আর্কিমিডিস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
MelancholieBot (আলোচনা | অবদান)
রোবট যোগ করছে: ba:Архимед
MelancholieBot (আলোচনা | অবদান)
রোবট যোগ করছে: yo:Archimedes
২১০ নং লাইন: ২১০ নং লাইন:
[[vo:Arkimedes]]
[[vo:Arkimedes]]
[[war:Archimedes]]
[[war:Archimedes]]
[[yo:Archimedes]]
[[zh:阿基米德]]
[[zh:阿基米德]]
[[zh-min-nan:Archimedes]]
[[zh-min-nan:Archimedes]]

২১:১৯, ২৮ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আর্কিমিডিস (গ্রিক: Άρχιμήδης)
জন্মc. ২৮৭ বিসি
মৃত্যুc. ২১২ বিসি
সিরাকস
যুগসুপ্রাচীন দর্শন
অঞ্চলশ্রেষ্ঠ গ্রিক দর্শনিক
ধারাআলেকজান্দ্রিয়ার উইক্লিড
সাধারণ দর্শণ
প্রধান আগ্রহ
গনিত, পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবিষ্কার
উল্লেখযোগ্য অবদান
Fluid statics, লিভার,
infinitesimals

আর্কিমিডিস (প্রাচীন গ্রিক ভাষায়: Ἀρχιμήδης আর্খিম্যাদ্যাস্‌, বর্তমান গ্রিক ভাষায় Αρχιμήδης আর্খ়িমিদ়িস্‌) বা সিরাকাসের আর্কিমিডিস (খ্রি.পূ. ২৮৭-২১২) একজন গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদদার্শনিক। যদিও তাঁর জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, তবুও তাঁকে ক্ল্যাসিক্যাল যুগের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদার্থবিদ্যায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে স্থিতিবিদ্যা আর প্রবাহী স্থিতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন এবং লিভারের কার্যনীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যাপ্রদান। পানি তোলার জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু পাম্প, যুদ্ধকালীন আক্রমণের জন্য সীজ (ইংরেজি: siege সীঝ়্‌) এঞ্জিন ইত্যাদি মৌলিক যন্ত্রপাতির ডিজাইনের জন্যও তিনি বিখ্যাত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তাঁর ডিজাইনকৃত আক্রমণকারী জাহাজকে পানি থেকে তুলে ফেলার যন্ত্র বা পাশাপাশি রাখা একগুচ্ছ আয়নার সাহায্যে জাহাজে অগ্নিসংযোগের পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।[১]

আর্কিমিডিসকে সাধারণত প্রাচীন যুগের সেরা এবং সর্বাকালের অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[২][৩] তিনি মেথড অফ এক্সহশন ব্যবহার করে অসীম ধারার সমষ্টিরূপে প্যারাবোলার বক্ররেখার অন্তগর্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন এবং পাই -এর প্রায় নিখুঁত একটি মান নির্নয় করেন।[৪] এছাড়াও তিনি আর্কিমিডিসের স্পাইরালের সংজ্ঞা দেন, বক্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন এবং অনেক বড় সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করার একটি চমৎকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।

রোমানদের দ্বারা যখন সিরাকিউজ আক্রান্ত হয় তখন এক রোমান সৈন্যের হাতে আর্কিমিডিস নিহত হন, যদিও রোমানরা তাঁর কোন ক্ষতি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। রোমান দার্শনিক সিসেরো আর্কিমিডিসের টোম্বের উপরে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি গোলকের উল্লেখ করেছেন। আর্কিমিডিস প্রমাণ করেছিলেন যে সিলিন্ডারের ভেতর আবদ্ধ গোলকটির আয়তন এবং ভূমির ক্ষেত্রফল উভয়ই সিলিন্ডারের দুই তৃতীয়াংশ, যা আর্কিমিডিসের সেরা গাণিতিক অর্জনগুলির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রাচীনকালে আর্কিমিডিসের গাণিতিক রচনাগুলি তাঁর উদ্ভাবনগুলোর মত পরিচিত ছিল না। আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদরা তাঁর লেখা পড়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখও করেছেন, কিন্তু আনুমানিক ৫৩০ খৃষ্টাব্দে গ্রীক স্থপতি ইসেডোর অফ মিলেতাস সর্বপ্রথম তাঁর সকল রচনা একত্রে লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রীক গণিতবিদ ইউতোশিয়াস আর্কিমিডিসের কাজের উপর একটি বিবরণ প্রকাশ করেন, যা তাঁকে প্রথমবারের মত বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পরিচিত করে তোলে। আর্কিমিডিসের কাজের খুব কম লিখিত দলিল মধ্যযুগের পর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু সেই অল্পকিছু দলিলই পরবর্তীতে রেনেসাঁ যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই উপকারী বলে বিবেচিত হয়।[৫] ১৯০৬ সালে আর্কিমিডিসের একটি নতুন পান্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয় যা তাঁর গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির উপর নতুনভাবে আলোকপাত করে।

