সিলেট বিজয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
UserNumber (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত
UserNumber-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Mehediabedin-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
ট্যাগ: পুনর্বহাল
৪৬ নং লাইন: ৪৬ নং লাইন:
যদিও জনসংখ্যার বেশিরভাগ হিন্দু ছিল, তবুও বাংলার গভর্নর মালিক [[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী|ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির]] বাংলা বিজয়ের পরে স্বল্পকালীন দেশে সংখ্যালঘু [[মুসলিম|মুসলিম পরিবারের]] বসবাস ছিল।<ref name="stewart">{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://archive.org/details/TheHistoryOfBengal|শিরোনাম=The History of Bengal|শেষাংশ=Stewart|প্রথমাংশ=Charles|বছর=1813}}</ref> গৌড় রাজ্যটি ছিল বলবান রাজবংশের মুসলিম সুলতান [[শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ|শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ]] কর্তৃক শাসিত [[গৌড়|লখনৌতির]] স্বাধীন [[বঙ্গ]] রাজত্বের সীমানা ঘেঁষে। যুদ্ধ শুরু হয় যখন [[টুলটিকর ইউনিয়ন|টুলটিকর]] গ্রামে বসবাসরত মুসলিম [[বুরহানউদ্দীন]], তার নবজাত ছেলের [[আকিকা|আকিকার]] জন্য একটি গাভী কুরবানী।<ref name="quhafa">{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh|শেষাংশ=Hussain|প্রথমাংশ=M Sahul|অধ্যায়ের-ইউআরএল=http://en.banglapedia.org/index.php?title=Burhanuddin_(R)|বছর=2014|প্রকাশক=[[Asiatic Society of Bangladesh]]|অধ্যায়=Burhanuddin (R)|সংস্করণ=Second}}</ref> গোবিন্দ তাঁর হিন্দু বিশ্বাসের কারণে ক্রোধে নবজাতককে হত্যা করার পাশাপাশি বুরহানুদ্দিনের ডান হাত কেটে ফেলে।<ref name="Mujjarad 2002 459">{{বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি|বিশ্বকোষ=Biographical Encyclopaedia of Sufis: Central Asia and Middle East|শেষাংশ=EB |সম্পাদক-শেষাংশ=Hanif |সম্পাদক-প্রথমাংশ=N.|শিরোনাম=Suharwardy Yemani Sylheti, Shaikhul Mashaikh Hazrat Makhdum Ghazi Shaikh Jalaluddin Mujjarad (1271–?) |ইউআরএল=https://archive.org/details/bub_gb_Y7JInpQL0x8C |সংগ্রহের-তারিখ= |বছর=2002 |প্রকাশক=Sarup & Sons |খণ্ড=Vol. 2 |অবস্থান=New Delhi |আইএসবিএন=81-7625-266-2 |পাতা=459 |সূত্র=harv}}</ref> এই ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যেই [[তরফ রাজ্য|তরফের]] কাযি নুরউদ্দিন তাদের খাওয়ার জন্য একটি গরু জবাই করে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করেন। এই কারণে সামন্ত শাসক আচাক নারায়ণ কর্তৃক [[কাজী|কাযির]] মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। উভয় পুরুষকে শাস্তি দেওয়ার পরে, বুরহানউদ্দিন এবং নূরউদ্দিনের ভাই হেলিমুদ্দিন নীচু বঙ্গদেশে ভ্রমণ করেন যেখানে তারা সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের সাথে ঘটা এই নির্মম ধটনা জানান।
যদিও জনসংখ্যার বেশিরভাগ হিন্দু ছিল, তবুও বাংলার গভর্নর মালিক [[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী|ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির]] বাংলা বিজয়ের পরে স্বল্পকালীন দেশে সংখ্যালঘু [[মুসলিম|মুসলিম পরিবারের]] বসবাস ছিল।<ref name="stewart">{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://archive.org/details/TheHistoryOfBengal|শিরোনাম=The History of Bengal|শেষাংশ=Stewart|প্রথমাংশ=Charles|বছর=1813}}</ref> গৌড় রাজ্যটি ছিল বলবান রাজবংশের মুসলিম সুলতান [[শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ|শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ]] কর্তৃক শাসিত [[গৌড়|লখনৌতির]] স্বাধীন [[বঙ্গ]] রাজত্বের সীমানা ঘেঁষে। যুদ্ধ শুরু হয় যখন [[টুলটিকর ইউনিয়ন|টুলটিকর]] গ্রামে বসবাসরত মুসলিম [[বুরহানউদ্দীন]], তার নবজাত ছেলের [[আকিকা|আকিকার]] জন্য একটি গাভী কুরবানী।<ref name="quhafa">{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh|শেষাংশ=Hussain|প্রথমাংশ=M Sahul|অধ্যায়ের-ইউআরএল=http://en.banglapedia.org/index.php?title=Burhanuddin_(R)|বছর=2014|প্রকাশক=[[Asiatic Society of Bangladesh]]|অধ্যায়=Burhanuddin (R)|সংস্করণ=Second}}</ref> গোবিন্দ তাঁর হিন্দু বিশ্বাসের কারণে ক্রোধে নবজাতককে হত্যা করার পাশাপাশি বুরহানুদ্দিনের ডান হাত কেটে ফেলে।<ref name="Mujjarad 2002 459">{{বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি|বিশ্বকোষ=Biographical Encyclopaedia of Sufis: Central Asia and Middle East|শেষাংশ=EB |সম্পাদক-শেষাংশ=Hanif |সম্পাদক-প্রথমাংশ=N.|শিরোনাম=Suharwardy Yemani Sylheti, Shaikhul Mashaikh Hazrat Makhdum Ghazi Shaikh Jalaluddin Mujjarad (1271–?) |ইউআরএল=https://archive.org/details/bub_gb_Y7JInpQL0x8C |সংগ্রহের-তারিখ= |বছর=2002 |প্রকাশক=Sarup & Sons |খণ্ড=Vol. 2 |অবস্থান=New Delhi |আইএসবিএন=81-7625-266-2 |পাতা=459 |সূত্র=harv}}</ref> এই ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যেই [[তরফ রাজ্য|তরফের]] কাযি নুরউদ্দিন তাদের খাওয়ার জন্য একটি গরু জবাই করে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করেন। এই কারণে সামন্ত শাসক আচাক নারায়ণ কর্তৃক [[কাজী|কাযির]] মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। উভয় পুরুষকে শাস্তি দেওয়ার পরে, বুরহানউদ্দিন এবং নূরউদ্দিনের ভাই হেলিমুদ্দিন নীচু বঙ্গদেশে ভ্রমণ করেন যেখানে তারা সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের সাথে ঘটা এই নির্মম ধটনা জানান।


