মানি লন্ডারিং: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Morsidul Alam (আলোচনা | অবদান)
→‎বাংলাদেশ: বানান শুদ্ধ করা :"বেক্তি" থেকে "ব্যক্তি"
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
মামুন ইকবাল (আলোচনা | অবদান)
লিঙ্কের পরামর্শ: ৪টি লিঙ্ক যুক্ত করা হয়েছে।
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা নবাগতদের কাজ পরামর্শ: লিঙ্ক যুক্ত করা
৫ নং লাইন: ৫ নং লাইন:


== মানি লন্ডারিং-এর উদ্দেশ্য ==
== মানি লন্ডারিং-এর উদ্দেশ্য ==
মানি লন্ডারিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমতঃ যদি অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে তবে সে আয়ের উৎস গোপন করা। যেমন, [[চোরাচালান|চোরাচালানের]] মাধ্যমে উপার্জিত আয় তথা আয়ের সূত্র গোপন করা। দ্বিতীয়তঃ বৈধ অর্থনৈতক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেয়া।
মানি লন্ডারিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমতঃ যদি অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে তবে সে আয়ের উৎস গোপন করা। যেমন, [[চোরাচালান|চোরাচালানের]] মাধ্যমে উপার্জিত আয় তথা আয়ের সূত্র গোপন করা। দ্বিতীয়তঃ বৈধ অর্থনৈতক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় [[আয়কর]] ফাঁকি দেয়া।


== মানি লন্ডারিং করার প্রক্রিয়া==
== মানি লন্ডারিং করার প্রক্রিয়া==
২২ নং লাইন: ২২ নং লাইন:


=== বাংলাদেশ ===
=== বাংলাদেশ ===
[[বাংলাদেশ সরকার]] ২০০২ সালে মানি লন্ডারিং আইন প্রণয়ন ও প্রবর্তন করে যার নাম "মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ "। পরবর্তীতে, বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও অধ্যাদেশ রহিত করে "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২" নামে নতুন একটি আইন পাশ হয়। যেহেতু মানি লন্ডারিং কার্যক্রমে [[মুদ্রা পাচার]] জড়িত এবং এতে ব্যাংকসমূহের সহায়তা প্রয়োজন, তাই এই আইন প্রয়োগের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ [[বাংলাদেশ ব্যাংক|বাংলাদেশ ব্যাংককে]] দেয়া হয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.bangladesh-bank.org/mediaroom/circulars/aml/may1802aml01e.pdf |শিরোনাম=www.bangladesh-bank.org |সংগ্রহের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ |আর্কাইভের-তারিখ=১ জুন ২০১০ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20100601191149/http://www.bangladesh-bank.org/mediaroom/circulars/aml/may1802aml01e.pdf |ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর }}</ref> উক্ত আইনে ২৮টি সম্পৃক্ত অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর্থ ও সম্পত্তি অর্জন বা স্থানান্তরের উদ্দেশে উল্লেখিত সম্পৃক্ত অপরাধ সংগঠন বা এর সাথে জড়িত কার্যক্রম মানিলন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা ও কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে [[বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট]] নামে একটি পৃথক কেন্দ্রীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয় যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1088/section-41820.html|শিরোনাম=মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ {{!}} ২৪। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) প্রতিষ্ঠা|ওয়েবসাইট=bdlaws.minlaw.gov.bd|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref> উক্ত আইনে, মানিলন্ডারিং অপরাধের শাস্তি রাখা হয়েছে; (১) ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ অন্যূন ৪ (চার) বছর এবং অনধিক ১২ (বার) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ড এবং (২) প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেঃ অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের অন্যূন দ্বিগুণ অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা, যাহা অধিক হয়, অর্থদন্ড এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1088/section-41800.html|শিরোনাম=মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ {{!}} ৪। মানিলন্ডারিং অপরাধ ও দণ্ড|ওয়েবসাইট=bdlaws.minlaw.gov.bd|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref>
[[বাংলাদেশ সরকার]] ২০০২ সালে মানি লন্ডারিং আইন প্রণয়ন ও প্রবর্তন করে যার নাম "মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ "। পরবর্তীতে, বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও অধ্যাদেশ রহিত করে "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২" নামে নতুন একটি আইন পাশ হয়। যেহেতু মানি লন্ডারিং কার্যক্রমে [[মুদ্রা পাচার]] জড়িত এবং এতে ব্যাংকসমূহের সহায়তা প্রয়োজন, তাই এই আইন প্রয়োগের দায়িত্ব [[কেন্দ্রীয় ব্যাংক]] অর্থাৎ [[বাংলাদেশ ব্যাংক|বাংলাদেশ ব্যাংককে]] দেয়া হয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.bangladesh-bank.org/mediaroom/circulars/aml/may1802aml01e.pdf |শিরোনাম=www.bangladesh-bank.org |সংগ্রহের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ |আর্কাইভের-তারিখ=১ জুন ২০১০ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20100601191149/http://www.bangladesh-bank.org/mediaroom/circulars/aml/may1802aml01e.pdf |ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর }}</ref> উক্ত আইনে ২৮টি সম্পৃক্ত অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর্থ ও সম্পত্তি অর্জন বা স্থানান্তরের উদ্দেশে উল্লেখিত সম্পৃক্ত অপরাধ সংগঠন বা এর সাথে জড়িত কার্যক্রম মানিলন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা ও কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে [[বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট]] নামে একটি পৃথক কেন্দ্রীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয় যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1088/section-41820.html|শিরোনাম=মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ {{!}} ২৪। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) প্রতিষ্ঠা|ওয়েবসাইট=bdlaws.minlaw.gov.bd|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref> উক্ত আইনে, মানিলন্ডারিং অপরাধের শাস্তি রাখা হয়েছে; (১) ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ অন্যূন ৪ (চার) বছর এবং অনধিক ১২ (বার) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ড এবং (২) প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেঃ অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের অন্যূন দ্বিগুণ অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা, যাহা অধিক হয়, অর্থদন্ড এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-1088/section-41800.html|শিরোনাম=মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ {{!}} ৪। মানিলন্ডারিং অপরাধ ও দণ্ড|ওয়েবসাইট=bdlaws.minlaw.gov.bd|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref>