জীবনী

আর্কিমিডিস আনুমানিক ২৮৭ খৃস্টপূর্বাব্দে তৎকালীন বৃহত্তর গ্রীসের উপনিবেশ সিসিলি দ্বীপের সিরাকিউজ নামের বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাইজান্টাইন গ্রীক ঐতিহাসিক জন যেতজেসের বিবরণ অনুযায়ী আর্কিমিডিস পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান, সেখান থেকে তাঁর জন্মসাল সম্পর্কে ধারণা করা হয়। দ্য স্যান্ড রেকোনার নামক দলিলে আর্কিমিডিস তাঁর বাবার নাম ফিডিয়াস বলে উল্লেখ করেন। ফিডিয়াস একজন জ্যোতির্বিদ ছিলেন, যাঁর সম্পর্কে আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক প্লুটার্খ তাঁর দ্য প্যারালাল লাইভস নামক জীবনী গ্রন্থে আর্কিমিডিসকে সিরাকিউজের রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর আত্মীয় বলে উল্লেখ করেন। আর্কিমিডিসের বন্ধু হেরাক্লিডিস তাঁর একটি জীবনী লিখেছিলেন, কিন্তু সেটি পরবর্তীতে হারিয়ে যায়। আর্কিমিডিসের জীবনের অনেক খুঁটিনাটি তথ্য তাই আর জানা যায়নি। যেমন তিনি বিয়ে করেছিলেন কিনা, তাঁর কোন সন্তান ছিল কিনা এগুলো এখনো অজানা। যৌবনে আর্কিমিডিস সম্ভবত মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পড়াশুনা করেছিলেন, যেখানে কোনোন অভ সামোস এবং এরাতোস্থেনেস অফ সিরেন তাঁর সহপাঠী ছিলেন। তিনি কোনোন অভ সামোসকে তাঁর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন; অপরদিকে তাঁর দুটি কাজের ( দ্য মেথোড অভ মেকানিক্যাল থিওরেমস এবং দ্য ক্যাটল প্রবলেম) শুরুতে এরাতোস্থেনেসের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দেশনা ছিল।

২১২ খৃস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের সময় আর্কিমিডিস নিহত হন, যখন রোমান সেনাপতি জেনারেল মার্কাস ক্লডিয়াস মার্সেলাস দুই বছর ধরে অবরোধের পর সিরাকিউজ শহর দখল করেন। প্লুটার্খের বিবরণ অনুযায়ী, সিরাকিউজের পতনের সময় আর্কিমিডিস একটি গাণিতিক চিত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এক রোমান সৈন্য তাঁকে কাজ বন্ধ করে জেনারেল মার্সেলাসের সাথে দেখা করতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আর্কিমিডিস তাঁর কাজ শেষ না করে যেতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত সৈনিক তার তলোয়ার দিয়ে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। অন্য একটি স্বল্প প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, আর্কিমিডিস এক রোমান সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণের সময় নিহত হন। এই মতবাদ অনুসারে, তিনি কিছু গাণিতিক সরঞ্জাম বহন করছিলেন যেগুলোকে সৈন্যটি মূল্যবান সম্পদ ভেবে বিভ্রান্ত হয় এবং লোভে পড়ে তাঁকে হত্যা করে। বলা হয়ে থাকে যে, জেনারেল মার্সেলাস আর্কিমিডিসের বৈজ্ঞানিক প্রতিভা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তিনি তাঁর কোন ক্ষতি না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর্কিমিডিসের মৃত্যুসংবাদ তাই তাঁকে ক্ষুব্ধ করে।

আর্কিমিডিসের সমাধিফলকে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা সমান উচ্চতা ও ব্যাসের একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডার নিয়ে গঠিত, যা তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর একটিকে নির্দেশ করে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে সমান উচ্চতা ও ব্যাসবিশিষ্ট একটি গোলক ও একটি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে গোলকটির আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সিলিন্ডারের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের দুই তৃতীয়াংশ। আর্কিমিডিসের মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর ৭৫ খৃষ্টাব্দে রোমান বক্তা সিসেরো সিরাকিউজের এগ্রিজেনটিন গেইটের কাছে ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত অবস্থায় আর্কিমিডিসের কবর আবিষ্কার করেন।