একই সময়ে, [[শাহ জালাল]] নামে একজন [[সুফিবাদ|সূফী]] ধর্মপ্রচারক এ অঞ্চলে আসার কথা ছিল। তাঁর মামা শেখ কবিরের নেতৃত্বে তাঁরা এই অঞ্চলে [[দাওয়াত|ইসলামের প্রচারের]] যাত্রা শুরুর আগে তাঁর (শাহ জালাল) কাছে দেওয়া মাটির সাথে এই মাটি মিলে যায়, শাহ জালাল জানতেন যে এটি শ্রীহট্টেই রয়েছে যেখানে তিনি সারা জীবন থাকবেন<ref name="Banglapedia">{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh|শেষাংশ=Karim|প্রথমাংশ=Abdul|অধ্যায়ের-ইউআরএল=http://en.banglapedia.org/index.php?title=Shah_Jalal_%28R%29|বছর=2012|প্রকাশক=[[Asiatic Society of Bangladesh]]|অধ্যায়=Shah Jalal (R)|সংস্করণ=Second}}</ref> শাহ জালাল পূর্ব দিকে যাত্রা করেছিলেন যেখানে তিনি অনেক মহান পণ্ডিত এবং সূফী রহস্যবিদদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং আনুমানিক ১৩০০ সালে ভারতে পৌঁছান।<ref name="Banglapedia" />
একই সময়ে, [[শাহ জালাল]] নামে একজন [[সুফিবাদ|সূফী]] ধর্মপ্রচারক এ অঞ্চলে আসার কথা ছিল। তাঁর চাচা শেখ কবিরের নেতৃত্বে তাঁরা এই অঞ্চলে [[দাওয়াত|ইসলামের প্রচারের]] যাত্রা শুরুর আগে তাঁর (শাহ জালাল) কাছে দেওয়া মাটির সাথে এই মাটি মিলে যায়, শাহ জালাল জানতেন যে এটি শ্রীহট্টেই রয়েছে যেখানে তিনি সারা জীবন থাকবেন<ref name="Banglapedia">{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh|শেষাংশ=Karim|প্রথমাংশ=Abdul|অধ্যায়ের-ইউআরএল=http://en.banglapedia.org/index.php?title=Shah_Jalal_%28R%29|বছর=2012|প্রকাশক=[[Asiatic Society of Bangladesh]]|অধ্যায়=Shah Jalal (R)|সংস্করণ=Second}}</ref> শাহ জালাল পূর্ব দিকে যাত্রা করেছিলেন যেখানে তিনি অনেক মহান পণ্ডিত এবং সূফী রহস্যবিদদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং আনুমানিক ১৩০০ সালে ভারতে পৌঁছান।<ref name="Banglapedia" />