=== ভারত ===
=== ভারত ===
২০০৩ সালে ভারতীয় সংসদ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২" নামে একটি আইন পাশ করে। পরবর্তীতে, আইনটি ২০০৫, ২০০৯ এবং ২০১২ সালে সংশোধিত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20080612100751/http://fiuindia.gov.in/pmla2002.htm|শিরোনাম=Prevention of Money Laundering Act, 2002 - Overview|তারিখ=2008-06-12|ওয়েবসাইট=web.archive.org|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref><ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://economictimes.indiatimes.com/news/economy/policy/anti-money-laundering-act-kicks-off/articleshow/1156901.cms|শিরোনাম=Anti-money laundering act kicks off|তারিখ=2005-07-01|কর্ম=The Economic Times|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref>
২০০৩ সালে [[ভারতীয় সংসদ]] মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২" নামে একটি আইন পাশ করে। পরবর্তীতে, আইনটি ২০০৫, ২০০৯ এবং ২০১২ সালে সংশোধিত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20080612100751/http://fiuindia.gov.in/pmla2002.htm|শিরোনাম=Prevention of Money Laundering Act, 2002 - Overview|তারিখ=2008-06-12|ওয়েবসাইট=web.archive.org|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref><ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://economictimes.indiatimes.com/news/economy/policy/anti-money-laundering-act-kicks-off/articleshow/1156901.cms|শিরোনাম=Anti-money laundering act kicks off|তারিখ=2005-07-01|কর্ম=The Economic Times|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref>


=== ইউরোপীয় ইউনিয়ন ===
=== ইউরোপীয় ইউনিয়ন ===
২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসবে "চতুর্থ অ্যান্টি মানি লন্ডারিংয়ের নির্দেশিকা বা এএমএলড IV )" প্রবর্তন করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://ec.europa.eu/info/business-economy-euro/banking-and-finance/financial-supervision-and-risk-management/anti-money-laundering-and-counter-terrorist-financing_en|শিরোনাম=Anti-money laundering and counter terrorist financing|ওয়েবসাইট=European Commission - European Commission|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref> ইউ ভুক্ত দেশসমূহ এই নিরদেশিকা অনুসরন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
২০১৫ সালে [[ইউরোপীয় ইউনিয়ন]] মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসবে "চতুর্থ অ্যান্টি মানি লন্ডারিংয়ের নির্দেশিকা বা এএমএলড IV )" প্রবর্তন করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://ec.europa.eu/info/business-economy-euro/banking-and-finance/financial-supervision-and-risk-management/anti-money-laundering-and-counter-terrorist-financing_en|শিরোনাম=Anti-money laundering and counter terrorist financing|ওয়েবসাইট=European Commission - European Commission|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2020-06-14}}</ref> ইউ ভুক্ত দেশসমূহ এই নিরদেশিকা অনুসরন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।