আবিষ্কার ও উদ্ভাবনসমূহ

সোনার মুকুট

আর্কিমিডিস তার অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতির মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে মুকুটের সোনার ঘনত্ব খাটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম।

আর্কিমিডিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি ছিল অনিয়মিত আকারের বস্তুর আয়তন পরিমাপের পদ্ধতি। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরোর জন্য লরেল পাতার মুকুটের মত দেখতে একটি সোনার মুকুট প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর্কিমিডিসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মুকুটটি খাঁটি সোনার কিনা সেটা নিশ্চিত করার।[৬] সহজ পদ্ধতি ছিল মুকুটটি গলিয়ে তার ঘনত্ব নির্ণয় করা, কিন্তু রাজা মুকুটটি নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। আর্কিমিডিস যখন এ সমস্যা নিয়ে ভাবছিলেন, তখন হঠাৎ গোসল করতে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন যে তিনি পানিতে নামা মাত্রে বাথটাবের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন যে পানির এই ধর্মকে ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহার করা সম্ভব। যেহেতু ব্যবহারিক কাজের জন্য পানি অসংকোচনশীল[৭], তাই পানিতে নিমজ্জিত মুকুট তার আয়তনের সমান পরিমাণ পানি স্থানচ্যুত করবে। এই অপসারিত পানির আয়তন দ্বারা মুকুটের ভরকে ভাগ করে মুকুটের ঘনত্ব পরিমাপ করা সম্ভব। যদি মুকুটের উপাদানে সোনার সাথে অন্য কোন কম ঘনত্বের সস্তা ধাতু যোগ করা হয় তাহলে তার ঘন্ত্ব খাঁটি সোনার ঘনত্বের চেয়ে কম হবে। বলা হয়ে থাকে যে এই আবিষ্কার আর্কিমিডিসকে এতই উত্তেজিত করেছিল যে তিনি নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় "ইউরেকা" (গ্রিক: "εὕρηκα!" ; অর্থ "আমি পেয়েছি!") বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে শুরু করেছিলেন।[৮]

বাস্তবে আর্কিমিডিসের আবিষ্কৃত এই পদ্ধতিটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল, কারন ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে যে পরিমান পানি অপসারিত হবে সেটি সঠিকভাবে নির্নয় করা একটি কষ্টসাধ্য কাজ।[৯]এই সমস্যার সমাধান করা হয় হয় fluid statics এর মাধ্যমে যেটি আর্কিমিডিস তত্ত্ব নামে পরিচিত। তত্ত্বটি তার On Floating Bodies প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। তত্ত্বে বলা হয়েছে যে , কোন বস্তুর ওজন এটি দ্বারা অপসারিত পানির ওজনের সমান। [১০]

আর্কিমিডিসের স্ক্রু

আর্কিমিডিসের স্ক্রু পান উত্তলনের কাজ ব্যবহৃত একট কার্যকর যন্ত্র।

আর্কিমিডিসের প্রকৌশল কাজের অধিকাংশই ছিল তাঁর নিজ শহর সিরাকিউজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। গ্রীক লেখক অথেনিয়াস অভ নক্রেটিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রাজা দ্বিতীয় হিয়েরো আর্কিমিডিসকে একটি বিশাল জাহাজ তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সিরাকিউসা নামের এই জাহাজটিকে প্রয়োজনানুযায়ী প্রমোদতরী, রসদ-সরবরাহকারী এবং রণতরী হিসেবে ব্যবহার করে যেত। বলা হয়ে থাকে যে ক্লাসিকাল যুগে নির্মাণ করা সকল জাহাজের মধ্যে সিরাকিউসা ই ছিল সর্ববৃহৎ। অথেনিয়াসের ধারণামতে, এই জাহাজে একসাথে ছয়শো যাত্রী বহন করা যেত এবং জাহাজটিতে সাজানো বাগান, একটি ব্যায়ামাগার এবং দেবী আফ্রোদিতির মন্দির ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এত বৃহদাকৃতির একটি জাহাজে প্রচুর পানি চুঁইয়ে ঢুকতো। সেই পানি নির্গমণের জন্য আর্কিমিডিস তাঁর বিখ্যাত আর্কিমিডিসের স্ক্রু তৈরি করেন। এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে আবদ্ধ একটি স্ক্রু আকৃতির ঘূর্ণায়মান ধাতব ব্লেড যাকে হাত দিয়ে ঘুরানো হত। এই যন্ত্রটি খাল থেকে উঁচু জমিতে সেচের জন্যও ব্যবহার করা হত। বর্তমানকালেও পানি এবং কয়লা, শস্যদানা জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পদার্থ উত্তোলনের জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। ভিট্রুভিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিসের স্ক্রু সম্ভবত প্রাচীন ব্যবিলনের শূণ্যোদ্যানে জলসেচনের জন্য ব্যবহৃত স্ক্রু পাম্পের একটি উন্নততর রূপ ছিল। [১১][১২][১৩]