== গৌড় বিজয় ==
== গৌড় বিজয় ==

১৫:২৫, ২০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

সিলেট বিজয়
মূল যুদ্ধ: বাংলাদেশে ইসলাম
তারিখ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দ
অবস্থান
ফলাফল মুসলিমদের বিজয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
বৃহত্তর সিলেটের অনেক অঞ্চল মুসলিম-বাঙ্গালার অধীনে আসে
বিবাদমান পক্ষ
লাখনৌতি সালতানাত গৌড় রাজ্য (তুঙ্গাচলসহ​)
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী

সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ

শাহ জালাল

রাজা গৌড় গোবিন্দ

  • চক্রপাণি দত্ত[১]
  • প্রধানমন্ত্রী মনা রায় 
  • রাজা আচক নারায়ণ
  • রাজকুমার নির্বাণ
  • রাজকুমার গরুড় 
শক্তি
<১০,০০০ ১০০০০
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
ব্যাপক ব্যাপক

সিলেট বিজয় বা শ্রীহট্ট বিজয়, এমন একটি ইসলামিক বিজয় বোঝায় যা অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত শ্রীহট্ট অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল। আরো ব্যাপক অর্থে, এই যুদ্ধ লখনৌতি-কেন্দ্রিক বাংলা সালতানাতের স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ এবং মধ্যযুগীয় সিলেট এর স্বাধীন গৌড় রাজ্যের হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দ মধ্য সংঘঠিত যুদ্ধ। তবে, এই ঘটনার পরে সংঘটিত অন্যান্য যুদ্ধসমূহ যেমন তরফের অধিগ্রহণ ও বৃহত্তর সিলেটের বিজয়ের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গৌড়ের সাফল্যের পরে শাহ জালাল তাঁর শিষ্যদেরকে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য বৃহত্তর সিলেট এবং পূর্ব বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার আদেশ দিয়েছিলেন।

পটভূমি

চৌকি নামে ছিল যেই পরগণা দিনারপুর
ছিলটের হর্দ্দ ছিল সাবেক মসুর
সেখানে আসিয়া তিনি পৌছিলা যখন
খবর পাইলা রাজা গোবিন্দ তখন।
এপারে হজরত তার লস্কর সহিতে
আসিয়া পৌছিলা এক নদীর পারেতে
বরাক নামে নদী ছিল যে মসুর
যাহার নিকট গ্রাম নাম বাহাদুরপুর।
যখন পৌছিলা তিনি নদীর কেনার
নৌকা বিনা সে নদীও হইলেন পার।

