মল্লিক ডেপুটি কালেক্টরের পদে নিযুক্ত হয়। এই পদে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি দীর্ঘদিন বর্ধমানে বাস করেন। এইসময় তার ধর্মভীরুতার বিশেষ সুখ্যাতি প্রচারিত হয়। শোনা যায় এসময় বর্ধমানের রাজপরিবার তাকে উৎকোচাদি দ্বারা বশীভূত করার প্রয়াস করেন, কিন্তু তাকে তার কর্তব্য থেকে বিচলিত করা যায় নি।

জীবনাবসান

আনুমানিক ১৮৫৮ সালে রসিককৃষ্ণ মল্লিক অসুস্থ হয়ে কলকাতায় আসেন। রামগোপাল ঘোষ তার কামারহাটীর বাগানবাড়িতে তার চিকিৎসা ও সেবা শুশ্রূষাতে প্রবৃত্ত হন। কিন্তু তিনি আরোগ্য লাভ করতে পারেন নি। অকালে ভবলীলা সংবরণ করেন। মৃত্যুকালে রামগোপাল ঘোষপ্যারীচাঁদ মিত্রকে তার বিষয় সম্পত্তির এক্জিকিউটর ও পরিবারের রক্ষক ও অভিভাবক নিযুক্ত করে যান। তারা সমুচিতরূপে ওই ভার বহন করেন ও সকল বিপদে আপদে তার পরিবারকে সহায়তা করেছেন।

তথ্যসূত্র

  1. শাস্ত্রী, শিবনাথ (১৯০৪)। রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ। নিউ এজ পাবলিসার্স। পৃষ্ঠা ৮১। আইএসবিএন ৮১-৭৮১৮-০০২-৬ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  2. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪৬২।