আর্কিমিডিসের থাবা

"দ্য ক্ল অভ আর্কিমিডিস" বা "আর্কিমিডিসের থাবা" একটি অস্ত্র যা আর্কিমিডিস তাঁর শহর সিরাকিউজকে বহিঃস্থ আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য উদ্ভাবন করেছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। এ যন্ত্রটিতে একটি ক্রেনের ন্যায় বাহু এবং তাতে ঝুলানো একটি বিশাল ধাতব আংটা ছিল। এই আংটার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজকে উল্টে ফেলা হত। আধুনিককালে এই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০০৫ সালে "সুপারউইপনস অভ দ্য এনসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড" নামের একটি টেলিভিশন ডকুমেণ্টারীতে এমন একটি যন্ত্র প্রস্তুত করা হয় এবং সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে এটি প্রস্তুত এবং সার্থকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।[১৪][১৫]

আর্কিমিডিসের উত্তপ্ত রশ্মিঃ সত্য নাকি জনশ্রুতি?

দ্বিতীয় শতকের লেখক লুসিয়ানের বর্ণনা অনুযায়ী, সিরাকিউজ যখন আক্রান্ত হয়, আর্কিমিডিস শত্রুপক্ষের জাহাজ আগুনে ভস্মীভূত করেন। ট্রেলসের এনথেমিয়াসের বিবরণ অনুযায়ী, আর্কিমিডিস অনেকগুলি আয়নার সাহায্যে আক্রমণকারী জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন।

রেনেসাঁ যুগ থেকেই অবশ্য এই জনশ্রুতির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। রেনে দেকার্ত একে অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যদিও বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র আর্কিমিডিসের যুগে সহজলভ্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকের ধারণা, সারিবদ্ধভাবে সাজানো অনেকগুলো চকচকে পলিশ করা ব্রোঞ্জ বা তামার পাতের সাহায্যে জাহাজের উপর সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করা সম্ভব। এতে প্রকৃতপক্ষে সৌরচুল্লীতে ব্যবহৃত পরাবৃত্তিক প্রতিফলনের নীতি ব্যবহার করা হবে।

১৯৭৩ সালে গ্রীক বিজ্ঞানী ইওয়ান্নিস সাক্কাস আর্কিমিডিসের সূর্যরশ্মি নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় তিনি সত্তুরটি আয়না ব্যবহার করেন। প্রতিটি আয়নার আকার ছিল পাঁচ ফুট বনাম তিন ফুট এবং এগুলো তামা দ্বারা পালিশ করা ছিল। আয়নাগুলো একশো ষাট ফুট দূরবর্তী একটি প্লাইউড নির্মিত জাহাজের দিকে তাক করা ছিল। আয়নাগুলো ঠিকমত ফোকাস করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। অবশ্য জাহাজটিতে আলকাতরার প্রলেপ ছিল, যা সম্ভবত অগ্নিসংযোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

২০০৫ এর অক্টোবরে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির একদল ছাত্র ১২৭টি এক ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিশিষ্ট আয়না প্রায় ১০০ ফুট দূরবর্তী একটি কাঠের ডামি জাহাজের উপর ফোকাস করে একটি পরীক্ষা চালায়। প্রায় দশ মিনিট ঊজ্জ্বল সূর্যালোকে এক জায়গায় থাকার পর জাহাজটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। এ পরীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে আসা হয় যে এ প্রক্রিয়ায় অগ্নিসংযোগ সম্ভব তবে তা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। মিথবাস্টার্স টেলিভিশন শোতে এমআইটির এই শিক্ষার্থীরা পুনরায় একই পরীক্ষা চালায়, এবার সানফ্রান্সিসকো ঊপকূলে একটি কাঠের মাছধরা নৌকার উপর। এবারও বেশ কিছু সময় পর ছোট আকারে নৌকাটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে আগুন জ্বলে ওঠার জন্য কাঠকে তার দহন তাপমাত্রায় পৌছতে হয় যা প্রায় তিনশো ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান।