তারিখ–ই–জালালি

প্রাচীন হিন্দু অঞ্চল শ্রীহট্ট-গৌড়, লাউড় এবং জৈন্তিয়ার মতো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। গোবিন্দ ছিলেন গৌড় রাজ্যের একজন রক্ষণশীল হিন্দু শাসক, যিনি ইসলাম, বৌদ্ধধর্ম এবং এমনকি হিন্দু ধর্মের কিছু মতের প্রতি অসহিষ্ণু ও কঠোর ছিলেন।[২] গোবিন্দর কামরু পর্বতমালায় জাদু চর্চা ও শিখার বিষয়টি মানুষজনের কাছে পরিচিত ছিল এবং তিনি বারো বছর ধরে কামাখ্যা মন্দির এবং কুলশিয়া আশ্রমে ( যা কুলশি নদী তীরে ছিল এটি আধুনিক কালে শুয়ালকুচি বা কুলশি রিজার্ভ ফরেস্টে অবস্থিত) যথাক্রমে ধর্মীয় এবং সামরিক শিক্ষা লাভ করেন।[৩] তাঁর রাজত্বকালে তিনি তাঁর রাজ্য জুড়ে দুর্গ তৈরি করেছিলেন এবং বহু সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিলেন। তিনি সাত তলা বিশিষ্ট একটি ইটের টাওয়ার নির্মাণ করেছেন বলে খ্যাত।[১]

যদিও জনসংখ্যার বেশিরভাগ হিন্দু ছিল, তবুও বাংলার গভর্নর মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের পরে স্বল্পকালীন দেশে সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবারের বসবাস ছিল।[৪] গৌড় রাজ্যটি ছিল বলবান রাজবংশের মুসলিম সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ কর্তৃক শাসিত লখনৌতির স্বাধীন বঙ্গ রাজত্বের সীমানা ঘেঁষে। যুদ্ধ শুরু হয় যখন টুলটিকর গ্রামে বসবাসরত মুসলিম বুরহানউদ্দীন, তার নবজাত ছেলের আকিকার জন্য একটি গাভী কুরবানী।[৫] গোবিন্দ তাঁর হিন্দু বিশ্বাসের কারণে ক্রোধে নবজাতককে হত্যা করার পাশাপাশি বুরহানুদ্দিনের ডান হাত কেটে ফেলে।[৬] এই ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যেই তরফের কাযি নুরউদ্দিন তাদের খাওয়ার জন্য একটি গরু জবাই করে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করেন। এই কারণে সামন্ত শাসক আচাক নারায়ণ কর্তৃক কাযির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। উভয় পুরুষকে শাস্তি দেওয়ার পরে, বুরহানউদ্দিন এবং নূরউদ্দিনের ভাই হেলিমুদ্দিন নীচু বঙ্গদেশে ভ্রমণ করেন যেখানে তারা সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের সাথে ঘটা এই নির্মম ধটনা জানান।

একই সময়ে, শাহ জালাল নামে একজন সূফী ধর্মপ্রচারক এ অঞ্চলে আসার কথা ছিল। তাঁর চাচা শেখ কবিরের নেতৃত্বে তাঁরা এই অঞ্চলে ইসলামের প্রচারের যাত্রা শুরুর আগে তাঁর (শাহ জালাল) কাছে দেওয়া মাটির সাথে এই মাটি মিলে যায়, শাহ জালাল জানতেন যে এটি শ্রীহট্টেই রয়েছে যেখানে তিনি সারা জীবন থাকবেন[৭] শাহ জালাল পূর্ব দিকে যাত্রা করেছিলেন যেখানে তিনি অনেক মহান পণ্ডিত এবং সূফী রহস্যবিদদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং আনুমানিক ১৩০০ সালে ভারতে পৌঁছান।[৭]

গৌড় বিজয়

রাজা গৌড় গোবিন্দের টিলা (পাহাড়) যেখানে তাঁর দুর্গ ছিল।

গোবিন্দের মন্ত্রী মনা রায় বন্দরের নিকটে ঘাটি স্থাপন করেন। নদী পরিবহন ও ফেরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন যা প্রতিপক্ষের পক্ষে কষ্টসাাধ্য ছিল, কারণ পাহাড় পাড়ি দেওয়া ছিল একমাত্র বিকল্প পথ। [৮] সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের কাছে এই কথা পৌঁছলে সেনাপতি তাঁর ভাগ্নে সিকান্দার খান গাজীকে রাজার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার আদেশ দেন। সিকান্দার তার সৈন্যদের নিয়ে ময়মনসিংহ হয়ে সিলেটের নিচু পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হন। গোবিন্দ চক্রপাণি দত্তকে তাঁর সেনাপতি নিযুক্ত করেন। গোবিন্দর দক্ষ তীরন্দাজ দ্বারা সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল। গোবিন্দের সেনাবাহিনী বাংলার প্রথম সেনাবাহিনী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিল যা দক্ষ তীরন্দাজদের দ্বারা গঠিত ছিল। বহু নিম্নাঞ্চলীয় পাহাড় এবং উপত্যকার অঞ্চল নিয়ে গঠিত বিদেশী অঞ্চলে অনভিজ্ঞ বাঙালি সেনাবাহিনী গোবিন্দদের তীরন্দাজরাদের কাছে একেবারে লজ্জাজনকভাবে নাস্তানাবুদ হয় এবং হতাহত হওয়া এড়াতে মুসলিমদের বাংলায় ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।[৯]