=== যুক্তরাজ্য ===
=== যুক্তরাজ্য ===

০৩:৪০, ২২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়া

মানি লন্ডারিং বা অর্থশোধন হল একটি অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে সেই সম্পদের আংশিক বা পূর্ণ অংশ রুপান্তর বা এমন কোন বৈধ জায়গায় বিনিয়োগ করা হয় যাতে করে সেই বিনিয়োগকৃত সম্পদ থেকে অর্জিত আয় বৈধ বলে মনে হয়, তাকে মানি লন্ডারিং বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের সক্রিয় সহায়তায় মানি লন্ডারিং কার্যক্রম চলে। মানি লন্ডারিং একটি ফৌজদারী অপরাধ[১]

সাধারণত, এক খাতের টাকা আরেক খাতে নিয়ে, সেই টাকা আবার আরেক খাতে নিতে নিতে বিষয়টি এমন দাড়ায় যে মূল উৎস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে যায়। ফলে আইনের লোকজনের পক্ষে অবৈধ উৎসটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। এরকম করার কারণ হল এ অর্থের মালিক ঐ টাকা খরচ করতে পারেনা। কারণ, সেক্ষেত্রে সে আইনের হাতে ধরা পড়ে যেতে পারে। সাধারণত: মাদকদ্রব্য কারবারী, অসৎ রাজনৈতিক নেতা বা সরকারী আমলারা এরকম পন্থার আশ্রয় নেয়।

মানি লন্ডারিং-এর উদ্দেশ্য

মানি লন্ডারিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমতঃ যদি অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে তবে সে আয়ের উৎস গোপন করা। যেমন, চোরাচালানের মাধ্যমে উপার্জিত আয় তথা আয়ের সূত্র গোপন করা। দ্বিতীয়তঃ বৈধ অর্থনৈতক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেয়া।

মানি লন্ডারিং করার প্রক্রিয়া

মানি লন্ডারিং করার কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করা হয়ে থাকে।[২]

সংযোজন বা প্লেসমেন্ট

যখন কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হতে উপার্জিত অর্থ প্রথমবারের মত অর্থ ব্যাবস্থায় প্রবেশ করানো হয় তাকে সংযোজন বা প্লেসমেন্ট বলে। যেমন- চুরি, ডাকাতি, চোরাচালান বা ঘুষের অর্থ যখন একটি ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয় তখন তাকে সংযোজন বা প্লেসমেন্ট বলে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে জমি ক্রয়, বাড়ি বা গাড়ি ক্রয়, শেয়ার ক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমেও প্রথমবারের মত অবৈধ অর্থ, অর্থ ব্যাবস্থায় প্রবেশ করানো হয়।

স্তরিকরন বা লেয়ারিং

এই প্রক্রিয়ায় সংযোজনকৃত অর্থ পর্যায়ক্রমে জটিল লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরে সরানো হয়। এই প্রক্রিয়া অর্থের উৎস গোপন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, বিদেশে অর্থ প্রেরণ, ট্রাভেলার্স চেকে রুপান্তর, একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অন্যান্ন শাখায় বিভিন্ন নামে অর্থের স্থানান্তর বা জমা দেওয়া।

পূনর্বহাল বা ইন্টিগ্রেশন

স্তরিকরন সফল হলে পরবর্তীতে অবৈধ অর্থ এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যাতে করে মনে হয় এটি বৈধ পন্থায় উপার্জিত। এভাবেই লন্ডারিংকৃত অর্থ অর্থনীতিতে পূনর্বহাল হয়। যেমন অবৈধ অর্থ দিয়ে ক্রয়কৃত জমি বিক্রয় করে পুনরায় সেই অর্থ দিয়ে জমি কেনা বা বাড়ি, গাড়ি, বীমা পলিসি ঘন ঘন বাতিল এবং পূনর্বহাল করা ইত্যাদি।