২০০৬ এর জানুয়ারীতে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সময় মীথবাস্টার্স সিদ্ধান্ত দেয় যে এটি প্রকৃতপক্ষে জনশ্রুতি, সত্য নয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে অগ্নিসংযোগের জন্য দীর্ঘ সময় এবং ঊজ্জ্বল সূর্যালোকের প্রয়োজনীয়তার দিকে নির্দেশ করা হয়। এছাড়াও বলা হয় যে সিরাকিউজ পূর্বদিক থেকে আক্রান্ত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সকাল বেলার আক্রমণই এ পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা সম্ভব। মীথবাস্টার্সে এ কথাও মনে করিয়ে দেয়া হয় যে সেসময় প্রচলিত অন্যান্য অস্ত্র, যেমন অগ্নিসংযোগ করা তীর অথবা ক্যাটাপোল্টের বোল্ট ব্যবহার করে আরো সহজে কোন জাহাজে দূর থেকে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব ছিল।

তথ্যসূত্র

  1. "Archimedes Death Ray: Testing with MythBusters"। MIT। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  2. Calinger, Ronald (১৯৯৯)। A Contextual History of Mathematics। Prentice-Hall। পৃষ্ঠা 150। আইএসবিএন 0-02-318285-7Shortly after Euclid, compiler of the definitive textbook, came Archimedes of Syracuse (ca. 287 212 BC), the most original and profound mathematician of antiquity. 
  3. "Archimedes of Syracuse"। The MacTutor History of Mathematics archive। ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০৯  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. O'Connor, J.J. and Robertson, E.F. (১৯৯৬)। "A history of calculus"University of St Andrews। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৭  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  5. Bursill-Hall, Piers। "Galileo, Archimedes, and Renaissance engineers"। sciencelive with the University of Cambridge। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৭ 
  6. Vitruvius"De Architectura, Book IX, paragraphs 9–12, text in English and Latin"University of Chicago। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-৩০ 
  7. "Incompressibility of Water"Harvard University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২৭ 
  8. HyperPhysics"Buoyancy"Georgia State University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  9. Rorres, Chris। "The Golden Crown"Drexel University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-২৪ 
  10. Carroll, Bradley W। "Archimedes' Principle"Weber State University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  11. Dalley, Stephanie. Oleson, John Peter। "Sennacherib, Archimedes, and the Water Screw: The Context of Invention in the Ancient World"Technology and Culture Volume 44, Number 1, January 2003 (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  12. Rorres, Chris। "Archimedes screw - Optimal Design"। Courant Institute of Mathematical Sciences। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  13. "Watch an animation of an Archimedes screw"Wikimedia Commons। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  14. Rorres, Chris। "Archimedes' Claw - Illustrations and Animations - a range of possible designs for the claw"। Courant Institute of Mathematical Sciences। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৩ 
  15. Carroll, Bradley W। "Archimedes' Claw - watch an animation"। Weber State University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১২ 

আর্কিমিডিসের কাজগুলি অনলাইনে দেখুন

আরও জানুন

  • Boyer, Carl Benjamin (১৯৯১)। A History of Mathematics। New York: Wiley। আইএসবিএন 0-471-54397-7 
  • Dijksterhuis, E.J. (১৯৮৭)। Archimedes। Princeton University Press, Princeton। আইএসবিএন 0-691-08421-1  Republished translation of the 1938 study of Archimedes and his works by an historian of science.
  • Gow, Mary (২০০৫)। Archimedes: Mathematical Genius of the Ancient World। Enslow Publishers, Inc। আইএসবিএন 0-7660-2502-0 
  • Hasan, Heather (২০০৫)। Archimedes: The Father of Mathematics। Rosen Central। আইএসবিএন 978-1404207745 
  • Heath, T.L. (১৮৯৭)। Works of Archimedes। Dover Publications। আইএসবিএন 0-486-42084-1  Complete works of Archimedes in English.
  • Netz, Reviel and Noel, William (২০০৭)। The Archimedes Codex। Orion Publishing Group। আইএসবিএন 0-297-64547-1 
  • Pickover, Clifford A. (২০০৮)। Archimedes to Hawking: Laws of Science and the Great Minds Behind ThemOxford University Pressআইএসবিএন 978-0195336115 
  • Simms, Dennis L. (১৯৯৫)। Archimedes the Engineer। Continuum International Publishing Group Ltd। আইএসবিএন 0-720-12284-8 
  • Stein, Sherman (১৯৯৯)। Archimedes: What Did He Do Besides Cry Eureka?। Mathematical Association of America। আইএসবিএন 0-88385-718-9 

বহিঃসংযোগ




টেমপ্লেট:Link FA টেমপ্লেট:Link FA