প্রথম যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে সুলতান মোটেই খুশি হন নি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সেনাবাহিনীকে অন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার আগে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। দ্বিতীয় অভিযানে সিকান্দার ময়মনসিংহ হয়ে একই স্বীকৃত পথ নিয়েছিলেন। সেনাবাহিনী পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে একটি ঝড় শুরু হয়েছিল। ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে, সিকান্দার গোবিন্দর কাছে পৌঁছার আগেই প্রায় অর্ধেক সেনা মারা গিয়েছিল। মুসলিম বিবরণ গুলজর-ই-আবরারের মতে, গোবিন্দের বিশাল যুদ্ধের নৌকাগুলি দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন জলের উপর ভাসমান দুর্গ।[১০] তারা আবার পরাজিত হয়েছিল এবং সিকান্দার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় ফিরে গিয়েছিল, যা ঘটেছিল তাতে অপমানিত হয়েছিল।[৯]

তারপরে ফিরোজ শাহ তার সিপাহ সালার (সেনাপতি) সৈয়দ নাসিরুদ্দিনকে নির্দেশ দেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই তার অনুমানটি তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বড় এবং তার জন্য আরও বৃহত্তর এবং দক্ষ সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হবে। উভয় সেনাবাহিনী এক সাথে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তবে গোবিন্দার উচ্চতর সামরিক কৌশলের কারণে এটি ব্যর্থতায় শেষ হয়েছিল।[৬][১১] গোবিন্দের পরিবার পর পর তিনবার বিজয় নিয়ে আনন্দিত হয়েছিল এবং তার চাচী অপর্ণা, পূর্বের রাণী–মা এবং রাজা গোবর্ধনের স্ত্রী আম্বরখানায় একটি ২০-একর জলের বড় ট্যাঙ্ক তৈরি করে উদ্‌যাপন করেন যা রাজার মার দীঘি নামে পরিচিত ছিলো।[১][১২]

এরপরে নাসিরউদ্দিন বাংলায় ফিরে আসেন যেখানে তিনি বিখ্যাত সাধক শাহ জালালের এবং তাঁর সহযোদ্ধাদের আগমনের কথা শুনেছিলেন এবং এই সময়ে তাঁর সংখ্যা প্রায় ৩৬০ জন ছিল। [৬] শাহ জালাল তার দৃঢ় দেহাবয়বের এবং লম্বা মাপের জন্য খ্যাতি পেয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনী তাঁর তাবুতে একটি রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আরও বৃহত্তর সেনাবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল এবং এই নতুন ও উন্নত সেনা কুমিল্লা এবং হবিগঞ্জ হয়ে সিলেট যাত্রা করেছিল। এরপরে সেনাবাহিনী সিলেট হয়ে আবারও বুরহানউদ্দিনকে নির্দেশনায় শেষ পর্যন্ত বরাক নদীর তীরে পৌঁছে। তারা কংস-নিসুধনা মন্দিরের উত্তর-পশ্চিমে একটি ছোট পাহাড়ের চূড়ায় তাদের শিবির স্থাপন করে। এখান থেকে তৃতীয় যুদ্ধ গৌড় গোবিন্দ এবং শাহ জালাল এবং সৈয়দ নাসিরুদ্দিনের সম্মিলিত সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং শেষোক্ত বাহিনী শেষ পর্যন্ত বিজয় দাবি করে। শাহ জালাল সালাতের আজান দেন এবং সেনাবাহিনী গোবিন্দের ৭-তলা গৌড়দোর প্রাসাদ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়ে। তাঁর সেনাপতি মোনা রায়কে হত্যা করা হয়েছে শুনে, গোবিন্দকে পিছু হটতে বাধ্য করা হয়ে এবং শ্রীহট্ট মুসলিম নিয়ন্ত্রণে আসে। ঐতিহ্য অনুসারে, শাহ জালালের আর এক শিষ্য, শাহ চাষনী পীর এই সময়ে শ্রীহট্টের মাটিটির সাথে পূর্বে আহমদ কবিরের দেওয়া মাটির সাথে তুলনা করেন এবং তাদেরকে অভিন্ন হিসবে খুঁজে পান। যুদ্ধ যাই হোক না কেন, শাহ জালাল তাঁর অনুসারীদের সাথে স্থায়ীভাবে সিলেটে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন।[৫]