অঞ্চল অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা

অধিকাংশ দেশ এবং অঞ্চলে মানি লন্ডারিং একটি ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিবেচিত। এজন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও অঞ্চল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে আইন প্রণয়নসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে মানি লন্ডারিং আইন প্রণয়ন ও প্রবর্তন করে যার নাম "মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ "। পরবর্তীতে, বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও অধ্যাদেশ রহিত করে "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২" নামে নতুন একটি আইন পাশ হয়। যেহেতু মানি লন্ডারিং কার্যক্রমে মুদ্রা পাচার জড়িত এবং এতে ব্যাংকসমূহের সহায়তা প্রয়োজন, তাই এই আইন প্রয়োগের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয়া হয়েছে।[৩] উক্ত আইনে ২৮টি সম্পৃক্ত অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর্থ ও সম্পত্তি অর্জন বা স্থানান্তরের উদ্দেশে উল্লেখিত সম্পৃক্ত অপরাধ সংগঠন বা এর সাথে জড়িত কার্যক্রম মানিলন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা ও কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নামে একটি পৃথক কেন্দ্রীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয় যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়।[৪] উক্ত আইনে, মানিলন্ডারিং অপরাধের শাস্তি রাখা হয়েছে; (১) ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ অন্যূন ৪ (চার) বছর এবং অনধিক ১২ (বার) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ড এবং (২) প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেঃ অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের অন্যূন দ্বিগুণ অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা, যাহা অধিক হয়, অর্থদন্ড এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা।[৫]

ভারত

২০০৩ সালে ভারতীয় সংসদ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২" নামে একটি আইন পাশ করে। পরবর্তীতে, আইনটি ২০০৫, ২০০৯ এবং ২০১২ সালে সংশোধিত হয়।[৬][৭]

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসবে "চতুর্থ অ্যান্টি মানি লন্ডারিংয়ের নির্দেশিকা বা এএমএলড IV )" প্রবর্তন করে।[৮] ইউ ভুক্ত দেশসমূহ এই নিরদেশিকা অনুসরন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদী তহবিল প্রতিরোধের জন্য পাঁচটি প্রাথমিক আইন রয়েছে যেগুলো দ্বারা এই অপরাধের মামলা পরিচালিত এবং বিচার হয়।[৯] আইনগুলো হচ্ছেঃ

  • সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০
  • সন্ত্রাস দমন, অপরাধ ও সুরক্ষা আইন ২০০১
  • প্রসিড'স অব ক্রাইম অ্যাক্ট ২০০২
  • গুরুতর সংগঠিত অপরাধ ও পুলিশ আইন ২০০৫
  • নিষেধাজ্ঞা এবং অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইন ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য নেয়া ব্যবস্থাসমূহ সাধারণত দুটি ক্ষেত্রে বিভক্ত হয়: (১) প্রতিরোধমূলক (নিয়ন্ত্রণকারী) ব্যবস্থা এবং (২) অপরাধমূলক ব্যবস্থা। [১০]

কালোটাকা বৈধকরণের সুযোগ

অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয় বা কালোটাকা বৈধকরণের সুযোগও সরকারের তরফ থেকে দেয়া হয়। এ সুযোগের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ সুযোগের উদ্দেশ্য হলো গোপনে উপার্জ্জিত ও সংরক্ষিত কালোটাকাকে মূল অর্থনৈতিক প্রবাহে সংযুক্ত করা। এটিও একপ্রকার অর্থশোধন যার নৈতিক গ্রহণযোগত্য বিতর্কিত। সাধারণত, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জরিমানা বা কর প্রদান করলে এরূপ আয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় না এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এই অর্থ বৈধ আয় নির্ভয়ে হিসেবে ব্যবহার (ব্যয়/বিনিয়োগ) করতে পারেন।

তথ্যসূত্র

  1. Chen, James। "Money Laundering"Investopedia (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  2. "Methods and Stages in Money Laundering"people.exeter.ac.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  3. "www.bangladesh-bank.org" (পিডিএফ)। ১ জুন ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  4. "মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ | ২৪। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) প্রতিষ্ঠা"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  5. "মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ | ৪। মানিলন্ডারিং অপরাধ ও দণ্ড"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  6. "Prevention of Money Laundering Act, 2002 - Overview"web.archive.org। ২০০৮-০৬-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  7. "Anti-money laundering act kicks off"The Economic Times। ২০০৫-০৭-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  8. "Anti-money laundering and counter terrorist financing"European Commission - European Commission (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  9. Participation, Expert। "Terrorism Act 2000"www.legislation.gov.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 
  10. "History of Anti-Money Laundering Laws | FinCEN.gov"www.fincen.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪ 

বহিঃসংযোগ