গোবিন্দ তার পরিবার নিয়ে মালনিছড়ার হারং হুরং গুহায় পিছু হটেছিলেন। এরপর তিনি গৃবাকালি আশ্রমে যান, যেখানে তিনি তার চাচী অর্পণা, এবং তার চাচাত ভাই গরুড় এবং শ্যালিকা শান্তিপ্রীয়াকে (অথবা শান্তিরাণী) যাজকের অধীনে রেখে যান। এই পর, তিনি তার সাথে তার স্ত্রী হিরাবতী, এবং ছেলে নির্বাণকে নিয়ে কামরূপ পালিয়ে যান।

তরফ দখল

মুরারবন্দ দরবারে সৈয়দ নাসিরুদ্দিনের মাজার, তারাফ ( চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ)।

গরুড় ও তাঁর পরিবারবর্গকে গৃবকলি আশ্রম থেকে তরফ রাজ্যের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা রাজকর্মচারী ঘাতুরাম ও ঝাড়ুর দ্বারা চালিত ধনুহট্টায় একটি নৌকায় করে রওনা হয়। তবে রাজা গোবর্ধনের পতনের সময় থেকে বিদ্রোহী সুবিদ তাদের দেখেছিল, যিনি মুসলমানদের তাদের কর্ম সম্পর্কে অবহিত করে; মুসলমানরা তাদের নৌকোটি অনুসরণ করেন। লজ্জায় গরুড় নৌকা থেকে পুনি বিলে ঝাঁঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মাঝিরা অবশ্য অপর্ণা ও শান্তিপ্রিয়কে তুঙ্গাচল বা তরফ রাজ্যে নিয়ে যায় এবং রাজা আচক নারায়ণের কাছে আশ্রয় লাভ করেন, যদিও মাঝিদেরকে হত্যা করা হয়। অপূর্ণা ও শান্তিপ্রিয়া সুরক্ষার আশায় নব্বই দিন উপবাসের জন্য তুঙ্গানাথ শিব মন্দিরে ব্রত করেন।[১] এই ঘটনাটি শান্তিরণির বারোমাসী নামে পরিচিত একটি লোকসঙ্গীতে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৩] গৌড়ের সফল বিজয়ের পরে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন তুঙ্গাচলের সামন্ত রাজা আছাক নারায়ণের বিরুদ্ধে অভিযানে যাত্রা শুরু করেন, যা গৌড় রাজ্যের অংশ ছিল। নাসিরুদ্দিন ১২ টি লস্কর নিয়ে এসে পৌঁছান এবং লস্করপুর নামে পরিচিত একটি জায়গায় তিনি শিবির স্থাপন করেন।[১৪] রাজা আচক নারায়ণও পরাজিত হন এবং পরিবার নিয়ে মথুরায় পালিয়ে যান। শান্তিপ্রিয়া আত্মহত্যা করেছেন বলেও জানা গেছে। জয়ের পর তুঙ্গাচল মুসলিম-বাঙ্গালার সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং নামকরণ করা হয় তরফ। নাসিরুদ্দিনের সাথে যে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন:

  1. শাহ আরিফিন ( তাহিরপুরে সমাহিত)
  2. শাহ তাজউদ্দীন কুরেশী (চৌখালী পরগনা, সিলেট)
  3. শাহ রুকনুদ্দীন আসওয়ারী (সরাইলে সমাহিত)
  4. শাহ বদর ( বদরপুর, করিমগঞ্জ, ভারতে সমাধি)
  5. শাহ মাহমুদ (উর্দু বাজার, লস্করপুরে দাফন)
  6. শাহ সুলতান (বদরপুর, ময়মনসিংহে সমাধি)
  7. শাহ গাজী (সিলেট বিশ্বগ্রামে দাফন)
  8. শাহ বদরুদ্দিন (বখশিরঘাট, চট্টগ্রামে সমাধি)
  9. শাহ মজলিস আমিন ( শঙ্করপাশা, হবিগঞ্জ সদরে সমাধি)
  10. শাহ ফতেহ গাজী (সিলেটের ফতেপুরে সমাহিত)
  11. সৈয়দ শাহ সয়েফ মিন্নত উদ্দীন (লস্করপুরে সমাহিত)
  12. সৈয়দ আহমদ গেছুদরাজ (খড়মপুর মাজার শরীফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাফন)

ফলাফল

দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম চা বাগান মালনিছড়ার হরং হুরং গুহার আবাসস্থল, যেখানে গোবিন্দ এবং তাঁর পরিবার লুকিয়ে ছিল।

গৌড় ও তরফকে শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সিকান্দার খান গাজী সিলেটের প্রথম উজির হন। জনগণের কাছে ইসলাম পৌঁছে দেওয়ার জন্য শাহ জালালের সহায়তার জন্য গৌড়ের নাম জালালাবাদ করা হয়। আজ অবধি, সিলেটের চৌহট্টায় গৌড় গোবিন্দ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। শাহ জালালের অনেক সাহাবী ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য পূর্ব ভারতে অন্য জায়গায় চলে এসেছিলেন। মুসলমানরা প্রতিবেশী অন্যান্য রাজ্য যেমন লাউড়, জৈন্তিয়া এবং টোপ্রা জয় করতে আগ্রহী ছিল না, যেগুলি মুঘল এবং ব্রিটিশ শাসনামলে অনেক পরে জয়ী হয়। [১৫]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Nath, Rajmohan (১৯৪৮)। The back-ground of Assamese culture। A. K. Nath। পৃষ্ঠা 116 
  2. B C Allen (১৯০৫)। Assam District GazetteersGovernment of Assam। পৃষ্ঠা 58 
  3. E M Lewis (১৮৬৮)। "Sylhet District"। Principal Heads of the History and Statistics of the Dacca Division। Calcutta Central Press Company। পৃষ্ঠা 290। 
  4. Stewart, Charles (১৮১৩)। The History of Bengal 
  5. Hussain, M Sahul (২০১৪)। "Burhanuddin (R)"Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh 
  6. EB (২০০২)। "Suharwardy Yemani Sylheti, Shaikhul Mashaikh Hazrat Makhdum Ghazi Shaikh Jalaluddin Mujjarad (1271–?)"। Hanif, N.। Biographical Encyclopaedia of Sufis: Central Asia and Middle East। Vol. 2। New Delhi: Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 459। আইএসবিএন 81-7625-266-2 
  7. Karim, Abdul (২০১২)। "Shah Jalal (R)"Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh 
  8. Ahmed, Jalal (১৯৬৯)। Śoṇita dhārā: etihāsika nāṭeka। Sāhitya Kuṭir। 
  9. Mahmud, Hasan (১৮ ফেব্রু ২০১৯)। "আর হাতে রণতুর্য"। Desher Potro। 
  10. East Pakistan District Gazetteers: Sylhet। East Pakistan Government Press। ১৯৭০। পৃষ্ঠা 54। 
  11. Bangladesh Bureau of Statistics, Statistics Division, Ministry of Planning, Government of the People's Republic of Bangladesh,"Population Census of Bangladesh, 1974: District census report" (1979), p. 15
  12. Chowdhury, Dwoha (২০ নভে ২০১৭)। "Of dead and dying dighis"The Daily Star (Bangladesh) 
  13. Sylhet: History and Heritage। Bangladesh Itihas Samiti। জানু ১৯৯৯। 
  14. "HISTORY"Sipahsalar Syed Nasir Uddin Foundation। ৩ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  15. Bhattacharjee, J B (১৯৯৪)। Essays on North-east India: Presented in Memory of Professor V. Venkata Rao। Indus Publishing Company। পৃষ্ঠা 74।